রিক্সায় ধাক্কা খাওয়া, হাতে হাত ছোঁওয়া
লিখেছেন লিখেছেন প্রফেসর ফারহান ২৪ জুন, ২০১৪, ০৪:০৯:২৯ বিকাল
আমার লেখা ‘’বান্ধবীর খাটের যবনিকাপাত’’ গল্পের নায়ক নায়িকাদের কথা মনে আছে আপনাদের? সিয়াম ও কোয়েল? না মনে থাকলে আমার আগের গল্পটি পড়ে নিন, এই গল্পটা শুরু হয়ে আগেরটার পর থেকেই-
http://www.onbangladesh.org/blog/blogdetail/detail/8781/Farhan14/42661#160807
বেশ কিছুদিন কথা বলল না কোয়েল। ১-২-৩-৪-৫ করে ৬ দিন গেল, সিয়াম বাসায় এসে কোয়েলকে বলল, ‘’চল সিনেপ্লেক্সে যাই নতুন ছবি এসেছে’ বোম্বে মরিচ থেকে এবার কাঁচামরিচের ঝাঁঝরায় ‘’তুই যা তোর হবু বউরে নিয়ে,আমার সাথে যাবি কেন? প্রত্যুত্তরে সিয়াম ‘’আহহা, কথায় কথায় শুধু গার্লফ্রেন্ড, বউ এগুলা টেনে আনিস কেন?এসব তো হয়েছে ক’মাস হল আর তুই তো আমার সেই ল্যাংটা কালের ফ্রেন্ড’’, হাতের কাছের চিরুনিটা নিয়ে কোয়েল তেড়ে আসল সিয়ামের দিকে ‘’খালি বাজে কথা নাহ!!!, গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করে তো শেষ পর্যন্ত আমার কাছেই আসিস’’। ‘’হুম,হইছে হইছে এবার তোর বদমেজাজি ঝাঁঝরা গোলা বন্ধ কর আর রেডি হয়ে নে’’,কোয়েল রেডি হচ্ছে আর সিয়াম তাদের ড্রয়িং রুমে কোয়েলের মায়ের সাথে খোশগল্প করছে। সেই কি খোশগল্পের চাপাবাজি, কোয়েলের মা তো তেলে তেলে ভাসমান হয়ে গেল। কোয়েল রেডি আর তার মাকে বলল, ‘’মা আমি একটু সিয়ামের সাথে বের হচ্ছি, সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখব, ফিরতে ৩-৪ ঘণ্টা লাগবে’’ আর মায়ের সেই চিরাচরিত ঘণ্টা ‘’রাত ৮ টার পর যেন না হয়’’; এদিকে আবার সিয়ামের মুখ থেকে সরিষার তেল ‘’আনটি আপনি কোন চিন্তা করবেন না, আমি ওকে এগিয়ে দিব আসার সময়’’।
সিয়াম আগেই একটা গোলাপ গুঁজে রেখেছিল ভিতরের বুক পকেটে কোয়েলকে ঠাণ্ডা করার জন্য। দুজনে মিলে একটা রিক্সা নিল বসুন্ধরা সিটি, পান্থপথ। আহ! সে কি অনুভুতি দুজনের, কত্তদিন পরে এক রিক্সায়। অনুভূতিটা সিয়ামের একটু বেশি, কেননা পাশে নকশা সমাহিত উজ্জ্বল রঙের একটা ড্রেস পড়ে আছে তার বান্ধবী কোয়েল। কোয়েলকে কেন জানি একটু অন্যরকম লাগছে।
-কি ব্যাপার!!! এভাবে চেয়ে আছিস কেন ব্যাঙের মত? (কোয়েল)
-দেখছি
-কি?
-তোমাকে
-আমাকে আবার নতুন করে দেখার কি হল?
-নাহ, আজকে খুব গরজিয়াস লাগছে, বিবাহিত বিবাহিত মনে হচ্ছে
-মাইর খাবি ফাজিল
-নখ বড় থাকতে তো মাংস উঠানো চিমটিই দেওয়া যায়, মাইর দিয়া শক্তি খরচের কি দরকার?
-আমার শক্তি খরচ হইলে তোর কি?
-আমার তো কিছু না, মানুষ তো আর দুর্বল মেয়ে বিয়ে করবেনা
সিয়ামের এই কথার সঙ্গে সঙ্গে রিক্সাটা ধুপ করে কিসের সাথে জানি ধাক্কা খেলো আর সিয়ামের বাম হাতটা পড়ল কোয়েলের কোমলস্নিগ্ধ রঙ্গিন নখরে সুন্দর ডান হাতটার উপর আর কোয়েল তো পুরা আমড়া হয়ে গেল। সিয়াম পড়ে যাবে ভেবে কোয়েল আরেক হাত দিয়ে সিয়ামকে গরুর রশি টানার মত করে ঠিক করে বসাল।সিয়াম চোখের পলকেই কিসের যেন একটা অনুভুতি পেল, জাস্ট কয়েক সেকেন্ডের অনুভূতি, হাত ধরার অনুভূতি যা ঠিক বিদ্যুৎ চমকানোর মত ক্ষণস্থায়ী। কোয়েল তো কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই হাত সরিয়ে নিল আর জীবনের প্রথম এরকম অদ্ভুত অনুভূতিতে সিয়াম একটু পর পর মুচকি হাসি, অট্টহাসি দিচ্ছে।
-কিরে? এরকম হাসছিস কেন?
-এমনেই, সুড়সুড়ি লেগেছে তো
-মানে?
-মানে আবার কি? ছোঁওয়া, স্পন্দন তারপর শক্ত করে ধরা, কয়েক সেকেন্ড, তারপর শক খেয়ে আগের জায়গায়
-এমন ভাব করছিস মনে হয় যেন আগে কোন মেয়ের পাশে রিক্সায় বসিস নি, হাত ধরিস নি
-মেয়েটা বেশি কথা বলছে আবারো, মামা আবার কোন কিছুর সাথে ধাক্কা খান না!!! উফফ!!! সে কি ফিলিংস
-আগের হেইডা মামা ঘটনা আছিল, এইবার ধাক্কা খাইলে আমগো ব্যাকের দুর্ঘটনা হইয়া যাইব, আমনেরা হুক শক্ত কইরা ধইরা বইয়া থাহেন (রিকশাওয়ালা মামা)
পিঠের মধ্যে আলতো করে আপন খালাতো ভাইদের মত ২-৩টা চড় বসিয়ে দিয়ে কোয়েল বলল, ‘’এত শখ কেন? হ্যাঁ? এত শখ কেন? আজি তোর আম্মার কাছে বলে দিব যে তোর বিয়ে দিতে’’
-সেটা হলে তো ভালই হয়,তোর কাছ থেকে রেহাই পাই
-আমি কি তোকে আটকিয়ে রেখেছি নাকি?
-না, তুই আটকিয়ে রাখবি কেন? আটকিয়ে রাখছে তো মন, নাহলে কি আর ১৭ বছর ধরে বন্ধুত্বের জাহাজে একসাথে পড়ে থাকি?
-ঠিক বলছিস রে, কত বছর পেরিয়ে গেলো, এখনো মনে রেখেছিস সম্পর্কের বয়সটা
-তোর মত নাকি? ঝগড়া করে মনে রাখব?
-আহহা!!! ষাঁড়ের মত চেঁচালি তো এতক্ষণ, একটু থাম না!!!
-আমি ষাঁড়? তুই তাহলে গাভী
ষাঁড় (সিয়াম) আর গাভী (কোয়েল) এর চেঁচামেচি, রেষারেষি, বন্ধুত্ব সবই চলছে আপন নিয়মে ১৭ বছর ধরে, সিয়ামের চোখে চশমার পাওয়ার, কোয়েলের ঠোঁটের লিপস্টিক কালার চেঞ্জ হলেও তাদের বন্ধুত্বটা কিন্তু এখনো থেমে যায় নি, চলছে সাগরের জোয়ারভাটার মত আর এই জোয়ারভাটার অন্তরালে থাকা আরও কিছু গল্প যাতে আপনাদের সামনে উপহার দিতে পারি সেই দোয়া করবেন আমার জন্য।
বিষয়: বিবিধ
১৪১২ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন