ভাষা আন্দোলন
লিখেছেন লিখেছেন প্রফেসর ফারহান ০৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০৫:৫০:০৪ বিকাল
'৫২ এর একুশে ফেব্রুয়ারি।দুপুর ২ টা। শেফালীর সাথে দেখা করার কথা ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রধান ফটকের এর সামনে। আজ তাকে গোলাপ দিয়ে বলব যে আমি তাকে কতটা ভালবাসি।কিন্তু এ কি এত ভিড় কেন রাস্তায়? বিক্ষোভ আর গণআন্দোলন, রঙ বেরঙের পোস্টার, ব্যানার। কারো কারো শরীরে রঙ লিখন, চারিদিক থেকে ছোট ছোট মিছিল একত্র হয়ে বড় বিক্ষোভ সমাবেশ এ রুপান্তর হয়েছে। সবার দাবি একটাই ''রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, এ আমাদের প্রাণের দাবি', রাস্তায় তিল ধারণের ঠাই নেই।আর কি!!! ঢাকা মেডিকেল কলেজের আশপাশ তো ভরাট। শেফালীকে চিঠিতে বলেছিলাম আমার পরনে সাদা শার্ট থাকবে নেভি ব্লু প্যান্ট এর সাথে ইন করা, মাথায় ডান পাশে সিঁতি থাকবে, বুক পকেটে থাকবে গোলাপ কলি। ঠিক এই অবস্থায় ভিড় ঠেলে মেডিকেল এর সদর দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। উফ!!! লোকজনের পিসাপিসিতে গোলাপকে কিভাবে বাঁচাব সেই দুশ্চিন্তায় তখন মগ্ন। কারণ আশেপাশের ভিড় ঠেলেই আমাকে যেতে হবে।আচ্ছা শেফালী কি পরে আসবে সেটা তো চিঠিতে জিজ্ঞেস করলাম না, তাহলে আমি কি অথর্ব? নয়তো কি!!! গোলাপের কলিটা অনেক কষ্টে বাড়িওয়ালার টব থেকে চুরি করেছি। এখন যদি শেফালীকেই চিনতে না পারি, তাহলে গোলাপের কি দাম থাকবে? আমার আকুতি ''উফফ!!! দেখি আমাকে একটু জায়গা দেন, আমি সামনের দিকে যাব''। পাশ থেকে ''সামনে কোথায় যাবেন? দেখেন না জনতার চাপে পুরো ময়দান ভরে উঠেছে।'' চারিদিকে চিৎকার, আর্তনাদে ছেয়ে গেছে পুরো মেডিকেল ক্যাম্পাস এর আশপাশ।তবুও আমাকে যেতে হবে সদর দরজার কাছাকাছি, আজ তাকে না বলতে পারলে আর কোনদিন বলতে পারব কিনা জানি না।গাড়ির সাইরেন আর হর্ন এর শব্দ পাচ্ছি। পাকিস্তানীদের কয়েকটা জীপ আর ট্যাঙ্ক বহর পশ্চিম দিক থেকে হুরমুড়িয়ে প্রবেশ করল আর আগে থেকে তো কিছু ছিলই প্রধান রাস্তায়। মুহূর্তের মধ্যে কি জানি হয়ে গেল, গোলাগুলি আর ব্রাশফায়ার।সবাই এদিক ওদিক তুমুল ছোটাছুটি করছে, কেওবা স্যান্ডেল,জুতা রাস্তায় ফেলে দৌড়।আমিও ছুটলাম অজানার দিকে। পেছন থেকে হটাত কোন মেয়ের কাঙ্খিত ডাক ''ফারহান, আমি এখানে।তুমি বলেছিলে না, সাদা শার্ট ইন নেভি ব্লু প্যান্ট আর ডান পাশে সিঁতি?'' আমি ঘুরে গেলাম সদর দরজার দিকে আর বললাম ''হ্যাঁ, তুমিই তো আমার শেফালী'', বলে দৌড় দিলাম তার দিকে। গোলাগুলি চলছে, দৌড় দিতে দিতে ভাবলাম আমি আমার কাঙ্ক্ষিত ভালবাসাকে পেয়ে গেছি আজ, সব বলে দিব আজ ওকে। ওমা, ও দেখি আমার দিকে দৌড়ে আসছে।দুইজন দুইজনের দিকে ছোটাছুটির ফাকে কি যেন হয়ে গেল!!! আমার ডান পিঠে একটা গুলি লাগলো আর আহত অবস্থায় শেফালীকে দেখলাম ওর মাথা থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আর কিছু মনে নেই। আজ ২০১৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, রাষ্ট্রভাষা বাংলা পেয়েছি কিন্তু আমার শেফালীকে পাইনি, পাইনি তার কোন খোঁজ। পিঠের ব্যাথাটা মাঝে মাঝে অব্যক্ত ভালবাসার পীড়া দেয়। বাংলা নিয়ে গর্ব করতে পারি, কিন্তু হারানো ভালবাসা নিয়ে গর্ব করতে পারিনা।তাই আজ আমি দাঁড়ি পাকা এক বৃদ্ধ সেইদিনের স্মৃতিচারণ করছি।
বিষয়: বিবিধ
৯৭২ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন