সেক্যুলারদের ধর্মপ্রীতি
লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ১১ আগস্ট, ২০১৪, ০২:২৭:১৭ দুপুর
খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ : সেক্যুলাররা মাঝে মাঝে ধার্মিক সাজার চেষ্টা করে। এটা করলে তাদের মনে হয় যেন সঙ সেজেছে। সঙ বাচ্চাদের কাছে ভালো লাগলেও বয়স্কদের কাছে এটা হাস্যকর। আসল রূপের পরিবর্তন করে বাস্তব বিবর্জিত বিকৃত রূপের উপস্থাপনা জ্ঞানীদের কাছে অগ্রহণযোগ্য। এটা করে বাচ্চাদের কিছুক্ষণ সেদিকে মনোযোগী করে রাখা গেলেও জ্ঞানীদের এতে মজানো যায় না। সেক্যুলাররা ধর্মপ্রীতির ভঙ করে সঙ সেজে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করার চেষ্টা করে। নিজেদের কখনো নামাজি, কখনো হাজী হিসেবে প্রচার করে। বিশেষ করে ভোটের আগে এসব নাটক বেশি হয়।
সেক্যুলারিজম অর্থ ধর্মহীনতা, ধর্ম বিরোধিতা। কিন্তু সেক্যুলাররা সেটা প্রকাশ করতে চায় না। তারা সেক্যুলারিজমের অর্থ করে যার যার ধর্ম সে সে পালন করা। সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য তারা এই অর্থ করে। কারণ সরাসরি ধর্মের বিরোধিতা করার মতো সাহস তারা আমাদের সমাজে রাখে না। তাই তারা কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। আর তা হলো সেক্যুলারিজমের অর্থ বিকৃত করা।
সেক্যুলারিজমের অর্থ বিকৃত করে তারা অর্থ করছে ‘যার যার ধর্ম সে সে পালন করার’। তবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ধর্ম পালন করা যাবে না বা রাজনীতিতে ধর্ম পালন করা যাবে না এটা তারা আজকাল বলার মতো কিছু সাহস অর্জন করেছে। এমনকি জুমার খুতবায় ইসলামী আলোচনা করতে গিয়ে কোরানের যেসব আয়াতে রাজনীতির কথা আছে সেগুলো বলা যাবে না বলেও কেউ কেউ দুঃসাহস দেখানোর চেষ্টা করছে আজকাল। কিছু দিন পরে মানুষের জীবন থেকে ধর্ম বিদায় করতে হবে এরকম স্লোগান তারা তুলবে। সেটা এখন সম্ভব নয়। কারণ মানুষকে সরাসরি ধর্মহীনতার প্রতি ডাকলে তাদের কপালের দুঃখ কেউ ঠেকাতে পারবে না এটা সেক্যুলাররা ভালোভাবেই জানে। তাই তারা প্রথমে ধর্মের একটি বিকৃতরূপ উপস্থাপন করার চেষ্টা করে। যেখানে রাজনীতি নেই, নামাজ নিজে আদায় করবে তবে কাউকে নামাজের দাওয়াত দেয়া যাবে না, সঙ্কুচিত ইসলামী শিক্ষা থাকবে, পর্দা না করলেও চলবে, ইসলামী পোশাক পরা যাবে না। এরকম একটি ধর্মের রূপ তারা আপাতত মানুষের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করে। পরে সুযোগ বুঝে একদিন বলে দেবে যে, কোরান পড়া যাবে না, হাদিস পড়া যাবে না, আরবি পড়া যাবে না, পর্দা করা যাবে না, দাড়ি রাখা যাবে না, মাদ্রাসা বন্ধ করে দিতে হবে। ঠিক এভাবেই করেছিল এক সময়ের ইসলামী রাষ্ট্র তুরস্কে সেক্যুলারিজমের দোহাই দিয়ে।
এখন যেহেতু সেটার সময় আসেনি তাই তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে নিজেকে ধার্মিক হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা করে। তাদের কেউ কেউ আবার সেক্যুলারদের ধর্মসেবার কিছু নমুনা পেশ করার চেষ্টা করে। ইসলামের জন্য তারা এই করেছে, সেই করেছে বলে কিছু ফিরিস্তি তুলে ধরে। কিন্তু সাধারণ জনগণ তাদের সেই বক্তব্য গ্রহণ করে না, বরং ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করে। কখনো কখনো মানুষের এই প্রত্যাখ্যান আমরা জুতা বৃষ্টির রূপে দেখেছি।
সেক্যুলাররা আসলেই যে ধর্মবিরোধী তারা সেটা জনসমক্ষে বলার সাহস না পেলেও বিভিন্ন নাটক-সিনেমা তৈরি করে তাতে মানুষকে ধর্মবিমুখ হওয়ার সবক দেয়। কোনো গ্রাম্য মাতব্বর যদি কোথাও কখনো গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে কাউকে শাস্তি দেয়, সেটাকে সেক্যুলাররা ধর্মের ফতোয়া নাম দিয়ে মানুষকে ধর্মের প্রতি বিক্ষুব্ধ করে তোলার চেষ্টা করে। খারাপ মানুষের চরিত্রে যারা অভিনয় করবে তাদের মুখে দাড়ি আর মাথায় টুপি পরিয়ে দিয়ে মানুষকে ধর্মীয় পোশাকের প্রতি, ধর্মের প্রতি অনাগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করে। ধর্মকে অবমাননা করে আর ধার্মিক মানুষদের সমাজে হেয় করার চেষ্টা করে। সেক্যুলাররা যদি আসলেই ধর্মপ্রিয় হয় তাহলে ধর্মের বিরুদ্ধে এত অপপ্রচার তারা কেন করে?
কেউ কেউ আবার বই লিখে সেক্যুলারদের ধর্মপ্রীতির নমুনা পেশ করার চেষ্টা করে। তাতে কাউকে আমিরুল মুমিনীন আর কাউকে ধর্মের রক্ষক উপাধিতে ভূষিত করে ক্ষমতাশালীদের কাছ থেকে হালুয়া-রুটি আশা করলেও পাঠকের কাছে তারা কিছু হাসির উপকরণ ছাড়া আর কিছুই পৌঁছাতে পারে না। আবার কেউ কেউ ‘কোরান হাদিসের সঠিক ব্যাখ্যা’ দাবি করে ইসলাম নিয়ে বিভিন্ন বইও লেখার চেষ্টা করেছেন। যেখানে এমন একটি ইসলাম দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, যে ইসলাম রাসুল (স.), সাহাবায়ে কেরাম, মুহাদ্দেসীন ইমামগণের মাধ্যমে পাওয়া ইসলাম থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে ইসলামী আইনগুলোর এমন অপব্যাখ্যা করা হয়েছে যা এর আগে কেউ শোনেনি। আরও দাবি করা হয়েছে ওলামায়ে কেরাম নাকি এতদিন ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো যেসব ওলামায়ে কেরাম কোরান হাদিসের জ্ঞানার্জন করতে নিজের পুরো জীবনই উৎসর্গ করেছেন এবং দুনিয়ার লোভ-লালসা যাদের ধারে-কাছেও ঘেঁষতে পারেনি, সেই মহান ব্যক্তিবর্গ ইসলাম না বুঝলে, যে ব্যক্তি সারাজীবন সেক্যুলারিজমের পেছনে মেহনত করেছেন, ধর্মহীন সেক্যুলার দলের পক্ষে কাজ করেছেন, তিনি হঠাৎ করে এই সেক্যুলার মার্কা ‘সঠিক ইসলাম’(?) কোথায় পেলেন?
তারা তাদের বইয়ে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যার দাবি করলেও তাদের তৈরি নাটক-সিনেমায় ঠিকই মানুষকে ইসলামবিমুখ করার চেষ্টা করেছেন। গ্রাম্য মাতবরের সালিসকে ফতোয়া নাম দিয়ে ইসলামকে খুব জঘন্য ধরনের খারাপ ধর্ম হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করেছেন। সেই তাদের লেখা বইকে যদি ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যার দাবি করা হয় তাহলে এটা হাস্যরসের সৃষ্টি করে।
গ্রাম্য সালিসের ঘটনাকে যারা ইসলামী ফতোয়ার মাধ্যমে নারী নির্যাতন করা হচ্ছে বলে দাবি করে নাটক তৈরি করছেন, তারা দাবি করেন যে ইসলামের বিরোধিতা তারা করেন না, বরং তারা ইসলামের অপব্যবহারের বিরোধিতা করেন। তাদের আমরা বলব ইসলামের অপব্যবহার দেখানোর সাথে সাথে ইসলামের সঠিক ব্যবহারটাও দয়া করে আপনারা দেখান। তবেই আপনাদের ইসলামপ্রীতির কথা মানুষ বিশ্বাস করবে। কিন্তু আপনারা তো তা করছেন না। আপনারা শুধু ইসলামের অপব্যবহারটা দেখিয়ে মানুষকে ধর্মবিমুখ করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কেন? যদি অপব্যবহার আর সঠিক ব্যবহার দুটোই দেখাতেন তাহলে বুঝা যেতো যে আপনারা আসলেই ইসলামের সঠিক প্রয়োগ পছন্দ করেন। কিন্তু তা আপনারা ভুলেও করেন না। আপনারা নাটকে ইসলাম খারাপ শুধু এই কথাই প্রচার করছেন। তারপরেও দাবি করছেন সেক্যুলাররা ইসলামের বিপক্ষে নয়।
ফতোয়া হলো কোরান হাদিসের আলোকে মানুষের জীবনযাপনের নিয়ম। এর মধ্যে যেসব বিষয়াদী অপরাধের শাস্তির সাথে সম্পর্কিত, তা প্রয়োগ করতে পারে একমাত্র সরকার। কোনো মানুষ তা প্রয়োগ করতে পারে না। কেও করলে সেটা আইন হাতে তুলে নেয়ার মতো হয়ে যাবে। এখানে সরকারের হস্তক্ষেপ করা জরুরি। তাই বলে ইসলাম নারীদের নির্যাতন করে বলে অপপ্রচার করা এবং নাটক সিনেমা তৈরি করে ইসলামকে খারাপ হিসেবে দেখানো বা ইসলামের অপব্যবহার দেখানো আর সঠিক প্রয়োগ দেখানো থেকে বিরত থাকা কি উচিৎ?
যারা সেক্যুলারিজম বা ধর্ম নিরপেক্ষতা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক নয় বলে দাবি করেন এবং তা প্রমাণের জন্য ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যার নামে কেটে-ছেঁটে ইসলামের নতুন একটি রূপ দাঁড় করানোর চেষ্টা করেন, তারা যদি ইচ্ছে করেই সেটা করেন তাহলে তা যে অপরাধ সেটা তারা নিজেরাও বুঝেন। আর যদি আসলেই ইসলামের ভালোবাসা থেকে এটা করে থাকেন তাহলে একটি গল্পের সাথে তাদের আচরণের খুব মিল খুঁজে পাওয়া যায়। গল্পটি হলো এরকম- এক দিন এক বুড়ির উঠোনে একটি ঈগল পাখি এসে বসল। বুড়ি সেটাকে যে কোনো ভাবে। ধরে দেখল যে ঈগলের নখ আর ঠোঁট খুব বড়। বুড়ি ভাবল, আহারে বেচারা ঈগল এত বড় বড় নখ নিয়ে চলে কিভাবে? আর এত বড় ঠোঁট দিয়ে কিভাবে খায়? নিশ্চয় খুব কষ্ট হয় তার। কেউ একটু ঈগলের নখ আর ঠোঁট পর্যন্ত কেটে দেয়নি। আহারে বেচারা ঈগল। নাতিনকে বলল এই দা নিয়ে আয়। নাতিন দা নিয়ে আসল। বুড়ি ঈগলের নখ আর ঠোঁট খুব যত্ম করে কেটে দিচ্ছে। এমন সময় পাশের বাড়ির স্কুল পড়ুয়া ছেলেটা এসে বলল দাদি কর কি? কর কি? ঈগলের নখ আর ঠোঁট কাটতে হয় না। এগুলো আসলেই বড় বড় থাকে, আমি বইতে ঈগলের ছবি দেখেছি। তুমি এটাকে ছেড়ে দাও। বুড়ি বলল, এই তুই সরে যা। তুই জঙ্গি।
আজকের দৈনিক ইনকিলাব এ প্রকাশিত
বিষয়: বিবিধ
১০৯৫ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমাদের আফসোস যে , এই সেক্যুলারিস্টদেরকেই আমরা ফলো করি ।
তাদের নোংরা কথাও আমাদের কাছে সাহিত্যকর্ম মনে হয়।
সেকুলাররা প্রচারে আর প্রতারণাতে এগিয়ে আছে। তাই মুসলমানদের অনেকেই বিভ্রান্ত হয়ে যায়।
বেশ শক্তিশালী লেখা!
অভিনন্দন আপনাকে...
ধন্যবাদ আপনাকে। ভাল লিখেছেন
মন্তব্য করতে লগইন করুন