‘ইসলাম’ এবং ‘গণতন্ত্র’ সম্পর্কে একটি পর্যালোচনা
লিখেছেন লিখেছেন মানসুর ০৯ এপ্রিল, ২০১৪, ০৯:৫৬:৪৪ রাত
সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত মানব জাতির সমাজ ও রাষ্ট্রসহ সমগ্র জীবন পরিচালনার জন্য প্রযোজনীয় ও কল্যাণকর আইন-বিধান সম্বলিত একমাত্র জীবন ব্যবস্থার নাম ‘ইসলাম’। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত মানব জাতির জন্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ‘ইসলাম’ বর্তমান বিশ্বের কোন একটি রাষ্ট্রেও প্রতিষ্ঠিত নেই বিধায়; ইসলাম কেমন জীবন ব্যবস্থা এ সম্পর্কে বর্তমান বিশ্বের মানব জাতি জানতে, বুঝতে সক্ষম হয়নি। আর তাই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত কল্যাণকর ও পরিপূর্ণ একমাত্র ‘জীবন ব্যবস্থা’ ‘ইসলাম’ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভের অভাবে বাংলাদেশের মুসলমানসহ বিশ্বের অধিকাংশ মুসলমান এবং বর্তমান বিশ্বের মানুষ যে চরম বিভ্রান্তির মাঝে নিমজ্জিত আছে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। বরং বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইসলামের নামে গঠিত বিভিন্ন দলগুলোর কর্মকান্ড, পারস্পরিক মতভেদ, অনৈক্য এবং জঙ্গী ও সন্ত্রাসী দল হিসাবে আলোড়ন সৃষ্টিকারী কিছু ইসলামী দলের উগ্রতা, জঙ্গীতৎপরতা, সংঘাত, সংঘর্ষ, সশস্ত্র সংগ্রাম ও বোমাবাজিসহ নানাবিধ কর্মকান্ড বর্তমান বিশ্বের মানব জাতির মনে ‘ইসলাম’ সম্পর্কে বিরুপ ধারণা এবং ইসলামের প্রতি বিদ্ধেষ, ভীতিকর, বীতশ্রদ্ধভাব ও বিমুখতার সৃষ্টি করেছে। উল্লেখ্য যে, ‘ইসলাম’কে যে বা যারা পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে গ্রহণ করে সমাজ ও রাষ্ট্রসহ সমগ্র জীবন পরিচালনায় আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ)এর অনুসরণ ও অনুকরণে আল্লাহ’র আইন-বিধানের আনুগত্যের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহরই দাসত্ব করে সে বা তারা হলো মুসলিম। কিন্তু ‘ইসলাম’ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানই যদি না থাকে তাহলে কোন ব্যক্তি, দল বা জাতি মুসলিম কি অমুসলিম তা নিরুপন হবে কিভাবে? ‘ইসলাম’ সম্পর্কে বিশ্ব জগতের সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক আল্লাহর ঘোষণা- “নিশ্চয়ই (মানুষের জন্য) আল্লাহর মনোনীত গ্রহনযোগ্য একমাত্র জীবন ব্যবস্থাই হলো ‘ইসলাম’ (সুরা আলে ইমরান:১৯)। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের প্রতিনিধিত্বকারী মানব জাতির জন্য একমাত্র আর্দ্শ নেতা, বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত, আল্লাহর সর্বশেষ নাবী ও রাসূল হযরত মুহাম্মাদ(সাঃ)এর নেতৃত্ব সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সার্বিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হলে আল্লাহ ঘোষণা করেন- “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের জীবন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। আমার পক্ষ থেকে সকল অনুগ্রহ সম্পন্ন করে দিলাম এবং ‘ইসলাম’কেই তোমাদের জন্য ‘একমাত্র জীবন ব্যবস্থা’ হিসাবে পছন্দ করলাম” (সুরা মায়দা;৩)। আলকুরআনের উক্ত দু’টো আয়াত থেকে আমরা জানতে পারি, ‘ইসলাম’ হলো সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত ও নির্ধারিত মানব জাতির সমাজ ও রাষ্ট্রসহ সমগ্র জীবন পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর আইন-বিধান সম্বলিত পরিপূর্ণ একমাত্র ‘জীবন ব্যবস্থা’। কিন্তু বর্তমান সময়ে যারা নিজেদেরকে মুসলিম হিসাবে পরিচয় দিচ্ছেন, তারা প্রায় সবাই মৌখিকভাবে ‘ইসলাম’কে ‘পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা’ বললেও বাস্তব জীবনে ‘ইসলাম’কে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসাবে গ্রহন না করেও মুসলিম বলে পরিচয় দিচ্ছেন। অথচ পরিচয় দেয়ার কারণে অথবা মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন অথবা কুরআন হাদীস অধ্যয়ন করে পাণ্ডিত্য অর্জন করলেই আল্লাহর কাছে কেউ ‘মুসলিম’ বলে গণ্য হবেনা। মুসলিম হতে হলে বাস্তব জীবনে জ্ঞনের ভিত্তিতে ‘ঈমান ও ইসলাম’ গ্রহণ করতে হবে। ইসলাম’এর মৌলিক বিষয় গুলো জ্ঞানের ভিত্তিতে জেনে বুঝে সত্য ও সঠিক বলে স্বীকার করতে ও মেনে নিতে হবে। ইসলাম’এর মৌলিক বিষয়গুলো হলো ইসলাম’এর কষ্টিপাথর, যে মৌলিক বিষয় গুলো গ্রহন বা বজর্ন দ্বারা প্রমাণিত হবে কে ইসলামে আছে, কে ইসলামের বাহিরে অবস্থান করছে। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ এবং তাঁর প্রদত্ত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ‘ইসলাম’ সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে বিভিন্ন সময়ে মানুষ নিজেদের ইচ্ছে মতো সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন এবং পরিচালনার জন্য কিছু ব্যবস্থা উদ্ভাবন ও রচনা করেছে। মানব রচিত এসব ব্যবস্থা গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, সামরিকতন্ত্র ইত্যাদি। মানব রচিত এসব ব্যবস্থা মানুষের জীবনের সকল দিক ও বিভাগ পরিচালনা করতে সক্ষম নয় বিধায়; এগুলোর কোনটাই মানব জাতির জন্য ‘জীবন ব্যবস্থা’ নয়। কারণ সমগ্র মানব জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রয়োজন সম্পর্কে জ্ঞান রাখার কোন যোগ্যতাই কোন মানুষের নেই বিধায়; কোন মানুষের পক্ষে মানব জাতির জন্য জীবন ব্যবস্থা রচনা করা অসম্ভব। কেবলমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর পক্ষেই মানব জাতির জন্য প্রয়োজনীয় ও কল্যাণকর আইন-বিধান সম্বলিত জীবন ব্যবস্থা প্রদানের কাজ করা সম্ভব এবং তিনি জীবন ব্যবস্থা প্রদান করেছেনও, যার নাম ‘ইসলাম’।
ইসলাম’এর মৌলিক বিষয় তিনটি - ১) ইসলাম’এর প্রথম ও প্রধান মৌলিক বিষয় হলো আল্লাহর প্রতি ঈমান। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহকে তাঁর সঠিক পরিচয় জানা, বিশ্বাস করা এবং মেনে নেয়া। আল্লাহ স্বয়ং নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, “ইন্নি আনাল্লাহু রাব্বুল আলামীন”- নিশ্চয়ই আমি আল্লাহ বিশ্ব জগতের একমাত্র ‘রব’- সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কতরএত্বর একমাত্র মালিক। আল্লাহর প্রতি ঈমান হলো- মানুষের নয়! সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কতৃর্ত্ব একমাত্র আল্লাহর- আল্লাহই হলেন বিশ্ব জগতের সকলের জন্য একমাত্র রব-সাবর্ভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কতৃর্ত্বের একমাত্র মালিক; অন্য কেউ নয়, কোন মানুষ নয়। জ্ঞানের ভিত্তিতে এই মহা সত্য জানা, স্বীকার ও বিশ্বাস করার মাধ্যমে জীবনের সকল ক্ষেত্রে মেনে নেয়াই হলো আল্লাহকে একমাত্র রব মানা। আর এটাই হলো আল্লাহর প্রতি ঈমান। কুরআনের ভাষায় যার ঘোষণা হলো- ‘রাব্বি আল্লাহ’ বা ‘রাব্বুনাল্লাহ’- আল্লাহই আমার/আমাদের একমাত্র রব-সাবর্ভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কতৃর্ত্বের একমাত্র মালিক। হাদীসের ভাষায় যার ঘোষণা হলো- আল্লাহু আকবার।
২) ইসলাম’এর দ্বিতীয় মৌলিক বিষয় হলো ইসলাম’ পালনের অঙ্গীকার। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দাসত্ব, তাঁরই আইন-বিধানের আনুগত্য এবং একমাত্র তাঁরই উপাসনা করার অঙ্গীকারই হলো ‘ইসলাম’ পালনের অঙ্গীকার। দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা একমাত্র আল্লাহর, অন্য কারো নয়। জীবনের সবর্ক্ষেত্রে দাসত্ব হতে হবে একমাত্র আল্লাহর, আনুগত্য হতে হবে একমাত্র আল্লাহ প্রদত্ত আইন-বিধানের এবং উপাসনা করতে হবে একমাত্র আল্লাহর। এর অঙ্গীকার হলো- ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, নেই কোন ইলাহ-মা’বুদ দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা পাওয়ার অধিকারী সত্ত্বা একমাত্র আল্লাহ ব্যতিত। এটাই হলো ইসলাম পালনের অঙ্গীকার।
৩) ইসলাম’এর তৃতীয় মৌলিক বিষয় হলো ‘ইসলাম’ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার। জীবনের সকল ক্ষেত্রে, জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দাসত্ব, তাঁর আইন-বিধানের আনুগত্য বাস্তবায়ন করতে শতর্হীন আনুগত্য-অনুসরণ ও অনুকরণ করতে হবে একমাত্র আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)এর, অন্য কারো নয়। এর অঙ্গীকার হলো- ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ’- আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহর রাসূল, শর্তহীন আনুগত্য-অনুসরণ ও অনুকরণ পাওয়ার অধিকারী একমাত্র নেতা; অন্য কউ নয়। এটা হলো ইসলাম বাস্তবায়নের অঙ্গীকার। ইসলাম’এর এই মৌলিক বিষয়গুলো কোন ব্যক্তি, দল ও জাতি বুঝে শুনে স্বীকার করে মেনে নিলেই সেই ব্যক্তি, দল ও জাতির অবস্থান ইসলামে স্বীকৃত হয়। ইসলামের এই মৌলিক বিষয়গুলো কোন সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হলেই সেই সমাজ ও রাষ্ট্র ‘ইসলামী সমাজ’ বা ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ বলে স্বীকৃত হবে।
কিন্তু গণতন্ত্রসহ সকল প্রকার মানব রচিত ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্ব মানা হয় মানুষের এবং দাসত্ব ও আনুগত্য স্বীকার করা হয় মানব রচিত ব্যবস্থা ও মানুষের মনগড়া আইন-বিধানের এবং মানব রচিত ব্যবস্থার ধারক বাহক নেতা নেত্রী বা সরকারের। সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় ‘গণতন্ত্র’ বা মানব রচিত ব্যবস্থা গ্রহন করলে ১) সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বে শির্ক করা হয়। ২) সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দাসত্বে, তাঁর আইন-বিধানের আনুগত্যে ও উপাসনায় শির্ক ও কুফরী করা হয় এবং ৩) আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)এর নেতৃত্বের আনুগত্যে শির্ক ও কুফরী করা হয়। সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় কোন ব্যক্তি, দল বা জাতির মানুষ ‘গণতন্ত্র’ বা মানব রচিত ব্যবস্থা মেনে নিলে ব্যক্তি, দল বা জাতির অবস্থান ইসলামে নয়, ইসলামের বাহিরেই স্বীকৃত হয়। এ অবস্থায় নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাতসহ বহুবিদ আমল যা করা হয় সবই নষ্ট হয়ে যায়। কারণ, এ সম্পর্কে আল্লাহ স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন- “ যদি তুমি শির্ক করো, তোমার সকল আমল বিনষ্ট হয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অর্ন্তভূক্ত হবে” (সূরা আয্ যুমার:৬৫)। আল্লাহর সাথে শির্ক করার চূড়ান্ত ক্ষতি সম্পর্কে সুরা মায়েদার ৭২ নং আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ ঘোষণা করেন- “নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর সাথে শির্ক করবে, আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিবেন এবং তাদের বাসস্থান হবে জাহান্নামের আগুনে; এই জালিমরা কোন সাহায্য পাবেনা”।কাজেই সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় মানব রচিত ব্যবস্থা মেনে চলার পরিণতি সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর অসোন্তুষ্টির কারণে দুনিয়ার জীবন দুর্ভোগ ও অশান্তিতে কাটাতে হবে এবং আখিরাতের জীবনে জাহান্নামের আগুনেই হবে নিশ্চিত স্থায়ীবাস।
বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের ভিত্তিতে আল্লাহ প্রদত্ত ব্যবস্থা ‘ইসলাম’ প্রতিষ্ঠিত নেই, আল্লাহর সার্বভৌমত্বের প্রতিনিধিত্বকারী নেতার নেতৃত্বে ‘সরকার’ গঠিত হয়নি এবং আল্লাহর আইন-বিধান দ্বারা বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালিত হচ্ছে না। বাংলাদেশে মানুষের সার্বভৌমত্ব, মানুষের মনগড়া আইন-বিধান ও মানুষের কর্তৃত্বের ভিত্তিতে মানব রচিত ব্যবস্থা ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত। গণতন্ত্র মেনে নেয়ার মাধ্যমে মানুষের মনগড়া আইন-বিধান এবং মানব রচিত ব্যবস্থার ধারক বাহক নেতা বা সরকারের আনুগত্য স্বীকার করে জাতির মানুষ মানুষেরই দাসত্ব করছে। ফলে এক্ষেত্রে মানুষকে আল্লাহর সমকক্ষ গণ্য করে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্বের সাথে শির্ক ও কুফুরী করা হচ্ছে। মানব রচিত এই শির্ক ও কুফুরী ব্যবস্থা ‘গণতন্ত্র’ মেনে চলার মাধ্যমে জাতিগতভাবে গোটা জাতিই মূলতঃই শির্ক ও কুফরীতে নিমজ্জিত এবং ইসলাম’এর বাহিরে অবস্থান করছে। ‘গণতন্ত্র’ নামক মানব রচিত আল্লাহর সাথে এই শির্ক ও কুফরী ব্যবস্থার আনুগত্য স্বীকার করে আল্লাহর চরম অবাধ্যতা এবং আল্লাহর সাথে চরম বিদ্রোহ করে যারা নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাতের আমলসহ বিভিন্ন আমল করে নিজেদের মুসলিম হিসাবে পরিচয় দিচ্ছেন এবং আখিরাতের স্থায়ী জীবনে জান্নাতে যাবার স্বপ্ন দেখছেন তারা মূলতঃ গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে চরম বিভ্রান্তির মধ্যে আছেন। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, তাঁর প্রদত্ত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ‘ইসলাম’ এবং আখিরাতের জীবন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাবেই আল্লাহর সৃষ্টি হয়ে, আল্লাহর দেয়া রিযিক ভোগ করে জীবন ধারণ করা সত্বেও সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ‘ইসলাম’এর পরিবর্তে মানব রচিত ব্যবস্থা ‘গণতন্ত্র’ গ্রহনের মাধ্যমে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে শির্ক এবং আল্লাহর চরম অবাধ্য জীবন যাপন করে দুনিয়াতে দুর্ভোগ ও অশান্তিতে জীবন কাটাতে হচ্ছে এবং আখিরাতের জীবনের জন্য জাহান্নামের আগুনেই স্থায়ী আবাস গড়া হচ্ছে। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ, তাঁর প্রদত্ত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ইসলাম এবং আখিরাতের জীবন সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে কোন মানুষই মানব রচিত ব্যবস্থার মাধ্যমে মানুষের দাসত্ব করে আল্লাহর অবাধ্য হয়ে নিজের জন্যে এই ভয়াবহ ও মারাত্মক ক্ষতি করতো না, সকল মানুষই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ’র আদেশ নিষেধ এবং আল্লাহ প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা ইসলামের আইন-বিধানের আনুগত্য করার মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহরই দাসত্ব করতো।
সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা ‘ইসলাম’ জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকল মানুষকে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করে একটি দেহের মতো গড়ে তুলে, যার কোন অঙ্গে আঘাত লাগলে সমগ্র শরীর সে ব্যথা অনুভব করে। আর মানব রচিত ব্যবস্থা ‘গণতন্ত্র’ পরিবারের মাঝে বিভক্তি ও ফাটল ধরায়, জাতির মাঝে অনৈক্য সৃষ্টি করে জাতির মানুষকে দলে দলে বিভক্ত করে পরস্পরকে পরস্পরের শত্রু বানায় এবং প্রভাব বিস্তারে হত্যা, খুন, গুম করার মতো জঘন্য কাজও করায়; মানবতার শত্রু শয়তানরা বিভিন্ন ইস্যু তৈরী করে জাতির মানুষকে দল উপদলে বিভক্ত এবং সংঘাত ও সংঘর্ষে লিপ্ত করে দেশ ও জাতির মানুষের জান, মাল ও ইজ্জতের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করায়। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত জীবন ব্যবস্থা ‘ইসলাম’ মানুষকে মৃত্যু পরবর্তী আখিরাতের জীবনের এবং জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ও জান্নাতের চিরসুখের প্রতি বিশ্বাসী বানায় ফলে মানুষ দুনিয়ার জীবনে ত্যাগী ও সৎ চরিত্রবান হয় বিধায়; আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সর্বদা অন্যের কল্যাণে চিন্তা ও কাজ এবং দেশ ও জাতির সম্পদসহ সকল মানুষের মৌলিক অধিকারসহ সকল অধিকার আদায় এবং সংরক্ষণে, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠনে, শোষণমুক্ত অর্থনীতি এবং সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকে। অথচ ‘গণতন্ত্র’ কিছু সংখ্যক মানুষকে নেতৃত্ব, ক্ষমতা, অর্থ ও স্বার্থের লোভে ও মোহে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, অবৈধভাবে অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত এবং দুনিয়ায় ভোগ বিলাসের জীবন যাপনে আকৃষ্ট করে; আর সাধারণ মানুষকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে দুর্ভোগ ও অশান্তিতে কাল কাটাতে বাধ্য করে। ‘ইসলাম’ মানুষকে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর আদেশ, নিষেধ এবং আল্লাহর আইন-বিধানের আনুগত্য করার মাধ্যমে আল্লাহর দাসত্ব করায়, আল্লাহর দাস বানায়। ‘গণতন্ত্র’ জাতির মানুষকে মানুষের মনগড়া আইন-বিধানের আনুগত্য করানোর মাধ্যমে মানুষের দাসত্ব করায়, মানুষের দাস বানায়। ‘ইসলাম’ ও ‘গণতন্ত্র’ পরস্পর বিরোধী ও বিপরীত ব্যবস্থা। এদুটোর সহাবস্থান আদৌ সম্ভব নয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদ্রাসায় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা ‘ইসলাম’ এবং মানব রচিত ব্যবস্থা ‘গণতন্ত্র’ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান দানের ব্যবস্থা না থাকায় জাতির অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে অজ্ঞতার অন্ধকারেই আছে। যা কিছু শিখানো হচ্ছে তা যথাযথ ও পরিপূর্ণ না হওয়ায় জাতির মানুষ শির্ক ও কুফুরীর এই মহাক্ষতিতে নিমজ্জিত আছে।
কিছূ পন্ডিত ব্যক্তি (?) এই বলে জাতিকে বিভ্রান্ত করছেন যে, ইসলামেও ‘গণতন্ত্র’ আছে। এই বিভ্রান্তি দুর করার জন্য বলছি ‘গণ’ এবং ‘তন্ত্র’ এ দুটি শব্দ মিলে হয়েছে গণতন্ত্র। ‘গণ অর্থ ‘মানুষ’ এবং ‘তন্ত্র’ অর্থ ‘আইন’। অতএব ‘গণতন্ত্র’ অর্থ হচ্ছে ‘মানুষের আইন’। ‘গণতন্ত্র’ মানুষের সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে রচিত এমন একটা ব্যবস্থা, যে ব্যবস্থায় মানুষের মনগড়া আইন-বিধান দ্বারা ‘সমাজ ও রাষ্ট্র এবং সরকার গঠন’ ও পরিচালনা করা হয়। মানুষের সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে মানব রচিত ব্যবস্থা ‘গণতন্ত্র’ সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন ও পরিচালনায় ‘জনগণকে সকল ক্ষমতার উৎস’ এবং গণতন্ত্রের মাধ্যমে সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মানা হয় জনগণকে, আইনদাতা স্বীকার করা হয় জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের এবং কর্তৃত্বের মালিক মানা হয় মানব রচিত ব্যবস্থার ধারক বাহক নেতা নেত্রী বা সরকারকে। জনগণ মানুষ, জনগণের প্রতিনিধি সংসদ সদস্যগণ মানুষ এবং সরকারও মানুষ। অর্থাৎ গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্ব মানুষের মেনে মানুষকে ‘রব’ মানা হয় এবং মানব রচিত ব্যবস্থা ও মানুষের মনগড়া আইন-বিধানের আনুগত্য স্বীকার করে মানুষের দাসত্ব করে মানুষকে ‘ইলাহ’ মানা হয়। অথচ ইসলামে সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্ব একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর; মানুষের নয় অর্থাৎ আল্লাহই হলেন সৃষ্টিজগতে সকলের জন্যই একমাত্র ‘রব’-সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক, সকল সৃষ্টির জন্য একমাত্র আইনদাতা-বিধানদাতা ও নিরংকুশ কর্তা; অন্য কেউ নয়, কোন মানুষ নয়। ফলে দাসত্ব, আইনের আনুগত্য ও উপাসনা একমাত্র আল্লাহর; অন্য কারো নয় অর্থাৎ আল্লাহই হলেন একমাত্র ‘ইলাহ’। গণতন্ত্রসহ মানব রচিত সকল ব্যবস্থাই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে শির্ক ও কুফুরকারী এবং আল্লাহ বিদ্রোহী ব্যবস্থা। এমতাবস্থায় ‘ইসলামেও গণতন্ত্র আছে’ এ কথা যারা বলেন, তারা যে সন্দেহাতীতভাবে চরম বিভ্রান্তিতে আছেন তা শতভাগ নিশ্চিত করেই বলা যায়। কেউ কেউ বলেন, ‘পাশ্চত্যের গণতন্ত্র শির্ক কিন্তু ইসলামের গণতন্ত্র শির্ক নয়’। এর জবাবে বলছি- ইসলামে কোন ‘গণতন্ত্র’ নেই, ইসলামে যা আছে সবকিছই ‘ইসলাম’। কেউ কেউ বলেন, ‘গণতন্ত্র’ মানে তো নির্বাচন। ইসলামে তো নির্বাচন আছে, কাজেই ইসলামেও গণতন্ত্র আছে। সকলের জ্ঞাতার্থে বলছি- ‘গণতন্ত্র’ মানে নির্বাচন নয়। ইসলামের সাথে গণতন্ত্রের অনেক মিল থাকলেও ইসলাম গণতন্ত্র নয় এবং গণতন্ত্র ইসলাম নয়। যেমন চারটি পা, দুটি শিং, ছোট একটি লেজ, তৃণভোজী এবং আরো অনেক দিক দিয়ে মিল থাকা সত্বেও হরিণ যেমন ছাগল নয়, তেমনি ছাগলও হরিণ নয়। গণতন্ত্র হলো- মানব রচিত ব্যবস্থা। সমাজ, রাষ্ট্র এবং সরকার গঠন ও পরিচালনায় সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্ব মানুষের। আর ইসলাম হলো- মানুষের সমাজ ও রাষ্ট্রসহ সমগ্র জীবন পরিচালনার জন্য সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত একমাত্র জীবন ব্যবস্থা। ইসলামে মানুষের জীবনের সকল দিক ও বিভাগে এবং সৃষ্টি জগতের সর্বত্র সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্ব একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর। সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্ব মানুষের; এটাই সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ক্ষমতা, অধিকার ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের সাথে শির্ক ও কুফর। কাজেই ‘ইসলাম’ ও গণতন্ত্র পরস্পর বিরোধী ও বিপরীত ব্যবস্থা। এ দু’টোর সহঅবস্থান একবারেই অসম্ভব। শয়তানের ধোঁকা এবং ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় যারা মানুষের সার্বভৌমত্ব, মানুষের মনগড়া আইন-বিধান ও মানুষের কর্তৃত্বের ভিত্তিতে মানব রচিত ব্যবস্থা ‘গণতন্ত্র’ মেনে চলছেন, তারা নিজেদের অজান্তেই ফেরাইন, নমরুদ, আবু জাহিল, আবু লাহাব গংদের মতো মানুষকেই ‘রব’ ও ইলাহ’র স্থান দিয়ে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে শির্ক, কুফুরী ও আল্লাহর সাথে বিদ্রোহ করে আল্লাহর চরম অবাধ্য জীবন যাপন করছেন; ফলে ইসলামের বাহিরেই তাদের অবস্থান। এমতাবস্থায় তাদের নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাতসহ কোন কাজই আর ঈমানের ভিত্তিতে ইসলামের কাজ হচ্ছেনা; যদিও তারা নিজেদেরকে ঈমানদার ভাবেন এবং ইসলামের গন্ডির মধ্যেই আছেন বলে মনে করছেন। গণতন্ত্রসহ মানব রচিত সকল ব্যবস্থাই আল্লাহর সাথে শির্ক ও কুফরকারী এবং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সীমা লংঘণকারী ‘তাগুতী’ ব্যবস্থা। এই তাগুতী ব্যবস্থা এবং এই তাগুতী ব্যবস্থার প্রতিনিধিত্বকারী নেতৃত্ব ‘তাগুত’কে অস্বীকার অমান্য করে জীবনের সকল ক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহে’কেই সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের একমাত্র মালিক স্বীকার করে মেনে নিলেই আল্লাহকে একমাত্র ‘রব’ মানা হয়, আল্লাহর প্রতি ঈমান হয়। ‘তাগুত’কে অস্বীকার অমান্য না করলে আল্লাহর প্রতি ঈমান’ই আনা হয়না। শির্ক মুক্ত হয়ে আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনলে কোন আমলই আল্লাহর কাছে গৃহীতও হবেনা। এই ‘মহা সত্য’ কথাগুলো জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে সকল মানুষকে জ্ঞানের ভিত্তিতে বিবেক, বুদ্ধি ও মেধা দিয়ে উপলব্ধি করে নিজের এবং জাতির কল্যাণে ভূমিকা রাখতে হবে। কাজেই, সমাজ ও রাষ্ট্রে ‘ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার কথা বলে যারা ‘গণতন্ত্র’এর অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে, ভোট দেয় এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের সরকারে কাছে ইসলামের কোন আইন-বিধান প্রণয়ন বা কোন ইসলামের পক্ষে কোন দাবী দাওয়া উত্থাপন করে, দাবী আদায়ের লক্ষ্যে হরতাল, ভাংচুর, জ্বালাও পোড়াও, অবরোধ, বিক্ষোভ, উগ্রতা, জঙ্গীতৎপরতা, মারামারি, বোমাবাজি, গোলাগোলিসহ মানুষের জান মালের ক্ষতিকারক কাজ করে; সে সব কাজের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। আবার মানব রচিত ব্যবস্থা গণতন্ত্র’কে শির্ক জেনে যারা ‘ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার কথা বলে সশস্ত্র সংগ্রাম, উগ্রতা, জঙ্গীতৎপরতা ও বোমাবাজির মাধ্যমে মানুষদের আতংকগ্রস্থ এবং মানুষের জান মালের ক্ষতিসাধন করে তারাও চরম ভুলের মাঝে অবস্থান করছে। সমাজ ও রাষ্ট্রে ‘ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার জন্য মানব রচিত ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহন বা সশস্ত্র সংগ্রাম, উগ্রতা, জঙ্গীতৎপরতা, বোমাবাজি, আলকুরআন ও সুন্নাহ’র পরিপন্থি বিধায়; এদুটো পদ্ধতিই শির্ক ও কুফুরী। গণতন্ত্রের অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহন কিংবা সশস্ত্র সংগ্রাম, উগ্রতা, জঙ্গীতৎপরতা, বোমাবাজি করে মানুষ হত্যা করা সমাজ ও রাষ্ট্রে ‘ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি নয়। আল্লাহর রাসূল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রদর্শিত শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীর মাধ্যমে আল্লাহকেই একমাত্র ‘রব’ স্বীকার করে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার এবং ইসলামের অঙ্গীকার ও ইসলাম বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করার দাওয়াত দানে নিজের সম্পদ ও সময় ব্যয় করে চূড়ান্ত চেষ্টা করা, উত্তম ধৈর্য্য ও ছালাতের মাধ্যমে আল্লাহর বিশেষ সাহায্য লাভের জন্য দোয়া (আমলে ছালেহ) করাই সমাজ ও রাষ্ট্রে ‘ইসলাম’ প্রতিষ্ঠার একমাত্র পদ্ধতি এবং এই পদ্ধতিই ঈমানদারদের রাষ্ট্রীয় শাসন ক্ষমতা (খিলাফাত) পাবার একমাত্র উপায়। ঈমানদারদের রাষ্ট্রীয় শাসন ক্ষমতা দানের ব্যাপারে সুরা নূর’এর ৫৫ আয়াতে আল্লাহ এই ওয়াদাই করেছেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্টভাবে প্রতিয়মান যে, আমরা বাংলাদেশের মানুষ সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় মানব রচিত ব্যবস্থা ‘গণতন্ত্র’এর মাধ্যমে মানুষের সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্ব মেনে নেয়ায় সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের সাথে শির্ক ও আল্লাহর চরম অবাধ্যতা করে ক্ষমার অযোগ্য মহা পাপে নিমজ্জিত হয়ে জাতিগতভাবে ভয়াবহ কঠিন বিপদ ও মহা ক্ষতির মধ্যে অবস্থান করছি। এই অবস্থা থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে, তা নাহলে আল্লাহর চরম অবাধ্যতা এবং তাঁর সাথে শির্ক করার অপরাধে দুনিয়াতে আল্লাহর আযাব গযবের শিকার হয়ে দুর্ভোগ ও অশান্তিতে জীবন কাটানোর পর আখিরাতের জীবনেও চিরস্থায়ীভাবে জাহান্নামের আগুনে জ্বলতে হবে, যেখানে সাহায্য বা রক্ষা করার কেহ থাকবে না। এই মহা ক্ষতি থেকে বাঁচতে হলে ব্যক্তিগতভাবে আমাদের সকলকে অসীম দাতা, দয়ালু ও পরম ক্ষমাশীল আমাদের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে তওবা করতে হবে এবং সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় মানুষের সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও কর্তৃত্বকে অস্বীকার অমান্য করে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনাসহ জীবনের সর্বক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহকেই সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্বের মালিক স্বীকার করে তাঁর প্রদত্ত ব্যবস্থা ‘ইসলাম’এর আইন-বিধান সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠার জন্য “আল্লাহর সার্বভৌমত্বের প্রতিনিধিত্বকারী নেতার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে” এবং নিজের অর্থ ও সময় ব্যয়ের মাধ্যমে জাতির অন্যান্য সকলকে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এই মহা সত্য কথাগুলো জানাতে আন্তরিকভাবে চূড়ান্ত চেষ্টা করতে হবে, ধৈর্য্য ও ছালাত (নামাজ)এর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে এবং সকল প্রকার বিরোধীতা ও সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করার দায়িত্ব আল্লাহর উপর ছেড়ে দিয়ে নিজে উত্তম ধৈর্য্য ও ক্ষমার নীতিতে অটল থাকতে হবে। তাহলেই মিলবে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর ক্ষমা, মিলবে রাষ্ট্রীয় শাসন ক্ষমতা (খিলাফাত) এবং আখিরাতের স্থায়ী জীবনে চির সুখের স্থান জান্নাত।
বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বে বর্তমানে যা কিছু ঘটছে এ ব্যাপারে শুধু এ কথাই বলা যায় যে, সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় মানুষের জন্য সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত কল্যাণকর ও পরিপূর্ণ একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ‘ইসলাম’এর পরিবর্তে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে শির্কী ও কুফুরী মানব রচিত ব্যবস্থা ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠিত থাকায় আল্লাহর আযাব গজবে জাতির মানুষ দলে দলে বিভক্ত ও সংঘাত সংঘর্ষে লিপ্ত হওয়ায় দুর্ভোগ, অশান্তি ও ধ্বংসের জন্য যা ঘটার তাই ঘটছে এবং জাতির মানুষ বহুবিধ সমস্যায় চরম সংকটে কাল কাটাচ্ছে। সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় ‘ইসলাম’ প্রতিষ্ঠিত হলেই সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল মানুষের জীবনের সকল সমস্যার সমাধানসহ সকল মানুষের মৌলিক অধিকার সমূহ আদায় ও সংরক্ষণ হবে, দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গঠিত হবে, শোষণমুক্ত অর্থনীতি এবং সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। একমাত্র তখনই জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও দল মত নির্বিশেষে জাতির সকল মানুষের জীবনেই সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। তাই, দেশ ও জাতির সকল মানুষের কল্যাণে জাতির সকলকে আন্তরিকভাবে আহ্বান করছি- “মানুষের নয়! সার্বভৌমত্ব, আইন-বিধান ও নিরংকুশ কর্তৃত্ব একমাত্র আল্লাহর” এই মহা সত্য স্বীকার করে আল্লাহর দাসত্ব করার লক্ষ্যে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের প্রতিনিধিত্বকারী নেতার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হোন এবং সমাজ ও রাষ্ট্রে সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ প্রদত্ত পরিপূর্ণ সকল মানুষের জন্য কল্যাণকর একমাত্র জীবন ব্যবস্থা ‘ইসলাম’ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখুন, নিজে বাঁচুন! জাতিকে বাঁচান!
বিষয়: বিবিধ
১৫০১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মুসলিম এর বাইরে যেতে পারেনা। যদি যায়, মুসলিম থাকবেনা।
মন্তব্য করতে লগইন করুন