কোরবানীতে যা জানা জরুরী
লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৯:৪৫:৪২ রাত
কোরবানীতে অজ্ঞতা আর অবহেলা বশত অনেকেই অনেক ধরণের ভুল করে থাকেন। যার মধ্যে কিছু এমন ভুল আছে যাতে কোরবানী সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। আর কিছু ভুল আছে যা করলে কোরবানী শুদ্ধ হলেও কিছু ভুলের কারণে কৃত কর্মের জন্য গোনাহ হয়।তাই কোরবানীর বিষয়ে খুব যত্নবান হওয়া সর্তক থাকা ও শিক্ষাগ্রহণ করা জরুরী। এ বিষয়ে নিম্নে কিছু আলোচনা করা হল।
একটি গরুতে সর্বোচ্চ সাত ভাগ কোরবানী হয়।
কেও তিন ভাগ আর কেও চার ভাগ করে নেয়া যেতে পারে। আবার একজন পুরো একটি গরু বা একাধিক গরুও কোরবানী দিতে পারে।
কোরবানীর জন্য যে গরু কেনা হয়েছে, তার রসি, তার গোবর একান্তই গরীব-মিছকিনের হক। তা মালিক ভোগ করতে পারবে না।
গরু জবেহ করা ও গোস্ত কেটে দেয়ার জন্য অনেক সময় মানুষ ঠিক করা হয়। তাদেরকে মজুরী হিসেবে কোরবানীর গোস্ত দেয়া যাবে না। কারণ মজুরী হিসেবে গোস্ত দিলে কোরবানীর গোস্ত বিক্রি করা হয়ে যায়। আবার ভাত খাওয়ানোটাই যদি তাদের মজুরী হয়, অর্থাৎ খানার বিনিময়ে তারা কোরবানীর গরু জবেহ করবে ও গোস্ত কেটে দেবে এ রকম হলে, তাহলে তাদেরকে শুধু কোরবানীর গোস্ত দিয়ে ভাত দেয়া যাবে না। কারণ তখনও কোরবানীর গোস্ত মজুরী হিসেবে বিক্রি করার মত হয়ে যায়। তবে তাদেরকে টাকা দিয়ে মজুরী দেয়ার পরে গোস্ত হাদিয়া হিসেবে দেয়া যাবে এবং কোরবানীর গোস্ত দিয়ে ভাতও খাওয়ানো যাবে। টাকা না দিয়ে গোস্ত মজুরী হিসেবে দিলে জায়েজ হবে না। টাকা দেয়ার পরে দিলে জায়েজ হবে।
শরিকদারদের মধ্যে কোনো এক জনের কোরবানী যদি কোনো কারণে নষ্ট হয়ে যায়, তাহলে অটোমেটিক অন্য শরিকদারদের কোরবানীও নষ্ট হয়ে যাবে। তাই যদি পারা যায় গরু বা ছাগল একা কোরবানী দেয়া ভাল। তা সম্ভব না হলে সব শরিকদারের সতর্ক থাকা ভাল, যাতে কোনো কারণে কারো কোরবানী যেন নষ্ট না হয়ে যায়।
কোরবানীর গোস্তের মত কোরবানীর চামড়াও কেও চাইলে খেয়ে ফেলতে পারবে। বা ব্যবহার করতে পারবে। তবে যদি তা বিক্রি করা হয়, তাহলে তার মূল্য গরিবকে দিয়ে দিতে হবে।
যে গরুর অসুখ আছে বা কাটা ছেড়া আছে, তা দিয়ে কোরবানী করা জায়েজ নাই।
শরিকদারদের মধ্যে গোস্ত বণ্টনের সময় ওজন করে মেপে তা করতে হবে। আন্দাজ করে ভাগ করা জায়েজ নাই।
গরুর ভুঁড়ি অনেকেই ফেলে দেন আবার অনেকেই খান আবার অনেকেই গরীবকে দিয়ে দেন। তো যাই করুন না কেন তাতে সমস্ত শরিকের মত থাকতে হবে।
অনেক এলাকায় গরুর পা গুলো মজুরী হিসেবে ছোট বাচ্চাদেরকে দিয়ে দেয়া হয় যারা গরুর চামড়া ছিলানোর সময় পা ধরে থাকে। এটা জায়েজ নাই। তাদেরকে টাকা দিয়ে মজুরী দেয়া হোক আর গরুর পা বা গোস্ত হাদিয়া হিসেবে দেয়া হোক। তাহলে আর সমস্যা নাই।
কোরবানীর দিন হোক বা পরে হোক বাড়িতে যেসব কাজের লোকেরা বেতন নিয়ে ও ভাত খেয়ে কাজ করে, তাদেরকে শুধু কোরবানীর গোস্ত দিয়ে ভাত দেয়া জায়েজ নাই। কারণ ভাত তো তাঁকে মজুরী হিসেবে দেয়া হচ্ছে, যা কোরবানীর গোস্ত দিয়ে দেয়া জায়েজ নাই। তবে অন্য তরকারীও যদি সাথে থাকে, তাহলে এর সাথে কোরবানীর গোস্তও দেয়া যাবে।
একজন একাধিক হিসসা কোরবানী দিতে পারে। শরিকদারদের মধ্যে সবাই মিলে যদি অন্য কারো পক্ষে একভাগ কোরবানী দিতে চায়, তাহলে যার পক্ষে দিবেন তার যদি কোরবানী ওয়াজিব হয়ে থাকে, তাহলে তাঁকে বলে এবং অনুমতি নিয়ে তার পক্ষ থেকে কোরবানী দিতে পারবেন। আর যদি তার উপর কোরবানী ওয়াজিব না হয়ে থাকে, তাহলে তাঁকে না জানিয়েও দিয়ে দিতে পারবেন।
সপ্তম ভাগ যার পক্ষে দিবেন, তিনি একজনই মানুষ। ঠিক আছে। কিন্তু সেই একজনের পক্ষে আপনারা যারা দিচ্ছেন তারা যদি একাধিক জন হয়ে থাকেন তাহলে এখানে একটু খেয়াল করুন। সবাই মিলে অল্প অল্প দিয়ে একটি ভাগ পূর্ণ করে দেয়ার নিয়ম কোরবানীতে নাই। তাই সবাই যেকোনো একজনকে (টাকা দিয়ে) পূর্ণ এক ভাগের মালিক বানিয়ে দিবেন। সেই একজন পুরো একটি ভাগ অন্য কাওকে বখশিশ দেবে বা অন্য কারো পক্ষে কোরবানী দেবে। এটিই হল নিয়ম।
তবে সেই সপ্তম ভাগ যদি রাসুল সঃ এর পক্ষে দিতে চান? তাহলে ওলামায়ে কেরামদের মধ্যে কেও বলছেন উপরে বর্ণিত নিয়মে একজনকে মালিক বানিয়ে দিতে হবে, তিনিই রাসুল সঃ এর নামে কোরবানী দিবেন। আর অন্য ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, সাধারণ মানুষদের বেলায় এই নিয়ম ঠিক আছে। তবে রাসুল সঃ এর বেলায় সবার পক্ষ থেকে এক ভাগ কোরবানী দেয়া জায়েজ হবে। এটা অন্য কারো বেলায় জায়েজ হবে না। অর্থাৎ সবাই মিলে কারো পক্ষে কোরবানী দিতে হলে প্রথমে একজনকে পূর্ণ একভাগ কোরবানীর মালিক বানিয়ে দেবেন, তারপর তিনি পুরো একটি ভাগ কারো পক্ষে কোরবানী করবেন। কিন্তু রাসুল সঃ এর নামে দিলে সেটা প্রথমে কোনো একজনকে মালিক বানাতে হবে না। সবার পক্ষ থেকে নিয়ত করলেই চলবে। এটা রাসুল সঃ এর জন্য খাছ। অন্য কারো বেলায় জায়েজ নাই।
আবার অনেকেই মনে করেন যে কোরবানীতে ছয় জন মানুষের নাম দেয়া যায়, বাকি একভাগ রাসুল সঃ এর নামে অটোমেটিক নির্ধারিত হয়ে যায়। এটাও ভুল ধারণা। কোরবানীতে সাত জনের নাম দেয়া যায়। একজন যদি রাসুল সঃ হন তাহলে বাকি ছয়জন আপনারাই। আর যদি রাসুল সঃ এর পক্ষে একভাগ না দিয়ে থাকেন তাতেও কোরবানী আদায় হয়ে যাবে।
একটি গরুকে যদি দুই জন মিলে কোরবানী করে তাহলে সমান দুই ভাগে করা যাবে। এতে আধা ভাগ অন্য ভাগের তাবেহ হিসেবে কোরবানী সহীহ হয়ে যাবে। তবে কারো পক্ষে আধা ভাগ কোরবানী করা বা কয়েকজন মিলে অন্য কারো পক্ষে আধা ভাগ করে দিয়ে এক ভাগ পূরণ করে দেয়া যায়েজ নাই
আবার দুই জন মিলে একটি গরুতে ৩ ভাগ আর ৪ ভাগ হিসেবে দিলেও দিতে পারে।
(কিছুটা এডিট করে দেয়া হয়েছে)
বিষয়: বিবিধ
২৩১২ বার পঠিত, ৩৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তবে গোস্ত ভাগাভাগির বিষয়ে অন্যমত ও আছে। সবাই যদি একমত হন ওজন করা নিয়ে বিশেষ সমস্যা নাই। সাত ভাগই দিতে হবে গরু-মোষ দিলে এমন কোন কথাও সম্ভবত নাই। সর্বোচ্চ সাত জন এর নামে দেওয়া যাবে।
আর ওজন করার বিষয়ে ওলামায়ে কেরাম গুরুত্ব দিয়েছেন সাথে সবার সন্তুষ্টি তো থাকতেই হবে। কলিজা রান মগজ সবাই যেন পায় তাও খেয়াল রাখতে হবে।
ধন্যবাদ আপনাকে।
নাকি ভুল কইলাম @ হাবিব ভাই??
পোস্টটি স্টিকি করার জন্য ব্লগ কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
পোস্টটি স্টিকি করার জন্য ব্লগ কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
'গরু-মহিষ-উট ইত্যাদি বড় পশুর ক্ষেত্রে এক থেকে সাত পর্যন্ত নামে অংশ নেয়া যায়' বলেই শুনেছি!
তাহলে শুধু দুই জনে গরু কুরবানী দেয়া যাবে না কেন?
শুধুই একা বা সাত নামেই দিতে হবে?
বিষয়টা শংসয়ে ফেলে দিল!
তাই হবে না। তবে কেও তিন আর কেও চার নিলে; অথবা তিন তিন নিয়ে আরেকটি অন্য কাওকে দিলেই হয়ে যাচ্ছে।
এক থেকে সাত পর্যন্ত অংশ নেয়া যায় বড় পশুর বেলায়!
তাই আপনার সাতের যে হিসেব মিলিয়ে উত্তর দিলেন তা যথর্থ নয়!
শুধু দুই জনে একটা গরু দিলে সেখানেও সাতের হিসাব আসবে না,সাড়ে তিনের হিসাব সঠিক নয়!
ধন্যবাদ আপনাকে।
আল্লাহ আমাদের কবুল করুন,আমিন!!
যাজাকাল্লাহু খায়রান।
ধন্যবাদ আপনাকে।
জাযাকাল্লাহ..
নিচের এটা বুঝলামনা-
যদি তাকে অন্য কোন তরকারী দেয়া হয় এবং গোস্ত না দেয়া হয় তাতে তো কোন দোষ নেই, কী বলেন??
এ মাসআলাটি বুঝতে পারছিনা!!
[পরিবারের লোকেরা গোস্ত খাবে, আর কাজের লোকের জন্য ডাল-ভর্তা, যেহেতু কুরবানীর কয়েকদিন সাধারণতঃ অন্য তরকারী পাকানো হয়না!]
আমার মনে হয় বিষয়টি এমন হবে-
অস্থায়ী/দিনমজুর ধরণের শ্রমিকের জন্য এটা প্রযোজ্য, কিন্তু যারা মাস চুক্তিতে কাজ করেন তাদের জন্য প্রযোজ্য হবেনা, কেননা তারা পরিবারের সদস্যের মতই!
যদি কাজের মানুষকে অন্যের বাড়ীতে দাওয়াতে সাথে নিয়ে যাওয়া হয় তবে তো তাকে ঐ বেলার খাবারের মূল্য দেয়া ওয়াজিব হয়ে পড়ে!! বিষয়টা কি এমন?? কঠিন হয়ে যায় না কি??
"ইয়াসসিরু ওয়া লা তুয়াসসিরু.."??
আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন!!
এছাড়া রান্নাকরা গোস্তের উপর ঐ হুকুম প্রযোজ্য না হওয়ার কথা, যদি তা!!
**************************
একটা গরু দুজনে/চারজনে/ছয়জনে সমান অংশে কুরবানী করলে সমস্যা আছে না কি??
[বাধ্যতামূলক সাত ভাগ,
না কি সর্বোচ্চ সাত ভাগ?]
আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন!!
বুঝতেই তো পারছেন, যেখানে কোরবানীর গোস্ত শ্রমিকের মজুরী হয়ে যায় সেখানে তা দেয়া যায়েজ নাই। তবে অন্য তরকারী দিলে সাতে কোরবানীর গোশ্তও দেয়া জায়েজ আছে।
স্থায়ী কাজের লোক নাকি অস্থায়ী কাজের লোক, কাকে দিলে কেমন হবে তা আমি জানি না। তা বড় মুফতি সাহেবের কাছে জিজ্ঞেস করতে পারেন। অন্য তরকারী দেয়া আর গোস্ত না দেয়া ভাল দেখায় না। তাই অন্য তরকারীর সাথে গোস্ত দেয়া ভাল। অন্য তরকারী না থাকলে গোস্ত দিয়ে খানা দেয়া এবং তরকারীর জন্য তাকে টাকা দেয়া যেতে পারে।
রান্না করা গোশ্তের বেলাও একই কথা তা মুফতি সাহেব থেকে জেনেছি।
গরুতে সাত ভাগ দিতে হবে কম দেয়া যাবে না এরকম মনে করেছিলাম। পরে জানলাম কম ভাগেও ভাগ করা যায়। তবে আধা ভাগ করা যায় না।
ধন্যবাদ আপনাকে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন