সিস্টেম
লিখেছেন লিখেছেন প্রফেসর ফারহান ১৭ আগস্ট, ২০১৪, ০২:৫৩:১৮ দুপুর
হায়রে জীবন যে পড়ে রবে অজানা সুখপল্লীতে
যদি থাকেন নরম তুলতুলে গদিতে
হায়রে জীবন যে পড়ে রবে কান্নার নোনাজলে
যদি থাকেন লাশের প্রীতিতে।
কেন এ কথা বলছি জানেন? যেখানে নাগরিক জনতা পাঁচ তারকার ট্রেডমার্ক সম্বলিত লোগো এঁটে ঘুরে বেড়ায় সেখানে তারা গোলপাতা ছাউনি ট্রেডমার্কওয়ালাদের কষ্ট বুঝবে কিভাবে? চকচলে সবকিছু বলে কি মানবতাবোধ ভুলে যাবে? পকেট ফিল আপ হয়নি বলে তাকে 'সিস্টেম' নামক যন্ত্রে আটকে রাখে? ঐসব কাপুরুষের কাছে কি জীবন আর সময়ের কোন মূল্য নেই? লিভার ইনফেকশন ও সেপটিসেমিয়ায় আক্রান্ত ৫৪ বছর বয়সী মোহাম্মদ আসলাম কেন টাকার অভাবে চিকিৎসায় অবহেলিত হবে? কেন তার পরিবারকে মৃত লাশের জন্য 'টাকা' নামক জেলখানায় বন্দি হতে হবে?
রাজধানীর মগবাজার দিলু রোডের বাসিন্দা মোহাম্মদ আসলাম লিভার ইনফেকশন ও সেপটিসেমিয়ায় ভুগছিলেন এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মারা যাবার পর 'Exceptional people, Exceptional care' এই স্লোগানে অনুপ্রাণিত ইউনাইটেড হাসপাতাল অথরিটি ৩২ লক্ষ টাকার বিল ধরিয়ে দেয় যার মধ্যে আসলাম সাহেবের পরিবার ১৮ লক্ষ টাকা পরিশোধ করে। বাকী ১৪ লাখ টাকা না দিলে লাশ ফেরত পাবেনা আসলাম সাহেবের পরিবার। কি নির্মম, তাইনা? পুরাই Exceptional case, Exceptional trademark হাসপাতালে ভূমিষ্ঠ হবার কালেও ব্যবসা, হাসপাতাল ত্যাগে মৃত লাশ নিয়েও ব্যবসা? যে ব্যবসার চুক্তিপত্রে সমঝোতা করতে আসে বাংলাদেশ পুলিশ, তারপরেও সুরাহা হয়না। ৪ লক্ষ টাকার মামলা ঠুকে দেয় পরিবারকে। আর কি বলব? যদি পারেন এগিয়ে আসেন ৪ লক্ষ টাকার মামলা থেকে একজন মানুষকে উদ্ধার করতে, একটা লাশকে প্রাণ দিতে, তার পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে। আরও বিস্তারিত জানতে যোগাযোগ করতে পারেন পাভেলঃ 01921466325 অথবা সাদিয়া 01786434823[ আসলামের মেয়ে ]
.আর্থিক সাহায্য পাঠানোর জন্য এই বিকাশ নাম্বারটা আসলাম সাহেবের স্ত্রী’র।
Bkash: 01715616720
Agrani bank account name:
Sabina Sultana
0200001678179
১।https://www.facebook.com/kasafaddauza/posts/10202921459142090
২।http://bit.ly/1t5X3wD
এবার আসি পত্রিকা ও আলোচিত খবরের বাইরে আমার নিজের জীবনের একটা বাস্তব কাহিনী নিয়ে। সেই মগবাজারের দিলু রোডের কাছাকাছি। ডাঃ দ্বীন মুহাম্মদ স্যারের হাসপাতাল এস পি আর সি হাসপাতাল, ঠিক দিলু রোডের বিপরীতে। স্যারের চেম্বারে যেতাম আমার ইপিলেপ্সির চিকিৎসা করাতে, সুস্থতার পর্যায়ে চলে এসেছি। ঘটনা ২০১৩ সালের এপ্রিল মাস। আমি দুপুরে চ্যাম্বারে হাজির, স্যারের এসিসট্যানট প্রেসক্রিপশন ও প্রেসার চেক করে সিরিয়াল দিল। প্রায় অনেকদিন যাওয়া আসা করাতে বুঝে ফেলছিলাম যে ইসিজি করতে দিবে, তাই দিল। ৪০০০ টাকা লাগবে, পকেটে তো আর এত টাকা নিয়ে ঘুরিনা, আব্বুকে কল দেই। শুনি দাদার মৃত্যুর খবর, চোখের কোণ বেয়ে পানি গড়ায়। আব্বু জিগাতলা থেকে মাইক্রো নিয়ে আসছে আম্মু ও বোনদের নিয়ে, নোয়াখালী যেতে হবে আর এই ফাঁকে আমাকে বলল ইসিজি করিয়ে রাখতে, আব্বু এসেই টাকাটা দিয়ে দিবে। এসিসট্যানটকে বুঝিয়ে বললাম যে, স্লিপটা কেটে আমার ইসিজিটা করিয়ে নেন, আমি আপনার সামনে বসে থাকব,কিছুক্ষণের মধ্যেই টাকা চলে আসবে , না, ঐ বদের বেটা আমাকে হাইকোর্ট দেখায়, সিস্টেম দেখায়, টাকা দেবার সাথে সাথেই নাকি করিয়ে দিবে, ১০ মিনিটের ব্যাপার। আমি এবার তাকে দাদা মারা যাবার বিষয়টি বুঝিয়ে বললাম, আব্বু আসার ব্যাপারটি বুঝিয়ে বললাম, নোয়াখালী যাবার বিষয়টি বুঝিয়ে বললাম, তাও কাজ হল না। শেষমেশ সত্য প্রমাণের জন্য আব্বুকে দিয়ে মোবাইলে ব্যাটাকে কথা বলালাম, আব্বু ব্যাটাকে মোবাইলে বুঝাল আর সেই ব্যাটা সব বুঝেও আমার উপরে ঝারি ঝাড়ল টাকা নিয়ে, সিস্টেম নিয়ে।আবেগে সেদিন সব মুখ বুজে সহ্য করে ছিলাম স্লিপ কেটে ইসিজি করালাম। বাবা আসল আর বলল "আপনাদের মানবতা বলতে কি কিছু নেই? একটা মানুষের জানাজা পড়ার জন্য আপনারা একটু কি সময় দিবেন না?" সেই ব্যাটা সিস্টেমের মধ্যেই নিজেকে ঠিক রাখল। বাবা পৌঁছাবার পরও চ্যাম্বারে দেরি হল ১৫-২০ মিনিট। এই হচ্ছে টাকা কামানোর সিস্টেম, এই হচ্ছে মানবতাহীন মূল্যবোধের পরিচয়, এই হচ্ছে পাঁচ তারকা ব্যবসায়িক হাসপাতাল। নিকৃষ্ট ধিক্কার এই ব্যবসা মনোভাবশোভিত চিকিৎসকদের সিস্টেমের জন্য। দ্বীন মুহাম্মদ স্যারকে ছোট করব না, করব তার মেডিকেল জ্ঞ্যানহীন এসিসট্যানট এর তথাকথিত সিস্টেমকে যা মানুষকে শুধু হয়রানির শিক্ষা দেয়। জগতে অনেক খবরের শিরোনাম হয় না যেগুলো অন্তরালে ঘটে।
বিষয়: বিবিধ
১১৬৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন