একদিন আমাদের ছুটি হবে
লিখেছেন লিখেছেন প্রফেসর ফারহান ০২ জুলাই, ২০১৪, ১১:২৩:৫৭ রাত
এসেছিলাম ধরণীতলে একদিন দামামা বাজিয়ে,
যেতে হবে আরেকদিন সবাইকে কাঁদিয়ে।
পৃথিবীতে আসা আর যাওয়ার মধ্যেকার যে সময়টুকু সেখানে আমরা রেখে যাই আমাদের কর্ম আর আচরণ যেগুলো স্মৃতি হয়ে ভেসে বেড়ায় পরিজনদের মাঝে। খুব আমেজ লাগে যখন একটা মানুষ পৃথিবীতে ঘর আলো করে আসে আবার খুব কষ্ট লাগে যখন কাছের একজন মানুষ কাঁদিয়ে ঘর অন্ধকার করে চলে যায়। জীবন বড়ই নিষ্ঠুর আর অমানবিক কিন্তু এটাই বাস্তব। একদিন আমাদের সবাইকেই ধরণী ছেড়ে যেতে হবে, সবারই কোন না কোন দিন এই জীবন সংসার থেকে ছুটি নিয়ে যেতে হবে পরপারে।মাঝের এই সময়টুকু আমরা তাহলে কি করলাম? বাবা-মা, ভাইবোন, স্বজন, বন্ধু বান্ধবদের সাথে কাটালাম অনেকগুলো সময়। মস্তি, আনন্দ,সুখ,উৎসব এসবও কম করলাম না কিন্তু যে আমাদের পৃথিবীতে পাঠাল আর যে আমাদের পৃথিবীতে থেকে উঠিয়ে নিবে তার দিক নির্দেশিত পথ অনুযায়ী কি আমরা চলতে পেরেছি? পরপারে গিয়ে কি আমরা তাকে কি জবাব দেব আমাদের কর্ম সম্পর্কে? আমাদের বেশভূষা, চলাফেরা, কথাবার্তা সব কি আল্লাহকে ও নবী রাসুলের দেখানো পথ অনুসারে ছিল নাকি আমরা আমাদের মত চলেছি, ঘুরেছি, জীবনযাপন করেছি? কুরআন ও হাদিসে আমাদের জীবনযাপন, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ যাবতীয় সবকিছু সম্পর্কে বলা ছিল। আমরা কি সেগুলো থেকে পর্যাপ্ত জ্ঞ্যান আহরণ করতে পেরেছি? অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে হাশরের ময়দানে। যে মহানুভব সৃষ্টিকর্তা আমরা বারংবার ভুল বা পাপ করা স্বত্বেও আমাদেরকে ক্ষমা করে দেন অথবা শুধরানোর মত অপরিসীম সুযোগ দিচ্ছেন সেগুলো কি আমরা কাজে লাগাতে পারছি? তাহলে কিসের এত ভাব বা ঢং আমাদের, এই রকম ঢং বা ভাব মারা তো একমাত্র তারই মানায় যার সবকিছু আছে আর তিনি হচ্ছেন মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। মানুষ হিসেবে তিনি আমাদেরকে সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন ঠিকই কিন্তু তাই বলে আমরা কিন্তু সবজান্তা হয়ে ভাব নিতে পারিনা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা কিভাবে চলছি,কিভাবে কাজকর্ম করছি তা কিন্তু আমরা ভালভাবেই জানি এবং স্বয়ং মহান আল্লাহ্ও পর্যবেক্ষণ করছেন। এসব কিছুরই সুক্ষাতিসুক্ষভাবে হিসাবে আসবে হাশরের ময়দানের দিন যেদিন আপনি আল্লাহ এর সামনে হাজির হবেন কিন্তু সেই হাশরের দিন কবে কখন আসবে সেটা আমি আপনি কেও বলতে পারিনা। এমনকি আপনার আমার মৃত্যু কবে হবে সেটাও জানি না, হতে পারে আজ,হতে পারে কাল অথবা হতে পারে অনেক সময় পর। মৃত্যুর সেই প্রহর আসার আগে্র প্রহরগুলো ভাল কাজ বা গুনাহ মাফের শেষ সুযোগ। বলা যায় না, এমনও হতে পারে আপনি আর কিছু সময় পরও মারা যেতে পারেন আর কবরে যাবার সাথে সাথেই আপনার হিসাব নিকাশ শুরু হয়ে যাবে। দুনিয়াতে আপনার জীবনযাপন, কাজ কর্ম, ব্যবহার, বেশভূষা সবকিছু ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে ঠিক থাকলে আপনার কবর হবে সুশোভিত ও ফুলময় বাগান। আর দুনিয়াতে যদি আপনার সব খারাপ রেকর্ড থাকে সবদিক দিয়ে তাহলে তো বিষধর সব সাপ আর পোকামাকড়ের কামড়ে হয়ে উঠবেন অতিষ্ঠ যা আপনার কল্পনাসীমার বাইরে। কারণ ওখানকার শাস্তি এমনি যে আপনি দুনিয়ায় বসে কখনো কল্পনাও করতে পারবেন না।তাই মৃত্যুর প্রহর আসার আগের সময়টুকু একটু কার্যকরভাবে ইসলামিক দিক নির্দেশনা অনুযায়ী ভাল কাজে লাগান যাতে করে আপনার আগের সব গুনাহ মাফ করিয়ে নেকআমল নিজের খাতায় লিখাতে পারেন। বাস্তব জীবনের বিএনপি,আওয়ামী লীগ,জামায়াতে ইসলামী, শিবির, জঙ্গিবাদী এসব কিছুই তখন আপনার থাকবেনা।আপনি একা,আপনার হিসাবও হবে একক। আপনি দুনিয়াতে ভাল খারাপ যাই করেন সব আপনার হিসাবের খাতায় লেখা হয়ে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে। আজকাল সময়টা কেমন জানি হয়ে যাচ্ছে। মানুষ এখন ছোট বাচ্চাদের কুরআন শিক্ষার জন্য হুজুর বা মসজিদে না দিয়ে ভর্তি করিয়ে দিচ্ছে কোন গানের বা নাচের শিক্ষকের কাছে অথবা স্কুলে। অথচ হুজুরের কাছে শিখা যে দোয়াটা ''রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগিরা'' এটা করার সুযোগ পেত ঐ সন্তান যদি তার বাবা-মা তাকে সেই শিক্ষাটা হুজুরের কাছ থেকে গ্রহণ করার সুযোগটা করে দিতেন।মা -বাবার মৃত্যুর পর সন্তান যদি সেই বাবা-মার জন্য এই দোয়া না করার ইচ্ছাশক্তি না পায় তাহলে সেটার জন্য কিন্তু সেই বাবা-মাও কিছুটা দায়ী। গান বা নাচের শিক্ষা দিয়ে আপনি দুনিয়ায় চলতে পারবেন কিন্তু পরকালে কাজে আসবেনা আর আল্লাহর বানীর শক্তি সর্বময় সর্ব জায়গায় ইহকাল ও পরকালে।মাঝে মাঝে অবাক হয়ে যাই এই ভেবে যে মানুষ অনেকদিন বাঁচবে ভেবে শেষ বয়সের জন্য হজের নিয়ত করে রাখে। এটার সাথে ভাগ্যেরও একটা সংযোগ আছে অবশ্যই। আর আপনি ততদিন বাঁচবেন এটার গ্যারান্টি কেবল আল্লাহপাক দিতে পারেন এবং তিনিই আপনার কপালে হজ নসিব করতে পারেন। অনেকগুলো কথা বললাম। জানি না কে কিভাবে নিবেন, সবকিছুর একটা শেষ আছে আর তাই আমার নোটটাও এখানে শেষ করতে হবে। আমাদের জীবনেরও একদিন শেষ হবে, জীবনেরও একদিন ছুটি হবার ঘণ্টা বাজবে আর তাই বলতে হয় একদিন আমাদের ছুটি হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন