নাটক সিনেমার গোপন বার্তা - ৫
লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ২৫ অক্টোবর, ২০১৪, ০৩:৪৬:৪০ দুপুর
পুর্ব প্রকাশের পর
৫/নাটক সিনেমায় সমাজের বাস্তব অবস্থা তুলে ধরার কথা হলেও ইসলাম ধর্মের কোনো বিষয় হলে সেটাকে এড়িয়ে যাওয়া যেন ফিল্ম জগতের একটা অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। আমাদের সমাজে অনেক মানুষ যৌবন কালে উলটা পালটা কাজ করলেও মানুষের বয়স বাড়ার সাথে সাথে তারা ধর্মের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। মুখে দাড়ি রাখে। নিয়মিত মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে। বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলে সব বয়স্ক মানুষের মুখেই দাড়ি দেখা যায়। সবাই নাহলেও অধিকাংশ নামাজ পড়ে। কিন্তু নাটক সিনেমায় সেটা কখনো দেখানো হয় না। দেখানো হয় না নামাজের দৃশ্য, মসজিদের মিনার আর শুনানো হয় না আজানের ধ্বনি। বালা মুসিবত থেকে উদ্ধার হতে কান্না জড়িত কণ্ঠে আল্লাহর কাছে মোনাজাতের দৃশ্যও দেখানো হয় না। অথচ হিন্দি সিনেমায় দেখা যায়, বালা মুসিবত থেকে উদ্ধার পেতে তারা দেব দেবীর পূজা করছে। মন্দিরে মান্নত দিচ্ছে। কিন্তু বাংলা নাটক সিনেমায় ধর্মীয় দৃশ্য যেন পরিচালকদের চক্ষুশূল। এখানেও ইসলাম থেকে দর্শকদেরকে দূরে সরিয়ে রাখার একটা হীন উদ্দেশ্য কাজ করে।
কেও হয়ত বলতে পারেন নাটক সিনেমা ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে বানানো হয় না। তাই এখানে ইসলামী আচরণ দেখানোর দরকার কী? তাদের উদ্দেশ্যে বলব আমি নাটক সিনেমায় ইসলাম প্রচার করতে বলছি না। আমি বলছি সমাজের বাস্তব অবস্থাকে যেন বিকৃত করে উপস্থাপন করা না হয়। আমাদের দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান। এদেশের মানুষের ঘুম ভাঙ্গে মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্বনি শুনে। ওলামায়ে কেরামকে সম্মানের চোখে দেখা এখানে সাধারণ মানুষ এবাদত মনে করে। বালা মুছিবতে আল্লাহকে ডেকে সাহায্য প্রার্থনা করে। এই সব বাস্তব দৃশ্যগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার দরকার হয় কেন নাটকে? বাস্তবতাকে বিকৃত করে উপস্থাপন করা এক প্রকার অপরাধ। সত্য গোপন করার মাধ্যমে প্রতারণার আশ্রয় নেয়াতে আর যাইহোক ভাল মানুষী থাকতে পারে না।
৬/ আমাদের সমাজে স্ত্রীরা স্বামীর নাম ধরে ডাকে না। ছেলের বাবা, মেয়ের বাবা, আপনাদের জামায় ইত্যাদি দিয়ে তারা স্বামীর কথা বুঝাতে চায়। বিশেষ করে গ্রামের মেয়েরা স্বামীর নাম ধরে একে বারেই ডাকে না। শহরে হয়ত হাতেগোনা কিছু পরিবারে স্বামীর নাম ধরে ডাকা হয়। তাই বলে এই হাতেগোনা কিছু পরিবারের স্বামীকে নাম ধরে ডাকার বিষয়টা নাটক সিনেমায় দেখানো হবে কেন? গ্রাম্য নাটকে অবশ্য তা দেখানো হয় না। আমার কথা হল শহুরে পরিবেশেও অধিকাংশ মেয়ে স্বামীকে নাম ধরে ডাকে না। আদব কায়দা রক্ষা করেই ডাকে। কিন্তু নাটক সিনেমায় সব শহুরে নাটকেই স্বামীকে নাম ধরে ডাকতে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু কেন? এখানেও কি বাস্তবতার বিপরীত অবস্থা তুলে ধরা হচ্ছে না?
স্বামীর নাম ধরে ডাকা বৈধ নাকি অবৈধ সে দিকে আমি যাচ্ছি না। আমি বলতে চাচ্ছি সমাজের বাস্তব অবস্থাকেই শুধু নাটক সিনেমায় তুলে ধরা হোক। বাস্তবতাকে লোকানোর চেষ্টা করে অনুচিত আর বিজাতীয় সংস্কৃতি আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হবে কেন?
স্বামীর নাম ধরে ডাকা নিয়ে একটি ছোট্ট গল্প বলি। তাতেই স্পষ্ট হয়ে যাবে নাম ধরে ডাকা উচিৎ কিনা। এক আধুনিক পরিবারে স্বামী আর স্ত্রী একে অন্যকে নাম ধরে ডাকতো। কিছু দিন পরে তাদের ঘরে দুয়েকটি সন্তান জন্ম নিলো। সন্তানেরা ধীরে ধীরে বড় হতে লাগল। যেহেতু ছোট্ট শিশু সব কিছুই বড়দের কাছ থেকে শিখে, তাই দেখাদেখি সন্তানেরাও বড়দের কাছে শুনে শুনে বাবা আর মা কে নাম ধরে ডাকতে লাগল। কিছু দিন পরে স্বামী আর স্ত্রী পেরেশান হয়ে গেল। চিন্তা করে দেখল তাদের কারণেই তো সন্তান তাদের নাম ধরে ডাকছে। এতে বাচ্চাদের আর দোষ কি? তাই তারা পরামর্শ করে উপায় বের করল যে, তারা স্বামী স্ত্রী একে অপরকে আব্বু আম্মু বলে ডাকবে। এতে করে তাদের সন্তানেরাও তাদেরকে আব্বু আম্মু বলে ডাকবে। এই গল্প থেকে খুব ভাল ভাবেই বুঝা যায় যে, স্বামী আর স্ত্রী একে অপরকে নাম ধরে ডাকা উচিৎ কিনা।
চলবে....
বিষয়: বিবিধ
১২৬০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন