শেখ মুজিবুর রহমান অবৈধ প্রধান মন্ত্রী ছিলেন বনাম প্রথম আলোর সাফাই।
লিখেছেন লিখেছেন কেলিফোরনিয়া ৩০ এপ্রিল, ২০১৪, ০৮:২৬:৩৬ সকাল
বিএনপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জনাব তারেক রহমান কর্তৃক ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারী শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রধানমন্ত্রীর পদ গ্রহনকে অবৈধ দাবী করে দেয়া যৌক্তিক বক্তব্যের প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রথম আলোর সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান যথারীতি স্ববিরোধী যুক্তি উপস্থাপন করে সরল মানুষকে গরল হলাহল পান করানোর মত একটি নিবন্ধ লিখেছেন গত ২২ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে।
নিবন্ধের শুরুতেই তিনি মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা শারমিন আহমদ এর সাম্প্রতিক বইয়ের দু’টি লাইনের রেফারেন্স দিয়েছেন (মুজিব কাকুর পাশেই আনন্দ-উদ্বেলিত আব্বু দাঁড়িয়ে রয়েছেন। হঠাৎ মুজিব কাকু আব্বুর কানের কাছে মুখ নামিয়ে বললেন, ‘তাজউদ্দীন, আমি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হব।)। মাত্র দু’টি লাইন দিয়ে শারমিন আহমেদের বক্তব্য বোঝা মুশকিল বলে এখানে ঐ বই থেকে আরো কিছু অংশ তুলে ধরার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করছি। শারমিন আহমেদ তার বইতে লিখেছেন-
“পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৫ মার্চের ভয়াল কালো রাতে আব্বু গেলেন মুজিব কাকুকে নিতে। মুজিব কাকু আব্বুর সঙ্গে আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করবেন সেই ব্যাপারে আব্বু মুজিব কাকুর সাথে আলোচনা করেছিলেন। মুজিব কাকু সে ব্যাপারে সম্মতিও দিয়েছিলেন। সেই অনুযায়ী আত্মগোপনের জন্য পুরান ঢাকায় একটি বাসাও ঠিক করে রাখা হয়েছিল। বড় কোনো সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আব্বুর উপদেশ গ্রহণে মুজিব কাকু এর আগে দ্বিধা করেননি। আব্বুর, সে কারণে বিশ্বাস ছিল যে, ইতিহাসের এই যুগসন্ধিক্ষণে মুজিব কাকু কথা রাখবেন। মুজিব কাকু, আব্বুর সাথেই যাবেন অথচ শেষ মুহূর্তে মুজিব কাকু অনড় রয়ে গেলেন। তিনি আব্বুকে বললেন, ‘বাড়ি গিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমিয়ে থাকো, পরশুদিন (২৭ মার্চ) হরতাল ডেকেছি’। মুজিব কাকুর তাৎক্ষণিক এই উক্তিতে আব্বু বিস্ময় ও বেদনায় বিমূঢ় হয়ে পড়লেন। এদিকে বেগম মুজিব ঐ শোবার ঘরেই সুটকেসে মুজিব কাকুর জামাকাপড় ভাঁজ করে রাখতে শুরু করলেন। ঢোলা পায়জামায় ফিতা ভরলেন।
পাকিস্তানি সেনার হাতে মুজিব কাকুর স্বেচ্ছাবন্দি হওয়ার এইসব প্রস্তুতি দেখার পরও আব্বু হাল না ছেড়ে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন ঐতিহাসিক উদাহরণ টেনে মুজিব কাকুকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন। তিনি কিংবদন্তি সমতুল্য বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উদাহরণ তুলে ধরলেন, যাঁরা আত্মগোপন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছিলেন। কিন্তু মুজিব কাকু তাঁর এই সিদ্ধান্তে অনড় হয়ে রইলেন। আব্বু বললেন যে, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্য হলো পূর্ব বাংলাকে সম্পূর্ণ রূপেই নেতৃত্ব-শূন্য করে দেওয়া। এই অবস্থায় মুজিব কাকুর ধরা দেওয়ার অর্থ হলো আত্মহত্যার শামিল।
তিনি বললেন, ‘মুজিব ভাই, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হলেন আপনি। আপনার নেতৃত্বের ওপরই তারা সম্পূর্ণ ভরসা করে রয়েছে’। মুজিব কাকু বললেন, ‘তোমরা যা করবার কর। আমি কোথাও যাব না’। আব্বু বললেন, ‘আপনার অবর্তমানে দ্বিতীয় কে নেতৃত্ব দেবে এমন ঘোষণা তো আপনি দিয়ে যাননি। নেতার অনুপস্থিতিতে দ্বিতীয় ব্যক্তি কে হবে, দলকে তো তা জানানো হয়নি। ফলে দ্বিতীয় কারো নেতৃত্ব প্রদান দুরূহ হবে এবং মুক্তিযুদ্ধকে এক অনিশ্চিত ও জটিল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেওয়া হবে’। আব্বুর সেদিনের এই উক্তিটি ছিল এক নির্মম সত্য ভবিষ্যদ্বাণী।
পূর্ব-পরিকল্পনা অনুযায়ী আব্বু স্বাধীনতার ঘোষণা লিখে নিয়ে এসেছিলেন এবং টেপ রেকর্ডারও নিয়ে এসেছিলেন। টেপে বিবৃতি দিতে বা স্বাধীনতার ঘোষণায় স্বাক্ষর প্রদানে মুজিব কাকু অস্বীকৃতি জানান। কথা ছিল যে, মুজিব কাকুর স্বাক্ষরকৃত স্বাধীনতার ঘোষণা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে (বর্তমানে শেরাটন) অবস্থিত বিদেশি সাংবাদিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে এবং তাঁরা আন্ডারগ্রাউন্ডে গিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধ পরিচালনা করবেন।
আব্বু বলেছিলেন, ‘মুজিব ভাই, এটা আপনাকে বলে যেতেই হবে, কারণ কালকে কী হবে, আমাদের সবাইকে যদি গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়, তাহলে কেউ জানবে না, কী তাদের করতে হবে। এই ঘোষণা কোনো-না- কোনো জায়গা থেকে কপি করে আমরা জানাব। যদি বেতার মারফত কিছু করা যায়, তাহলে সেটাই করা হবে’। মুজিব কাকু তখন উত্তর দিয়েছিলেন, ‘এটা আমার বিরুদ্ধে দলিল হয়ে থাকবে। এর জন্য পাকিস্তানিরা আমাকে দেশদ্রোহের জন্য বিচার করতে পারবে’। [শারমিন আহমেদ, ‘তাজউদ্দীন আহমদ : নেতা ও পিতা’। পৃষ্ঠা ৫৯]
তাহলে দেখা যাচ্ছে মিজানুর রহমান খান সাহেব যে বইটির রেফারেন্স দিয়ে তার লেখা শুরু করেছেন, সেই বইটিতেই স্বাধীনতার ঘোষনা দেয়া ও মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া বিষয়ে শেখ মুজিবের অনাগ্রহের প্রমান রয়েছে। শুধু তাই নয়, তিনি যে স্বেচ্ছায় পাকিস্তানীদের কাছে আত্মসমর্পন করার জন্য কাপড়-চোপড় গোছগাছ করে রেখেছিলেন, তার প্রমানও ঐ বইটি বহন করছে!
এরপর আমাদের জানা প্রয়োজন যুদ্ধের নয় মাস শেখ মুজিব পাকিস্তানে কী ভাবে ছিলেন, কী করেছেন। যাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইন করে ‘জাতির জনক’ ঘোষনা করা হয়েছে, যুদ্ধের ৯ মাস ‘শেখ মুজিব পাকিস্তানে বন্দী ছিলেন’ বললেই বাংলাদেশের নাগরিকদের সেই ‘জাতির জনক’-কে জানা ও বোঝার উৎসুকতা সম্পূর্ণ পরিতৃপ্ত হয় না। অনাগত ভবিষ্যতের সব শিশু জানতে চাইবে, তিনি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিদেশি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন? নাকি, তিনি পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে স্বদেশি পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী ছিলেন?
প্রথমে দেখি ও বিশ্লেষণ করি আওয়ামী ঘরানার লেখক মঈদুল হাসান তার ‘মূলধারা :’৭১’ বইতে কী লিখেছেন-
৩রা আগস্টে ইয়াহিয়া খান যখন ঘোষণা করে যে দেশদ্রোহিতার অপরাধে শীঘ্রই শেখ মুজিবের বিচার ও উপযুক্ত শাস্তি বিধান করা হবে [পৃ:২০৭]।
৫ই আগস্টে সামরিক জান্তার যে তথাকথিত ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশিত হয়, তাতে ‘সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে বিদ্রোহ সংঘটনের মাধ্যমে’ পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আওয়ামী লীগের ‘ষড়যন্ত্রের’ আয়োজন সবিস্তারে উল্লেখ করা হয় [পৃ:২০৮]।
৭ই আগস্টে আওয়ামী লীগের যে ৭৯-জনের নাম জাতীয় পরিষদের সদস্যপদ থেকে বাতিল করা হয়, তাদের মধ্যে শেখ মুজিবের নাম অন্তর্ভূক্ত ছিল [পৃ:২০৯]।
৯ই আগষ্ট মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে ‘দ্রুত ব্যবস্থা’ (summary action) গ্রহণ থেকে বিরত থাকার জন্য পাকিস্তানকে সতর্ক করে দেয় [পৃ:২১১]। ফলে পূর্ববর্তী ঘোষণা অনুযায়ী ১১ই আগস্টে লায়ালপুরে বিশেষ সামরিক আদালতে রুদ্ধদ্বার বিচার শুরু হলেও ঐ দিনই তা মুলতবী ঘোষণা করা হয়।
৭ই সেপ্টেম্বর যখন পুনরায় বিচার শুরু হয়, তখন শেখ মুজিবের পক্ষ সমর্থনের জন্য এ, কে, ব্রোহী এবং তাঁর তিন জন সহকারী আইনজীবীকে নিযুক্ত থাকতে দেখা যায় [পৃ:২১২]।
২রা অক্টোবরে পাকিস্তানের সামরিক আদালত শেখ মুজিবকে ‘অপরাধী’ সাব্যস্ত করে ‘মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ’ করেছে বলে একটি কূটনৈতিক সূত্রে প্রকাশ পায়; অবশ্য একই সূত্র থেকে বলা হয় যে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রবর্গকে এই নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়েছে যে সামরিক আদালতের এই রায় কার্যকর করা থেকে তারা বিরত থাকবে [পৃ:২১৩]।
এই তথ্যের পরোক্ষ সমর্থন পাওয়া যায় ১০ই অক্টোবরে, যখন জাতীয় পরিষদের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগপন্থীদের পূর্ববর্তী তালিকা ঈষৎ পরিবর্তিতভাবে প্রকাশিত হয়। এই তালিকা থেকে শেখ মুজিবের নাম বাদ পড়ে [পৃ:২১৪]। অর্থাৎ ‘মৃত্যুদণ্ডাজ্ঞাপ্রাপ্ত’ শেখ মুজিব তার নির্বাচিত জাতীয় পরিষদ আসনে কার্যত: পুনর্বহাল হন। লক্ষ্য করুন, সৈয়দ নজরুল ইসলাম-তাজউদ্দীন আহমেদ প্রমুখরা যখন পাকিস্তানি শাসকদের দৃষ্টিতে ‘পলাতক আসামী’ তখন শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের সম্মানিত জাতীয় পরিষদ সদস্য হিসেবে পুন:বিবেচিত! বিষয়টি যথেষ্ট পরিমাণে কৌতুহল উদ্দীপক!
অক্টোবরের শেষে ‘নিউজ উইক’ পত্রিকার প্রতিনিধির কাছে ইয়াহিয়া খান ঘোষণা করেন, শেখ মুজিবকে তিনি খেয়ালখুশী মত ছেড়ে দিতে অসমর্থ হলেও, ‘জাতি যদি তার মুক্তি চায়’ তবে ইয়াহিয়া তা পূরণ করবেন [পৃ:২১৫]। পরবর্তীতে কিসিঞ্জারের বিবরণ থেকেও দেখা যায়, ৩রা নভেম্বরে পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূত কিসিঞ্জারকে অবহিত করেন, ‘ইয়াহিয়া শেখ মুজিবের মনোনীত কোন প্রতিনিধির সাথে আলোচনা করার বিষয়ে বিবেচনা করতে রাজী আছে’ [পৃ:২১৬]।
এখানে লক্ষ্য করার বিষয় মঈদুল হাসান শেখ মুজিবের কোন বক্তব্য সরাসরি উল্লেখ করেননি। আদালত বা জেলখানায় বন্দী শেখ মুজিব কী বলেছিলেন এ বিষয়ে আমরা কিছু জানতে পারছি না। রাজনৈতিক বন্দীরা আদালত বা জেলখানায় নানা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন। আমাদের দেশে মাষ্টারদা সূর্যসেন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ে মজলুম সাংবাদিক মাহামুদুর রহমান পর্যন্ত বহু রাজনৈতিক নেতার বন্দী জীবনের কথা নানা বইয়ে পাওয়া যায়।
কেবলমাত্র আওয়ামী লীগ নেতা মোনায়েম সরকার সম্পাদিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও রাজনীতি’ বইতে বিচার চলাকালিন কিছু বক্তব্য পাওয়া যায়-
....সপ্তম দিনের বিচারকার্য আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হওয়ার ঠিক আগে উকিল এগিয়ে এসে মুজিবের কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন, “আপনি কি নিজের পক্ষে কোনোই অবস্থান নেবেন না?”
‘না’-ছিল শেখ মুজিবের অনুচ্চ কিন্তু দৃঢ় উত্তর। উকিল বললেন, “আমার কাজ জটিল করে তুলছেন আপনি”। বঙ্গবন্ধু বললেন, “তা জানি। তবে আমি কি করতে পারি? আমি নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। আমাকে অথবা আমার জনগণকে বিচার করার কোনো অধিকার এদের নেই। আইনের দিক দিয়ে কোনো বৈধতা এই আদালতের নেই” [পৃ:৫৩৬]।
তাহলে ১৯৭১ সালে সেপ্টেম্বর মাসে শেখ মুজিব নিজেকে ‘নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী’ দাবি করেছিলেন! প্রশ্ন হচ্ছে ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শেখ মুজিব নিজেকে ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ এর নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বলে দাবি করেছিলেন? নাকি ‘পাকিস্তান’ এর নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী বলে দাবি করেছিলেন? শেখ মুজিব কোন দিন থেকে পাকিস্তানের নাগরিকতা পরিত্যাগ করেছিলেন? এ প্রশ্নের স্পষ্ট জবাব মিজানুর রহমান খানের দেয়া উচিত।
মিজানুর রহমান খানের নিবন্ধটি স্ববিরোধী একারণে যে, এই নিবন্ধে তিনি নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমানের প্রধানমন্ত্রীত্বের বৈধ্যতা নিয়ে এক ধরণের বিতর্ক সব সময়ই ছিলো এবং সেটার মীমাংসা হয়েছিলো আদালতে। প্রশাসনিক নিয়ম ও বিধি মেনে না চলা শেখ মুজিবুর রহমান ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তায় এবং রাজনৈতিক পদবীর বলে অনেক স্বেচ্ছাচারী কাজই করেছেন। আর সেসব কাজের বৈধ্যতা দিতে আইনের শব্দ বাক্যের ফাঁক-ফোকর খুঁজতে জেরবার হতে হয়েছে দুঁদে উকিলদের। একটি পুরাঘটিত অতীত, যার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীরা এখনো জীবিত, তার সত্যতা বিলোপ করে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠিত করতে যে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিলো, এই বিষয়টা স্বীকার করার জন্য মিজানুর রহমান খান অবশ্যই ধন্যবাদ পেতে পারেন।
মিজানুর রহমান খানের আশ্চর্যজনক স্ববিরোধিতার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে, তিনি সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ মনে করেন অথচ স্বাধীনতার ঘোষনাপত্রে বর্নিত বিধানের বিপরীতে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গোটা সরকার পদ্ধতিই বদলে দেওয়ার মতো সাংবিধানিক বিধান তৈরির মত অসামঞ্জস্যকে তার নিবন্ধে সমর্থন করছেন। স্বাধীনতার সনদের এই লঙ্ঘনকে সমর্থন করলে তিনি কেন ঐ সনদে রেট্রোস্পেক্টিভ ইফেক্টে রাষ্ট্রপতি নিয়োগের বিষয়কে সমর্থন করছেন? আইন কী এতই খেলো বিষয় যে সেটিকে তিনি যখন যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
মিজানুর রহমান খান শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষমতাগ্রহনের অবৈধ্যতাকে ডক্ট্রিন অফ নেসেসিটি দিয়ে বৈধ্য বলে মেনে নেন, অথচ ডক্ট্রিন ওফ নেসিসিটি তত্ত্ব দিয়ে জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের শাসনক্ষমতা গ্রহনকে মানতে তার বেজায় আপত্তি! অথচ বাস্তবতা হচ্ছে-
বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম সামরিক আইন জারী করা হয় ১৯৭৫ সালের ৬ নভেম্বর। সেই সময় উপ সামরিক আইন প্রশাসক ও সেনা প্রধান ছিলেন খালেদ মোশারফ এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে সামরিক আইন জারী করেছিলেন শেখ মুজিবেরই নিয়োগকৃত প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। জিয়াউর রহমান তখন গৃহবন্দি।
যে আদালতের রেফারেন্স মিজানুর রহমান খান সাহেব বারবার দিয়ে বিভিন্ন অবৈধতাকে বৈধ এবং বৈধতাকে অবৈধ প্রমানের চেষ্টা করেন সেই আদালত কখনোই ১৯৭১ এ গণহত্যার বিরুদ্ধে কোন রূল জারি করতে পারে নাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা কোন আদালতের আদেশে আসে নাই। এমন কী ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষনাপত্র এবং ১৭ এপ্রিল প্রবাসী সরকারগঠন কখনোই সম্ভব হতো না যদি না জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের মত সৈনিকরা আদালত-সংবিধান এসবের দিকে তাঁকিয়ে থেকে অস্ত্র হাতে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু না করতেন, নিজ দায়িত্বে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে স্বাধীনতা ঘোষনা না করতেন এবং যুদ্ধ করে দেশের বিরাট একটি অংশ দখল করে না রাখতেন।
এবার একটি সত্য ইতিহাস জানুন। জিয়াউর রহমান বীর উত্তম যেমন বাংলাদেশের জন্মের সময় তাঁর দায়িত্বটা পালন করেছিলেন, ঠিক তেমনি বাংলাদেশের জন্মের পরও আরেকবার এই দেশকে পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশন করার ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করেছিলেন। ১৯৭৬ সালের ৭ মার্চ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মুসলিম লীগ এবং তৎকালীন নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীর সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ এয়ার ভাইস মার্শাল তোয়াবের নেতৃত্বে একটা ইসলামী মাহফিল কাম জনসভা হয়েছিলো; ৮ মার্চ ১৯৭৬-এর ইত্তেফাকে সেই সভার রিপোর্ট পাওয়া যাবে। সেই সভায় বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের সাথে কনফেডারেশনে যোগ দেবার দাবি উঠেছিলো! দাবী উত্থাপনকারীদের পেছনে ছিলো মধ্যপ্রাচ্যসহ ওআইসির সমর্থন। আওয়ামী লীগ তখন এই ঔদ্ধত্য প্রতিরোধে এগিয়ে আসে নাই, কোন আদালত এই রাষ্ট্রদ্রোহিতার বিরুদ্ধে রূল জারি করে নাই। পাকিস্তানপন্থীদের সেই তীব্র চাপের সময়, যখন দেশ রক্ষায় কাউকে পাওয়া যায় নাই, সেই টালমাটাল সময়ে পাকিস্তানপন্থীদের কঠোরভাবে দমন করেছিলেন জিয়াউর রহমান বীর উত্তম। তোয়াবকে জার্মানীতে ফেরত পাঠিয়ে অন্যদের গোয়েন্দা নজরদারীতে এনে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করেছিলেন! জ্বি হ্যাঁ, জিয়াউর রহমানই সেই ব্যক্তি যাঁর কারণে বাংলাদেশ আবারো পাকিস্তান হয়ে যায় নাই।
মিজানুর রহমান সাহেব, সংবিধান বা আদালত নয়; ইতিহাস কথা কয়!
কালুরঘাট সাইবার কেন্দ্র থেকে সংগৃহীত।
বিষয়: রাজনীতি
১৩৭৩ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
দুমুঠো ভাতে তাঁরা তুষ্ট। নিরীহ আবেগ প্রবন সহজে প্রলুব্ধ করা যায় এমন জাতিকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষে নিয়ে যাওয়া ...... আর কি কইতাম। কষ্টে আছে আইজ উদ্দিন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন