গল্প নয় সত্যি
লিখেছেন লিখেছেন মুজিব সেনা ২৯ মে, ২০১৪, ১২:৩৩:৫০ দুপুর
হ্যালো আসসালামু আলাইকুম।
- এটা কি ৮০১৩......? (ওপাশ থেকে পরিচিত কণ্ঠস্বর ভেসে আসে)
- হ্যাঁ, কাকে চাচ্ছেন?
- আচ্ছা রাজু আছেন?
- বলছি।
- কেমন আছেন? (পরিচিত কণ্ঠস্বর বলে উঠে)
- ভাল নেই।
- কেন ভাল নেই রাজু?
- সেটা অবশ্যই আপনার জানার কথা।
- আমি কিভাবে জানবো? বলে রাজুর মনের একান্ত প্রিয় মানুষ রিনি।
- আপনারই তো জানার কথা তাই না?
- কি ব্যাপার রাজু আজ তুমি আমাকে আপনি করে বলছ?
- সেটা আপনিই ভালো জানেন।
১ম রাত্রি
সে অনেক দিন আগের কথা, তখন রাজু S.S.C Improvement পরীক্ষা দিবে। দিনটি ছিল জানুয়ারী মাসের ২২ তারিখ ২০০১। সোমবার রাত্রি ১১.১৫ মিনিত,হটাৎ Cordless Phone Ring বেজে উঠল। অত্যন্ত বিরক্তির সাথে ফোন Receive করল রাজু। ওপাশ থেকে কোনও শব্দ এলো না,পড়ে লাইন কেটে গেল। আবার ফোন এল,কিন্তু এবারও কোনও শব্দ নেই। পড়ে আরেকবার ফোন এলো,এবার ওপাশ থেকে অপিরচিত কণ্ঠ ভেসে আসলো।
- হ্যালো আপনি কে বলছেন?
- আমি যেই হই আপনি কে? কাকে চাচ্ছেন?
- আসলে আমি কাউকে চাই না, এমনি ফোন করেছি।
- তাই বলে এত রাতে আরেকজনের ঘুম নষ্ট করবেন?
- আসলে আমার মনটা ভালো না,তাই আমার ছোট বোন তিনটা ফোন নাম্বার লিখল আর আমাকে বলল কোন মেয়ে ফোন ধরলে কথা বলতে। প্রথম ২টা নাম্বার দুই জন মহিলা ধরল আর শেষ নাম্বারটা আপনি, তাই ভাবলাম আপনার সাথে কথা বলি। কি আপত্তি আছে?
- না, ঠিক আছে বলুন (বিরক্তির সাথে)।
- কি যে বলব...(খানিকটা মধুর হাসি) আচ্ছা আপনি কিসে পড়েন?
- আমি Inter 1st Year এ পড়ি? আর আপনি?
- বলব না।
- কেন? আচ্ছা এটা বলুন যে আপনি কোন ক্লাস এ পড়েন?
- আচ্ছা,সবাই আমকে শুধু এই কথাটাই কেন বলে যে রিনি তুমি কোন ক্লাস এ পর?কেন বলে না যে তুমি কোন কলেজে পড়?
- আপনি তো আপনার নামটাই বলে দিলেন (একটু হাসি)
- তাহলে আপনার নামটা বলেননা প্লিজ......
- আমার নাম রাজু
- বাহ সুন্দর মিলে গেছে তো রিনি-রাজু (আবারো একটু হাসি) কি অদ্ভুদ মিল।
- মনের মিল তাই বড় কথা নামে যতই মিল থাকুক,তাই না?
- হ্যাঁ অবসসই,জানেন আমরা তিন বোন। আমি রিনথিয়া,বড়বোন সিনথিয়া আর ছোটবোন বিনথিয়া। আপনারা কয় ভাইবোন?
- আমরা তিন ভাই কোনও বোন নাই।
- তাহলে আমাদের সম্পর্কটা কেমন হবে?
- কেমন হবে আমার তো আর বোন নাই আপনি নাহয় আমার বোন হয়ে যান?
- না তা হয় না।
- তাহলে Friend.
- সেটাও সম্ভব নয়।
এর পর রাজু কথার মোড় অন্য দিকে নিয়ে যায়।
- তাহলে এবার রিনি তুমি বল তুমি কিসে পড়?
- সেটা বলা যাবে না,বললে যদি আর কথা না বলেন?
- বলব না কেন? অবশ্যই বলব।
- আচ্ছা রাজু তোমার কোন দুঃখ নেই?
- আসলে সত্যি বলতে আমার কোন দুঃখ নেই, আমি একটা হাসি খুশি মনের ছেলে। আমার মনে কোন কষ্ট ও নেই। তোমার আছে নাকি?
- আপনি কিন্তু এই নিয়ে আমাকে অনেকবার তুমি করে বলেছ।
- বলি নাই তো
- এইমাত্র বলল অথচ বলে বলি নাই? মিথ্যুক।
- সরি, ক্ষমা করে দিবেন।
- আমার কোন দুঃখ নেই কষ্ট আছে,আচ্ছা আমি যদি আর কনদিন ফোন না করি তাহলে আপনার অনেক কষ্ট হবে তাই না?
- হ্যাঁ হবে,কারন এতক্ষন কথা বলার পর যদি আর ফোন না করেন তাহলে কষ্ট তো হবেই।
- কেন কষ্ট পাবেন?
- জানি না।
- আপনি এভাবে আর জানি না কথাটা বলবেন না, আপনার এই জানি না শব্দটা শুনতে খুবি মায়াবী এবং রহস্যময়ী। আচ্ছা এত সুন্দর করে জানি না কথাটা কিভাবে বলেন?
- জানি না?
- আবারও,আপনাকে না এই মাত্র বললাম জানি না কথাটা বলবেন না।
- ভুল হয়ে গেছে।
- আপনার কষ্টের কথাটা কিন্তু শোনা হল না,বলবেন না?
- বলিনি এখন বলব, আমি অনেক অসুস্থ। আমার ব্রেইন টিউমার, এছাড়াও হেপাটাইসিস বি ভাইরাস রয়েছে।
এই কথা শুনে রাজু খুবই কষ্ট পেল,একদম চুপ হয়ে গেল। দু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে আনমনে। হয়ত এটাই তার পাওনা।
- হ্যালো কি হল কথা বলছেন না কেন? মুখের উপর দিয়ে কি ট্রাক গেল?
- না এমনি ......।বলুন (রিনথিয়ার এই কথাটা রাজুর খুব ভালো লাগলো)
- কি দিয়ে রাতে ভাত খেয়েছ?
- রুই মাছ আর দাল।উত্তর দেয় রাজু
এমন সময়ে Cordless Phone এ Battery Low Signal দেয়। রাজু বলল তাড়াতাড়ি বলুন কবে ফোন করবেন? কারন আমার ফোনের লাইন কেটে যাবে শীঘ্রই। রিনথিয়া তখনও দুষ্টমি করেই জাচ্ছে,খুব দুষ্ট মিষ্টি একটা মেয়ে। আবার রিনিঝিনি হাসিও হাসতে লাগলো। আর বলল যদি আর ফোন না করি?তাহলে কষ্ট পাবেন? ঠিক আছে এই সময়েই করবো। তাহলে ফোন টা রাখি রাজু বলল। নাহ এমনিতেই কেটে যাক।বলল রিনথিয়া। রাজু বলল তাহলে কালকে ফোন করছেন তাহলে? হ্যাঁ আবার না,যদি না করি তখন? খুবই কষ্ট হবে কারন এতক্ষণ কথা বলার পর যদি...... কথা শেষ করতে পারে না রাজু লাইন টা কেটে যায়।
ফোনটা চার্জ এ দিয়ে শুতে যাবে সেই মুহূর্তে অন্য সেটে রিং বেজে উঠে।
- হ্যালো রাজু আবার ফোন করলাম,এবার আমাকে খুব করে একটা বকা দেন।
- আমি কাউকে বকা দেই না রিনি।
- আমি আমার ছোট বোনের সাথে কথা বলছিলাম আপনার ব্যাপারে। সে বলছিল আপনি কি তার ভাইয়া হবেন?
- হতে পারি যদি সে আমার ছোট বোন হতে ছায়,আমার তো আর বোন নেই।
- তাহলে আপনি আমার ছোট বোনের ভাইয়া হয়ে গেলেন। আচ্ছা রাজু আমি যদি আর ফোন না করি?
- দেখুন এটা আপনার ইচ্ছা কারন আমার ফোন নাম্বার আপনার কাছে আছে,আপনার নাম্বার আমার কাছে নেই। অতএব ফোন করা না করা আপনার ব্যাপার।
- আচ্ছা কয়টা বাজে? রিনি জিজ্ঞাস করে।
- ৩ টা।
- সময়গুলো কিভাবে কেটে গেল বলুন তো?
- জানিনা...
- আচ্ছা আপনাকে না না করেছি জানিনা শব্দ টা বলবেন না,আমার কাছে মায়াবী লাগে। আর কখনও বলবেন না বুঝেছেন? এবার ফোনটা রাখি।
- ঠিক আছে রাখুন,আবার করছেন তো কালকে?
- চেষ্টা করবো।
- OK Good Bye…..Good Night
রাজু সারারাত চিন্তা করে কে এই মেয়ে? কেনই বা ফোন করবে? আমার কি আছে যে তার জন্য এই মেয়ের এত ভাবাবেগ? আমার মত একটা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটা ছেলের দিকে কেনই বা তার এত আবেগ? ইত্যাদি চিন্তা করতে করতে সে ঘুমিয়ে পড়ে।
ভোরবেলা পাশের ফ্ল্যাট এর গণিত টিচার এসে ডাক দেয় গণিত করবার জন্য। ঘুম ঘুম চোখে রাজু গণিত করতে গিয়ে শুধু ভুল করছে।কিছুতেই ঠিক হচ্ছে না।স্যার বলে কি ব্যাপার রাজু তোমার তো গণিত ভুল হবার কথা না। আসলে স্যার রাত জেগে পড়েছিত তাই......... বন্ধুদের বলল সব কথা ।বন্ধুরা বলল চালিয়ে যা , এতদিন পর একজন মানুষ খুঁজে পেলি। এ নিয়ে বন্ধুরা অনেক মজা করল।
সেদিন বন্ধুদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে কলেজে যায় রাজু। সেখান থেকে সবাই মিলে বাণিজ্য মেলায় জায়,সেখানেও সবাইকে সবকিছু খুলে বলে। সবাই বিস্মিত হয়,তার মধ্যে বান্ধবী হ্যাপি বলে যাক এতদিনে একজনকে পেলি। চালিয়ে যা... অনেক মজা করার পর বাসায় ফেরে রাজু। দুপুরে শুতে যাবে এমন সময়ে রিনথিয়া ফোন করে। রাজু ফোন রিসিভ করে।
- হ্যালো
- রাজু কোথায় গিয়েছিলেন? (শুরুতেই প্রশ্ন করে রিনি)
- বন্ধুদের নিয়ে বাণিজ্য মেলায় গিয়েছিলাম। কেন?
- আচ্ছা আপনি কি আমার অনুমতি নিয়ে গিয়েছিলে,যে রিনথিয়া আমি কি বাণিজ্য মেলায় যাব?
- কিভাবে নিবো? আপনার ফোন নাম্বার তো আমার কাছে নাই।
- তবুও নিজের কাছে প্রশ্ন করতে পারতে? যে রিনি আমি কি মেলায় যাব? তখন আমি একটা চড় দিয়ে বলতাম ওখানে আপনার যাবার দরকার নেই আমার কাছে থাকেন।
- ঠিক আছে আর ভুল হবে না,এবারের মত ক্ষমা করে দাও। লক্ষী মেয়ে।
- ঠিক আছে দিলাম আর ভুল করবে না,মনে থাকবে? (বলেই রেশমি চুড়ির মত রিনিঝিনি হাসি)
এই হাসিটাই রাজুর মন ছুঁয়ে যায়।
- আচ্ছা রাজু আমার খুব শখ চুড়ি পড়বার, চুড়ি ঘরেই আছে কিন্তু কে যত্ন করে পাশে বসে পড়িয়ে দেবেন?
- কেন আমি দেব? তবে আপনাকে শাড়ি পড়তে হবে।
- কিন্তু আমিতো শাড়ি পড়ি না।
- ঠিক আছে অন্তত আমার সামনে পড়ে আসবেন। কেমন? রিনথিয়া রাতে ফোন করবেন এখন আর কথা বলতে পারব না,রাখি। ঠিক ১১.১৫ মিঃ এ ফোন করো,Ok Bye.মনে থাকে যেন?
- থাকবে।
২য় রাত্রি
প্রতিক্ষার প্রহর রাত ১১.০০টায় সেটে রিং বেজে উঠে।
- হ্যালো আসসালামুওলাইকুম
- হ্যালো কে? রিনথিয়া?
- না আমি ওর ছোট বোন বিনথিয়া ,ধরেন আপাকে ডেকে দেই।
এই আপা দেখ কে যেন ফোন করেছে। কে করেছে? ভাইয়া করেছে। নাম্বার পেল কোথা থেকে? আমি দিয়েছি? কেন? .....................কিছুক্ষন চলল দুই বোনের ঝগড়া,পড়ে থামল।
- রাজু কেমন আছেন?
- আপনি কেমন আছেন?
- ভালো না,আপনি তো জানেন যে আমি অসুস্থ। জানেন আমার বাঁচতে ইচ্ছে করে না। ডাক্তার ওষুধ দিএছে,কিন্তু আমি খাই না। বেসিনে ফেলে দেই। সুখ কি জিনিস আমি জানিনা। সুখ আমার একদম সহ্য হয় না।
এই কথাগুলো শোনার পর রাজুর দু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। হয়ত তার নিয়তি এই ছিল। একজন ভালো সাথী পেয়েও হারানো।
- আচ্ছা চুপ করে আছ কেন? মুখের ভিতর দিয়ে কি জাহাজ গেল? রাজু আপনি আমাকে বলেন যে “রিনথিয়া তুমি আমাকে তুমি করে বল”।
- ঠিক আছে বললাম।
- Thank You
- Welcome
- কি? এত রাতে আমি আসব কি করে?
খানিকটা হেসে নিল রাজু।তখন রিনথিয়া বলে-
- কি ব্যাপার হাঁসের মাংস দিয়ে ভাত খেয়েছ নাকি? এত হাসছ।
- না মানে এমনি।
- আচ্ছা তুমি কি সিগারেট খাও?
- হ্যাঁ খাই,শুধু সিগারেট না আমি ঘুমের ওষুধ ও খাই। রাতে ঘুম আসে না তো তাই।
- একদম খাবে না।
- ঠিক আছে খাব না,তার আগে বল তুমি রেগুলার ওষুধ খাবে? কোনও অবহেলা করবে না।
- ঠিক আছে খাব। শোন ছেলে ভালোভাবে পড়ালেখা করো,কোনও রকম গাফিলতি করবে না। দেখবে জীবনটা কত সুন্দর হবে তোমার।আচ্ছা আমি মারা গেলে তুমি আমার কবরে কি নিয়ে যাবে?
- কেন ফুল।
- নাহ,চকলেট নিয়ে যাবে কবরের মাটির নিচে রেখে আসবে আমি পড়ে খেয়ে নিব। কেমন? (আবারও রিনিঝিনি হাসি)।
- ঠিক আছে রেখে আসব রিনথিয়া (খুব সুন্দর করে বলল রাজু,কিন্তু গলাটা ভারি হয়ে এল। অনেক কষ্ট পেল কিন্তু প্রকাশ করল না)
- রাজু আজ আমার শরীরটা খুব খারাপ লাগছিল, আচ্ছা কয়টা বাজে?
- রাত ২ টা, আচ্ছা রিনি তুমি আমাকে চিঠি লিখতে পার। আমি আমার এক বন্ধুর ঠিকানা দিচ্ছি সেখানে পাঠাতে পার। কারন কোনও কারনে যদি ফোন নষ্ট হয়ে যায়,তাহলে তো আর যোগাযোগ করতে পারব না।
- ঠিক আছে,একটু ধর। হ্যাঁ বল (রাজু ঠিকানা দিল)
- আচ্ছা রাজু তুমি কি বারান্দায় দাড়িয়ে কথা বলছ?
- হ্যাঁ
- এই ঠাণ্ডার মধ্যে বারান্দায়? এখনি ঘরে যাও,তা না হলে আমি কিন্তু ছাদে ছলে যাব।
- না তুমি ছাদে যেও না,আমি ঘরে ঢুকছি।
- রাজু আমার ছোট বোন তোমাকে দেখতে চাচ্ছে।
- ঠিক আছে কিভাবে দেখা করবে?
- স্বপ্নে (বলেই রিনিঝিনি হাসি হাসতে লাগলো)
- কি ব্যাপার রাজু? আমি একাই কথা বলে যাচ্ছি তুমি চুপ করে আছ?
- জানিনা......
- আবারও জানিনা শব্দটা Use করছ? আমি না বলেছি জানিনা কথাটা বলবে না। আচ্ছা তুমি অত সুন্দর করে জানিনা বল কিভাবে?
- জানিনা?
- আবারও? (বলেই রিনিঝিনি হাসি,সেই হাসি শীতের রাত্রে একাকী প্রহরে মিশে যায়)
- আচ্ছা রিনথিয়া তোমার অসুখ এর কথা জানলে কি করে?
- আমি তখন ছত,আর ছোটবেলা থেকেই এই অসুখ। একদিন আমার খালার বাসায় টিভি দেখছিলাম তখন শুনতে পেলাম হাল্কা কান্নার শব্দ। বেপারটা বুঝার জন্য আমি দড়জার আড়ালে গিয়ে শুনলাম আম্মু খালাদের সাথে আলাপ করছে আর কাঁদছে। বলছিল কি এমন পাপ করেছিলাম যে আমার মেয়ের এত বড় আসুখ হবে? তাও আবার ব্রেইন টিউমার,নানান রকম অসুখ ওর শরীরে বাসা বাধবে? চিকিৎসা তো আর কম করলাম না।
ঠিক তখন থেকেই আমার জীবনের প্রতি অনীহা এসে পড়েছে আমার ওষুধ গুলো বেসিনে ফেলে দিতাম।
- প্লিজ এরকম আর করো না।
- ঠিক আছে তোমার কথাই মেনে নিলাম রাজু। কিন্তু আমার কাছে বলতে হবে তুমি আর কখনও সিগারেট খাবে না,ঘুমের ওষুধ খাবে না।
- ঠিক আছে খাব না,কিন্তু হটাৎ যদি খাই?
- দুই একটা খেতে পার কিন্তু পড়ে ছেড়ে দিবা।
কপাল খারাপ আবার Battery Low signal দিচ্ছে। তখন রিনি বলে কি ব্যাপার তোমার Cordless Phone এ ঠিক মত charge দিতে পার না?
- ঠিক আছে কালকে দুপুরে ফোন করো OK Bye…….
- আগেই Good Bye? তুমি একটা কথা দিয়ে শুরু করো আমি শেষ করে তারপর ফোন রাখি
- না তুমি বল,আমি শেষ করি।
- তাহলে শুরু করছি কিন্তু, “I LOVE YOU RAZU” (বলেই হেসে দিল)
- আমিও তোমাকে ভালোবাসি রিনথিয়া। আমাকে ছেড়ে কনোদিন যেয়ো না,আমি সহ্য করতে পারব না। সত্যি তোমাকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছি। আমি জানিনা আমার সেই যোগ্যতা আছে কিনা? রাখি তাহলে কালকে কথা হবে।
- শোন রাজু বাহিরে গেলে জ্যাকেট পড়ে জেও,ঠাণ্ডা লাগাবেনা কেমন? রাখি তাহলে।
সকালে বন্ধুদের সব খুলে বলল। সবাই শুনল এবং হাসল আর বলল পেয়েছিস তাহলে এতদিনে? কিন্তু মেয়েটা তার ফোন নাম্বার দিচ্ছে না কেন? লিপু বলল হয়তবা রহস্য আছে। পড়ে সবাই মিলে খেলতে গেল শহীদ মিনারের মাঠে।
ঠিক দুপুর ৩.০০ টায় ফোন আসলো
- হ্যালো রাজু সারাদিন কোথায় ছিলে?
- শহীদ মিনারে খেলতে গিয়েছিলাম।
- ওই জায়গায় আর যাবে না,জায়গাটা ভালো না।
- ঠিক আছে যাব না।
কিন্তু আড্ডা দিয়ে আবার খেলার সময় যে ১০টা সিগারেট খেয়েছিল টা মুখ ফসকে বেরিয়ে যায়।
- তোমাকে না বারণ করলাম এসব খাবে না।
এতটুকু বলেই ফোন টা রেখে দিল রিনথিয়া
৩য় রাত্রি
- হ্যালো ভাইয়া কেমন আছেন?
- ভাল। রিনথিয়া কোথায়?
- আচ্ছা তার আগে এটা বলেন তো আপার সাথে কি আপনার ঝগড়া হয়েছে?
- না তো দুপুরে কথা হয়েছিল। কেন?
- না আপনি কি সিগারেট খেয়েছিলেন?
- হ্যাঁ কেন কি হয়েছে?
- আপা ফ্রিজিয়াম খেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে ছিল। আমি আর আম্মু কোচিং থেকে এসে দরজায় নক করার পর দরজা না খুলাতে আমারা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, পড়ে দরজা খুলে দেখি এই অবস্থা। তারপর Stomach Wash করে ঘরে নিয়ে এসেছি। পরে হুঁশ আসলে জোরে চীৎকার করে বলতে থাকে “ রাজু কে আমি দেখে নিব,সে কেন সিগারেট খেল?” ইত্যাদি ইত্যাদি
- রিনথিয়া কে ফোন টা দাও তো
এই আপা ভাইয়ার ফোন,উঠ কথা বল আরে উঠত।
- হ্যালো রাজু কেমন আছ?
- ভালো না।
- কেন?
- তোমার জন্য, কিসের জন্য ঘুমের ওষুধ খেয়েছ?
- তুমি সিগারেট খেয়েছ কেন?
- আমার ইচ্ছা
- তাহলে এটাও আমার ইচ্ছা।
- তুমি একটা মানসিক রোগী, একটা পাগল তা না হলে এমন কাজ কেউ করে?
- কি আমি পাগল?
তারপর ১৫মিঃ ধরে কান্নাকাটি করল রিনি। ফোনের রিসিভার ছুড়ে ফেলে দিল। বিনথিয়া বলল আপা কাদছে। অনেক্ষন পড় কান্না থামল।
- সরি রিনথিয়া, এই মুহূর্তে আমার কাছে থাকলে কি করতাম জানো?
- কি করতে? চড় দিতে?
- না, তোমাকে বুকে জড়িয়ে রাখতাম এবং সব ভালোবাসা দিয়ে কান্না থামাতাম।
- কেন বুকে নিবে? আমি কি তোমার বউ?
- হ্যাঁ,আর আমার সাক্ষী আছে।
- কে?
- তোমার বোন।
কিরে আমাদের কি বিয়ে হয়েছে? হ্যাঁ হয়েছে (বিনথিয়া উত্তর দেয়) আচ্ছা তোকে কত টাকা ঘুষ দিয়েছে? দিয়েছে তো আমার ভাইয়া হয়েছে।আচ্ছা বলত তর ভাইয়া কি আমাকে কোনও অলংকার দিয়েছে? দিয়েছে তো White Gold,আর বাসর ঘর সাজানো হয়েছিল রজনীগন্ধা ফুল দিয়ে।
- রিনথিয়া তুমি আমার বুকে শুয়ে কথা বল,কারন তুমি খুবই ক্লান্ত। ওষুধ ঠিক মত খাচ্ছ তো?
- হ্যাঁ, আসলে কি রাজু তোমার সাথে যদি আরও ৪/৫ মাস আগেও পরিচয় হত তাহলে হয়ত বেঁচে যেতাম। এখন বাঁচার সম্ভাবনা খুবই কম। তোমার মাঝে আমি স্বপ্ন দেখেছি, নতুন জীবনের স্বপ্ন।
- এখন সময় আছে সব শেষ হয়ে যায় নি। ওষুধ খাও,সব ঠিক হয়ে যাবে। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছা। তবে আমি তোমাকে চাই না, চাই তোমার সুস্থতা। তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে এটাই আমার বিশ্বাস। একটু Hold করো,আমি আসছি।
- আহ তোমার বুকে শুয়ে কথা বলছিলাম খুব ভালো লাগছিল,তুমি আমকে সেই সুখ থেকে বঞ্চিত করলে? আমার খুব ইচ্ছেকরে তোমাকে নিয়ে হাত ধরাধরি করে নদীর পাড়ে হেঁটে বেরাব,কিন্তু সেই আশা সত্যি হবে কিনা জানিনা? এই রাজু আমার খুব ঠাণ্ডা লাগছে একটু বুকের উষ্ণতা দিবে?
- নাও দিলাম।
- এ্যাই কি রান্না করেছ যে খাওয়া যায় না। টিভি র ট্রলির উপর ধূলা জমে আছে পরিস্কার করনা কেন?
- এই রিনথিয়া পাগল হয়ে গেছ নাকি?
কিন্তু মেয়েটা কোনও কথাই শুনে না,বকবক করেই চলল।
- তোমার মেয়েদের আমি বাথরুমে বন্দি করে রাখব, আর আমার ছেলেদের খুব আদর করবো আর বুকে জড়িয়ে রাখব। তোমাকে না বলেছি একটা রান্না করার বই কিনে আনতে।
- দেখ এগুলো মেয়েদের কাজ। দুষ্টমি করো না।
এই দুষ্টমি গুলো অনেক ভালো লাগে রাজুর।আসলে মেয়েটার মাথায় গণ্ডগোল আছে,দারুন দুষ্টমি করতে পারে। মাঘ মাসের শীতের প্রকোপ একদিকে,অন্যদিকে রিনথিয়া আরেকদিকে পরীক্ষা। কোনদিকে যাবে তার কূল কিনারা খুঁজে পায় না রাজু।
- এই পাগল মেয়ে এতগুল ট্যাবলেট যে খেলে যদি কিছু হয়ে যেত? তখন আমি কি করতাম?
- দেখ রাজু ভালোভাবে লেখাপড়া করলে আমার চেয়ে অনেক ভালো মেয়ে তুমি পাবে।
- তোমাকে একটা অনুরোধ করব,আমার সাথে একটিবার দেখা করো প্লিজ।
এরই মাঝে Batt Low Signal দিতে লাগলো
- রিনথিয়া তাড়াতাড়ি করো প্লিজ ।
- আমি দেখা করবো না।
- কেন?
- সব কেন র উত্তর হয় না রাজু।
- কালকে এই সময়ে ফোন করছ তাহলে?
- হ্যাঁ করবো।
- Ok Bye……Good Night.
২৫ জানুয়ারী ২০০১ (শেষ রাত্রি)
- হ্যালো রাজু কি খবর? কেমন আছ?
- ভালো আছি,তুমি ওষুধ গুলো খাচ্ছ তো ঠিক মত? নাকি অবহেলা করছ?
- না রাজু ঠিক মতই খাচ্ছি। তবে কোনও লাভ হবে না জানি,শুধু শুধু তোমার জীবনটা নষ্ট করে দিলাম। তোমাকে কষ্ট দিলাম। নিজেকে অনেক অপরাধী মনে হচ্ছে।
- তুমি একটা বোকা মেয়ে এইভাবে কেউ বলে নাকি?
আবারও সেই বৃষ্টির অঝোর ধারার মত কান্না। হতে পারে এই কান্না কঠিন ভালোবাসার,অথবা ছলনার বৃষ্টি।
- জান রাজু,আমি এখন ছাদে।
- এই শীতে ছাদে কি করছ? ঘরে যাও প্লিজ। টা না হলে আমি কিন্তু বারান্দায় ছলে যাব।
- যেতে হবে না,আমি ঘরে যাচ্ছি রাজু। রাজু আমার বোন তোমার সাথে কথা বলতে চায়।
- ঠিক আছে দাও।
- হ্যালো ভাইয়া কেমন আছেন?
- ভালো। তুমি কেমন আছ আপু?
- ভালো আছি, ভাইয়া একটা কথা বলি?
- বল।
- আমি এখন ঘুমাতে যাব, যাবার আগে একটা গান শোনাবেন প্লিজ......।
- দেখ আপু অন্য সময় হলে ঠিক শোনাতাম, কিন্তু এখন এত রাতে গান করবো কি করে?
- তাহলে শোনাবেন না?
- অন্য সময় শোনাব আপু, লক্ষ্মী আপু ক্ষমা করে দাও।
- দিব না। এই আপু ভাইয়া গান শোনাবে না। নে ফোন ধর।
- কি ব্যাপার রাজু তুমি আমার বোনকে গান শোনাবে না?
- এখন না,পরে শোনাব।
- ঠিক আছে রাখি।
বলেই লাইন কেটে দিল। সময় কেটে যায় রিনথিয়া ফোন করে না। অবশেষে ফোন করল।
- মানুষ কে অপমান করার ইচ্ছা থাকলে জুতা দিয়ে দুই গালে বাড়ি দিও,তবুও ফোন ধরে কথা না বলে থেক না। ঠিক আছে?
- রিনথিয়া এগুলো কি বলছ? আমিতো তোমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলাম,তুমি হয়ত অন্য নাম্বার এ ফোন দিয়েছ।
- রাজু আমি মারা গেলে শহীদ মিনারে আমাকে কবর দিবে।
- আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না রিনি।
- দেখ ছেলে এত ইমোশনাল হয়ো না। জিবনে প্রতিষ্ঠিত হও দেখবে অনেক সুন্দরী স্মার্ট মেয়ে তোমার জীবনে আসবে।
- আমি শুধু তোমাকেই চাই রিনি অন্য কাউকে না।
- তুমি তো জানই আমার অবস্থা, এই আছি তো নেই। ওহ তোমাকে তো বলাই হয় নি আমি চিকিৎসার জন্য মাদ্রাজ যাচ্ছি।
- তুমি সুস্থ হয়ে ফিরে আসো এটাই চাই রিনি।
- Thank you,
- Welcome
- এতো রাতে কিভাবে আসব? ( আবারও সেই রিনিঝিনি হাসি)
- তোমার হাসিটা অনেক সুন্দর। আচ্ছা রিনথিয়া তুমি সুস্থ হয়ে আমার সাথে দেখা করবে কোন ড্রেস পড়ে?
- তুমি বল।
- লাল শাড়ী অথবা আকাশী রঙ এর শাড়ী পড়ে আর হাতে চুড়ি পরবে, ঠিক আছে?
- রাজু আমার বিশ্বাস হচ্ছে না।
- কি?
- এইযে তোমার সাথে দেখা হবে,তোমাকে পাব এটা।
- কোনও চিন্তা নেই, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে,তুমি সুস্থ হয়ে উঠবে।
- আমার কতগুলো শর্ত আছে তোমাকে রাখতে হবে,রাখবে রাজু?
- রাখব।বল
- ১. ভালোভাবে পড়ালেখা করতে হবে,ভালো Result করতে হবে। ২. বাবা-মা’র সাথে খারাপ ব্যাবহার করা যাবে না। ৩. Dhaka University তে পড়তে হবে। ৪. কার সাথে খারাপ ব্যাবহার করা যাবে না। আমার এই স্বপ্ন গুলো পুরন করো তাহলে আমি মরে গিয়েও শান্তি পাব।
- ঠিক আছে রাখব।
- রাজু একটা গান শোন খুব সুন্দর “পাথর কালো রাত...তারার আকাশ জুড়ে মেঘ”
রাজু নিজেও যানে না কার গান। গানটি শেষ হবার পর রিনথিয়া আরেকটি গান শোনায় “শেষ ট্রামে দুজনাতে.........দেখা হবে তিনটি বছর পড়ে”। রিনি বলে হয়ত বা তিনটি বছর পড়ে দেখা হতে পারে।
- রাজু রাতে কিছু খাউ নাই?
- নাহ।
- কেন?
- এমনিতেই খাব না,ভাল লাগছে না।
- রাজু আজকের এই রাতের কথা মনে রেখ চিরদিন, হয়তবা আমি থাকবনা তখন। তখন আমাকে খুব মনে পরবে তাইনা?
- দেখ বাজে কথা বলবে না একদম।
- রাজু কথা দাও কনদিন কার সাথে মারামারি করবে না।
- ঠিক আছে করবো না। তাহলে কথা দাও সুস্থ হয়ে দেখা করবে।
- ঠিক আছে করবো। নিজের প্রতি খেয়াল রেখ রাজু।
- রাখব।
- ঠিক আছে এখন কিছু খেয়ে শুয়ে পড় রাত ৪.৫০ বাজে।
- ঠিক আছে খাচ্ছি,তুমিও কিছু খাওনি আমি জানি। তুমিও কিছু খেয়ে নাও।
- কিভাবে বুঝলে রাজু?
- আত্মার মিল থাকলে সবকিছু বুঝা যায়। কালকে ফোন করছ তাহলে রিনথিয়া?
- দেখা যাক।
- দেখা যাক না তুমি ফোন করবে এটাই ফাইনাল কথা।
- এখন রাখি তাহলে “খোদা হাফেয”।
কয়েক মাস ধরে আর ফোন আসে না। আবীর (রাজু) পাগলের মত হয়ে যায়। S.S.C Improve পরীক্ষায় খারাপ Result করে। কিছুতেই পড়ালেখাতে মনোযোগ দিতে পারে না। কিছুতেই সমীকরণ মেলাতে পারে না। যে মেয়ে তার জন্য ঘুমের ওষুধ খেয়ে মরতে বসেছিল সে কিভাবে সবকিছু ভুলে গেল? আবীর (রাজু) তো ভালোবাসা কি জানত না রিনথিয়া তাকে শিখিয়েছিল,তাহলে কেন এমন করল?
তাহলে কি ছেলেটা মধ্যবিত্ত বলেই আর কোন ইন্টারেস্ট নেই তার প্রতি? মানুষের মন একটা, কিন্তু কারো মন ক্ষণে ক্ষণে পাল্টায়। আবার কারো মন পাল্টায় না।,এই হল পার্থক্য। কারন মনে ভালোবাসা থাকলে দূরে সরে যেত না।
রাজুর বর্তমান অবস্থা জানতে চান? কি হবে শুনে? সেতো জীবন্ত মৃত। সে এখনো রিনথিয়ার জন্য অপেক্ষায় আছে। যদিও মাঝখানে ১৩ বসরের এক সূক্ষ্ম ব্যবধান।
রাজুর শুধু একটাই চাওয়া তাকে শুধু একবার দেখবে। কিন্তু স্বপ্ন পুরন হবে কিনা জানিনা।
পরিশেষে একটি অনুরোধ কারর মন নিয়ে খেলবেন না।
বিষয়: সাহিত্য
৩৮৪৭ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনাকে ধন্যবাদ
মন্তব্য করতে লগইন করুন