মধ্যপ্রাচ্যে বাঙালির ঈদ

লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ১৭ জুলাই, ২০১৫, ০৭:১২:১৭ সন্ধ্যা



মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ৫০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই তিন বছর বা দুই বছরের মাথায় বাড়ী যাওয়ার সুযোগ পায়। এই দীর্ঘ সময় দেশ ও দেশের আত্মীয়স্বজন থেকে দূরে থাকা কতটা কষ্টের তা একমাত্র ভুক্তভুগি ছাড়া আর কেও বুঝবে না। মোবাইল আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে আগের চেয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হলেও দেশের আত্মীয়স্বজনদের সাথে দেশে থাকার ইচ্ছা, তাদের সাথে ঈদ করার আকুতি এবং তাদের থেকে দূরে থাকার কষ্ট প্রবাসীদের অন্তরে বিন্দুমাত্রও কমে না।

বছরের পর বছর আপনজনদের কাছ থেকে অনেক দূরে প্রচণ্ড গরম ও কনকনে শীতের মধ্যে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যায় তারা শুধু দেশের আপনজনদের মুখে একটু হাসি ফুটানোর জন্য। নিজের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়গুলো তারা উৎসর্গ করে দেয় আপনজনদের জন্য। দূর দেশে থেকেও তাদের মন পড়ে থাকে সেই মাতৃভূমিতে, যেখানে রয়েছে তার মাথার তাজ বাবা মা ও প্রাণপ্রিয় স্ত্রী ছেলে মেয়ে ও আত্মীয়স্বজন। প্রতি মুহূর্তে মনে পড়ে তাদের কথা। কখন দুটা টাকা নিয়ে দেশে গিয়ে আপনজনদের মুখের হাসি দেখবে সেই প্রতীক্ষায় কেটে যায় দিন মাস বছর। প্রতিটি সেকেন্ড এখানে কাটে ঘণ্টার মত, আর প্রতি ঘণ্টা কাটে দিনের মত আর প্রতি দিন কাটে যেন দীর্ঘ একেকটা বছরের মত। দিনের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম শেষে যখন রাতে ঘুমাতে যায় তখন আবার চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ভেসে উঠে আত্মীয়স্বজনের মুখ। কখন দেশে যাবে, স্ত্রী সন্তান বাবা মার মুখ দেখবে এইসব ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়া যেন প্রতিদিনের রুটিন।

এখানে জীবন মানে রাত দিনের নিরানন্দ চক্র। যেখানে হাসি খুশির কোনো স্থান নাই। একই রকম কাজ আর একই রকমের নিয়মে ধরাবাঁধা জীবনচক্র যেন আর শেষ হতে চায় না। এক ঘেয়েমী কাটানোর জন্য কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ নাই। বাৎসরিক আনন্দ উৎসব ঈদ পরবের দিনগুলো এখানে প্রবাসীদের মনে সামান্যতম আনন্দের দোলাও দিতে পারে না। বরং এখানে ঈদ আসে বেদনার ক্ষত চিহ্নতে নতুন করে আরো একটু লবণের ছিটা দেয়ার জন্য। এই দিনগুলোতে মনের ভিতরের জমে থাকা কষ্টগুলো আবার জীবন্ত হয়ে যায়। এখানে ঈদ মানে চোখের পানি। ঈদ মানে বেদনার ক্ষত নতুন করে তাজা হয়ে উঠা।

দেশের আত্মীয়স্বজনেরা অনেক সময় জানতে চায় প্রবাসীদের ঈদ কেমন কাটে? তারা কি চাঁদরাতে বা তার আরো আগে থেকে ঈদের বাজার করতে মার্কেটে যায়? ঈদের দিন নতুন জামা পড়ে ঘুরে বেড়ায়? একে অন্যের কাছে গিয়ে ফিরনি সেমাই খায়? এইসব বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকে দেশের অনেক মানুষের মধ্যে। তাই মধ্যপ্রাচ্যে বাঙালিদের ঈদ কেমন কাটে তার সামান্য ইঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করছি।

এখানে ঈদটা একেক জনের কাছে একেক রকম। অল্প কিছু মানুষের কাছে এখানে ঈদ আনন্দের হলেও অধিকাংশ প্রবাসীর কাছে ঈদ মানেই কান্না। সারা বছরের জমিয়ে রাখা কান্নার বাঁধভাঙ্গা স্রোত যেন ঈদের দিন আর কোনো বাঁধা মানতে চায় না। দু চোখ বেয়ে ঝরে পড়ে বিরহের অশ্রু। বুকে চেপে বসে কষ্টের হিমালয়। কান্নার গতি যেন থামতেই চাই না। জোর করে থামাতে চাইলে গলায় কিছু একটা এসে আঁটকে থাকে। খানা খেতে বসলে চোখের পানি ঝরে পাড়ে ভাতের উপর। হায়রে কপাল, আমি আজ কোথায়? কোথায় আমার ছেলে মেয়ে? কোথায় আমার বাবা মা? কোথায় প্রাণপ্রিয় স্ত্রী? তারা কি নতুন জামা কাপড় কিনেছে? ফিরনি সেমাই রান্না করেছে তো? আমার কথা কি তারা স্মরণ করছে? আমার অনুপস্থিতি তাদের কাছেও কি কষ্টের? এইসব ভাবতে ভাবতে ভেজা চোখেই ঈদের দিনটা শেষ হয়। পর দিন কারো ছুটি আছে আর কারো নাই। আবার শুরু হল হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম। উদ্দেশ্য আমার কষ্ট হলেও আমার আত্মীয়স্বজন যেন একটু সুখ পায়। বাবাকে যেন আর কষ্ট করতে না হয়। স্ত্রী যেন সুন্দর একটি শাড়ি পরতে পারে। আর আমার ছেলে মেয়েরা যেন স্কুলের বই খাতা কলম ঠিকমত পায়। পাশের বাড়ীর ছোট ছেলে মেয়ের হাতে সুন্দর খেলনা দেখে আমার সন্তানেরা যেন মনে কষ্ট না পায়। কয়েক বছর পরে বাড়িতে এসে যেন সবাইকে নিয়ে একটু সুখে থাকতে পারি। তাই আমার জীবনের কয়েকটা বছর আত্মীয়স্বজনদের জন্য যেন উৎসর্গ করে দিলাম। নিজের সুখ ত্যাগ করলাম স্বজনদের সুখের জন্য। এটাই প্রবাস। এটাই নিয়তি।

ঈদের আগের দিনগুলোতে এখানে বাজার সদায় করার কোনো রকমের ধুম পড়ে না। এখানে এদেশের মানুষের কাছেই শুধু ঈদ আসে। আমাদের কাছে আসে না। আমাদের কাছে স্বাভাবিকভাবে একপ্রকার নিজের অজান্তেই ঈদের তারিখটা শুধু আসে। যারা দোকানে কাজ করে তাদের জন্য এই রাতে কিছুটা বাড়তি সময় দোকানে থাকতে হয়, আর সকালে ঈদের জামাতে নামাজ পড়তে হয়, এই ছাড়া অন্য কোনোভাবেই ঈদের লক্ষণ তাদের কাছে প্রকাশ পায় না।

আমানের কাছে ঈদ কেমন তা তার মুখেই শোনা যাক। রমজানের শুরুতেই রমজানে মাসের জন্য খরচটা দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। এবার ঈদের খচর পাঠানোর পালা। মাস ফুরাতে আরো দেরি আছে। তত দিন বসে থাকা যাবে না। তার আগেই ঈদের খরচ দেশে পাঠাতে হবে। কফিলের কাছে যদি বলি, হয়ত এ মাসের বেতনটা মাস ফুরানোর আগেই দিয়ে দিতে পারে। বোনাস তো দেবে না সেটা জানা কথা। অন্তত বেতনটাও যদি ক দিন আগে পাই, তাহলে দেশের আত্মীয়স্বজন ঠিকঠাক মত ঈদের বাজার করতে পারবে। গেলাম কফিলের কাছে। সালাম দিয়ে অনেক বুঝিয়ে বললাম যে এমাসের বেতনটা আমাকে একটু আগেই দিয়ে দিন। বাড়িতে ঈদের খরচের টাকা ক দিন আগেই পাঠাতে হবে। তিনি বললেন এক দিন আগেও বেতন দেয়া যাবে না।

এ দিকে টাকা পাঠাতে দেরি হলে দেশে বাজার করা খুব কষ্ট হয়ে যাবে। তাই বন্ধু বান্ধবদের কাছ থেকে ধারকর্জ করেই দেশে টাকা পাঠিয়ে দিলাম। রমজানে আর ঈদে কিছু বাড়তি খরচ আছে। তাই নিজের জন্য একটি টাকাও না রেখে আরো কিছু কর্জ করে সব টাকাই পাঠিয়ে দিলাম।

চাঁদরাতে অনেকক্ষণ দোকানে থাকতে হয়েছে আমাকে। তাই রুমে ফিরতে প্রায় তিনটা বেজে গেল। একারণে যারা আগের নিয়মে ঘুমিয়ে আছে তাদের ঘুম ভাঙ্গল বাতির আলোর কারণে। একপ্রকার বিরক্তি সহকারে দুই একজন চিল্লায় উঠলো 'বাতি দিয়েছে কেরে?' পরক্ষণেই যখন তাদেরকে মনে করিয়ে দিলাম যে আজ ঈদ। উঠে গোসল সেরে নাও, তখন তারাও বুঝতে পারলো যে এই সময় ঘুম ভাঙ্গা আসলেই দরকার ছিল। কারণ ঈদের জামাত হবে সূর্য উঠার পনের মিনিটের মাথায়। এখনই গোসলটা সেরে না নিলে হয়ত ঈদের জামাতই পাওয়া যাবে না। তাই সবাই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে গেল। তবুও আমি সবার আগে গোসল খানায় ঢুকতে পারিনি। সুযোগ বুঝে একজন সেখানে ঢুকে গেছে এরই মধ্যে। তাকে আমিসহ আরো পাঁচ ছয় জন বারবার তাদিগ দিচ্ছি তাড়াতাড়ি করেন, সবাই গোসল করবে। সে ভিতর থেকে কয়েকবার বলেছে এই তো হয়ে গেছে বের হচ্ছি।

গোসল সেরে তাড়াতাড়ি রাতের বাসি ভাত তরকারি অল্প খেয়ে ছেড়া গেঞ্জি আর পুরানো পাঞ্জাবিটা গায়ে দিয়ে ছুটলাম ঈদের নামাজের জন্য। ঈদগাহ থেকে তাকবীরের আওয়াজ আসছে মাইকে ভেসে। আমি ঈদগাহে পৌঁছার কয়েক মিনিট পরই ঈদের জামাত শুরু হলো। নামাজের পরে দেশের আত্মীয়স্বজনদের জন্য দোয়া করলাম। বিশেষ করে মরহুম আব্বা জানের জন্য খুব দোয়া করলাম। ঈদের সময় বাবার কথা খুব বেশি মনে পড়ে। দেশে থাকতে বাবা ঈদের সময় আমাদের জন্য কত কষ্ট করে জামা কাপড় জোগাড় করতেন তা চোখের সামনে ভেসে উঠে।

নামাজ শেষে রুমে এসে ঘুমাব বলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কাঁথামুড়ি দিয়ে ভাবলাম আগে একটু দেশে কথা বলা দরকার। মোবাইলটা হাতে তুলে নিলাম। কয়েকবার চেষ্টা করে লাইন পেলাম। আসসালামু আলাইকুম। আম্মা কেমন আছ?

ওয়ালাইকুমুস সালাম ভাল আছি বাবা, তুই কেমন আছিস?

ভাল আছি আম্মা, তোমাদের দোয়াই খুব ভাল আছি।

ঈদের নতুন জামা কাপড় পরেছিস তো বাবা? ফিরনি সেমাই খেয়েছিস?

জি আম্মা, নতুন জামা কাপড়ও পরেছি, ফিরনি সেমাইও খেয়েছি।

এখন কি করছিস বাবা? বন্ধু বান্ধবদের ওখানে বেড়াতে বের হস নি?

জি আম্মা। এখন বন্ধু বান্ধবদের ওখানে বেড়াচ্ছি। মজার মজার অনেক খানা খাচ্ছি।

আমার ভারি কণ্ঠ মায়ের কাছে গোপন থাকে না। তিনি বললেন কি হয়েছে বাবা তোর। তুই কাঁদছিস কেন? তার কণ্ঠও ভারি শোনালো।

না মা কাঁদছি না। তোমরা নতুন কাপড় পরেছ তো?

আমরা তো পরেছি। তুই কাঁদছিস কেন বাবা আজকের এই ঈদের দিনে? আম্মাও কেঁদে ফেললেন।

না মা কাঁদছি না। এখন রাখি আমি, আবার একটু পরে কল দেব। মোবাইলটা রেখে কম্বলের ভিতরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে অনেকক্ষণ কাঁদলাম। সারা বছরের কান্না যেন আজকেই সব চলে আসছে চোখে। আমি আজ কোথায় পড়ে আছি? এরকম ঈদের দিনে যদি দেশে থাকতাম ছেলে মেয়েদের হাসি খুশি মুখটা দেখে অন্তরটা ভরে যেতো। ঈদের নামাজ পড়ে মা কে সালাম করতাম। তিনি আমার জন্য দোয়া করতেন। আজ আমি পড়ে আছি অনেক দূরে। আমার ঈদ কেমন কাটছে কেও দেখছে না। এইসব যতই ভাবছি কান্নার গতি ততই বাড়ছে। প্রথম যখন বিদেশে এসেছিলাম, তখনো এরকম কেঁদেছিলাম। প্রথম ছয় মাস কেটেছিল শুধু কেঁদে কেঁদে। আজ ঈদের দিনে কেন বেশি কান্না আসছে? এই ঈদের সময় দেশে থাকলে আজ কত আনন্দ কত মজা করতাম সেটা ভেবেই বেশি কান্না পাচ্ছে। অনেক কষ্টে কান্না থামিয়ে আবার মোবাইলটা হাতে নিলাম। স্ত্রী এবং ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বলতে হবে।

ওপাশ থেকে আমার স্ত্রী সালাম দিলো।

বললাম, ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছ তোমরা? বাচ্চারা কেমন আছে?

আমরা সবাই ভাল আছি। তুমি কেমন আছ?

আমিও ভাল আছি। নতুন শাড়ি পরেছ? বাচ্চারা নতুন জামা কাপড় পরেছে?

সবাই পরেছে।

তুমি পরনি?

আমার কথা বলে লাভ আছে? আমি নতুন শাড়ি পরলেও কি আর না পরলেও কি?

কেন কি হয়েছে?

না থাক। বলে আর কী হবে?

থাকবে কেন? কি হয়েছে বলো।

কি আর হবে? সবাই যার যার পছন্দের শাড়ি কিনেছে। আর আমার জন্য তোমার মা কিনেছে একটা কম দামের শাড়ি। সবাই বলছে এটা কি ডুবাই ওয়ালার বউয়ের জন্য উপযুক্ত শাড়ি হলো?

শাড়ির দাম কত?

মাত্র পাঁচ হাজার টাকা।

আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। ভাবলাম পাঁচ হাজার টাকার শাড়ি বউয়ের পছন্দ হচ্ছে না। কত কষ্ট করে এখানে টাকা রোজগার করছি তা যদি তারা জানতো।

স্ত্রী বললেন, কি হলো কিছু বলছ না যে?

না ভাবছিলাম। তোমার জন্য একটা ভাল শাড়ি ক দিন পরেই কেনার ব্যবস্থা করব। তুমি নিজেই দেখে তোমার পছন্দ মত কিনে নিবে, ঠিক আছে? আমি এখন রাখি। কিছুক্ষণ পরে বাচ্চাদের সাথে কথা বলব।

এখন রাখছ কেন? এখনই বল।

না, এখন বলব না। এখন মনে একটু খারাপ লাগছে। পরে আবার কল দেব। বাচ্চাদেরকে দূরে যেতে দিও না।

ফোন রেখে ভাবলাম। হায়রে কপাল। পাঁচ হাজার টাকার শাড়ি বউয়ের পছন্দ হচ্ছে না। এত কষ্ট করে এখানে রোজগার করছি। তারপরেও যদি স্ত্রীর কাছ থেকে একটু শুকরিয়ার শব্দ শোনতে না পাই, তাহলে কেমন লাগে? মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।

স্ত্রী যদি বলতো যা পেয়েছি আলহামদু লিল্লাহ। তুমি কত কষ্ট করে বিদেশে রোজগার করছ তাওতো আমাদেরকে বুঝতে হবে। তাহলে মনটা খুশিতে ভরে যেতো। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ৫০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশী শ্রমিক কাজ করে। তাদের মধ্যে অধিকাংশই তিন বছর বা দুই বছরের মাথায় বাড়ী যাওয়ার সুযোগ পায়। এই দীর্ঘ সময় দেশ ও দেশের আত্মীয়স্বজন থেকে দূরে থাকা কতটা কষ্টের তা একমাত্র ভুক্তভুগি ছাড়া আর কেও বুঝবে না। মোবাইল আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে আগের চেয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হলেও দেশের আত্মীয়স্বজনদের সাথে দেশে থাকার ইচ্ছা, তাদের সাথে ঈদ করার আকুতি এবং তাদের থেকে দূরে থাকার কষ্ট প্রবাসীদের অন্তরে বিন্দুমাত্রও কমে না।

বছরের পর বছর আপনজনদের কাছ থেকে অনেক দূরে প্রচণ্ড গরম ও কনকনে শীতের মধ্যে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে যায় তারা শুধু দেশের আপনজনদের মুখে একটু হাসি ফুটানোর জন্য। নিজের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান সময়গুলো তারা উৎসর্গ করে দেয় আপনজনদের জন্য। দূর দেশে থেকেও তাদের মন পড়ে থাকে সেই মাতৃভূমিতে, যেখানে রয়েছে তার মাথার তাজ বাবা মা ও প্রাণপ্রিয় স্ত্রী ছেলে মেয়ে ও আত্মীয়স্বজন। প্রতি মুহূর্তে মনে পড়ে তাদের কথা। কখন দুটা টাকা নিয়ে দেশে গিয়ে আপনজনদের মুখের হাসি দেখবে সেই প্রতীক্ষায় কেটে যায় দিন মাস বছর। প্রতিটি সেকেন্ড এখানে কাটে ঘণ্টার মত, আর প্রতি ঘণ্টা কাটে দিনের মত আর প্রতি দিন কাটে যেন দীর্ঘ একেকটা বছরের মত। দিনের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম শেষে যখন রাতে ঘুমাতে যায় তখন আবার চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে ভেসে উঠে আত্মীয়স্বজনের মুখ। কখন দেশে যাবে, স্ত্রী সন্তান বাবা মার মুখ দেখবে এইসব ভাবতে ভাবতে একসময় ঘুমিয়ে পড়া যেন প্রতিদিনের রুটিন।

এখানে জীবন মানে রাত দিনের নিরানন্দ চক্র। যেখানে হাসি খুশির কোনো স্থান নাই। একই রকম কাজ আর একই রকমের নিয়মে ধরাবাঁধা জীবনচক্র যেন আর শেষ হতে চায় না। এক ঘেয়েমী কাটানোর জন্য কোথাও বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ নাই। বাৎসরিক আনন্দ উৎসব ঈদ পরবের দিনগুলো এখানে প্রবাসীদের মনে সামান্যতম আনন্দের দোলাও দিতে পারে না। বরং এখানে ঈদ আসে বেদনার ক্ষত চিহ্নতে নতুন করে আরো একটু লবণের ছিটা দেয়ার জন্য। এই দিনগুলোতে মনের ভিতরের জমে থাকা কষ্টগুলো আবার জীবন্ত হয়ে যায়। এখানে ঈদ মানে চোখের পানি। ঈদ মানে বেদনার ক্ষত নতুন করে তাজা হয়ে উঠা।

দেশের আত্মীয়স্বজনেরা অনেক সময় জানতে চায় প্রবাসীদের ঈদ কেমন কাটে? তারা কি চাঁদরাতে বা তার আরো আগে থেকে ঈদের বাজার করতে মার্কেটে যায়? ঈদের দিন নতুন জামা পড়ে ঘুরে বেড়ায়? একে অন্যের কাছে গিয়ে ফিরনি সেমাই খায়? এইসব বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকে দেশের অনেক মানুষের মধ্যে। তাই মধ্যপ্রাচ্যে বাঙালিদের ঈদ কেমন কাটে তার সামান্য ইঙ্গিত দেয়ার চেষ্টা করছি।

এখানে ঈদটা একেক জনের কাছে একেক রকম। অল্প কিছু মানুষের কাছে এখানে ঈদ আনন্দের হলেও অধিকাংশ প্রবাসীর কাছে ঈদ মানেই কান্না। সারা বছরের জমিয়ে রাখা কান্নার বাঁধভাঙ্গা স্রোত যেন ঈদের দিন আর কোনো বাঁধা মানতে চায় না। দু চোখ বেয়ে ঝরে পড়ে বিরহের অশ্রু। বুকে চেপে বসে কষ্টের হিমালয়। কান্নার গতি যেন থামতেই চাই না। জোর করে থামাতে চাইলে গলায় কিছু একটা এসে আঁটকে থাকে। খানা খেতে বসলে চোখের পানি ঝরে পাড়ে ভাতের উপর। হায়রে কপাল, আমি আজ কোথায়? কোথায় আমার ছেলে মেয়ে? কোথায় আমার বাবা মা? কোথায় প্রাণপ্রিয় স্ত্রী? তারা কি নতুন জামা কাপড় কিনেছে? ফিরনি সেমাই রান্না করেছে তো? আমার কথা কি তারা স্মরণ করছে? আমার অনুপস্থিতি তাদের কাছেও কি কষ্টের? এইসব ভাবতে ভাবতে ভেজা চোখেই ঈদের দিনটা শেষ হয়। পর দিন কারো ছুটি আছে আর কারো নাই। আবার শুরু হল হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম। উদ্দেশ্য আমার কষ্ট হলেও আমার আত্মীয়স্বজন যেন একটু সুখ পায়। বাবাকে যেন আর কষ্ট করতে না হয়। স্ত্রী যেন সুন্দর একটি শাড়ি পরতে পারে। আর আমার ছেলে মেয়েরা যেন স্কুলের বই খাতা কলম ঠিকমত পায়। পাশের বাড়ীর ছোট ছেলে মেয়ের হাতে সুন্দর খেলনা দেখে আমার সন্তানেরা যেন মনে কষ্ট না পায়। কয়েক বছর পরে বাড়িতে এসে যেন সবাইকে নিয়ে একটু সুখে থাকতে পারি। তাই আমার জীবনের কয়েকটা বছর আত্মীয়স্বজনদের জন্য যেন উৎসর্গ করে দিলাম। নিজের সুখ ত্যাগ করলাম স্বজনদের সুখের জন্য। এটাই প্রবাস। এটাই নিয়তি।

ঈদের আগের দিনগুলোতে এখানে বাজার সদায় করার কোনো রকমের ধুম পড়ে না। এখানে এদেশের মানুষের কাছেই শুধু ঈদ আসে। আমাদের কাছে আসে না। আমাদের কাছে স্বাভাবিকভাবে একপ্রকার নিজের অজান্তেই ঈদের তারিখটা শুধু আসে। যারা দোকানে কাজ করে তাদের জন্য এই রাতে কিছুটা বাড়তি সময় দোকানে থাকতে হয়, আর সকালে ঈদের জামাতে নামাজ পড়তে হয়, এই ছাড়া অন্য কোনোভাবেই ঈদের লক্ষণ তাদের কাছে প্রকাশ পায় না।

আমানের কাছে ঈদ কেমন তা তার মুখেই শোনা যাক। রমজানের শুরুতেই রমজানে মাসের জন্য খরচটা দেশের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছি। এবার ঈদের খচর পাঠানোর পালা। মাস ফুরাতে আরো দেরি আছে। তত দিন বসে থাকা যাবে না। তার আগেই ঈদের খরচ দেশে পাঠাতে হবে। কফিলের কাছে যদি বলি, হয়ত এ মাসের বেতনটা মাস ফুরানোর আগেই দিয়ে দিতে পারে। বোনাস তো দেবে না সেটা জানা কথা। অন্তত বেতনটাও যদি ক দিন আগে পাই, তাহলে দেশের আত্মীয়স্বজন ঠিকঠাক মত ঈদের বাজার করতে পারবে। গেলাম কফিলের কাছে। সালাম দিয়ে অনেক বুঝিয়ে বললাম যে এমাসের বেতনটা আমাকে একটু আগেই দিয়ে দিন। বাড়িতে ঈদের খরচের টাকা ক দিন আগেই পাঠাতে হবে। তিনি বললেন এক দিন আগেও বেতন দেয়া যাবে না।

এ দিকে টাকা পাঠাতে দেরি হলে দেশে বাজার করা খুব কষ্ট হয়ে যাবে। তাই বন্ধু বান্ধবদের কাছ থেকে ধারকর্জ করেই দেশে টাকা পাঠিয়ে দিলাম। রমজানে আর ঈদে কিছু বাড়তি খরচ আছে। তাই নিজের জন্য একটি টাকাও না রেখে আরো কিছু কর্জ করে সব টাকাই পাঠিয়ে দিলাম।

চাঁদরাতে অনেকক্ষণ দোকানে থাকতে হয়েছে আমাকে। তাই রুমে ফিরতে প্রায় তিনটা বেজে গেল। একারণে যারা আগের নিয়মে ঘুমিয়ে আছে তাদের ঘুম ভাঙ্গল বাতির আলোর কারণে। একপ্রকার বিরক্তি সহকারে দুই একজন চিল্লায় উঠলো 'বাতি দিয়েছে কেরে?' পরক্ষণেই যখন তাদেরকে মনে করিয়ে দিলাম যে আজ ঈদ। উঠে গোসল সেরে নাও, তখন তারাও বুঝতে পারলো যে এই সময় ঘুম ভাঙ্গা আসলেই দরকার ছিল। কারণ ঈদের জামাত হবে সূর্য উঠার পনের মিনিটের মাথায়। এখনই গোসলটা সেরে না নিলে হয়ত ঈদের জামাতই পাওয়া যাবে না। তাই সবাই তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে গেল। তবুও আমি সবার আগে গোসল খানায় ঢুকতে পারিনি। সুযোগ বুঝে একজন সেখানে ঢুকে গেছে এরই মধ্যে। তাকে আমিসহ আরো পাঁচ ছয় জন বারবার তাদিগ দিচ্ছি তাড়াতাড়ি করেন, সবাই গোসল করবে। সে ভিতর থেকে কয়েকবার বলেছে এই তো হয়ে গেছে বের হচ্ছি।

গোসল সেরে তাড়াতাড়ি রাতের বাসি ভাত তরকারি অল্প খেয়ে ছেড়া গেঞ্জি আর পুরানো পাঞ্জাবিটা গায়ে দিয়ে ছুটলাম ঈদের নামাজের জন্য। ঈদগাহ থেকে তাকবীরের আওয়াজ আসছে মাইকে ভেসে। আমি ঈদগাহে পৌঁছার কয়েক মিনিট পরই ঈদের জামাত শুরু হলো। নামাজের পরে দেশের আত্মীয়স্বজনদের জন্য দোয়া করলাম। বিশেষ করে মরহুম আব্বা জানের জন্য খুব দোয়া করলাম। ঈদের সময় বাবার কথা খুব বেশি মনে পড়ে। দেশে থাকতে বাবা ঈদের সময় আমাদের জন্য কত কষ্ট করে জামা কাপড় জোগাড় করতেন তা চোখের সামনে ভেসে উঠে।

নামাজ শেষে রুমে এসে ঘুমাব বলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। কাঁথামুড়ি দিয়ে ভাবলাম আগে একটু দেশে কথা বলা দরকার। মোবাইলটা হাতে তুলে নিলাম। কয়েকবার চেষ্টা করে লাইন পেলাম। আসসালামু আলাইকুম। আম্মা কেমন আছ?

ওয়ালাইকুমুস সালাম ভাল আছি বাবা, তুই কেমন আছিস?

ভাল আছি আম্মা, তোমাদের দোয়াই খুব ভাল আছি।

ঈদের নতুন জামা কাপড় পরেছিস তো বাবা? ফিরনি সেমাই খেয়েছিস?

জি আম্মা, নতুন জামা কাপড়ও পরেছি, ফিরনি সেমাইও খেয়েছি।

এখন কি করছিস বাবা? বন্ধু বান্ধবদের ওখানে বেড়াতে বের হস নি?

জি আম্মা। এখন বন্ধু বান্ধবদের ওখানে বেড়াচ্ছি। মজার মজার অনেক খানা খাচ্ছি।

আমার ভারি কণ্ঠ মায়ের কাছে গোপন থাকে না। তিনি বললেন কি হয়েছে বাবা তোর। তুই কাঁদছিস কেন? তার কণ্ঠও ভারি শোনালো।

না মা কাঁদছি না। তোমরা নতুন কাপড় পরেছ তো?

আমরা তো পরেছি। তুই কাঁদছিস কেন বাবা আজকের এই ঈদের দিনে? আম্মাও কেঁদে ফেললেন।

না মা কাঁদছি না। এখন রাখি আমি, আবার একটু পরে কল দেব। মোবাইলটা রেখে কম্বলের ভিতরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে অনেকক্ষণ কাঁদলাম। সারা বছরের কান্না যেন আজকেই সব চলে আসছে চোখে। আমি আজ কোথায় পড়ে আছি? এরকম ঈদের দিনে যদি দেশে থাকতাম ছেলে মেয়েদের হাসি খুশি মুখটা দেখে অন্তরটা ভরে যেতো। ঈদের নামাজ পড়ে মা কে সালাম করতাম। তিনি আমার জন্য দোয়া করতেন। আজ আমি পড়ে আছি অনেক দূরে। আমার ঈদ কেমন কাটছে কেও দেখছে না। এইসব যতই ভাবছি কান্নার গতি ততই বাড়ছে। প্রথম যখন বিদেশে এসেছিলাম, তখনো এরকম কেঁদেছিলাম। প্রথম ছয় মাস কেটেছিল শুধু কেঁদে কেঁদে। আজ ঈদের দিনে কেন বেশি কান্না আসছে? এই ঈদের সময় দেশে থাকলে আজ কত আনন্দ কত মজা করতাম সেটা ভেবেই বেশি কান্না পাচ্ছে। অনেক কষ্টে কান্না থামিয়ে আবার মোবাইলটা হাতে নিলাম। স্ত্রী এবং ছেলে মেয়েদের সাথে কথা বলতে হবে।

ওপাশ থেকে আমার স্ত্রী সালাম দিলো।

বললাম, ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছ তোমরা? বাচ্চারা কেমন আছে?

আমরা সবাই ভাল আছি। তুমি কেমন আছ?

আমিও ভাল আছি। নতুন শাড়ি পরেছ? বাচ্চারা নতুন জামা কাপড় পরেছে?

সবাই পরেছে।

তুমি পরনি?

আমার কথা বলে লাভ আছে? আমি নতুন শাড়ি পরলেও কি আর না পরলেও কি?

কেন কি হয়েছে?

না থাক। বলে আর কী হবে?

থাকবে কেন? কি হয়েছে বলো।

কি আর হবে? সবাই যার যার পছন্দের শাড়ি কিনেছে। আর আমার জন্য তোমার মা কিনেছে একটা কম দামের শাড়ি। সবাই বলছে এটা কি ডুবাই ওয়ালার বউয়ের জন্য উপযুক্ত শাড়ি হলো?

শাড়ির দাম কত?

মাত্র পাঁচ হাজার টাকা।

আমি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম। ভাবলাম পাঁচ হাজার টাকার শাড়ি বউয়ের পছন্দ হচ্ছে না। কত কষ্ট করে এখানে টাকা রোজগার করছি তা যদি তারা জানতো।

স্ত্রী বললেন, কি হলো কিছু বলছ না যে?

না ভাবছিলাম। তোমার জন্য একটা ভাল শাড়ি ক দিন পরেই কেনার ব্যবস্থা করব। তুমি নিজেই দেখে তোমার পছন্দ মত কিনে নিবে, ঠিক আছে? আমি এখন রাখি। কিছুক্ষণ পরে বাচ্চাদের সাথে কথা বলব।

এখন রাখছ কেন? এখনই বল।

না, এখন বলব না। এখন মনে একটু খারাপ লাগছে। পরে আবার কল দেব। বাচ্চাদেরকে দূরে যেতে দিও না।

ফোন রেখে ভাবলাম। হায়রে কপাল। পাঁচ হাজার টাকার শাড়ি বউয়ের পছন্দ হচ্ছে না। এত কষ্ট করে এখানে রোজগার করছি। তারপরেও যদি স্ত্রীর কাছ থেকে একটু শুকরিয়ার শব্দ শোনতে না পাই, তাহলে কেমন লাগে? মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল।

স্ত্রী যদি বলতো যা পেয়েছি আলহামদু লিল্লাহ। তুমি কত কষ্ট করে বিদেশে রোজগার করছ তাওতো আমাদেরকে বুঝতে হবে। তাহলে মনটা খুশিতে ভরে যেতো। এইসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম।

বিষয়: বিবিধ

১৩৩৩ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

330404
১৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৮:২৪
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৭ জুলাই ২০১৫ রাত ১১:০৪
272633
খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
330407
১৭ জুলাই ২০১৫ রাত ০৮:২৬
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমরা যখন নিজেদের অবস্থানে আল্লাহর শোকর করতে পারব তখনই আমাদের মধ্যে প্রকৃত ঈদ আসবে।
১৭ জুলাই ২০১৫ রাত ১১:০৪
272634
খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ
১৮ জুলাই ২০১৫ রাত ০১:২২
272648
অপি বাইদান লিখেছেন : বলতে বলতেই মুমিনের অপকর্ম শুরু হয়ে গেল হাবিবুল্লা ভাই।




ঈদ বোবারক।

নাইজেরিয়ায় ঈদের নামাজে আত্মঘাতী হামলায় নিহত ৬৪,

Click this link
330426
১৭ জুলাই ২০১৫ রাত ১১:১৮
অপি বাইদান লিখেছেন : আর যাই করেন্না ভাই, এই ঈদে অন্ততঃ মসজিদে বোমা ফাটায়েন্না। দোহাই লাগে।
330449
১৮ জুলাই ২০১৫ রাত ০১:২২
অপি বাইদান লিখেছেন : বলতে বলতেই মুমিনের অপকর্ম শুরু হয়ে গেল হাবিবুল্লা ভাই।




ঈদ বোবারক।

নাইজেরিয়ায় ঈদের নামাজে আত্মঘাতী হামলায় নিহত ৬৪,

Click this link
১৮ জুলাই ২০১৫ রাত ০১:৩৯
272652
খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ লিখেছেন : আহারে কাফেরেরা ঈদের দিনেও মুসলমান মারছে?
ধন্যবাদ আপনাকে শেয়ার করার জন্য?
১৮ জুলাই ২০১৫ রাত ০২:৩৩
272654
অপি বাইদান লিখেছেন : ইসলামিক জেহাদী সংগঠন বোকো হারাম এই হামলার দায় স্বিকার করেছে। ধন্যবাদ।
১৮ জুলাই ২০১৫ সকাল ০৫:০৩
272657
খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ লিখেছেন : ও আচ্ছা, তাই নাকি? তাহলে কাফেরেরা তাদেরকে ব্যবহার করছে এই ঈদেও মুসলমান মারার জন্য? ধন্যবাদ আপনাকে।
১৮ জুলাই ২০১৫ সকাল ১১:২১
272681
অপি বাইদান লিখেছেন : ঠিক তাই, মুমিনরা কাফের'দের স্প্রীং এর বান্দর।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File