ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন এর আদ্যোপান্ত
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের সৈনিক ২ ০৮ নভেম্বর, ২০১৮, ১০:১৯:৫৪ সকাল
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ইভিএম নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ততই তর্ক-বিতর্ক বা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ইভিএম, যার অর্থ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন। ইলেকট্রনিক ভোটিং আধুনিক বিশ্বে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোট প্রয়োগ বা সংশ্লিষ্ট ভোটারদের মতামত প্রতিফলনের অন্যতম মাধ্যম। ভোট প্রয়োগে মেশিন বা ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার হয় বিধায় সামগ্রিক প্রক্রিয়াটি ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম নামে পরিচিত। এর অন্য নাম ই-ভোটিং।
এই পদ্ধতি যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৬০ সালে প্রথম চালু হলেও এর ব্যবহারের চিত্র প্রথমবারের মতো আমাদের চোখে পড়ে ১৯৬৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৭টি অঙ্গরাজ্যের নির্বাচনের মাধ্যমে।
বাংলাদেশে এর প্রথম ব্যবহার হয় ২০০৭ সালে ঢাকার অফিসার্স ক্লাবের কার্যকরী সংসদের নির্বাচনে। ছোট নির্বাচনে সফলতার পর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে এ প্রকল্প জমা দেন উদ্ভাবক, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) বিভাগের চেয়ারম্যান ড.এস এম লুৎফল কবির। প্রায় ২ বছর পর ২০০৯ সালের ৬ অক্টোবর ইভিএম নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ধারণাপত্র পেশ করে বুয়েট এর আইআইসিটি বিভাগ।
আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের নির্বাচন কমিশন ১৯৭৭ সালে প্রথম ইভিএম চালু করে। ১৯৮১ সালে প্রথম কয়েকটি রাজ্যে এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালু হয়। তবে ভারতের অনেক গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনী সংস্কারের মতো ইভিএম কার্যকর করা নিয়েও আদালতে রিট হয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৪ সালের মধ্যে মাদ্রাজ, কেরালা, দিল্লি, কর্ণাটক ও বোম্বে (নাগপুর বেঞ্চ) হাইকোর্টে রিট হয়েছে এবং তাতে তারা ইভিএমের পক্ষে রায় পেয়েছে। তিনটি সাধারণ নির্বাচন হওয়ার পরও ২০১৭ সালে উত্তরাখন্ড হাইকোর্টকে রায় দিতে হয়েছে। ২০১২ সালে দিল্লি হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন, এটা ‘টেম্পার প্রুফ’ (জালিয়াতি নিরোধক) নয়। তিনটি মৌলিক ধাপে ইভিএমের আধুনিকায়ন ঘটিয়ে ভারত এ পর্যন্ত এসেছে। ইভিএম বিষয়ে দলগুলোর মধ্যে সাধারণ ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৮ সালে। অথচ লোকসভার ৫৪৩ আসনেই ইভিএমে প্রথম নির্বাচনটি হয় ২০০৪ সালে। তার মানে সংসদ নির্বাচনে এটা চালু করার আগে ভারত পরীক্ষা করেছে ২৩ বছর। আর রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও ইসি সময় নিয়েছে পুরো ৬ বছর।
ইভিএম সম্পর্কিত সাধারণ তথ্যঃ
একটি ইভিএম-এ প্রায় চার হাজারটি পর্যন্ত ভোট দেয়া যায়। একটি ভোট দিতে আনুমানিক ১৪ সেকেন্ড সময় লাগে। মেশিনটিতে একটি পূর্ব-প্রোগ্রামিং করা মাইক্রোচিপ থাকে যা প্রতিটি ভোটের ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে হিসেব করে প্রদর্শন করে।
এতে ব্যালট কাগজে সিল মারার পরিবর্তে ভোটার পছন্দের প্রতীকের পাশের সুইচ টিপে ভোট দিতে পারেন। প্রতিটি বুথে একটি ইভিএমের প্রয়োজন পড়ে। এটি কয়েকটি ইউনিটে ভাগ করা থাকে। ইউনিটগুলো নিম্নরূপ-
১. ব্যালট ইউনিট: ব্যালট ইউনিটটি থাকে বুথের ভেতর। এর মাধ্যমে ভোটার তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। প্রতিটি ব্যালট ইউনিটে ১২ জন প্রার্থীর জন্য ব্যবস্থা থাকে। তবে কোন আসনে প্রার্থীর সংখ্যা ১২-এর বেশী হলে দুইটি কিংবা তিনটি, এমন কি পাঁচটি পর্যন্ত ব্যালট ইউনিট একের সাথে অন্যের সংযোগ দিয়ে সর্বমোট ৬০ জন পর্যন্ত প্রার্থীর ভোট নেয়া সম্ভব। প্রার্থীর সংখ্যা যদি ১২-এর কম হয়, তাহলে অপ্রয়োজনীয় সুইচগুলোকে অকার্যকর করে রাখা হয়। ধরা যাক কোন আসনে ৭ জন প্রার্থী আছেন। সেই ক্ষেত্রে ব্যালট ইউনিটের ১ থেকে ৭ নম্বর পর্যন্ত সুইচ কার্যকর থাকবে বাকী সুইচগুলো অকার্যকর করে রাখা হবে বিধায় কেউ ওগুলোর কোনটায় চাপ দিতেই পারবে না।
২. কন্ট্রোল ইউনিট: কন্ট্রোল ইউনিট থাকে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনের টেবিলে।
৩. ডিসপ্লে ইউনিট: ইভিএমের সঙ্গে একটি বড় ডিসপ্লে ইউনিট রাখা হয়েছে, যা এমন স্থানে রাখা হয় যাতে বুথের ভেতর ভোট সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টিগোচর হয়।
৪. ব্যাটারি ইউনিট: এই মেশিন চালাতে দরকার হয় ১২ ভোল্টের একটি ব্যাটারি। ব্যাটারিতে মেশিনটি সারাদিন চলতে পারে ফলে বাড়তি কোন বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না এবং যেখানে বিদ্যুৎ নেই সেখানেও ব্যবহার উপযোগী।
৫. স্মার্ট কার্ড ও মাস্টার কার্ড: একটি ভোটিং মেশিন পরিচালনা করার জন্য সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারকে একটি করে স্মার্ট কার্ডভিত্তিক আইডি কার্ড দেওয়া হয়, যে কার্ডটি ছাড়া কন্ট্রোল ইউনিট পরিচালনা করা সম্ভব হয় না। ইউনিটগুলো ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে থাকলেও তারের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে যুক্ত থাকে।
একটি নির্বাচন কেন্দ্রে দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের কাছে থাকে ইভিএমের কন্ট্রোল ইউনিট। এই ইউনিটের সম্মুখভাগে থাকে ডিজিটাল ডিসপ্লে। বিপরীত দিকে থাকে স্টার্ট সুইচ, ব্যালট নামক সুইচ, মেমোরী রিসেট সুইচ, ফাইনাল রেজাল্ট সুইচ এবং ক্লোজ বাটনসহ আরো কিছু সুইচ। ভোট শুরু করার জন্য স্টার্ট সুইচটি চাপতে হয়।
তারপর ব্যালট সুইচটি চেপে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ভোটারকে ভোট দিতে বুথে পাঠান। এই সুইচটি চাপলে বুথের মধ্যে থাকা ইভিএমের অপর অংশ ব্যালট ইউনিটটি একটি ভোট দেয়ার জন্য কার্যকর হয়। ভোট দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবার অকার্যকর হয়ে যায় ব্যালট ইউনিটটি।
যতক্ষণ না আবার কন্ট্রোল ইউনিটের ব্যালট সুইচ চাপা হচ্ছে। ভোটদান শেষে ভোটার বেরিয়ে গেলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার আবার ব্যালট সুইচ চেপে ব্যালট ইউনিটটি কার্যকর করেন। এভাবে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হলে ক্লোজ সুইচটি চাপলেই ভোটগ্রহণ কার্যক্রম পাকাপাকিভাবে বন্ধ হয়ে যাবে এবং ফাইনাল রেজাল্ট সুইচটি কার্যকর হবে।
এটি এক এক করে চেপে চললে ব্যালট ইউনিটে সাজানো ক্রমানুযায়ী একের পর এক প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা বেরিয়ে আসে। ইভিএমের অপর অংশ ব্যালট ইউনিটটি রাখা হয় বুথের ভেতর। ভোটার ঢুকে দেখবেন ব্যালট ইউনিটের নিচের দিকে একটি সবুজ বাতি জ্বলছে।
ব্যালট ইউনিটের ওপর প্রার্থীর নাম ও প্রতীক সাজানো থাকে। প্রত্যেক প্রতীকের পাশে থাকে একটি করে সুইচ। ভোটার তার পছন্দের প্রতীকটির পাশের সুইচটি চাপবেন। ভোটটি গৃহীত হলে ভোটার ব্যালট ইউনিটের নিচের দিকে থাকা লাল বাতিটি জ্বলতে দেখবেন।
অর্থাৎ ভোটটি গৃহীত হয়েছে। নতুন ভোটটি গৃহীত হলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসারের সামনে রাখা কন্ট্রোল ইউনিটের সামনের ডিসপ্লেতে একটি ভোট যোগ হবে। এরপর তিনি আবার অন্য কাউকে ভোটদানের অনুমতি দিয়ে বুথে পাঠালে ভোটার গিয়ে ব্যালট ইউনিটে সবুজ বাতি জ্বলতে দেখবেন। এভাবেই চলতে থাকবে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া।
দেশের বাইরে ইভিএমঃ
আইনগতভাবে আমেরিকা, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, কানাডা, ফ্রান্স, জাপান, কাজাখস্তান, পেরু, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ভেনিজুয়েলায় চালু রয়েছে ইভিএম প্রযুক্তির মাধ্যমে ভোট গ্রহণ পদ্ধতি। এছাড়া আর্জেন্টিনা, ইতালি, মেক্সিকো, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন ও দক্ষিণ আফ্রিকাসহ বেশকিছু দেশে এখনো এই ব্যবস্থা নিয়ে চলছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
আবার এটাও ঠিক যে বিভিন্ন কারণে পৃথিবীর প্রায় ৮৫ ভাগ দেশেই এই পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে। এর পেছনে মেশিন যতটা না দায়ী ছিল তার চেয়ে বেশি ছিল রাজনৈতিক ও অন্যান্য কিছু সমস্যা।
১৯৯০ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত নেদারল্যান্ডস ইভিএম ব্যবহার করে। পরে ডাচদের দেখাদেখি জার্মানি ও আয়ারল্যান্ডও ইভিএম চালু করেছিল। দুটি উচ্চপর্যায়ের কমিশনের সুপারিশে নেদাল্যান্ডস ইভিএম ত্যাগ করে। নেদারল্যান্ডস ইলেকট্রনিক ভোটিং ব্যবস্থা বাতিল করেছে কারচুপির কারণে নয়, বরং এই মেশিন টেম্পারিং করা যাবে না-এ ধরনের কোনো নিশ্চয়তা ছিল না বলে।
জার্মানরা ২০০৫ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত ইভিএম ব্যবহার করলেও সমালোচনার মুখে তা বন্ধ করে। আয়ারল্যান্ডও ২০০২-২০০৪ সালে ইভিএম ব্যবহারের পরে বিতর্কের মুখে দুটি কমিশন করে এবং তারাও দেখতে পায় যে, ইভিএম যন্ত্র বিশ্বস্ত নয়।
গণতন্ত্রের সূতিকাগার ইংল্যান্ডও ইভিএম ব্যবহারের সাহস করেনি। ২০০০ সাল থেকে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে কিছু পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে মাত্র। ২০১৬ সালে এক প্রশ্নের উত্তরে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে বলা হয়েছে,
সাংবিধানিক সংস্কারে আমাদের পূর্ণ কর্মসূচি চলমান রয়েছে, কিন্তু তার মধ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং চালু বা সে জন্য কোনো সংবিধিবদ্ধ আইন করার কোনো চিন্তাভাবনাও নেই।
ইভিএম এর সুবিধাঃ
ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে যেসব সুবিধার কথা বলা হয় তা নিম্নরূপ-
১। ইভিএম ব্যবহারের ফলে কোটি কোটি সংখ্যক ব্যালট ছাপানোর খরচ, কাগজের খরচ, এগুলো পরিবহনের খরচ, ভোট গণনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকবলের খরচ সবই সাশ্রয় হবে। নির্বাচন কমিশনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী একটি জাতীয় নির্বাচনে এক হাজার ৮৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। কিন্তু ইভিএম পদ্ধতিতে একটি জাতীয় নির্বাচনে খরচ হবে মাত্র নয়শ’ কোটি টাকা।
২। একটি মেশিন দিয়ে চার-পাঁচটি জাতীয় নির্বাচন করা সম্ভব। চাইলে এটা ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন বা উপ নির্বাচনেও কাজে লাগানো যাবে। সেক্ষেত্রে শুধু মেশিনটিতে নতুন করে প্রোগ্রাম প্রবেশ করাতে হবে।
৩। এই প্রক্রিয়ায় কোনো ভোটারের ভোট বাতিল হবে না। ভোটের তথ্য মেশিনে প্রায় ১০ বছর ধরে অবিকৃত অবস্থায় থাকবে।
৪। ১২ ভোল্টের ব্যাটারী চালিত বিধায় ইভিএম ব্যবহারকালে ইলেকট্রিক শক খাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
৫। প্রতিটি ইভিএম-এর সাথে একটি করে স্মার্ট কার্ড রয়েছে। এই কার্ডটি কন্ট্রোল ইউনিট এর নির্দিষ্ট স্থানে ঢুকিয়ে না রাখলে ইভিএমটি কাজ করবে না। অর্থাৎ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সরবরাহকৃত স্মার্ট কার্ড ছাড়া মেশিন কাজ করবে না। আর নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যক্তিদেরই স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করবে।
৬। কোন কেন্দ্র দখলের ঘটনা ঘটলে সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার কন্ট্রোল ইউনিটের ক্লোজ সুইচটি চেপে দিলেই দখলকারীরা কোনো ভোট দিতে পারবে না। তাছাড়া ইভিএমের স্মার্ট কার্ড সরিয়ে ফেললেও মেশিনটি চালু করা যাবে না।
৭। খুবই কম সময়ে ভোট গণনার কাজ সম্পন্ন হয়।
ইভিএম এর অসুবিধাঃ
আধুনিক প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়া হলেও ইভিএম নিয়ে রয়েছে অনেক অভিযোগ। ইভিএম-এর যে রকম সুবিধা রয়েছে সেরকম কিছু অসুবিধাও রয়েছে।যেমন-
১। কথায় আছে জোর যার মুল্লুক তার। অনেক ক্ষেত্রে প্রভাবশালীদের দ্বারা কেন্দ্র দখলের পর পোলিং এজেন্টদের নির্বাচনী কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার ঘটনা ঘটে। এক্ষেত্রে সর্বাধিক সংখ্যক ভোট শক্তির মালিক হবে প্রভাবশালীমহল।
২। বরাবরই শোনা যায় যে নির্বাচন কমিশনে দলীয় লোক ঢুকে পড়ে। এমনটা ঘটলে তাদের কেউ যদি প্রতি কেন্দ্রে অন্তত একটি করে মেশিনে এ প্রোগ্রাম করে দেন যে, নির্বাচন শেষে ক্লোজ বাটনে ক্লিক করলেই যেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্দিষ্ট কোনো প্রতীকে অতিরিক্ত ৩০০/৪০০ ভোট যুক্ত হবে তাহলে সহজেই নির্বাচনের ফলাফল উল্টে দেয়া সম্ভব।
৩। দুই নং প্রক্রিয়ায় মাইক্রোকন্ট্রোলারের প্রোগ্রাম পরিবর্তনের সুযোগ হলে কোন কেন্দ্রে সকল প্রার্থী একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক (১০০ বা ২০০ বা ৩০০) ভোট পাবার পর যে কোন ব্যালট বাটনে চাপলেই অতিরিক্ত ভোট দখলকারী প্রার্থীর প্রতীকে যুক্ত হবে, এমন প্রোগ্রামও লিখে ব্যালট ছিনতাই সম্ভব।
৪। যদি নির্বাচনী কর্মকর্তার স্মার্ট কার্ডের নকল কার্ড তৈরি করা হয় এবং তা যদি ইভিএমের প্রোগ্রামকে বিভ্রান্ত করে একবারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট কাস্ট করে দেয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন হয় তাহলে তা নির্বাচনের ফলাফলকে সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দিবে।
৫। গোপনে যে ইভিএম সরবরাহ করা হবে না এমন নিশ্চয়তা অন্তত বাংলাদেশে আশা করা যায় না। ইভিএমের প্রতিটি ইউনিট চালু অবস্থায় পৃথক করা যায়। প্রভাবশালীদের দ্বারা কেন্দ্র দখলের পর গোপনে সরবরাহকৃত অগ্রিম ভোট দেয়া ইভিএমের শুধুমাত্র কন্ট্রোল ইউনিট প্রতিস্থাপন করলেই চলবে। ফলাফল শতভাগ অনুকূলে।
৬। মাইক্রোকন্ট্রোলার চিপ নিয়ন্ত্রিত এই ইভিএমের প্রতিটি স্মার্টকার্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে আরএফআইডি (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন) ট্যাগ। অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতা পেলে কোন প্রার্থীর কর্মীরা রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে কয়েকশ মিটার দূর থেকেও কন্ট্রোল ইউনিট নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে।
৭। সোর্স কোড বা প্রোগ্রাম এমনভাবেও লেখা সম্ভব যে ভোট সম্পন্ন করার পর ভোটার দেখতে পারবে একরকম তথ্য, বাইরে রাখা ডিসপ্লেতে দেখাবে একরকম তথ্য কিন্তু কন্ট্রোল ইউনিটে ভোট জমা হবে ভিন্ন কোন পার্থীর বিপরীতে।
৮। বাংলাদেশের ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনটি ভারতের মেশিনগুলোর কাছাকাছি মানের। ২০১০ সালের ১২ আগস্ট 'ভারতের ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন জালিয়াতি প্রতিরোধক নয়' দাবি করে একদল মার্কিন আইটি বিশেষজ্ঞ বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন,
ভারতের ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন জালিয়াতি প্রতিরোধক নয় এবং দেশটির নির্বাচন কমিশনকে স্বচ্ছ ও নিরাপদ ভোট গ্রহণ ব্যবস্থার কথা চিন্তা করা উচিত।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বেন আডিডা, মাইক্রোসফট গবেষক ড. জোশ বেনালো ও পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ম্যাট ব্লেইজ। তারা বলেন,
ইভিএম তৈরির পর নতুন ধরনের নিরাপত্তা হামলার বিষয় জানা গেছে ও ইভিএমের নিরাপত্তার বিষয়টি পুরনো হয়ে গেছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইভিএমে সব রাজনৈতিক দলের, বিশেষ করে সরকারবিরোধী পক্ষের আস্থা নেই। এই আস্থাহীনতা আসলে মেশিনের ওপর নয়; বরং আস্থার সংকট দলে দলে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে। মেশিন যেমনই হোক, এর প্রয়োগ নির্ভর করে এর পেছনের ব্যক্তিটি কে, অর্থাৎ মেশিনটি কে চালাচ্ছেন তার ওপর। যে কারণে বলা হয় ‘ম্যান বিহাইন্ড দ্য মেশিন’।
তথ্যসূত্রঃ
১। দৈনিক যুগান্তর
২। দৈনিক প্রথম আলো
৩। দৈনিক প্রথম আলো
৪। The Electoral Knowledge Network
৫। The World Blaze
৬। Wikipedia
বিষয়: বিবিধ
৮২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন