নিরপেক্ষ ভাবনা এবং বাংলাদেশ।--পর্ব১

লিখেছেন লিখেছেন কেলিফোরনিয়া ২৪ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:২৯:০৭ রাত

নিরপেক্ষ ভাবনার কোন স্থান আছে কিনা আমার জানা নেই, তবে জাতি হিসেবে আমদের কেন্দ্রীভূত একটা আদর্শের রাস্তায় হাটার খুব দরকার বলে মনে করি। তাই নিরপেক্ষ আর উদার ইতিহাস চর্চার কোন বিকল্প নেই। আর ইতিহাস চর্চার জন্য সেই সমকালীন রাজ সাক্ষীদের বই, অভিজ্ঞতা,ছবি এবং মন্তব্য সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে তার উদার প্রকাশ এই দেশের প্রতিটি সরকারের প্রজ্ঞাশিল আচরন হতে পারে। হতে পারে, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা।

হুমায়ূন আহমেদ মৃত্যুর পূর্বে অসমাপ্ত ইতিহাস নির্ভর 'দেয়াল' নামে একটা উপন্যাস লিখেছিলেন সেখানে তিনি তার স্বভাব সিদ্ধ একটা এপিগ্রাম লিখলেন--

" মানুষ এবং পশু শুধু যে বন্ধু খোঁজে তা না, তার প্রভুও খোঁজে।

এই পৃথিবীতে মূল্যবান শুধু মানুষের জীবন, আর সবই মূল্যহীন। কিছু বিদ্যা মানুষের ভেতর থাকে।

সে নিজেও তা জানে না। যে লাঠি দিয়ে অন্ধ মানুষ পথ চলে, সেই লাঠি দিয়ে মানুষও খুন করা যায়।

মানবজাতির স্বভাব হচ্ছে সে সত্যের চেয়ে মিথ্যার আশ্রয়ে নিজেকে নিরাপদ মনে করে।"


উপন্যাসিক হুমায়ূন স্যার এর কথা মেনে নিলে, বলতে হয় মানুষ মিথ্যার আশ্রয়ে নিজেকে নিরাপদ মনে করে, কিন্তু সেই নিরাপদ মনে করাটা কি আসলেই নিরাপদ।

জাতি হিসেবে মিথ্যার ইতিহাস আর কত দিন গিলব। মুক্তি যুদ্ধ নিয়ে ছোট একটা উধারন দেই।

মুক্তিযুদ্ধ : আগে ও পরে / পান্না কায়সারের লিখা।

প্রথম সংস্করণের বর্ণনা :-

"... ২৬ তারিখ - সারাদিন আতঙ্কে উত্তেজনায় কাটল। খাওয়া দাওয়া হয়নি সারাদিন ওর। কত করে বললাম - 'একটু ঘুমাও।' ওকে দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। পাগলের মত সারাদিন কেবল প্রলাপ বকে গেল। একটার পর একটা ফোন করে যাচ্ছে। এক একটা সংবাদ শোনে আর বেদনায় কাতরাতে থাকে। মেজদার (জহির রায়হান) খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। মেজদা দিলু রোডের বাসায় কি অবস্থায় আছে বা আদৌ বেঁচে আছে কিনা জানি না। সারাদিন উৎকন্ঠায় কাটল।

সেদিন ঘোষিত হল স্বাধীনতা। আমাদের সাধের স্বাধীনতা। বহু দিনের কাঙ্খিত শব্দ। আমরা স্বাধীন। আমাদের দেশ স্বাধীন। এ ঘোষণা উচ্চারিত হ'ল - মেজর জিয়াউর রহমানের কন্ঠে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্বাধীনতার প্রথম শব্দ উচ্চারিত হল কালুরঘাট থেকে॥"

- মুক্তিযুদ্ধ : আগে ও পরে / পান্না কায়সার [আগামী প্রকাশনী - ফেব্রুয়ারী, ১৯৯১ । পৃ: ১২২]

# দ্বিতীয় সংস্করণের বর্ণনা :-

"... ২৬ তারিখ - সারাদিন আতঙ্কে উত্তেজনায় কাটল। খাওয়া দাওয়া হয়নি সারাদিন ওর। কত করে বললাম - 'একটু ঘুমাও।' ওকে দেখে আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল। পাগলের মত সারাদিন কেবল প্রলাপ বকে গেল। একটার পর একটা ফোন করে যাচ্ছে। এক একটা সংবাদ শোনে আর বেদনায় কাতরাতে থাকে। মেজদার (জহির রায়হান) খবর পাওয়া যাচ্ছিল না। মেজদা দিলু রোডের বাসায় কি অবস্থায় আছে বা আদৌ বেঁচে আছে কিনা জানি না। সারাদিন উৎকন্ঠায় কাটল। ...

২৭ শে মার্চ। ঘোষিত হল স্বাধীনতা। আমাদের সাধের স্বাধীনতা। বহু দিনের কাঙ্খিত শব্দ। আমরা স্বাধীন। আমাদের দেশ স্বাধীন। এ ঘোষণা উচ্চারিত হ'ল - মেজর জিয়াউর রহমানের কন্ঠে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে স্বাধীনতার প্রথম শব্দ উচ্চারিত হল কালুরঘাট থেকে॥"

- মুক্তিযুদ্ধ : আগে ও পরে / পান্না কায়সার [আগামী প্রকাশনী - সেপ্টেম্বর, ১৯৯১। পৃ: ১২৩]

*বি দ্রঃ দুটি কপি মিলিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে কিভাবে অত্যন্ত সজ্ঞানে, সুকৌশলে "২৭শে মার্চ" বাক্যটি বসিয়ে দেয়া হয়েছে॥

আমাদের আগ্রজরা আমাদের শুধু জাতি হিসেবে দ্বিধা করেনি শুধু। আমাদের একটা বিশাল সংখ্যক লোকের মাঝে মিথ্যার একটা বিষ বীজ বুনে দিয়ছেন। সেই বিষ বৃক্ষ আজ ফল দিতে শুরু করেছে। ছোট্ট এই গ্রামের মত

এই দেশ টাকে ঘৃণার আগুনে প্রতিদিন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছাড়খার করে দিচ্ছে। আমরা মিথ্যার ট্যাবলেট গিলে বড় হয়েছি, হুজুগের ম্যারাথনে হয়েছি প্রথম। সংবাদ মাধ্যম গুলো জাতির মুখপাত্র না হয়ে, সস্তার পতিতা হয়েছে।

প্রতি রাতে নিজেদের বিক্রি করার জন্য প্রতি রাতে ছুটে যায় কূটনীতি পাড়ায়।

যে সত্য টা মেনে নিতে পারিনা, ৭১ সালের যেই দামাল আর সাহসী প্রজন্ম তাদের ইতিহাস আর আদর্শ দিয়ে আমাদের আমাদের কাছে টানতে পারেনি। স্বাধীন দেশে তাঁরা শুরু করেছে হালুয়া- রুটির রাজনীতি। কারো ভারতের

রুটি-রুজি ভালো লাগে তো কারো ভালো লাগে ইঙ্গ মার্কিন হোয়াইট ওয়াইন। আর একদল তো দেশে পাকিস্তানের জারজ বলে সামাজিক অচ্ছুৎ। আমাদের আগ্রজরা আমাদের কে স্বদেশী বানাতে পারেনি। যারা স্বদেশী

হতে চায়, স্বদেশের কাজে নিজের হাত বাড়ায়। রাজনীতির মাঠে এই স্বদেশী শ্রেণিটা সংখ্যা লঘুর পর্যায়ে পরেনা। নিজেদের ছোট করার জন্য আমরা নিজেরাই যথেষ্ট। বেক্তিগত দোষ ত্রুটি থাকতেই পারে।

কিন্তু, মিথ্যার অতলান্তে তলিয়ে যাওয়া বা যাচ্ছে এমন জাতি বোধয় আমরাই।

আবার হুমায়ূন আহমেদের এপিগ্রামে ফিরে যাই --
"যে লাঠি দিয়ে অন্ধ মানুষ পথ চলে, সেই লাঠি দিয়ে মানুষও খুন করা যায়।"


আমাদের দেশের নেতা গুলো, অন্ধের হাতে লাঠি তুলে দিতে নির্দেশ দেয়না। তাঁরা লগি, বৈঠা (লাঠি) দিয়ে মানুষ খুনের নির্দেশ দেয়।


পর্ব ২ এর অপেক্ষায় থাকুন।

বিষয়: রাজনীতি

১২৮৭ বার পঠিত, ৭ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

212898
২৪ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:১৯
সন্ধাতারা লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
212932
২৪ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১১:৪১
সমালোচক লিখেছেন : দারুণ ধরেছেন কলমবাজদের কারসাজি !
জানি না, আগামী প্রকাশনী কি সাবেক আওয়ামী এমপি পান্না কায়সারের যোগসাজসে-ই দ্বিতীয় সংস্করণে কেরামতি দেখিয়েছে ?
212940
২৫ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১২:০৭
কেলিফোরনিয়া লিখেছেন : এটা ইচ্ছাকৃত ভুল। কারণ, এটা কে আওয়ামী আওয়ামী ইতিহাস করন করা হয়েছে।
213028
২৫ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:৫০
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
বাংলাদেশের স্বাধিনতা যুদ্ধের কো পূর্ব প্রস্ততি ছিলনা। একে যে যেভাবে পারছে দখল করতে চাচ্ছে।
২৫ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১১:৩০
161230
কেলিফোরনিয়া লিখেছেন : হহম..খাটি কথা। আমরা যারা কলম চালাই, তাদের একটাই অঙ্গিকার হওয়া উচ্চিত...বাংগালির চেয়ে বড় পরিচয় আমরা বাংলাদেশী।
আহমদ সফা এই ক্ষেত্রে বিশেষ অনুকরণীয়। আপনাকে ধন্যবাদ।
213345
২৬ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৮:১৩
শেখের পোলা লিখেছেন : আপাততঃ আক্ষেপই বাকী আছে৷
213422
২৬ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:০২
কেলিফোরনিয়া লিখেছেন : শেখের পোলা--- এই আক্ষেপের বুকে লাগুক দ্রোহের আগুন।
সুকান্তের মত বলুন-- জ্বলে পুড়ে ছাড় খার তবু মাথা নোয়াবার নয়।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File