পহেলা বৈশাখ সম্পর্কে দু'টি প্রশ্ন ও উত্তর
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের সৈনিক ২ ১৩ এপ্রিল, ২০১৪, ১২:৩৭:১৫ দুপুর
গতকাল লিখেছিলাম প্রসঙ্গঃ পহেলা বৈশাখ, ইসলাম কি বলে???
সময়ের অভাবে হয়ত অনেকেই উপরোক্ত লেখাটি পড়ার আগ্রহ দেখান নি। তাদের জন্য উপরোক্ত লেখার মধ্য থেকে সংক্ষিপ্তকারে দু'টি প্রশ্ন ও উত্তর লেখার চেষ্টা করেছি মাত্র।
প্রশ্ন-০১: পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ, বাঙালীদের সার্বজনীন উৎসব। পহেলা বৈশাখ পালন করা ইসলাম সমর্থন করে কিনা ?
উত্তরঃ মধ্যযুগে ইউরোপীয় দেশগুলোতে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালিত হত ২৫শে মার্চ, এবং তা পালনের উপলক্ষ ছিল এই যে, ঐ দিন খ্রীষ্টীয় মতবাদ অনুযায়ী মাতা মেরীর নিকট ঐশী বাণী প্রেরিত হয় এই মর্মে যে, মেরী ঈশ্বরের পুত্রের জন্ম দিতে যাচ্ছেন। পরবর্তীতে ১৫৮২ সালে গ্রেগরীয়ান ক্যালেন্ডারের সূচনার পর রোমক ক্যাথলিক দেশগুলো পয়লা জানুয়ারী নববর্ষ উদযাপন করা আরম্ভ করে।
ঐতিহ্যগতভাবে এই দিনটি একটি ধর্মীয় উৎসব হিসেবেই পালিত হত। ইহুদীদের নববর্ষ ‘রোশ হাশানাহ’ ওল্ড টেস্টামেন্টে বর্ণিত ইহুদীদের ধর্মীয় পবিত্র দিন সাবাত হিসেবে পালিত হয়। এমনিভাবে প্রায় সকল জাতির উৎসব-উপলক্ষের মাঝেই ধর্মীয় চিন্তা-ধারা খুঁজে পাওয়া যাবে। আর এজন্যই ইসলাম ধর্মে নবী মুহাম্মাদ (সা.) পরিষ্কারভাবে মুসলিমদের উৎসবকে নির্ধারণ করেছেন, ফলে অন্যদের উৎসব মুসলিমদের সংস্কৃতিতে প্রবেশের কোন সুযোগ নেই। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ঈদ রয়েছে, আর এটা আমাদের ঈদ।” [বুখারী, মুসলিম]
বিখ্যাত মুসলিম পণ্ডিতইমাম ইবনে তাইমিয়াএ সম্পর্কে বলেন:
“উৎসব-অনুষ্ঠান ধর্মীয় বিধান, সুস্পষ্ট পথনির্দেশ এবং ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানেরই একটি অংশ, যা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
‘তোমাদের প্রত্যেকের জন্যই আমি একটি নির্দিষ্ট বিধান এবং সুস্পষ্ট পথ নির্ধারণ করেছি।’ [আল-মায়িদাহ :৪৮]
প্রতিটি জাতির জন্য আমি ধর্মীয় উপলক্ষ নির্দিষ্ট করে দিয়েছি যা তাদেরকে পালন করতে হয়। [আল-হাজ্জ্ব:৬৭]
ইসলামের দৃষ্টিতে নওরোজ বা যে কোন ধরনের নববর্ষ পালন করা হারাম ও বিদ্য়াত। পহেলা বৈশাখ পালনের ইতিহাস ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এটা পালন মুসলমানদের কাজ নয়। ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী পহেলা বৈশাখ পালনের সংস্কৃতি হিন্দুদের থেকে এসেছে। তবে বাংলা সন বা পহেলা বৈশাখ বাঙালি দ্বারা প্রবর্তিত নয়। বাদশাহ আকবর ফসলী সন হিসেবে এর প্রবর্তন করে। আর বাদশাহ আকবর ছিল মঙ্গলীয় এবং ফারসী ভাষী। তাহলে এটা কি করে বাঙালি সংস্কৃতি হতে পারে?
যেহেতু এটি পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতি সেহেতু দেখা যাক পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতি উৎসব ইসলাম কতটুকু এবং কখন সমর্থন করে ?
যেই (পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতি) উৎসব ইসলামী শরিয়ত সমর্থিত সেটা পালন করা যাবে এবং যে সংস্কৃতি শরিয়ত বিরুধী তা পালন করা যাবেনা কারন ইসলামী শরিয়ত মানাটা বড় কথা সংস্কৃতি পালন করাটা নয়।
যেমনঃ আপনার পূর্বপুরুষরা প্রত্যেক বছর একবার গরীব দুঃখীদের খাওয়াতো, অথবা আপনার পূর্বপুরুষরা প্রত্যেক বছর গরীব দুঃখীদের লাভের কিছু অংশ দিয়ে দিত।
এগুলো আপনি করতে পারেন কারন এগুলো ইসলাম সমর্থিত।
প্রশ্ন-০২ পহেলা বৈশাখ কেন ইসলামী শরিয়ত সম্মত (পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতি) উৎসব নয় ?
উত্তরঃ উদ্দাম নৃত্য, যাত্রাপালা, শাঁখা-সিঁদুরের রংয়ে (সাদা ও লাল) পোশাক, বিয়ের মিথ্যা সাজে দম্পতি সাজিয়ে বর-কনের শোভাযাত্রা, অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা, দৃষ্টিকটূ আচরণ, মূর্তির (কুমির, পেঁচা, বাঘ ইত্যাদির মুখোশ) প্রদর্শনী, উল্কি আঁকা, মঙ্গল শোভাযাত্রা ইত্যাদি কি বাংলার আপামর জনতার সংস্কৃতি? এই ধার করা সংস্কৃতিচর্চা করতে গিয়ে শুধু ঢাবি ক্যাম্পাসে গত বছর সাংবাদিকসহ ১৬ জন তরুণী লাঞ্ছিত হয়েছে, যা পত্রিকায় (নয়া দিগন্ত, ১৬.৪.১১) প্রকাশিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। কারণ সব ঘটনা সংকলন সম্ভব নয় ।
এদিনে তারা (ছেলে মেয়ের বিবেধ ভুলে) নৈতিকতার সকল বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে অশ্লীল কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়, আর এই কর্মকান্ডের অবধারিত রূপ হচ্ছে মদ্যপান ও ব্যভিচার।
পহেলা বৈশাখ উদযাপনের নামে নারী পুরুষের সম্মিলিত নাচ-গান, রং ছিটানো, গান-বাজনা করে, র্যালী করে, জীব-জানোয়ারের মুখোশ পরে, মিছিল করে, শরীরের নানা অঙ্গ-প্রতঙ্গে উল্কি আঁকে, ডুগডুগি বাজিয়ে নেচে নেচে হৈহুল্লোড় করে,পুরুষরা ধুতি ও কোণাকাটা পাঞ্জাবী যা হিন্দুদের জাতীয় পোশাক তা পরে, মেয়েরা লাল পেড়ে সাদা শাড়িসহ হাতে রাখি বাঁধে, শাঁখা পরে, কপালে লাল টিপ ও চন্দন এবং সিথিতে সিঁদুর দেয়, বেপর্দা, বেহায়া হয়- যা ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম ও কুফরী।
যে সংস্কৃতির মধ্যে এতগুলো ইসলাম বিরুধী কর্মকান্ড,
সেই সংস্কৃতি পালন করা কখনো একজন মুসলমানের পক্ষে সম্ভব না।
হে আল্লাহ আপনি আমাদের এই রকম একটা গুনাহ ( পাপ) থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন।
আমিন............
বিষয়: বিবিধ
২৪৫১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন