রোহিঙ্গাঃ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত জনগোষ্ঠী

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের সৈনিক ২ ১১ এপ্রিল, ২০১৪, ০৬:৩২:১০ সন্ধ্যা



শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অংসান সুচির দেশে এখন অশান্তি বিরাজ করছে। আর এই অশান্তির পিছনে একছত্র হাত রয়েছে মিয়ানমারের শান্তিবাদী(!) বৌদ্ধদের। তারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর হামলাকে যৌক্তিক প্রমানিত করার জন্য ভুয়া দাবি তুলেছেন যে, এরা অর্ধেক বাংলাদেশী। এই অযৌক্তিক অজুহাতে বিগত কয়েক বছর ধরে তারা রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর হামলা করে এদের বাড়িঘর, দোকান-পাট, মসজিদ, মাদ্রাসা জ্বালিয়ে দিয়েছে। এছাড়া লুটপাট ও ধর্ষণের মত ঘটনাতো ঘটছেই। এরই মধ্যে জানুয়ারিতে কিছু রাখাইন কর্মকর্তা আট (৮) মহিলাকে অপহরণ, হত্যা, ও ধর্ষণ করলে রোহিঙ্গারা এর প্রতিবাদ জানায়।



এদের উপরও চলে নির্মম হত্যাযজ্ঞ। এভাবে রোহিঙ্গাদের উপর যখন আক্রমণ হয় তখন বার্মিজ পুলিশ ও সেনাবাহিনী দর্শক সাড়িতে ছিল অথবা তাদেরকে সহায়তা জুগিয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে ২০১২ সালেই শত শত রোহিঙ্গা হত্যা, দেড় লাখ রোহিঙ্গাকে করা হয় গৃহহীন। আর বিবিসি শিশুদের পুড়িয়ে মারার দৃশ্যও প্রকাশ করেছে। এই নির্যাতিত জনগোষ্ঠিকে জাতিসংঘ “The most persecuted people on the earth” (পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত জনগোষ্ঠি) হিসেবে আখ্যায়িত দিয়েছে। এই ‘রোহিঙ্গা নিধন আন্দোলন’এর কলকাঠি নাড়ছে বৌদ্ধদের চরম্পন্থী সংগঠন “969 movement of Buddism"।



এই সংগঠনের নের্তৃতে রয়েছেন উইরাথু নামের বৌদ্ধভিক্ষু। যিনি ২০০৩ সালে মুসলিম বিরোধী প্রচারণার দায়ে ৭ বছর জেলে ছিলেন। উইরাথু নের্তৃত্বাধীন সংগঠনের মূলমন্ত্র হলো "Buddists to fraternize only among themselves" অর্থাৎ ভাতৃত্ব সম্পর্ক শুধু তাদের মধ্যেই চলবে।তারা মনে করে তাদের ধর্ম বিলুপ্ত হচ্ছে। ইসলাম ইতিমধ্যে ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, আফগানিস্তান, চীনের উইঘুর দখল করে নিয়েছে। যা পুর্বে বৌদ্ধদের আবাসভূমি ছিল। তাদের আশংকা মিয়ানমারে মুসলিমদের সংখ্যা যে হারে বেড়ে যাচ্ছে তাতে এই দেশেও একদিন ইসলাম দখল করে নিবে। এরই আরেক সহযোগী সংগঠন Bodu Bala sena (BBS) যারা শ্রীলংকায় তৎপরতা চালাচ্ছে এবং ইসলামকে শ্রীলংকা থেকে বিতাড়িত করার ব্যর্থ অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আর এই সব অযৌক্তিক সংগঠনের চাপে মিয়ানমার সরকার মুসলিমদের বিরুদ্ধে দু’সন্তান নীতি চালু করেছে।

এখন রোহিঙ্গাদের উৎপত্তি নিয়ে কিছু কথা না বললেই নয়। রোহিঙ্গা শব্দটি রৌহিঙ্গা বা রোহিঙ্গিয়া শব্দ থেকে এসেছে। যা ইন্দো ইউরোপিয়ান ভাষা। আর এই ভাষার সাথে চট্রগ্রাম অঞ্চলের ভাষার রয়েছে অবিশ্বাস্য মিল এবং বাংলার সাথে কিছুটা। তবে রোহিঙ্গা ঐতিহাসিক খলিলুর রহমান বলেনঃ রোহিঙ্গা শব্দটি ‘রাহমা’ শব্দ থেকে এসেছে। ৮ম শতাব্দীতে আরব বণিকদের জাহাজ ‘রামরি দ্বীপ’ এ আসলে তৎকালীন আরাকানের রাজা তাদের আশ্রয় দেন। তার এই দয়াদ্রতার কারনে আরব বনিকাগন আরাকানের অধিবাসীদের ‘রাহমা’ বলে ডাকতেন। (যেহেতু রাহমা অর্থ দয়াবান)

এম চৌধুরীর মতে, ‘ রৌহাঙ্গ ‘ শব্দ থেকে রোহিঙ্গা শব্দটির আগমন। আর রৌহাঙ্গ ছিল আরাকানের পুরাতন রাজা।

বার্মিজ ঔতিহাসিক খিন মৌং বলেনঃ “ ১৯৫০ সালের পূর্বে রোহিঙ্গা শব্দটি অপরিচিত ছিল। তবে তারা এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা”।

ড. মৌং মং বলেনঃ “ রোহিঙ্গারা এখানকার স্থায়ী অধিবাসী এবং রৌক উং এর সাম্রাজ্যকাল থেকেই তারা এখানে স্থায়ী বাসিন্দা”। Arakan History expert Dr. Jacues P. Leider বলেনঃ ১৭৯৯ সালে বৃটিশ লেখক ফ্রান্সিস বুসানান হ্যামিলটনের প্রকাশিত বইয়ে উল্লেখ রয়েছে যে, ‘রোহিঙ্গারা এখানকার স্থায়ি বাসিন্দা”।

আরাকানী ইতিহাসের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যাবে যে, তৎকালীন মুসলিম প্রধান ভারত ও বৌদ্ধ প্রধান বার্মার ইতিহাসের মধ্যে চাপা পড়ে গেছে আরাকানের ইতিহাস। যদি ১৪৩০ সালে বাংলার মুসলিম সুলতান ৬০ হাজার সৈন্যের বাহিনী পাঠিয়ে বৌদ্ধ রাজা Narameikhtla কে আরাকানের সিংহাসনে না বসাতেন, তবে আরাকানের ইতিহাস ভিন্নভাবে লেখা হত। সেদিন ওয়ালি খানের নেতৃত্বে বাংলার সুলতান অভিযান প্রেরণ করে Narameikhtla কে সিংহাসনে পুনর্বহাল করেন। কিন্তু ওয়ালি খান সিংহাসন নিজের জন্য দাবী করে বসেন। পরবর্তিতে আবার জেনারেল সান্দি খানের নেতৃত্বে আরেকটি অভিযান প্রেরণ করে ওয়ালি খানকে সিংহাসনচ্যুত ও Narameikhtla কে সিংহাসনে পুনর্বহাল করা হয়।যদি বাংলার সুলতান ওয়ালি খানকে আরাকান শাসন করতে দিতেন তাহলে আরাকানের ইতিহাস কি দাড়াত? রোহিঙ্গাদের উপর এই চতুর্মুখী নির্যাতনের প্রতিবাদ সকল মুসলিম দেশ করলেও আমাদের দেশ ছিল দর্শক সাড়িতে।



যেখানে সিরিয়া শরনার্থীদেরকে তুরস্ক আশ্রয় দিয়েছে। ফিলিস্তিনের অসহায়দেরকে মিশরে আশ্রয় দিয়েছে, সেখানে আমাদের প্রতিবেশী দেশের মুসলিমদেরকে আশ্রয় দিতে এদেশের মুসলিম সরকার অমুসলিমদের মত আচরণ করছে। কিছু কিছু রোহিঙ্গা সাগরে ভেসে বাংলাদেশের সমুদ্র উপকুলে আশ্রয় নিলেও সরকার তাদেরকে পুশব্যক করেছে। আর আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিরা সংখ্যালঘুদের উপর চুলের আছড় লাগলেই তারা তিল থেকে তাল করে বসেন এবং সাম্প্রদায়িক বলে গলা ফাটিয়ে ফেঁলেন। রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের এমন খড়গ নামলেও তারা না দেখার ভাঁন করে ‘ভেজা বিড়াল’ এর মত মুখে কুলুপ এটে বসে আছেন। তাহলে কী বিরোধী শক্তি সর্বদা ষড়যন্ত্রের অট্রহাসি হেসেই যাবে, আর আমরা পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে সারা জীবন কেঁদেই যাব?????????

বি.দ্রঃ পরবর্তিতে "ইসলামের দৃষ্টিতে পহেলা বৈশাখ" নিয়ে আসছি.....

বিষয়: আন্তর্জাতিক

৩০৩৮ বার পঠিত, ১১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

206148
১১ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩৭
আঁধার কালো লিখেছেন : এটার বিরদ্ধে কিছু করার দরকা । ধন্যবাদ ।
206161
১১ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৫৪
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : খুব কষ্টলাগে যখন দেখি মুসলিমরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে অমুসলিমদের দেশে (কিছু কিছু মুসলিম দেশেও) Sad Sad হে আল্লাহ্ তুমি দুনিয়া'র সব মুসলমানদেরকে হেফাজত করো, রহম করো প্রভু। Praying Praying
১১ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৭
154940

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7238

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 917

"> রায়হান রহমান লিখেছেন : নবী মোহাম্মদ কাফের, মুসরিক, অমুসলিমদের কাছে যে তিনটি প্রস্তাব দিতেন :

১। হয় তোমরা ইসলাম ধর্ম গ্রহন কর,

২। আর তা না হলে জিজিয়া কর প্রদান কর।

৩। অন্যথায় যুদ্ধ মোকাবিলা কর।

রহিঙ্গাদের বেলাই একই প্রস্তাব দেয়া যেতে পারে।

বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহম কর, অথবা জিজিরা দাও, তা না হলে যুদ্ধ.......।
206164
১১ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০২
সূর্যের পাশে হারিকেন লিখেছেন : তথ্যবহুল পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
Rose Rose Good Luck Good Luck Rose Rose

৫ নং লাইনে কয়েক বছর ধরে তারা রাখাইন মুসলিমদের উপর হামলা করে >> এখানে মনেহয় "রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর" কিংবা "আরাকানের মুসলিমদের উপর" হবে। "রাখাইন" মানেতো "বুড্ডিস্ট" যাদের আসল নাম ছিলো "মগ"।
১২ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ১০:৫৮
155068
সত্যের সৈনিক ২ লিখেছেন : ভুল ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ @সুর্যের পাশে হারিকেন
206167
১১ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:০৬

A PHP Error was encountered

Severity: Notice

Message: Undefined offset: 7238

Filename: views/blogdetailpage.php

Line Number: 764

"> রায়হান রহমান লিখেছেন : নবী মোহাম্মদ কাফের, মুসরিক, অমুসলিমদের কাছে যে তিনটি প্রস্তাব দিতেন :

১। হয় তোমরা ইসলাম ধর্ম গ্রহন কর,

২। আর তা না হলে জিজিয়া কর প্রদান কর।

৩। অন্যথায় যুদ্ধ মোকাবিলা কর।

রহিঙ্গাদের বেলাই একই প্রস্তাব দেয়া যেতে পারে।

বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহম কর, অথবা জিজিরা দাও, তা না হলে যুদ্ধ.......।
206194
১১ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:৫০
সিকদারর লিখেছেন : আস্-সালামু-আলাইকুম ওয়া রহমতুল্লাহ। ঘুরে এলাম মায়ানমার।
আমার এই লেখাটি পড়ে দেখতে পারেন । এখানে রোহিংগাদের ব্যাপারে কিছু লেখা আছে।
206202
১১ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:৪৪
আবদুল্লাহ বাংলাদেশী লিখেছেন : আরাকানকে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। এটাই একমাত্র সম্মানজনক সমাধান।
206486
১২ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৪
প্যারিস থেকে আমি লিখেছেন : মুসলমানদের কোন মানবাধিকার থাকতে নেই।
206786
১৩ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০১:৫১
প্রবাসী মজুমদার লিখেছেন : মরে গেছে সব প্রতিবাদী ভাই
বেচে থাকা সবাই কাপুরুষ,
চেতনায় সেজেছে মুশীরক ওরা
দরগাহে বন্দী ইমানের জোস।

কিছু বলার নেই। প্রহসনের বিচারালয়ে আজ নষ্টারা বিচারক। আমরা ইমানী চেতনায় আপন স্বার্থের কাছে বন্দী।
206827
১৩ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৮:৪১
সায়েম খান লিখেছেন : দিনের পর দিন মুসলমানরা এভাবে নির্যাতিত হবার প্রধান কারণ, মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য নেই।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File