আর্তনাদ

লিখেছেন লিখেছেন সূর্য তরুণ ২৯ এপ্রিল, ২০১৪, ০১:০৪:২২ দুপুর

শহরটির নাম আলেপ্প।আরবী ভাষায় বলা হয় হালব। পৃথিবীর যে কয়টি প্রাচীন শহর এখন পর্যন্ত টিকে আছে তার মধ্যে এটি অন্যতম।শহরটির গোড়াপত্তন হয়েছিল খ্রিস্টপুর্ব ছয়শ শতাব্দিতে।উমাইয়া শাসনামলে শহরটি রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরত্বপুর্ন হয়ে উঠে এমনকি উস্মানীয় আমলেও এটি ছিল সম্রাজ্যের তৃতীয় বৃহত্তম শহর।কিন্তু সময়ের বহতা নদি পেরিয়ে শহরটি যেন আজ তার ক্রান্তি লগ্নে।

মাত্র ২ বছর আগেও সুর্যের আলো চারদিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে কোলাহলপূর্ণ পরিবেশে চারদিকে দেখা যেত মানুষের কর্ম ব্যাস্ততা।কিন্তু এই মুহূর্তে শহরটি পরিণত হয়েছে এক মৃত্যুপুরীতে ।চারদিকের সুরম্য বাড়িঘর ধংস্বস্তুপে পরিনত হয়েছে।ক্ষনে ক্ষনে গোলার আওয়াজ আর বিষাক্ত গ্যাসে বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।শহরের ইস্মাইলিয়্যাহ এলাকার একটি ভাঙ্গা বাড়ির সামনে বিষন্ব মনে বসে আছে ১৪ বছরের একটি ছেলে।ছেলেটির নাম ইউসুফ। চুলগুলো এলমেলো ফর্সা চেহারার উপর গোলাপী আভা।সামনের বাড়িটি তাদেরই। ভাবতে ভাবতে সময়ের গভীরে ডুব দেয় ইউসুফ।

মাত্র ২ বছর আগের কথা বাড়িটি একজন আবেগী তরুনী আর একটা ফুটফুটে কিশোরের পদচারনায় মুখরিত থাকত।ইউসুফদের পরিবারের সদস্য ছিল চারজন আব্বু আম্মু আর বড় বোন সাফওয়া। মাঝে মাঝেই সাফওয়া আর ইউসুফ চরম শত্রু। বিশেষ করে তাদের আব্বু যখন বাহির থেকে কিছু আনত।কিন্তু লেখাপড়ার কাজে ইউসুফ সাফওয়ার দ্বারস্ত না হয়ে পারতনা।

ইস্মাইলিয়্যাহ মুলত তাদের নানা বাড়ির এলাকা সেই সুবাদেই তাদের আব্বু এখানে বাড়ী করে ছিলেন।নানা বেচে থাকতে নানার কলিজার টুকরা ইউসুফকে প্রতিদিন একবার হলেও তার কাছে যেতে হত সেই থেকেই তার শিক্ষার শুরু নানা তাকে সবসময় বলত যথাসাধ্য সত্যকে আকড়ে ধরবে ও অন্যায় কে প্রতিহত করবে আর তোমার জীবনকে উৎসর্গ করবে ইসলামের জন্য।তোমার জীবনের চরম ও পরম লক্ষ্য হবে আল্লাহর জমীনে তার অবাধ্যকে উচ্ছেদ করে আল্লাহর বিধান কায়েম করা। ইউসুফের নানা ছিলেন ৯০এর দশকে আলেপ্পর একটি ইসলামী সংগঠনের প্রধান ছিলেন।যার কারনে তাকে হাফিয আল আসাদের রোষানলে পড়ে অনেকবার কারা বরন করতে হয়েছে।

যদিও ইউসুফের নানা ইসলামী ব্যাক্তিত্ত ছিলেন কিন্তু তার বাবা ছিলেন একজন আসাদ সমর্থক।তিনি ছিলেন একজন সরকারী কর্মকর্তা।১০ ডিসেম্বর ২০১০,তিউনিশিয়ায় একজন ফুটপথ ব্যাবসায়ির নিজ গায়ে আগুন দিয়ে আত্নহত্যার মাধ্যমে আরব বসন্তের সূচনা হয়।ক্রমে ক্রমে আন্দোলন তিউনিশিয়ার সীমান্ত ছাড়িয়েও অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে।সিরিয়াও এই তরঙ্গে উদ্বেলিত হয়।২৬ জানুয়ারি ২০১১ হিমসে এক লক্ষ লোক সমাগমের মধ্য দিয়ে আসাদ বিরোধী আন্দোলন আত্নপ্রকাশ করে।

আলেপ্পতে আল জাবেরি স্ক্যায়ারে সমাবেশের মাধ্যমে আসাদ বিরোধি আন্দোলন চলতে থাকে।কিশোর ইউসুফের মন সহজেই এই আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হয়।কিন্তু বাবার কঠোর নিষেধ জাবেরি স্কয়ারের দিকে এক পা বারানো যাবেনা।কিন্তু তারপরও বিকেলে খেলার ফাকে ফাকে বন্ধুদের কাছে সে আন্দোলনের খোজ নিত কেননা এ আন্দোলনে কিশোদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ ছিল।আন্দোলন ক্রমে ক্রিমে তিব্রতর হতে লাগল বাসার আল আসাদ কোন ক্রমে আন্দোলন কে দমাতে না পেরে তার কশাইনীতি অনুসরন করল।২০১২ সালের মার্চ মাসে আলেপ্পতে বিক্ষোভকারিদের উপর ট্যাঙ্ক আক্রমন শুরু হয়। ইউসুফের আব্বু তখনো মনে করতেন বাসার থাকলেই দেশের ভাল।বিক্ষোভকারিদের সঙ্গে সেনা বাহিনির সংঘর্ষে আহতের সংখ্যা ক্রমে বেরেই চলেছে।

অবশেষে এপ্রিল ১৪তারিখ সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল।ইউসুফের আব্বু টেলিভিশন দেখতে বসেছেন।হঠাত বাহিরের চিৎকারের আওয়াজ শোনা গেলো।ইউসুফের আব্বু বলল বিক্ষোভকারিদের বাড়িঘর তল্লাশি চালানো হচ্ছে আমরাত বিক্ষোভকারি নই।কিন্তু আব্বুর ভুলটা ভাঙল তিব্র বূটের লাথিতে দরজা ভেঙ্গে পড়ার পর।বাসার ভেতরে সেনা বাহিনী আর হিজবুল্লাহর পোষাকধারি কয়েকজন সৈন্য ঢুকল ।আব্বু ভেবেছিলেন তার পরিচয় দেয়ার পর সৈন্যরা ফিরে যাবে কিন্তু তারা ইউসুফের আব্বু আম্মুকে দেয়ালের দিকে মুখ করে দাড়াতে বলল ইউসুফের বোন সাফওয়া উপরের ঘরে ছিল।ইউসুফকে রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত করা হলো ।সর্বশেষ তার এতটুকু মনে পড়ে জ্ঞান হারানোর পুর্বে

সে ব্রাশ ফায়ারের আওয়াজ আর সাফওয়ার হৃদয়বিদারক চিতকারের আওয়াজ শুনতে পেয়েছিল। স্প্রেন্টারের ক্ষতের তিব্র ব্যাথা নিয়ে ইউসুফ জেগে উঠে নিজেকে হাসপাতালের বেডে আবিষ্কার করে।সে যখন তার বাসার সামনে বসেছিল সেখানে রকেট হামলা চালানো হয় ইউসুফ কোন রকমে বেচে গেলেও জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল।

বিষয়: সাহিত্য

১০০০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

215230
৩০ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৯:৩৮
রেহনুমা বিনত আনিস লিখেছেন : অন্যায়ের সমর্থনকারী মনে করে সে কখনো এর শিকার হবেনা, অথচ অন্যায়কারী আপন পর কাউকে ছাড় দেয়না!
সুন্দর লিখেছেন, চালিয়ে যান Rose Rose
217664
০৫ মে ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭
সূর্য তরুণ লিখেছেন : ধন্যবাদ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File