জাতির বিজয়ের পথে তুমিই অন্তরায়
লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ২৭ জুন, ২০১৪, ০৮:৩৭:০৪ রাত
সারা দুনিয়াতে মুসলমানদের দুরবস্থার খবর পড়ে আমি যখন চিন্তিত; তখন আমার মন আমাকে সম্বোধন করে বলে উঠলো, হে মুসলমান পরিচয়ের দাবিদার! মুসলিম জাতির বিজয়ের পথে তুমিই প্রতিবন্ধক। মুসলমানদের ওপর এত সব মুসিবতের জন্য তুমিই দায়ী।
আমি অবাক হলাম। বললাম, আমি একজন নগণ্য মানুষ। আমার কাছে শক্তি নেই, ক্ষমতাও নেই। কে মানবে আমার হুকুম! আর উপদেশ দিলেও গ্রহণ করবে কে? আমি কীভাবে দায়ী হলাম?
তখন আমার মন দ্রুত বলে উঠলো, দায়ী তোমার গোনাহ। যে গোনাহ তুমি আল্লাহর অবাধ্য হয়ে করেছো, দায়ী তোমার ফরজ-ওয়াজিবসমূহ থেকে পলায়নপরতা এবং দায়ী নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি তোমার লোভ ও তীব্র আকর্ষণবোধ।
বললাম, আমি এমন কী করেছি যে জাতির মুসিবতের জন্য তুমি আমাকে দায়ী করছো?
সে বললো, আচ্ছা একটু দাঁড়াও! আমি দেখিয়ে দিই তুমি কী করেছো আর কী করোনি! তুমি কি ফজরের নামাজ জামাতে পড়ো?
বললাম, মাঝে মাঝে পড়ি।
সে বললো, এটাই তোমার দুর্বলতা। তুমি কীভাবে আশা করো যুদ্ধে শত্রুকে পরাস্ত করবে অথচ তুমি নিজের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছো! তাও এমন একটি কাজে যাতে জানও লাগে না আবার সম্পদ খরচেরও দরকার পড়ে না। কয়েক মিনিটের বেশি সময়ও লাগে না আল্লাহ তাআলার বিধান সেই ফরজ নামাজটা আদায় করতে। কীভাবে তুমি জিহাদ করার আশা করো? অথচ ফরজ নামাজটা তুমি ঠিকমতো আদায় করো না। সুন্নতের ওপর আমল করো না, কুরআনের কিছু অংশ তেলাওয়াত করো না। সকাল-সন্ধ্যার দোয়াগুলো তুমি ভুলে যাও। নিষিদ্ধ বস্তু থেকে দৃষ্টি সরাতে পারো না। মা-বাবার সেবা করো না, আত্মীয় স্বজনের খোঁজ রাখো না।
আমাকে আরও বললো, কীভাবে তুমি তোমার দেশে শরিয়তের বিধান চালু করবে অথচ তুমি নিজের মধ্যে বা নিজের পরিবারে শরিয়তের হুকুম চালু করতে পারোনি। পরিবারের ব্যাপারে তুমি আল্লাহকে ভয় করোনি, তাদের দীনের দাওয়াত দাওনি এবং তাদের হালাল খাওয়ানোর ব্যাপারে তুমি উদাসীন। তুমি তো তাদের দলে চলে গেছো, যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘এবং তোমরা ধন-সম্পদকে প্রাণভরে ভালোবাসো! সুরা ফজর : ২০
তুমি মিথ্যা বলেছো, তুমি ধোঁকা দিয়েছো, তুমি ওয়াদা খেলাফ করেছো; সুতরাং তুমি আজাবের সম্মুখীন হয়েছো।
আমি বললাম, আমি একজনের দোষেই কি সবার বিজয় আটকে আছে?
তখন আমার মন আমাকে বললো, আফসোস তোমার ওপর! তোমার মতো কোটি কোটি মানুষ মিলেই তো জাতি গঠিত হয়েছে। কিছু মানুষ ছাড়া সবাই তো তোমার মতো। সবাই তো তোমার পথেই চলছে। আল্লাহর আদেশ পালন করছে না এবং গোনাহ থেকে বিরত থাকছে না। কিন্তু সবাই বিজয় চায়। ভাবে তারা শ্রেষ্ঠ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সবাই একই রকম (কিছু সম্মানজনক ব্যতিক্রম ছাড়া)। তুমি জানো না সাহাবায়ে কেরাম যুদ্ধে বিপদের সম্মুখীন হলে আগে নিজেদের মধ্যে কোনো দুর্বলতা আছে কিনা তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়তেন? অথচ এখন তোমরা বাস্তবেই গোনাহের ভেতরে অবস্থান করে বিজয়ের স্বপ্ন দেখা কি বোকামি নয়?
এ কথা শুনে আমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। আমি ভাবতে লাগলাম, আমিই কি সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভালোবাসে এবং মুসলমানদের ভালোবাসে, অথচ আমিই মুসলমানদের বিপর্যয়ের কারণ? আমিই সারা দুনিয়ায় নিরপরাধ মুসলমানদের হত্যা ও নির্যাতনের জন্য দায়ী? শাসকশ্রেণিকে আমি কত সহজে গালি দেই। কিন্তু আমি আমার নিজের দোষ-ত্রুটিগুলো দেখিনি। আর আল্লাহ তাআলার এই বাণীর প্রতিও আমি দৃষ্টি দেইনি, ‘আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।’ সুরা আর রাআদ : ১১
মনে মনে বললাম, আল্লাহর হাজার হাজার শোকরিয়া, তিনি আমার চোখ খুলে দিয়েছেন। আমি আমার মনকে বললাম, এখন আমাকে কী করতে বলছো?
বলল, নিজে থেকে শুরু করো। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সময়মতো জামাতে পড়ো। যথাযথভাবে জাকাত আদায় করো। মাতা-পিতার সেবা করো। সুন্নাত আদায় করার মাধ্যমে আল্লাহকে ভালবাসো। আল্লাহ তাআলার সান্নিধ্য অর্জন করার কোনো সুযোগই হাতছাড়া করবে না, যদিও ছোট কোনো ভাল কাজের মাধ্যমে হোক। মনে রাখবে, তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে কথা বলা সওয়াবের কাজ। নিজের মধ্যে এবং নিজের বাড়িতে শরিয়ত চালু কর। আগে নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে জয়ী হও। দায়িত্ব এড়ানোর জন্য নিজের দোষ অন্যের ওপর চাপিয়ে দিও না। অন্যকে শুধরানোর আগে নিজে শুধরে যাও। যেখানেই যাও ব্যক্তিত্ববান হও। আদর্শবান হও। যদি অন্যের সমালোচনা করেই তোমার সময় কাটে, তাহলে তা বন্ধ করো। কারণ সমালোচনা করার মানুষ অনেক আছে। সমাধান করার মানুষ তেমন নেই। তুমি নিজেকে দিয়ে সমাধান শুরু করো। আগে নিজে শুদ্ধ হয়ে যাও।
যখন তুমি নিজেকে শুধরে নিয়েছো, তখন আল্লাহ তাআলার কাছে দোয়া করো নিষ্ঠা ও এখলাস সহকারে, তোমাকে এবং তোমার মতো যারা নিজেকে শুধরে নিয়েছে তাদের বিজয় দেয়ার জন্য। তখন তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে যাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, হে বিশ্বাসীগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে সাহায্য করো, আল্লাহ তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পা দৃঢ়প্রতিষ্ঠা করবেন। (সুরা মোহাম্মাদ : ৭)
মনে রাখবে তোমার প্রতিটি গোনাহ নিরীহ মুসলমানদের হত্যার জন্য দায়ী।
আমি আমার মাথা উঠালাম। তওবা করলাম আল্লাহর কাছে। আল্লাহকে বললাম, হে আল্লাহ! আমার তওবা কবুল করুন। নতুন জীবন শুরু করলাম দুই রাকাত নফল নামাজের মধ্য দিয়ে। চোখের পানি মুছলাম। শুরু হলো আমার নতুন জীবন। হে আল্লাহ! আমাকে আপনার দেয়া বিধানমতে চলার তাওফিক দান করুন! আমিন!!
বিষয়: বিবিধ
১০৮১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আমীন! ইয়া রব্বুল আলামীন!
হে আল্লাহ! আমাকে আপনার দেয়া বিধানমতে চলার তাওফিক দান করুন! আমিন!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন