রমজানে যারা জাকাত দেন তাদের উদ্দেশ্যে দুটি কথা
লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ০২ জুলাই, ২০১৪, ০৩:৪৯:৩৩ দুপুর
যাদেরকে আল্লাহ তাআলা যাকাত দেওয়ার তৌফীক দিয়েছেন তারা যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে অনেক সওয়াব অর্জন করেন তাতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু কিছু ভুলের কারণে যেমনি সওয়াব কমে যায় তেমনি কিছু সমস্যাও হয়। আমাদের দেশে যাকাত নিতে হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে অনেক সময় বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এ সময় মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। আবার লাইনে দাঁড় করিয়ে গরীব মানুষদেরকে অপমানও কম করা হয় না। তাই যারা যাকাত দেন তাদের উদ্দেশ্যে কিছু উপদেশ।
১. সর্ব প্রথম নিয়ত ঠিক করবেন। নিয়ত রাখবেন যে মানুষকে দেখানোর জন্য নয় , শুধু আল্লাহকে রাজিখুশি করার জন্য জাকাত দিচ্ছি।
২. যাকাত যে নিচ্ছেন তার উপর আপনি দয়া করছেন ভাববেন না, বরং মনে করবেন তিনি জাকাত নিয়ে আপনার উপকার করছেন। তাই তাদেরকে লাইনে দাঁড় করিয়ে অপমান করবেন না।
৩. এমন কোন পদ্ধতি অবলম্বন করুন যাতে যাকাত গ্রহীতাগণকে লাইন ধরে যাকাত নিতে না হয়। যেমন; জাকাত দেওয়ার জন্য শুধু একটি দিন ঠিক করবেন না। যে সময় যে আসেন তাকেই দিয়ে দিবেন। ফুরিয়ে গেলে বলে দিবেন যে ফুরিয়ে গেছে।
৪. রমজানের ২৭ তারিখের যাকাত দেওয়ার জন্য বসে থাকবেন না।
৫. শাড়ি বা লুঙ্গি জাতীয় কিছু না দিয়ে নগদ টাকা দিয়ে দিলে গরীবের উপকার বেশি হবে। কারণ অনেক শাড়ি লুঙ্গি হয়ে গেলে তা আবার কম দামে বিক্রি করতে হয় তাদেরকে।
৬. নিজের আত্মীয় স্বজনকে যাকাত আগে দিবেন, তবে বাবা-মা, বা ছেলে-মেয়েদেরকে যাকাত দেওয়া জায়েজ নাই।
৭. আন্দাজ করে কিছু টাকা না দিয়ে হিসাব করে জাকাত দিবেন।
৮. যেসব মাদরাসায় বোর্ডিং আছে, মানে ছাত্ররা বিনামূল্যে বা খোরাকী ছাড়া খানা খায়, সে সব মাদরাসায় টাকা আপনি নিজে গিয়ে দিয়ে আসবেন। নিজে গিয়ে দিতে না পারলে মাদরাসার পক্ষ থেকে যারা আপনার কাছে আসেন, তাদের সম্মান রক্ষা করে যাকাত দিবেন। পরে আসেন বলে ঘুরাঘুরি করবেন না। মাদরাসার পক্ষ থেকে যে সব আলেম যাকাতের জন্য আসেন তারা আপনার কাজ করে দিচ্ছেন, আপনার উপকার করছেন বলে মনে করবেন। তারা নিজের জন্য আসেন না। দীনের জন্য আসেন। তাদের সাথে সম্মানজনক আচরণ করবেন।
মহানবী (স বলেন, ‘একজন আলেমের মর্যাদা একজন সাধারণ মানুষের ওপর ততটুকুন, যতটুকুন তোমাদের ওপর আমি একজন নবীর মর্যাদা।’ (সহীহ তিরমিজি)।
৯. প্রচারণা কামনা করবেন না। [তবে ক্ষেত্র বিশেষে প্রকাশ্য দানও জায়েজ আছে] হাদীসে আছে- صدقة السر تطفيء غضب الرب' ‘গোপনে দান করা আল্লাহর রাগকে কমিয়ে দেয়’।
যাকাত সম্পর্কে কোরআনে অনেক আয়াত আছে। আমি শুধু দানের ফজিলত আর লোক দেখানো দানের ক্ষতি সম্পর্কে দুটি আয়াত উল্লেখ করছি:
যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উদাহরণ একটি বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীল, সর্বজ্ঞ। যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, এরপর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোন আশংকা নেই, তারা চিন্তিতও হবে না (সুরা বাকারা, ২৬১,২৬২)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُم بِالْمَنِّ وَالْأَذَىٰ كَالَّذِي يُنفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا ۖ لَّا يَقْدِرُونَ عَلَىٰ شَيْءٍ مِّمَّا كَسَبُوا ۗ وَاللَّـهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ
ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান খয়রাত বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মত যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। অতএব, এ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মত যার উপর কিছু মাটি পড়েছিল। অতঃপর এর উপর প্রবল বৃষ্টি বর্ষিত হলো, অনন্তর তাকে সম্পূর্ণ পরিষ্কার করে দিল। তারা ঐ বস্তুর কোন সওয়াব পায় না, যা তারা উপার্জন করেছে। আল্লাহ কাফের সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না। (সুরা বাকারা, ২৬৪)
বিষয়: বিবিধ
১৫৪২ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
জাযাকাল্লাহ খাইরান...
৫ রমযান > মাহে রমযানে একজন মুত্তাকী ব্যবসায়ীর করণীয়!
৭ রমজান > নবী সা.ও সাহাবায়ে কেরামের ইফতার
১৩ রমযান > বিশ্বমুসলিম ভাতৃত্ব-ঐক্য সৃষ্টিতে সিয়াম
রোজা বিষয়ে জানতে এখানে ক্লিক করুন। আর জেনে নিন রোজা কি।
এই পোষ্ট কয়েক দিন স্টিকি করে রাখা হোক।
এই পোষ্ট কয়েক দিন স্টিকি করে রাখা হোক।
এই পোষ্ট কয়েক দিন স্টিকি করে রাখা হোক।
এই পোষ্ট কয়েক দিন স্টিকি করে রাখা হোক।
এই পোষ্ট কয়েক দিন স্টিকি করে রাখা হোক।
মন্তব্য করতে লগইন করুন