তথ্য প্রযুক্তিতে আলেমসমাজকে চাই ব্যাপক ও অগ্রসর অবস্থানে
লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ০৪ আগস্ট, ২০১৫, ১২:৩১:৫১ রাত
একটা সময় ছিল যখন যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল খুবই মন্থর। একটা খবর এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছাতে চিঠি বা মানুষের উপর ভরসা করা ছাড়া উপায় ছিল না। কখন আসবে সেই চিঠি মানুষ তার অপেক্ষায় বসে থাকতে হত। দিন-সপ্তাহ-মাস পেরিয়ে যেত সেই খবর আসতে। এখন আর সেই দিন নেই। এখন অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগ। আধুনিক বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার মোবাইল আর ইন্টারনেটের বদৌলতে এখন বিশ্বের কোথায় কি হচ্ছে না হচ্ছে সব মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। বলা যায় বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। এই সব আবিষ্কার নিশ্চয় আল্লাহতা’লার এক বিশেষ রহমত মানব জাতির উপর। আল্লাহ তাআলা বলেন,
এবং তিনি তাঁর পক্ষ থেকে তোমাদের আয়ত্বাধীন করে দিয়েছেন যা আছে নভোমন্ডলে ও ভূমণ্ডলে। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল শ্রেণীর জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে (সূরা জাসিয়া : ১৩)।
আল্লাহর এই নেয়ামতের সঠিক ব্যবহার করে যে কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে উন্নয়ন আর অগ্রগতির বিরামহীন দৌড়ের প্রতিযোগিতায়। মানবসেবা আর দীনি খেদমত করে বিশ্ব-দরবারে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে পারে। আর যারা এই প্রযুক্তি থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রাখবে তারা এই প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহর নেয়ামতের অবহেলা করলে বা সঠিক ব্যবহার না করলে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা হবে না। শুকরিয়া আদায় না করলে আল্লাহ তালা তার নেয়ামত সেই জাতি থেকে ফিরিয়ে নেন।
ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّـهَ لَمْ يَكُ مُغَيِّرًا نِّعْمَةً أَنْعَمَهَا عَلَىٰ قَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۙ وَأَنَّ اللَّـهَ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ﴿٥٣﴾
তার কারণ এই যে, আল্লাহ কখনও পরিবর্তন করেন না, সে সব নেয়ামত, যা তিনি কোন জাতিকে দান করেছিলেন, যতক্ষণ না সে জাতি নিজেই পরিবর্তিত করে দেয় নিজের জন্য নির্ধারিত বিষয়। বস্তুতঃ আল্লাহ শ্রবণকারী, মহাজ্ঞানী।
বর্তমান যুগটা ইন্টারনেটের যুগ। ইন্টারনেট ছাড়া এখন পৃথিবী অচল। কি আছে এই ইন্টারনেটে? এই প্রশ্নের উত্তর অনেক দীর্ঘ। তাই কি আছে সেটা প্রশ্ন না করে বরং প্রশ্ন করা উচিত “কি নাই এই ইন্টারনেটে?” মুহূর্তে চিঠির আদান-প্রদান, ভিডিও কনফারেন্স [দেখে দেখে সরাসরি কথাবার্তা বলা], বাংলা, ইংরেজি, আরবি, উর্দুসহ অনেকগুলি ভাষায় বই-কিতাব পড়া, কোরআন হাদীসের তাফসীর ইত্যাদি সহজে খুঁজে বের করে দেখা, দীনের প্রচার প্রসার, ওয়াজ-নসিহত করা বা শোনার ব্যবস্থা সব আছে। দূর্লভ কিতাবগুলো যা যোগাড় করা অনেক কষ্টসাধ্য সেইসব কিতাব এখন মাউসের ক্লিকেই দেখা সম্ভব। নিত্য নতুন মাসআলা সম্পর্কে সারা বিশ্বের বড় বড় আলেমগণ কী সমাধান দিচ্ছেন তা জানা এখন কয়েক মিনিটের ব্যাপার মাত্র। অনেক বড় ইসলামি লাইব্রেরী যা সংরক্ষণের জন্য সাধারণত কয়েকটি বড় বড় ঘর প্রয়োজন হয় তা এখন কম্পিউটারে রাখা এবং তা থেকে অধ্যয়ন করে উপকৃত হওয়া খুবই সহজ। যেখানে আমরা একটি হাদিসের কিতাব বা তাফসীরের কিতাব এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বহন করে নিতে কষ্ট বোধ করি সেখানে হাজার হাজার কিতাব ছোট্ট একটি মেমোরিতে ভরে নিয়ে অথবা মেমোরি ছাড়াই শেয়ারিং সফটওয়ারের মাধ্যমে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এক দেশে বসে অন্য দেশের কম্পিউটারে সেটিং আর প্রোগ্রামিং সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। মাকতাবাতুশ শামেলাসহ হাজার হাজার কিতাবের অনেকগুলি বড় বড় লাইব্রেরী এখন বিনামূল্যে নেটে পাওয়া যাচ্ছে। এইসব লাইব্রেরী থেকে কিতাব পড়ে উপকৃত হওয়া সম্ভব।
এ ছাড়া ওয়াজ মাহফিল, তাফসীর মাহফিল, কোরআন হাদিসের ক্লাস, জুমার খুতবা ইত্যাদি নেটে আপলোড করে বা সরাসরি প্রচার করে দীনের তাবলীগের কাজ অনেক খানি এগিয়ে নেওয়া যায়। দরকারি তথ্যাদি বা ডকুমেন্টগুলি সহজে নেটে সংরক্ষণ করা যায়। এবং তা নষ্ট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ঘরে বসেই দেশ বিদেশের বড় বড় সব লাইব্রেরীর কিতাব অধ্যয়ন করার সুযোগ, ব্লগ, অনলাইন পেপার, এবং বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের সাইটে কোরআন হাদিসের আলোকে দীন প্রচারসহ আরও বহু রকমের সুবিধা দিচ্ছে বর্তমান এই নেট। ব্যবসা-বাণিজ্য আর ব্যাংকিং সুবিধার কথা নাই-বা বললাম। এইসব সুবিধা গ্রহণ করে আমরা দীনের খেদমত করতে পারি আরও দ্রুত গতিতে এবং বৃহত্তর পরিসরে।
ইন্টারনেটে আয় করারও ব্যবস্থা আছে। বিভিন্ন দেশের বড় বড় কোম্পানিগুলোর বিভিন্ন কাজ ঘরে বসেই করে দেওয়া যায়। এতে পারিশ্রমিকও পাওয়া যায় ভাল। কওমী মাদরাসার ছাত্রদের যেহেতু আরবী চর্চা রয়েছে তাই তারা মধ্যপ্রাচ্যের আরব রাষ্ট্রগুলোতে অবস্থিত কোম্পানিগুলোর কাজ ঘরে বসেই করে দিতে পারেন। নিজে স্বাবলম্বী হওয়া এবং দেশের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন দুটোই এক সাথে হয়ে যায় এতে।
কওমী মাদরাসাগুলোকে খুব দ্রুত ইন্টারনেট জগতে প্রবেশ করা এবং তথ্য-প্রযুক্তির সুযোগ-সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষা-দীক্ষা, দাওয়াত ও তাবলীগের কাজে গতি সঞ্চার করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। সত্য বলতে কি, আরও অনেক আগেই এই জগতে আসা উচিত ছিল। কারণ বর্তমানে কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধে চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একদিকে কোরআনের তরজমা পড়ে নিজেদেরকে মুজতাহিদ হিসেবে দাবি করা বিভিন্ন ইসলামি দল কওমী মাদরাসার আলেমগণের বিপক্ষে ইন্টারনেটে প্রচারণা চালাচ্ছে এবং দেওবন্দী ওলামায়ে কেরাম সম্বন্ধে কুফরী আর শিরকী আক্বীদা পোষণ করেনÑ বলে মিথ্যাচার করছে, অন্যদিকে সেকুলারপšী’ একটি গোষ্ঠী কওমী মাদরাসাগুলোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে যাচ্ছে ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে।
আমাদের সমাজে ওলামায়ে কেরামের প্রভাব প্রতিপত্তি খুবই প্রবল। এদেশের মাটির গভীরে ওলামায়ে কেরামের শিকড় প্রোথিত। ওয়াজ মাহফিল, সীরাত মাহফিল, ইমামতি, সামাজিক কাজে নেতৃত্ব প্রদান করাসহ বিভিন্ন কারণে সাধারণ মানুষের উপর আলেম সমাজের প্রভাব দৃঢ় হওয়ার কারণে এদেশের জনগণকে দীন থেকে দূরে সরানো সহজ নয়। তাই ইসলাম ও মানবতার শত্রু একটি মহল আর তাদের উচ্ছিষ্টভোগী কিছু জ্ঞানপাপী, সাধারণ জনগণকে দীন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার জন্য আলেমদের বিরুদ্ধে সমাজে বিদ্বেষ ছড়ানোর ঘৃণ্য অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।
বিভিন্ন মুসলিম দল যারা কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালাচ্ছে তারা হাতেগোনা কিছু মানুষ হওয়া সত্ত্ওে তাদের প্রচারণার ব্যাপকতা দেখে অবাক হতে হয়। ইউটিউবে হাজার হাজার বক্তব্য, ব্লগে এবং তাদের ওয়েবসাইটে হাজার হাজার প্রবন্ধ, নিবন্ধ, বিবৃতি প্রচার করছে আলেমসমাজ ও কওমী মাদরাসার বিরুদ্ধে। সারা বিশ্বে লাখ লাখ মানুষ তা দেখছে, শুনছে , পড়ছে।। যার ফল হিসেবে কওমী মাদরাসা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা জন্মাচ্ছে।
আর ধর্মবিদ্বেষী সেক্যুলারগোষ্ঠী মাদরাসার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা প্রচারণা চালাতে প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াসহ সব ধরনের প্রচার মাধ্যমের সাহায্য নিচ্ছে। ইন্টারনেটের বদৌলতে তা জনগণের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে দ্রুত। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মারামারি লেগে থাকা সত্ত্বেও তারা সেইসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার কথা না বলে যেসব মাদরাসাতে কোনো দিন মারামারি হয় না, দীনদার নেককার চরিত্রবান ভদ্র মানুষ তৈরি হয় সেইসব মাদরাসা বন্ধের আবদার করছে। তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে মানুষকে কওমী মাদরাসা থেকে দূরে রাখতে। যাতে মানুষ দীনি শিক্ষা অর্জন করতে না পারে। তাদের মিথ্যা প্রচারণার ফলে কওমি মাদরাসাগুলো সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে বিরূপ ধারণা জন্ম নিচ্ছে। এই সব মিথ্যা প্রচারণার জবাব দেওয়া ইন্টারনেট ছাড়া সম্ভব নয়। বর্তমান বিশ্বে মিডিয়াকে শক্তিশালী অস্ত্র মনে করা হয়। এই মিডিয়া রাতকে দিন আর দিনকে রাত বানাতে পারে। ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা প্রচারণার জবাব সত্য প্রচারণার মাধ্যমেই দিতে হবে। কারণ আঘাত যেদিক থেকে আসে সেদিকেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা বুদ্ধিমানের কাজ।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আলেমসমাজ বরাবরই নিজেদেরকে আধুনিক প্রযুক্তি থেকে দূরে রাখতেই যেন স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। মিডিয়াতে তাদের বিপক্ষে কতটা মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে এই খবরও অনেকের জানা নেই। আলেমসমাজের এই মিডিয়াবিমুখতা এবং যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অবচেতন অবস্থা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন মূল্যবান সম্পদের পাহারাদারের সাথে তুলনা করা যায়। তারা যখন জাগবেন তখন হয়ত দেখবেন আমাদের পূর্বসূরী আউলিয়ায়ে কেরাম, ওলামায়ে এজামের মেহনতের বদৌলতে যে দীনি পরিবেশ এদেশে তৈরি হয়েছিল, শত্রুর মিথ্যা প্রচারণার কারণে সেই পরিবেশ অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। মিডিয়াতে আলেম সমাজের পদচারণা একেবারেই সীমিত হওয়ার কারণে তাদের মাঝে অনেক জ্ঞানী এবং যোগ্য মানুষ থাকা সত্ত্বেও শত্রুর মিথ্যা প্রোপাগান্ডার জবাব দেওয়া যাচ্ছে না। আর দিলেও তা মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছেনা।
কিছু কিছু মাদরাসা থেকে কিছু দীনি সাময়িকী বের হয়, তার মধ্যে দুয়েকটি ছাড়া বাকিগুলো নেটে পাওয়া যায় না। মাদরাসা এবং আলেম সমাজের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের জবাব দেওয়া এবং তা প্রচারের জন্য কোনো দৈনিক পত্রিকা তো নেই-ই; উল্লেখযোগ্য কোনও ব্লগও নেই, নেই কোনও অনলাইন পত্রিকাও। অথচ এ রকম প্রচারমাধ্যমগুলোতেই মাদরাসা সম্পর্কে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে বেশি। অবশ্য ইদানীং কিছু কিছু আলেম এ লক্ষ্যে এগিয়ে আসছেন। দেশ থেকে এবং প্রবাস থেকে তারা কওমী মাদরাসার সঠিক আক্বীদা, দেশ ও জাতির পক্ষে মাদরাসাগুলোর অবদান এবং তাদের বিপক্ষে মিথ্যা প্রচারণার জবাব দিয়ে যাচ্ছেন। ইউটিউবেও কিছু কিছু আলেমের বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। তাদেরকে আল্লাহ তা’লা উত্তম বিনিময় দিন। এতে আগের তুলনায় কিছুটা সচেতনতা লক্ষ্য করা গেলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা একেবারেই নগণ্য। মাদরাসার পক্ষে যারা কাজ করছেন তারা অধিকাংশ ব্যক্তিগত উদ্যোগেই সেটা করছেন। তা যথেষ্ট নয়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে মাদরাসাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে মিডিয়াতে।
মাদরাসাবিরোধীরা তো বিরোধিতার জন্য যা করা দরকার করছেই। আবার অতি শুভাকাক্সক্ষী একটি গ্রুপকে কওমী মাদরাসা সংস্কার আর যুগোপযোগী করার জন্য বিভিন্ন উপদেশ দিতে দেখা যায়। সংস্কার, আধুনিকায়ন, যুগোপযোগী শব্দগুলো শুনতে সুন্দর হলেও তাদের মনগড়া যেসব পরিকল্পনা তারা পেশ করে থাকে, তা যদি বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে মাদরাসাগুলোকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়ে যাবে অনেকখানি। তখন মাদরাসাগুলো আর মাদরাসা থাকবে না। এখন যেভাবে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মারামারি লেগেই থাকে সেরকম কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে যাবে তখন মাদরাসাগুলোও অনুরূপ প্রবণতা দেখা দেবে। তাতে দীনদার আলেম আর তৈরি হবে না। তৈরি হবে কিছু দুনিয়াদার ‘নিমে মোল্লা খতরায়ে জান’। যেমন এক কালের মুহসিনিয়া মাদরাসা বর্তমানে মুহসিন কলেজ হয়ে গেছে। এরকম আরো অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়।
মাদরাসা সংস্কারের প্রয়োজন আমি অস্বীকার করছি না। সংস্কারের প্রয়োজন আছে। তবে তা হতে হবে আলেম সমাজের তত্ত্বাবধানে। সেকুলারদের দ্বারা তা হবে না। মূল সিলেবাস ঠিক রেখে নিচের দিকে ইংলিশ আর কম্পিউটার শিক্ষাসহ কিছু প্রয়োজনীয় শিক্ষা বাড়াতে হবে। আর দওরায়ে হাদিস শেষ করার পর বিশেষ বিশেষ কিছু কোর্স করে বর্তমান বিশ্বের প্রয়োজন অনুসারে দাওয়াতি কাজ করার মত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। মাতৃভাষা বাংলা, কোরআনের ভাষা আরবি আর আন্তর্জাতিক ভাষা ইংলিশে দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
মাদরাসাগুলোর বিরুদ্ধে যেভাবে ষড়যন্ত্রের বন্যা বয়ে যাচ্ছে তার মোকাবিলা করতে হলে মাদরাসাগুলোকে উপরোক্ত পদক্ষেপ ছাড়াও ইন্টারনেটে মাদরাসার ওয়েবসাইট বানিয়ে তাদের আক্বীদা বিশ্বাস, পড়ালেখার সিলেবাসসহ যাবতীয় তথ্যাদি জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। বর্তমানে মাদরাসা সম্পর্কে যেসব ভুল ধারণা প্রচার করা হচ্ছে তার বিপরীতে সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারলে মানুষের ভুল ধারণা অনেকটা কমে যাবে। কোরআন হাদিসের জ্ঞানে পারদর্শী দীনদার ছাত্র তৈরিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় এমন কোনো শর্ত না মেনে যদি সরকারি স্বীকৃতি নেওয়া যায় তাহলে তা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু কোরআন হাদিসের আসল জ্ঞানার্জনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে এমন কোনো শর্ত মানা যাবে না।
মাদরাসাগুলোর প্রকাশিত ম্যাগাজিনগুলোকে যথাসম্ভব দ্রুত ইন্টারনেটে প্রচার করতে হবে এবং ব্লগ, অনলাইন পত্রিকা, ওয়েবসাইট ইত্যাদির মাধ্যমে মাদরাসার পক্ষ থেকে দাওয়াতী কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। বিশেষ করে ওলামায়ে দেওবন্দের আক্বীদা বিশ্বাস যে পরিপূর্ণ ইসলামসম্মত তা মানুষের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে। দৈনন্দিন জীবনে মানুষের বিভিন্ন সমস্যার ইসলামি সমাধান যাতে সরাসরি বা দ্রুত সময়ে দেওয়া যায় তার জন্য অনলাইনে প্রশ্নোত্তরের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
বিভিন্ন দেশের স্কুল-কলেজ মাদরাসার বইগুলো এখন ই-বুক আকারে পড়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেভাবে আমাদের দেশের মাদরাসাগুলোও প্রত্যেক শ্রেণীর কিতাবগুলো ই-বুক আকারে পড়ার সুবিধার দিকে নজর দিতে পারেন। এর জন্য প্রথমে সমস্ত কওমি মাদরাসাকে এক বা একাধিক বোর্ডের অধীনে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা দরকার। মাদরাসার লাইবে্িরর, পরিচিতি,নিয়ম-কানুন, ভর্তি ফর্ম, ইতিহাস ঐতিহ্য, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য,দীন ও জাতির সেবায় মাদরাসার অবদান, তাদের দাওয়াতী কার্যক্রম, অতীত ও বর্তমানের উল্লেখযোগ্য শিক্ষকগণের জীবনী ইত্যাদি নেটে রাখতে হবে।
অনেকেই ভাবতে পারেন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মানুষ বাংলাদেশ বেশি নেই তাই নেটে প্রচারণার তেমন গুরুত্ব নেই। এটা ভুল ধারণা। চার বছর আগে যেখানে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র পাঁচ লাখ সেখানে এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই কোটিতে। আগামীতে তা আরোও দ্রুতগতিতে বাড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। বর্তমানেও দেশে এবং দেশের বাইরে অনেক বাংলাদেশী নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। তাছাড়া কাগজের পেপারে প্রতিক্রিয়া জানানোর সুযোগ থাকে না কিন্তু ইন্টারনেটে তা থাকে । এ কারণে কাগজের পেপারের চেয়ে এখন অনলাইনের প্রতিই মানুষের আকর্ষণ বেশী।
নেটে অনেক খারাপ বিষয় আছে এই অজুহাতে অনেকেই নেট ব্যবহার করতে চান না। তাদের জানা উচিত ইন্টারনেট একটা আলাদা জগত। বাস্তব জগতে যে রকম ভালো আর মন্দ দুটোই আছে নেট বা ভার্চুয়াল জগতেও আছে। বাজারে ভালো আর মন্দ দুই ধরনের জিনিসই পাওয়া যায়। কেউ ভালো জিনিস কিনছে আর কেউ খারাপ জিনিস কিনছে। তাই বলে কি আমরা বাজারে যাই না? হ্যাঁ যাই এবং খারাপ বিষয় থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখি। আমরা বাস্তব জগতে খারাপ বিষয় থেকে যেভাবে বেঁচে থাকি ঠিক সেভাবে নেট আর ভার্চুয়াল জগতের খারাপ বিষয় থেকেও নিজেকে বাঁচাতে হবে। বাস্তব জগতের খারাপ বিষয় থেকে বেঁচে থাকার জন্য যে রকম বিভিন্ন উপায় আছে ঠিক সেভাবে নেটের খারাপ বিষয় থেকেও বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন উপায় আছে। তাই খারাপের অজুহাতে নেট ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। আসলে ইন্টারনেট জগতটা একেক জনের কাছে একেক রকম। আমাদের কাছে ইন্টারনেট হচ্ছে জ্ঞানের বিশাল এক ভাণ্ডার।
বিষয়: বিবিধ
১২৭৪ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
নতুন প্রযুক্তিকে গ্রহনে আলেম সমাজের দেরি অনেক ক্ষেত্রেই সমস্যার সৃষ্টি করেছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন