পর্দাহীনতা যেন দৃষ্টিনন্দন কাঁটার মালা
লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ০৯ মে, ২০১৪, ০১:৪১:৩৫ রাত
ইসলামবিরোধী মহলের পক্ষ থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নাই। কখনো মৌলবাদী, কখনো সন্ত্রাসী কখনো সেকেলে আবার কখনো বা শোনা যায় কুরআন থেকে জিহাদের আয়াতগুলো বাদ দেওয়ার আবদার করতে। আবার কখনো মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে বিষোধগার করতে দেখা যায়। আরো কত প্রকারের অভিযোগ যে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে তাদের আছেÑ মনে হয় তার শেষ নাই।
ইসলামের সত্যতা আর এর আলোকিত শিক্ষা থেকে চোখ বন্ধ করে রাখা ইসলামবিদ্বেষীদের বহুবিধ অভিযোগের মধ্যে বড় আশ্চর্যজনক একটি অভিযোগ হচ্ছে নারী সমাজের জন্য অনেক কল্যাণকর পর্দা প্রথার বিরুদ্ধে। পর্দার প্রকাশ্য কল্যাণ আর ইতিবাচক ফলাফলের পরেও এর ভাল দিকগুলো ইসলামবিদ্বেষী মহলটি গ্রহণ করতে নারাজ। সুতরাং পশ্চিমারা পর্দার-বিধানের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে এবং এর প্রতিক্রিয়া এসে পড়ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ সমস্ত মুসলিম বিশ্বের প্রগতিশীল নামধারী সমাজে। সংক্ষিপ্ত আকারে গত দুই বছরে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন দেশে পর্দাবিরোধী অপতৎপরতার একটি চিত্র তুলে ধরছি :
২০০৯ সালের ফেব্র“য়ারিতে ফ্রান্সের বড় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী “শাবেরিন তরোজাত”-কে তার গবেষণামূলক প্রবন্ধের জন্য প্রাপ্ত স্কলারশিপ থেকে বঞ্চিত করা হয় শুধু তার বোরকা পরিধানের ‘অপরাধে’। রাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ লঙ্গনের অভিযোগে একই বছর জুন মাসে বেলজিয়ামের প্রাদেশিক সংসদের সদস্য “মাহে নূর”র বিরুদ্ধে হেজাব পরার কারণে ডানপন্থী এক সংসদ সদস্য মামলা করেন । একই বছর ১লা জুলাই জার্মানির ড্রাসডেন শহরের এক আদালতে ২০ বছর বয়স্কা পর্দানশীন মহিলা “মারওয়া শরবিনি”কে আদালত অঙ্গনেই ছুরিকাঘাত করা হয় এবং তিনি পরে মারা যান। একই মাসের সাত তারিখে যখন “মারওয়া শরবিনি”র রক্তও শুকায়নি তখনই ফ্রান্সের এক মুসলিম মহিলাকে তার গার্মেন্টস কারখানা থেকে বের করে দেওয়া হয় হেজাব পরার ‘অপরাধে’।
একইভাবে ২০১০ জুড়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সারকোজির পর্দাবিরোধী বিষাক্ত বক্তব্য অব্যাহত থাকে। এমনকি রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন করে পর্দা নিষিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়। অনেক ইসলামী রাষ্ট্র থেকেও পর্দার ব্যাপারে দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ প্রকাশ পেতে থাকে। এশিয়ার বড় একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র (অন্তত দাবিদার) ভারতেও বিভিন্ন প্রোপাগান্ডা চলতে থাকে পর্দার বিরুদ্ধে। বছরের শেষের দিকে এসে শোনা গেল যে মুসলিম রাষ্ট্রটি বিশ্ব দরবারে নিজেদের সাহসী কিছু পদক্ষেপ আর ইসরাইলের বিরুদ্ধে চোখ তুলে কথা বলার কারণে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার শিরোনাম ছিল সেই তুরস্কের ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল বিভাগের এক ছাত্রীকে পর্দা করার অপরাধে ক্লাস থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় ধর্মনিরপেক্ষতা লঙ্ঘনের দায়ে। পরে যদিও শিক্ষা গ্রহণের অধিকারের কারণে তাকে ক্লাস করার অনুমতি দেওয়া হয়। আমাদের বাংলাদেশেও আজকাল বিভিন্ন স্কুল কলেজে বোরকাপরা মেয়েদেরকে হয়রানি করার ঘৃণ্য অপচেষ্টা শুরু হয়ে গেছে।
ইসলামি চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবীদের অন্তরে এসব ঘটনা থেকে এই প্রশ্নটি আসা স্বাভাবিক যে ইসলামি বিধান পর্দার এতো বিরোধিতা কেন? শুধু মুসলিম নারীদেরকেই কেন পর্দার কারণে বিভিন্নভাবে হয়রানির সম্মুখীন হতে হচ্ছে? অথচ খ্রিস্টান ও বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীদের মাঝেও পর্দার ভালো প্রচলন দেখা যায়। আরো চিন্তার বিষয় হল; পর্দা সম্পর্কে ইসলামবিরোধীদের সুরে সুর মিলিয়ে মুসলিম ঘরে জন্ম নেওয়া কিছু ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিও পর্দাবিরোধী স্লোগান “যেদিকের হাওয়া সেদিকে তাল মিলাও” কেন তুলছে?
পর্দাবিরোধী গ্র“পটা সাধারণত ধর্মনিরপেক্ষতার দোহাই দিয়ে থাকে। তারা বলে “পর্দা ধর্মীয় পোশাক, তাই পর্দা পালন করলে ধর্মনিরপেক্ষতা লঙ্ঘিত হয়”। কিন্তু অন্যান্য ধর্মাবলম্বীগণ তাদের ধর্মীয় পোশাক পরলেও তারা পাবলিক প্লেসে বা শিক্ষাঙ্গনে কোথাও কোনও প্রকার বাধার সম্মুখীন হয় না। ধর্মনিরপেক্ষতার এই দ্বিমুখী আচরণের কারণ কী? ইসলামী বিধান পর্দার বিরোধিতা করা হচ্ছে আর অন্যান্য ধর্মীয় পোশাকের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। কেন?
আসল কথা কথা হল ধর্মনিরপেক্ষতার দোহায় দিয়ে পর্দা বিরোধিতার পেছনে তাদের অন্য মতলব নিহিত রয়েছে। যেটা তারা প্রকাশ করে সেটা তাদের আসল উদ্দেশ্য নয়। আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিশ্বের দেশে দেশে পর্দা প্রথার কল্যাণকর ও ইতিবাচক ফলাফল দেখে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেয়া ক্রমবর্ধমান জন সংখ্যার গতিরোধ করা। তারা দেখছে যে ইসলামের অন্তর্নিহিত আকর্ষণশক্তি প্রত্যেক বিবেকবান মানুষকে অবিশ্বাস্য গতিতে নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে সক্ষম হচ্ছে এবং প্রতি বছর সারা বিশ্বে হাজার হাজার মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণে ধন্য হচ্ছে। একইভাবে ইসলামের পর্দা প্রথার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে অগণিত মহিলা ইসলাম গ্রহণ করছে। তারপর যখন তারা দেখছে যে কিছু নওমুসলিম মহিলা এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন যে তারা পর্দা প্রথার প্রতি আকৃষ্ট হয়েই ইসলাম গ্রহণ করেছেন এবং পর্দাতেই তারা নিজেদেরকে নিরাপদ ভাবছেন। তখন ইসলামবিদ্বেষী শক্তির মাথা ব্যথা শুরু হয়েছে আরো বেশি করে। তাই তারা পর্দার বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছে। তারা বিভিন্নভাবে পর্দানশীন নারীদেরকে হয়রানী করার মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে।
মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্র“দের এরকম ষড়যন্ত্রমূলক পরিস্থিতিতে মুসলিম সমাজের দায়িত্ব হচ্ছে পরিবারে মুসলিম সদস্যাদেরকে তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা দেওয়া, তাদেরকে ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করা। তাদেরকে এ কথা বুঝানো যে ইসলাম পর্দার হুকুম দিয়ে নারী সমাজের উপর কোনও প্রকার জুলুম করেনি, বরং তাদের ইজ্জত আব্র“র হেফাজতের ব্যবস্থা করেছে। তাদেরকে মানসিকভাবে এরকম করে তৈরি করা যেন প্রয়োজনের তাগিদে যদি ঘরের বাইরেও যেতে হয় তবুও যেন তারা পর্দা ব্যতীত বাইরে না যায়। শিক্ষাঙ্গন থেকে কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত সব জায়গায় যেন তারা পর্দার বিধান মেনে চলে। তাদেরকে একথা বুঝিয়ে দিতে হবে যে মাতৃসুলভ ভালবাসা, ভাতৃ সুলভ, স্নেহ, আর স্বামীর সাথে আনুগত্যমূলক আচরণ, নারীত্বের মর্যাদাকেই শুধু বৃদ্ধি করে। এটা নারীর জন্য কখনো অনুচিত বোঝা নয়। ইসলামী শিক্ষার মাধ্যমে তাদেরকে এটা জানাতে হবে যে একমাত্র ইসলামই নারীদেরকে তাদের পূর্ণ অধিকার প্রদান করেছে। মা’ হওয়ার সুবাদে ইসলাম তাদের পায়ের নিছে বেহেস্তের ঘোষণা দিয়েছে। বোন হওয়ার সুবাদে ভায়ের স্নেহের পাত্র বানিয়েছে। স্ত্রী হওয়ার সুবাদে তাদেরকে পরিবারের রাণী বানিয়ে দিয়েছে। তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে হবে যে আবু বকর সিদ্দিক (রা.), ফারুকে আজম (রা.), উসমান জিন্নুরাইন (রা.), আলীউল মুর্তজা (রা.), খালেদ বিন ওয়ালীদ (রা.), ইবনে আবী ওয়াক্কাস (রা.), ইবনে জিয়াদ (রা.), ইবনে কাসেম (রাহ.), সালাহুদ্দিন আইয়ুবী (রাহ.), আবু হানীফা (রহ.), মালেক (রাহ.) শাফেয়ী (রাহ.), জুনাইদ (রাহ.), আল্লামা শিবলী নোমানী (রাহ.), এর মত হাজারো দীনদার বুজুর্গগণের কাছে তোমরা ঋণী। সুতরাং যুগের তুফানে গা ভাসিয়ে দিয়ে দুশমনের ষড়যন্ত্র সফল হওয়ার কোনো রকম সুযোগ দেওয়া যাবে না।
এভাবে মুসলিম সমাজের প্রগতিশীল সমাজের নিভুনিভু প্রায় ঈমানী চেতনাকে জাগাতে হবে। তাদের কাছে জিজ্ঞেস করা দরকার যে তোমরা এত দায়ুস কিভাবে হয়ে গেলে যে নিজেদের মান-সম্মান সব বিক্রি করে দিতে প্রস্তুত হয়ে গেলে? তোমরা কি পশ্চিমা উলঙ্গপনার মোহে পড়ে ইসলামের শালীনতাকে ত্যাগ করতে চাও? তোমরা কি পছন্দ কর যে তোমাদের মেয়েরা, মা-বোনেরা প্রকাশ্য জনসম্মুখে নিজেদের সৌন্দর্যের ফেরি করে চলুক? নাইট ক্লাব আর নাচ গানের থিয়েটারে উলঙ্গ অর্ধোলঙ্গ হয়ে নাচ গান করুক? আর নিজেদের শরীর প্রদর্শন করে কামাতুর লোলুপ দৃষ্টিগুলোর খোরাক যোগান দিক?
ধর্মের বন্ধন থেকে মুক্ত হতে গিয়ে উচ্ছৃংখলতার প্রতি ঝুঁকে পড়া ব্যক্তিদের কাছে ইসলামের ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে যে ইউরোপিয়ান সভ্যতার সূর্য দিন-দুপুরেই অস্ত যাওয়ার একমাত্র কারণ হচ্ছে, তাদেরকে আল্লাহ তালার দেয়া অসংখ্য নেয়ামত, সোনা রূপার ভাণ্ডার, জীবন ধারণের প্রয়োজনীয় সামগ্রীর সহজ লভ্যতা এবং সম্পদের প্রাচুর্যতাকে সঠিক পথে ব্যাবহার করতে তারা সক্ষম হয়নি। তারা অঢেল সম্পদকে বিপথে ব্যাবহার করে বিলাসিতার মধ্যে ডুবে গিয়েছিল। যুব সমাজ আর অবাধ যৌনতার মাঝখানে পর্দার লেশমাত্র ছিল না। ফ্রি সেক্সের লাগামহীন ঘোড়া পাগলামির সীমা অতিক্রম করে জেঁকে বসেছিল তাদের মন মানসিকতায়। সুতরাং যৌবনের উদ্যমতা তাদেরকে মদের গ্লাসে ডুবিয়ে চিরতরে ইতিহাসের অংশ বানিয়ে দিয়েছে।
তারপর এসেছে রোমান সভ্যতার উন্নতির যুগ। এই সভ্যতাও পৃথিবীতে খুব আলোচিত ছিল। তাদের প্রভাব প্রতিপত্তির খবর ছড়িয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বে। কিন্তু তারাও সেই একই ভুল করলো, যা ইউরোপিয়ানরা করেছিল। যেখানে এক সময় সতীত্ব আর পবিত্রতাকে উন্নত চরিত্রের মাপকাঠি বলে গণ্য করা হত সেখানে চরিত্রের সীমা লঙ্ঘন করে বয়ে যায় নগ্নতা আর প্রবৃত্তি পূজার বন্যা। থিয়েটারগুলোতে বেহায়াপনার প্রদর্শন হতে থাকে। নির্লজ্জ, উলঙ্গ ছবি ঘরের শোভা বর্ধনের অনুষঙ্গে পরিণত হতে থাকে। বিভিন্ন পার্টিতে নির্লজ্জ কাব্যগুলো প্রকাশ্যে পাঠ করা হতে থাকল। মানবিকতা লোপ পেয়ে পশুত্বের এরকম উত্থানের পর রোমান সভ্যতার উন্নত দালান এমনভাবে ধসে পড়ল যে সেই দালানের ইটগুলো পর্যন্ত যথাস্থানে আর অবশিষ্ট রইল না।
মুসলিম সমাজের প্রতারিত অংশকে পাশ্চাত্য সভ্যতার পাপাচারের বন্যা সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। তাদেরকে বুঝাতে হবে পাশ্চাত্যের “নারী পুরুষের সমান অধিকার”-এর শ্লোগান আর অবাধ মেলামেশার প্রোপাগান্ডার পেছনের দৃশ্যে কী লুকিয়ে আছে। ইসলামের দুশমনেরা উপলব্ধি করতে পারছে যে মুসলমানদেরকে তাদের দীন থেকে সরানোর জন্য জুলুম, নির্যাতনের সব কৌশল ব্যর্থ প্রমাণিত হচ্ছে। লোভ-লালসা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। তাই তারা কৌশল হিসেবে এমন শ্লোগান আবিষ্কার করেছে যা শুনতে শ্র“তিমধুর এবং প্রতারণাপূর্ণ হওয়ার কারণে মুসলমানদের একটি অংশ এই শ্লোগানের পেছনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অবহিত হতে না পেরে বলতে শুরু করল যে সত্যিই-ত নারী জাতি অবহেলিত। তাদের অধিকার আদায়ের জন্য পাশ্চাত্যের অনুকরণে নারী অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে এগিয়ে নেয়া দরকার।
কিন্তু মুখে যা বলে তা পাশ্চাত্যের আসল উদ্দেশ্য নয়। তারা মানবজাতির প্রাকৃতিক ভারসাম্য ভেঙ্গে দিতে চায়। তারা নারী জাতির মাথার উপর এমন ভারি বোঝা চাপিয়ে দিতে চায় যা তারা বহন করতে অক্ষম। এই দুরভিসন্ধি বাস্তবায়নের প্রথম প্র্যাকটিসটা তারা মুসলমান নারীদেরকে দিয়েই করাতে চায়। এজন্য মুসলিম নারীদেরকে তারা বাজারে, রাস্তায়, নাচ গানের অনুষ্ঠানে, সরকারি বেসরকারি অফিস, আদালতে, আর পাবলিক প্লেসে নিয়ে আসতে চায়। নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার অনিবার্য পরিণতি হিসেবে বর্তমানে সৌন্দর্য প্রদর্শনীর প্রতিযোগিতা আর নগ্নতা ও উলঙ্গপনার সীমাহীন বাড়াবাড়ি লক্ষ করা যাচ্ছে। বিপরীত লিঙ্গের প্রতি মানুষের স্বাভাবিক আকর্ষণ আগের তুলনায় এখন অনেক শক্তিশালী বলে মনে হতে শুরু করেছে। যেসব প্রতিষ্ঠানে নারী-পুরুষ এক সাথে কাজ করে সেখানে প্রত্যেকেই অপর পক্ষের কাছে নিজেকে অধিক আকর্ষণীয় করে তোলার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হচ্ছে। মন ভুলানো অঙ্গভঙ্গিমা প্রশংসিত হতে হচ্ছে।
চরিত্রের মাপকাঠিতে যখন এই সব কর্মকাণ্ড আর দোষের কিছু বলেও গণ্য হচ্ছে না, তখন সৌন্দর্য প্রদর্শনী নগ্নতার শেষ সীমায় পৌঁছার আকুতি ক্রমান্বয়ে বাড়তেই থাকল। এই অবস্থাটা বর্তমানে পাশ্চাত্য সভ্যতায় পুরো দমে সক্রিয়। বিপরীত লিঙ্গের কাছে নিজেকে আকর্ষণীয় করে তোলার মানসিকতা তাদের নারী সমাজের মধ্যে এতটাই প্রবল যে চোখ ধাঁধানো পোশাক, নেশাযুক্ত মদের বোতল আর নিত্য নতুন প্রসাধনীর ব্যবহার করেও যেন তারা সন্তুষ্ট থাকতে পারছে না। তাই তারা তাদের পরিধেয় কাপড় ছোট করতে করতে এক সময় শূন্যতে নামিয়ে আনে। আর অপর দিকে তাদের দেখে যারা আনন্দ উপভোগ করছে তারা [হাল মিম মাজীদ] আরো এগিয়ে যাও বলে তাদেরকে উৎসাহ দিচ্ছে। ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিবারণ করার জন্য তারা সম্ভাব্য সকল পন্থাই অবলম্বন করছে। উলঙ্গ ছবি, নির্লজ্জ থিয়েটার, পর্নো পত্রিকা, অঙ্গ প্রদর্শনীর নাচ-গানের আসর এই সবকিছুকেই তারা উত্তেজনা প্রশমনের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেছে। আর সেই নির্লজ্জতার নাম দিয়েছে আর্ট আর শিল্প।
পাশ্চাত্যের এই সব নির্লজ্জতা থেকে এখন বাঁচতে চায় খোদ তাদের জ্ঞানী মেয়েরাও। তারা এখন নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে ইসলামি বই পুস্তক অধ্যায়নের পর নিজেদের ইচ্ছায় ইসলামের সুশীতল ছায়ার তলে আশ্রয় নিচ্ছে, এবং তাদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পাশ্চাত্যের ঘুণে ধরা সভ্যতার দালানও এখন প্রায় ধ্বসে পড়ার উপক্রম।
পাশ্চাত্যের ধ্যান ধারণায় লালিত প্রাচ্যের ব্যক্তিবর্গের কাছে প্রশ্ন, আপনারা কি সেই সভ্যতার সহযোগী হতে চান যে সভ্যতার দিন ফুরিয়ে এসেছে? যে সভ্যতা থেকে খোদ সেখানে লালিত শিক্ষিত ব্যক্তিরা পর্যন্ত পালিয়ে বাঁচতে চাচ্ছে? যে মানবজাতিকে আল্লাহ তা‘য়ালা সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন সেই মানবজাতি আজ সভ্যতার সব সীমা লঙ্ঘন করে অসভ্য জাতিতে পরিণত হয়েছে। নিত্য নতুন সভ্যতার ধ্বংসাত্মক পরিণতি দেখার পরেও যদি আপনাদের হুঁশ না হয়, নিজেদের সমাজে যদি পর্দার প্রচলন করতে না পারেন তাহলে সে দিন বেশি দূরে নয় যে দিন আপনাদের প্রশস্ত মানসিকতা আর মডার্নিইজমের বলি হবে খোদ আপনাদের সন্তানেরা। তখন পুরো দুনিয়া জুড়ে আপনাদের ব্যর্থতা অপমান আর লজ্জা লুকানোর মত কোনো স্থান খুঁজে পাবেন না।
ইনসাফ এ প্রকাশিত
বিষয়: বিবিধ
১১১২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন