সিরিয়াতে রাশিয়ার আক্রমণ কি শান্তি আনবে?
লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ০৮ অক্টোবর, ২০১৫, ০১:১৫:৩২ দুপুর
আইএস সম্পর্কে যেসব খবর মিডিয়াতে আসে তার সত্য মিথ্যা যাচাইয়ের কোনো সুযোগ আমাদের হাতে নাই। মিডিয়া মানুষকে বোকা বানিয়ে স্বার্থ হাসিল করে বলে শুনেছি। ইরাকের আইএস এর ব্যাপারে মিডিয়াতে আসা খবরগুলো যদি সত্য হয় তাহলে আইএসকে সমর্থন দেয়া যায় না। মিডিয়ার এত দিনের প্রচারিত খবরের সুযোগে রাশিয়া সিরিয়াতে আক্রমণের সমর্থন আদায় করে ফেলেছে সাধারণ মানুষের। কিন্তু যে আইএস ইরাকে মিডিয়ার ভাষায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে সেখানে আইএস ধ্বংস না করে সিরিয়াতে যেখানে সুন্নি মুসলমানরা নির্যাতিত হচ্ছে সেখানে কেন হামলা করছে? ইরাকের আইএস আর সিরিয়ার আইএস কি এক? ইরাকের আইএস যদি জালেম হয় তাহলে সিরিয়ার আইএস যে মজলুম তাতে কোনো সন্দেহ নাই। মিডিয়াতে আইএস এর বিষয়ে যেসব অপরাধের খবর এসেছে তার প্রায় সবগুলোই ইরাকের আইএস এর ব্যাপারে এসেছে। কিন্তু হামলাটা হচ্ছে সিরিয়াতে। তাহলে কি সন্ত্রাস নির্মূল আসল উদ্দেশ্য নয়?
সিরিয়ার সুন্নি মুসলমানদের প্রতি সৌদির বর্তমান সরকার, তুরস্ক, কাতারসহ অধিকাংশ সুন্নি মুসলমানদের সমর্থন রয়েছে। রাশিয়ার আক্রমণে ইরান আর বাশার আসাদ খুশি হলেও মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলো নাখোশ হবে স্বাভাবিকভাবেই। রাশিয়া জিতে গেলে মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া ইরানের তেজ আরো বেড়ে যাবে। যা সৌদি আরবসহ কোনো আরবরাষ্ট্রই সহ্য করবে না। ইরানের সাথে সৌদি আরবসহ অধিকাংশ মুসলিমদেশের মধ্যে বিরাট মতবিরোধ রয়েছে। শিয়া-সুন্নির মধ্যে সব ধরনের যুদ্ধের ইন্ধনদাতা এই ইরান। তারা সবসময় সুন্নি মুসলমানদেরকে হত্যা করে আসছে। তাদের যুদ্ধ সবসময় ছিল সুন্নি মুসলমানদের বিপক্ষে। সৌদি আরবসহ অধিকাংশ মুসলিম রাষ্ট্রের অবস্থান থাকবে ইরানের বিপক্ষে। আর ইরান হচ্ছে রাশিয়ার পক্ষে। তাহলে রাশিয়া কি বিনা বাঁধায় সিরিয়া জয় করে ফেলবে? মধ্যপ্রাচ্যে বহু দিন থেকে আমেরিকার স্বার্থ জড়িত আছে। সেখানে তাদের স্বার্থে রাশিয়া এসে ভাগ বসাবে তাও কি আমেরিকা নীরবে সহ্য করবে?
রাশিয়া সিরিয়ার আইএসকে শেষ করে দিলে কি শান্তি চলে আসবে? নাকি আরো অশান্তি বেড়ে যাবে? ইরাকে সাদ্দামের সময় মানুষ বেশি শান্তিতে ছিল? নাকি সাদ্দামের পরে বেশি শান্তিতে আছে? ইরাকের কোটি পতিরা এখন ফকির। লাখ লাখ মানুষকে সেখানে হত্যা করা হয়েছে। আরো লাখ লাখ মানুষ নিজের ভিটে মাটি ছেড়ে অন্য দেশে চলে গেছে। আর কিছু যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে। এতে অশান্তি আরো বেড়ে গেছে। সিরিয়াতেও কি একইভাবে অশান্তি আরো বেড়ে যাবে না?
সিরিয়াতে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে শান্তি আনার কোনো চেষ্টাই করা হয়নি। “কলা গাছ আমার চাই চাই” এর মত রাশিয়া আগে থেকেই বলে দিয়েছে ‘বাশারকে যেকোনোভাবেই ক্ষমতায় রাখতে হবে’। (এই একজনের জন্য প্রয়োজনে লক্ষ্য লক্ষ্য প্রাণ যাবে)। এতে কি বুঝা যায় যে তারা শান্তির জন্য এসেছে?
ইরাকের আইএস এর বিষয়ে আমার তেমন জানা নাই। হতে পারে তারা সন্ত্রাসী আবার হতে পারে তারা মজলুম আর মিডিয়ার অপপ্রচারের স্বীকার। আল্লাহ ভাল জানেন। তবে সিরিয়ার সুন্নি মুসলমানরা যে মজলুম তা মিডিয়ার মাধ্যম ছাড়াও সেই দেশের মানুষের সাথে কথা বলে কিছুটা জানতে পেরেছি। আর ইরাকের আইএস আর সিরিয়ার আইএস একই দল কিনা তাও আমি জানি না।
কয়েক বছর আগে থেকেই আমেরিকা বলে আসছিল যে, ইরান, উত্তর কোরিয়া আর সিরিয়ার বাশার আসাদ শয়তানের অক্ষ শক্তি। এদেরকে উচিত শিক্ষা দেয়ার হুমকি ধমকিও শোনা গিয়েছিল। কিন্তু এই বাশার যখন সুন্নি মুসলমানদের উপর নির্যাতন শুরু করল তখন আমেরিকা সাদ্দাম আর গাদ্দাফির মত বাশারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য দৌড়ে আসেনি। ইরানের ব্যাপারেও তাদের হুমকি ধমকি শোনা যায়। আবার ঠিকই অস্ত্র সুবিধা দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করে।
এ থেকে যা বুঝা যায় তাহলো শিয়াদেরকে আমেরিকা রাশিয়া সবসময় সাহায্য করবে আর মুখে হুমকি দেবে। আর সুন্নি মুসলমানদেরকে সব সময় তাদের দুশমন মনে করবে। যুদ্ধ করবে অথবা গ্রহযুদ্ধে ঠেলে দেবে। আফগানিস্তানে সুন্নিদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করে যাদেরকে বসানো হয়েছে তারা শিয়া। ইরাকে সাদ্দামকে ক্ষমতাচ্যুত করে যাদেরকে বসানো হয়েছে তারাও শিয়া। সিরিয়াতে বাশার আসাদ শিয়া বলেই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা যাবে না। সুন্নি হলে এত দিনে তাকে মিশিয়ে দেয়া হত।
সুন্নি মুসলমানদেরকে আঘাত করা আর শিয়াদেরকে আমেরিকা রাশিয়ার সাহায্য করার কারণ কি? উত্তর যদি সংক্ষিপ্তভাবে দিতে হয় তাহলে বলতে হবে তারা সবাই একই দল। এক দল আরেক দলকে সাহায্য করবে এটাই তো স্বাভাবিক।
যুদ্ধের মাধ্যমে শান্তি আসে না। শান্তি আসে আলোচনার মাধ্যমে। আগে আলোচনা করে শান্তি আনার চেষ্টা করা হোক। যদি নিষ্ঠার সাথে শান্তির চেষ্টা করা হয় তাহলে তা সফল হবে। আর যদি স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া হয় তাহলে বিপক্ষেও অন্যরা যোগ দেবে স্বার্থের জন্য। এতে যুদ্ধ আরো বড় হয়ে যাবে। তাই শুধু শান্তির জন্যই চেষ্টা করা হোক। যুদ্ধ মারামারি কাটাকাটি এড়িয়ে আলোচনার মাধ্যমেই যেন শান্তি আনার চেষ্টা করা হয়।
বিষয়: বিবিধ
১৫৬৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ قَالُوا إِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُونَ [٢:١١]
আর যখন তাদেরকে বলা হয় যে, দুনিয়ার বুকে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো মীমাংসার পথ অবলম্বন করেছি।
আমেরিকার মূল উদ্যেশ্য হল অস্ত্র বিক্রি ও মুসলিমদের গৃহযুদ্ধে আটকিয়ে রাখা, যাতে করে তারা দুনিয়াতে ইসলামী রাষ্ট্রগঠনে মনোনিবেশ করতে না পারে।
তাই তারা সুযোগ বুঝে চামুচ ফেলছে, আর মুসলিমরা না বুঝে তাই গিলছে।
জাযাকাল্লাহ খাইর
মন্তব্য করতে লগইন করুন