নৈতিকতার পদস্খলন
লিখেছেন লিখেছেন প্রফেসর ফারহান ২০ আগস্ট, ২০১৪, ০১:১৮:৫০ রাত
১)আপনি কি জানেন আরেকজনকে খারাপ পথে যেতে দেখেও চুপ থাকাটা কিসের লক্ষণ?
২)আপনি কি জানেন সত্য জেনেও তাকে ধামাচাপা দিয়ে ঢেকে রাখাটা কিসের লক্ষণ?
৩) আপনি কি জানেন উপযুক্ত জায়গায় উচিত বা নৈতিক কথা বলা থেকে বিরত থাকাটা কিসের লক্ষণ?
৪)চোখের সামনে মারামারি হচ্ছে, জানেন কিছু একটা করা উচিত কিন্তু নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কিছু করছেন না, এটা কিসের লক্ষণ?
৫) নিজের সময়, শ্রম নষ্ট হবে বলে অন্যায় প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন, এটা কিসের লক্ষণ?
এরকম আরও অনেক প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া যাবে যার উত্তর হবে বোবা শয়তানের লক্ষণ। মানুষের নৈতিক শিক্ষা এখন বিলুপ্তপ্রায়। এখন আর ১ম-১০ম শ্রেণী পর্যন্ত সেই আমলের নজরুল, রবীন্দ্রনাথ,মশাররফ, প্রমথ, গোলাম মোস্তফা, সিকান্দার আবু জাফর,হুমায়ূন দের মত পাঠ্য বইয়ে নৈতিক শিক্ষামূলক লেখা প্রকাশিত হয় না, এখন অনেকেই সন্তানদের মসজিদ বা হুজুরের কাছে ধর্মীয় শিক্ষার জন্য দিতে উদ্যত হয়না, এখন অনেকেই আর সেই নৈতিক শিক্ষার জন্য আদর্শলিপি বই কেনে না। একটা রিকশাওয়ালাকে মারধর করছে এক যুবক আর সেটা তামাশা হিসেবে দেখছে আশেপাশে থাকা আরও ৫ জন রিকশাওয়ালা এবং অন্যান্য শ্রেণীর মানুষ। সিএনজি চালকদের দৈনিক ভাড়া ১২০০ টাকা (ন্যায্য ৬০০ টাকা) দিতে হয় মহাজনদের কাছে আর সেজন্য তারা ট্রাফিক পুলিশ আর যাত্রীদের কাছে মিথ্যার শরণাপন্ন হয়। আর এদিকে সুশীলরা মিটার রেট ঠিক করে, মিটার চেকিং করে ভদ্রতার খাতিরে। আমি আজ কোন জামাটা পরে কোথায় যাব, কে কিভাবে দেখবে, কে কি বলবে সেটার তোয়াক্কাও হারিয়ে গেছে 'অভিজাত ও অত্যাধুনিক ফ্যাশন' এর হালে। দুই বন্ধুর ব্যাক্তিগত কারণে ক্লাসে ঝগড়া আর তাতে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা করার কোন প্রয়াস নেই, বরং দেখা যায় হাসাহাসি আর আড়ি পেতে গোপন বা মিথ্যা শোনার আভাস, সম্পর্কের অবনতি বা টানাপড়েন এর জন্য আপনি বা আমি সেই ঝগড়া থামাতে এগোই না। এরকম ১-২, ১-২ করতে করতে আমাদের মধ্যে কিন্তু একটা ধারণা তৈরি হয় আর সেটা হচ্ছে "কোন ঝামেলায় যাবার দরকার নেই, এমনেই ঠিক হয়ে যাবে। আমি গেলে বরং আরও ক্ষতি, সময় আর শ্রম নষ্ট"; পরবর্তী একই ধরনের ঘটনার জন্য সেই একই ধারণা কাজ করে আর এভাবেই নৈতিকতার ব্যাপারটা আমাদের মধ্যে পারদের মত নিচের দিকে নামতে থাকে আর অনৈতিকতার পারদটা উপরের দিকে উঠতে থাকে। "জান বাঁচানোর জন্য মিথ্যা জায়েজ" এই কথাকে আশ্রয় করে মানুষ তখন অজুহাত বা হাস্যকর উক্তি দাড় করান।যেন কেও কিছু বলার নেই, কেও কিছু করার নেই আর সবাই নীরব দর্শক।গুটিকয়েক কেও আসলে দর্শক থাকতে চায়না।তারা ভাবে আমি একা যাব কেন? আমার সাথে তো কেও নেই, কেও আসবে না, জোট হলেই তো প্রতিবাদ করা যায়। কিন্তু শুরু করতে হবে যে ১ থেকে, তারপর ২, তারপর ৩, তারপর জোট, তারপর মহাজোট। আগে আপনি শুরু করেন, আপনার সাথে অবশ্যই কাউকে না কাউকে সাথে পাবেন। আর না পেলে "যদি তোর ডাক শুনে কেও না আসে,তবে একলা চলরে" এই মন্ত্রে এগিয়ে একজন প্রতিবাদী যোদ্ধার মত যুদ্ধ করে প্রয়োজনে জান ত্যাগ করে শহীদের মর্যাদা লাভ করেন। সত্যের জয় চিরঞ্জীব, শহীদের ত্যাগ অমূল্য।
(রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পোস্টটি না দেখার জন্য আহবান রইল)
বিষয়: বিবিধ
১৪০২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
২. যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধা ছেলে তার বন্ধুদের সহ লুকিয়ে বাড়িতে এসেছে বাবা মাকে দেখার জন্য । এমন সময়ে রাজাকাররা এল হানাদারদের সাথে নিয়ে । বাবা মা কি করবে তখন ?
৩. আপনি প্রফেসর হিসেবে ভাল পড়াতে পারেন না ক্লাসে । ডিপার্টমেন্টকেও করে রেখেছেন যাচ্ছে তাই । সব সাবজেক্টের মধ্যে আপনার সাবজেক্টেই ছাত্ররা অনেক পিছিয়ে আছে । নিয়মিত ক্লাস, টিউটোরিয়াল না হওয়াতে এই সাবজেক্টে ভাল কনসেপশন নিয়ে পরীক্ষায় বসা দূরুহ হয়ে গেছে ।
ভাইভা পরীক্ষার দিন দুয়েক আগে একটা ডেমো ক্লাস নিলেন ডিপার্টমেন্টে গিয়ে । ছাত্ররা তখন আপনার ও আপনার ডিপার্টমেন্ট নিয়ে তাদের এত দিনের জমিয়ে রাখা ক্ষোভ উগলিয়ে দিল । এ নিয়ে অনেকক্ষণ হৈ চৈও হল ।
পরীক্ষার দিন স্বভাবতই আপনি হলেন ইন্টারনাল । যে সব ছাত্র বেশী বেশী চিল্লাচ্ছিল তাদেরকে কি করবেন দুদিন আগে উচিত/নৈতিক কথা বলার জন্য ?
৪. প্রতিপক্ষ দুই দল মারামারি করছে । এদের মধ্যে নাক গলাতে এসে আপনি ফেঁসে গেলেন । ওরা ঠিকই বের হয়ে গেল । আপনি আটকে রইলেন । আপনার পরিবার কি বলবে + করবে ?
৫. অন্যায়ের প্রতিবাদ করলেন । ছিনতাইকারীকে ধরে পুলিশে দিলেন বা খুনীকে ধরিয়ে দিলেন । ঐ দিনই আপনার এইচ.এস.সি. পরীক্ষা ছিল । চোর/খুনীকে থানায় সোপর্দ করতে করতে পরীক্ষার সময় প্রায় শেষ হয়ে যায় যায় - কি করবেন ?
এটি একটা প্রাকটিস। বা জনসচেতনার কাজ। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন