যে কারণে আমরা আজ লাঞ্ছিত হচ্ছি
লিখেছেন লিখেছেন খন্দকার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহ ২০ এপ্রিল, ২০১৪, ১০:০৯:৫২ রাত
আজকাল মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন পদ্ধতিতে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ এগিয়ে চলেছে। বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন দাওয়াতী কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন পদ্ধতিতে। ইসলামী বই-পুস্তকও উল্লেখযোগ্য আকারে প্রচার এবং প্রকাশ হচ্ছে। অনেক ইসলামি সংগঠনের অধীনে বিভিন্ন সভা সেমিনার হচ্ছে। কিন্তু এত সব চেষ্টা প্রচেষ্টার ফলাফল যা হবার ছিল তার কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ কি?
বিজয়ের জন্য প্রয়োজনীয় দৃশ্যমান উপকরণের কোনো অভাব নেই আমাদের। ধন সম্পদেরও কোনো কমতি নেই। অনেক মুসলিম দেশে আল্লাহ তা’য়ালা অবাধ নেয়ামত দান করেছেন। তারা বলতে গেলে এখন উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতেও এখন অনেক মুসলিম দেশ উন্নত দেশগুলোর সমপর্যায়ের না হলেও কাছাকাছি অবস্থানে আছে। মুসলমানগণ ত্যাগ স্বীকারেও প্রস্তুত আছে। সংখ্যার দিক দিয়েও আমরা কম নই। এসবের কিছুরই অভাব নেই আমাদের মাঝে। তারপরেও এমন কি রয়ে গেছে যার অভাবে উল্লিখিত উপকরণগুলো আমাদের কাছে থাকা সত্ত্বেও আমরা তার ফলাফল ভোগ করতে পারছি না?
ইসলাম-বিরোধীদের ষড়যন্ত্র কি আমাদের পরাজয়ের কারণ? না। ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র সব যুগেই হয়েছে। সব যুগেই ইসলাম এগিয়ে গেছে ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে। আগেও কঠিন থেকে কঠিনতর পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছে মুসলমানদেরকে। মুসলমানদের চলার পথ কখনো কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। এই পথে কাঁটা বিছানো হয়েছে যুগে যুগে। বাধার পর বাধা এসেছে তাদের রাস্তায়। কিন্তু সব বাধার পাহাড় অতিক্রম করে মুসলমানরা সামনে এগিয়ে গেছে দুর্বার গতিতে। তখন মুসলমানদের কাছে এখনকার মত তেমন ধন-সম্পদও ছিল না আর যুদ্ধে জেতার উপকরণও তাদের কাছে ছিল না। তাহলে তারা কিসের বলে তখনকার বিশ্বের পরাশক্তিগুলোকে পরাজিত করে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল ?
আমাদের অতীত আর বর্তমান অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বর্তমানে আমাদের মধ্যে যে জিনিসের অভাব রয়েছে তা হল ঈমান আর ইয়াকীন। যে ঈমান আর ইয়াকীনের কারণে তখনকার মুসলমানেরা সংখ্যায় কম হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ব জয় করতে সমর্থ হয়েছিল এবং উন্নতির চরম শিখরে উপনীত হতে পেরেছিল সেই ঈমান আর ইয়াকীন আমাদের মধ্যে নাই।
তখন মুসলমানেরা সংখ্যায় কম ছিল কিন্তু তাদের ঈমান ছিল দৃঢ়। আল্লাহর উপর ভরসা ছিল পাহাড়ের মত অটল। নরম স্বভাব আর উন্নত চরিত্রের কারণে তারা যেখানেই গিয়েছে সেখানেই মানুষের অন্তর জয় করে নিয়েছে খুব সহজেই। তাদের চারিত্রিক মধুরতার সংবাদ আগে থেকেই পৌঁছে যেত প্রতিপক্ষের কাছে। তীর তলোয়ার চালানোর আগেই তাদের ঈমানদীপ্ত চোখের চাহনিতে প্রতিপক্ষের অন্তর ঘায়েল হয়ে যেত।
মুসলমানদের এই দুর্জয় শক্তি সম্পর্কে অবহিত হয়ে যেত শত্র“পক্ষ। ঐতিহাসিক ইবনে কাসির বলেন মুসলিম সৈন্যরা যখন সিরিয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তখন সিরিয়ার সম্রাট সেখানকার অধিবাসীদের উদ্দেশে বললেন, এরা নতুন এক ধর্মের অনুসারী। কেউ এদের মোকাবিলা করতে পারবে না। আমার কথা শোনো! তোমরা তাদেরকে সিরিয়ার অর্ধেক দিয়ে তাদের সাথে সন্ধি করে নাও তাহলে তোমাদের কাছে রোমের পাহাড়ি অঞ্চল থাকবে। আর যদি তোমরা না শোনো! তাহলে সিরিয়া এবং রোম দুটোই তোমাদের হাত ছাড়া হয়ে যাবে।
ইরাকে সৈন্য প্রেরণের প্রাক্কালে হযরত ওমর [রা.] যখন সাথীদের কাছে পরামর্শ চাইলেন তখন হযরত আলী (রা.) বললেন, “আমিরুল মূমেনীন, সৈন্য সংখ্যার উপর আমাদের জয় পরাজয় নির্ভর করে না। আল্লাহতা’লা যে দীনকে বিজয়ী ঘোষণা করেছেন এটা সেই দীন। যে দীনকে আল্লাহ তালা ফেরেশতা পাঠিয়ে সাহায্য করেছেন সেই দীন এটা। আল্লাহতা’লা আমাদের সাথে সাহায্যের ওয়াদা করেছেন এবং তিনি অবশ্যই সাহায্য করবেন।”
আল্লাহ তালার উপর এরকম ইয়াকীন আর দৃঢ় বিশ্বাস নিয়েই তাঁরা বিপদের মোকাবিলা করতেন। আশ্চর্যজনক কাজগুলো করে দেখাতেন খুব সহজেই, অস্বাভাবিক এবং অলৌকিক কাজ পর্যন্ত তারা করে দেখাতেন এক একমাত্র ঈমানের জোরে। এই ঈমানি শক্তির কারণেই তারা দজলা নদীর পানির উপর ঘোড়া চালিয়ে দিয়েছিলেন এবং স্বাভাবিক চলার মতই পানির উপর দিয়ে নদী পাড়ি দিয়ে চলে গিয়েছিলেন অপর পাড়ে। এই ঈমানি শক্তির কারণেই তাদের অন্তরে ছিল প্রশান্তি, মনে ছিল বল, সৈন্য সংখ্যার পরোয়া না করেই বাহাদুরের মত লড়াই করে বিজয় অর্জন করেছেন। তারা জানতেন উপকরণের কারণে নয়, দীনের কারণেই তারা জয় পাচ্ছেন। তাই তারা উপকরণের চেয়ে দীন মেনে চলার প্রতিই বেশি মনোযোগী ছিলেন। তারা দীন মেনে চলার কারণে পেয়েছেন মান সম্মান ইজ্জত। আর আমরা দীন মতে না চলার কারণেই আজ লাঞ্ছিত আর বঞ্চিত হচ্ছি।
আহমদ ইবনে মারওয়ান মালিকি বলেন ‘লড়াই শুরু হয়ে যাবার পর সাহাবায়ে কেরামের সামনে শত্র“পক্ষ এতক্ষণ সময়ও টিকতে পারতো না যতক্ষণ সময় উঠের দুধ দোহন করতে লাগে’। আন্তাকিয়াতে পরাজয়ের পর যখন বাদশাহ হিরাকলের বাহিনী ফিরে এলো তখন হিরাকল তাদের কাছে জিজ্ঞেস করল যে, মুসলমানেরা কি মানুষ ছিল না? উত্তরে তারা বলল হ্যাঁ মানুষ ছিল। আবার প্রশ্ন করল হিরাকল “তারা কি সংখ্যায় তোমাদের চেয়ে বেশি ছিল?” উত্তরে বলা হল ‘না’ তারা আমাদের চেয়ে সংখ্যায়ও কম ছিল আর রসদ এবং অস্ত্রশস্ত্রের দিক দিয়েও আমাদের চেয়ে অনেক কম ছিল। হিরাকল বলল, তাহলে তোমরা পরাজিত হলে কেন? তখন হিরাকলের বাহিনীর দলনেতা বলল, জাঁহাপনা আমরা তাদের কাছে পরাজিত হয়েছি। কারণ তারা রাতের বেলা নামাজ পড়ে আর দিনের বেলা রোজা রাখে। ওয়াদা করলে তা পূরণ করে। ভালো কাজের আদেশ করে আর অসৎ কাজ থেকে বিরত থাকার উপদেশ দেয়। ন্যায়নীতি আর ইনসাফমত তারা চলে। অথচ আমাদের অবস্থা হল আমরা মদ খাই, জেনা করি, হারাম কাজে জড়িয়ে পড়ি। ওয়াদা রক্ষা করি না। জুলুম করি, আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করি। এই বর্ণনা শুনে হিরাকল বলল “তুমি ঠিকই বলেছ। তাদের কাছে যে গুণাবলী আছে তা আমাদের কাছে নাই। তারা তো বিজয়ী হবেই”।
আজকাল মুসলমানদের পরাজয়ের কারণ সম্পদ আর উপকরণের অপ্রতুলতা নয়। পরাজয়ের কারণ সেই সব গুণাবলীর অভাব যা প্রথম যুগের মুসলমানদের মধ্যে ছিল। বাহ্যিক উপকরণ সংগ্রহের সাথে সাথে ঈমান, আমল, ইয়াকীন , আল্লাহর উপর ভরসা, ন্যায় পরায়ণতা, ইনসাফ, তথা শরিয়তের পুরোপুরি অনুসরণ আর অনুকরণ যদি আমরা করি তাহলে আজও আবার সেই সোনালি যুগ আসতে পারে যা সাহাবায়ে কেরামের যুগে ছিল। দীনের উপর পুরোপুরি যদি আমরা চলি তাহলে আমাদের মধ্যে পারস্পরিক মতভেদ আর দূরত্বও আস্তে আস্তে কমে আসবে।
বিষয়: বিবিধ
১২৯২ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উনারা আওয়ামীদের বিরুদ্ধে কিছু বলবেনা কারণ আওয়ামী রা সম্পদ দেওয়ার কৌশলে ১ নাম্বার ইমানদার।
অথচ আল্লাহ পাক বলেন,কাফের,মুশরিক এবং তাদের অনুসারিরা ইমানদার দের বন্ধু হতে পারেনা।
আমাদের দেশে উনারা নিজেদের হক্কানি আলেম বলেই প্রকাশ করেন,অথচ উনারা এমন কাজে মুসলিম জাতী মনে হয় লজ্জা পেয়েছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন