ঈদুল ফিতর প্রসঙ্গ: শায়েখ আহমাদুল ইসলাম

লিখেছেন লিখেছেন সত্য কন্ঠ ২৭ জুলাই, ২০১৪, ০৯:৫৯:৩২ রাত

ইসলাম একটি পরিপূর্ন জীবন বিধানের নাম । তাই মানব জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বিনোদনকে ইসলাম শুধু বৈধতাই দেয়নি বরং উৎসাহিত করেছে । মুসলমানদের আনন্দ উৎসবের অন্যতম উৎসব ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা ও জু’মার দিন (প্রতি শুক্রবার) সহ অন্যান্য ধর্মীয় ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কে ইসলাম বিনোদনের জন্য বিশিষ্ট করে দিয়েছে ।

তবে ইসলামী বিনোদনের আছে নিজস্ব স্বকীয়তা, বৈশিষ্ট্য এবং বিধি-বিধান । সুতরাং ইসলামী বিনোদন উপভোগ করতে এর বিধি-বিধান জানা আমাদের জন্য জরুরী । ইসলামের প্রতিটি উৎসবই আসে কোন না কোন ইবাদতের পর।

যেমন: হজ্জের পর আসে ঈদুল আযহা আর রামাদ্বানরে সিয়াম সাধনার পর আসে ঈদুল ফিতর । তাই আসুন জেনে নেই এ সক্রান্ত কিছু বিধি-বিধান।

ইসলামে বিনোদনের উদ্দেশ্য:-

মানুষের জীবনে আছে শ্রম, দু:খ, কষ্ট ও বেদনা। মানুষের শারিরিক ও মানসিক উৎকর্ষ সাধনরে মাধ্যমে শরীর ও মনকে সতেজ রাখতে ইসলামে রয়েছে বিনোদনের সুব্যবস্থা । তাই তো আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খন্দক যুদ্ধে

খন্দক খননের সময় সাহাবাদের কে উৎসাহিত করতে ছন্দাকারে দোয়া করে বলেছিলেন: আল্লাহুম্মা লা’আইশা ইল্লা আইশাল আখিরাহ, ফা’গফিরলিল আনসারা ওয়াল মুহাজিরা” যা তাদেরকে শারিরীক ও মানষিক শক্তি

যুগিয়েছিল। তবে জেনে রাখতে হবে, বিনোদনই মানুষের জীবনের আসল উদ্দেশ্য নয় ।

ঈদুর ফিতর যেভাবে উদযাপন করতে হয় :-

নামাজ : ইসলামের বিনোদন গুলো ইবাদত নির্ভর তাই প্রতিটা খুশীর মুহুর্তে ইসলাম কিছু ইবাদতকে বিধিবদ্ধ করেছে । যেমন:কোন বিজয় সাধিত হলে পরে ইসলামে আছে আল্লাহর প্রশংসা করা এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার বিধান । এজন্য মক্কা বিজয়ের পর আল্লাহ পাক তাঁর রাসূলকে তাসবীহ,

তাহমীদ এবং ইস্তিগফারের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার বর্ণনা পবিত্র কোরআনের সুরা আল-নাসর এ পাওয়া যায়। সেই মোতাবেক ঈদুল ফিতরে ২ রাকাত নামাজকে বিধিবদ্ধ করা হয়েছে ।

নামাজের পদ্ধতি : বিভিন্ন হাদীসে নামাজের পদ্ধতির বিভিন্ন বর্ণনা আসাতে ইমামগণ এর পদ্ধতি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত পোষন করেছেন । তবে সব ক’টি পদ্ধতি হাদীস মোতাবেক হওয়াতে যে কোন এক পদ্ধতির ইমামের পিছনে নামাজ

পড়লে আদায় হয়ে যাবে বলে আলেমগণ ফতোয়া দিয়েছেন । এতে মুক্তাদি যেকোন মাযহাবেরই হোন না কেন তাতে নামাজের কোন ক্ষতি হবে না ।

নিম্নে কয়েকটি মত তুলে ধরা হল:-

প্রথম পদ্ধতি : ওয়াজিব নিয়তে ২রাকাত জামাতের সহিত । এটি ইমামের পিছনে ফজরের ২ রাকাত ফরজ

নামাজের মত। তবে প্রথম রাকাতে ছানা পড়ার পর অতিরিক্ত ৩টি এবং ২য় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার আগে অতিরিক্ত আরো ৩টি করে মোট ৬টি তাকবীর বলা ওয়াজিব । এটি হানাফী মাজহাবের লোকেরা অনুসরন করে থাকেন ।

২য় পদ্ধতি : সুন্নতে মুয়াক্বাদা নিয়তে ২ রাকাত । এটি ও প্রথম পদ্ধতির মত, তবে প্রথম রাকাতে ছানা পড়ার পর ৭টি এবং ২য় রাকাতে দাড়িয়ে সুরা-ক্বেরাতের আগে আরো ৫টি করে মোট ১২টি তাকবীর বলতে হবে । এটি শাফেয়ী মাজহাবের লোকেরা অনুসরন করে থাকেন ।

৩য় পদ্ধতি : ফরজে কিফায়াহ নিয়তে ২ রাকাত । এটি ২য় পদ্ধতির মতই তবে প্রথম রাকাতের পর ৭ টির পরির্বতে ৬ টি তাকবীর বলতে হয় ।এটি আহমাদ ইবনে হাম্বালের মাজহাবের লোকেরা অনুসরন করে থাকেন ।

উৎস: আল ফিক্বহু আলাল মাযাহিবিল আরবাআহ- (আব্দুর রহমান আল জাযিরী)

ইদুল ফিতরের সুন্নাত এবং মুস্তাহাব সমুহ :-

(ক) গোসল করা ।

(খ) সুগন্ধি লাগানো

(গ) সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন পোষাক পরা।

(ঘ) ঈদের নামাজে যাওয়ার আগে কিছু খেয়ে যাওয়া, তবে বেজোড় সংখ্যায় খেজুর খেয়ে যাওয়া আরেকটি সুন্নাত।

(ঙ) বাচ্ছা ও মহিলাদের ঈদের ময়দানে নিয়ে যাওয়া । এমনি কি হায়েজ-নেফাসদারী মহিলাগণও দোয়াতে শরীক হওয়ার জন্য ঈদের ময়দানে যাওয়া সুন্নাত ।

(চ) ঈদের মাঠে পায়ে হেটে এক রাস্তায় দিয়ে যাওয়া এবং অন্য রাস্তা দিয়ে আসা।

(ছ) বেশী করে দান সাদাকা করা ।

(জ) মানুষের সাথে হাসি মুখে মিলিত হওয়া।

(ঞ) ঈদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা যেমন: সাহাবারা একে অন্য কে বলতেন

“তাকাব্বাল মিননা ওয়া মিনকা” অর্থাৎ আল্লাহ আমাদের এবং তোমাদের নেক আমল কবুর করুন ।


(ট) ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হওয়া থেকে খুৎবা শুরু হওয়া পর্যন্ত উচ্চস্বরে বেশী বেশী তাকবীর বলা । যেমন: বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) ঈদের দিনে আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ বলে তাকবীর দিতেন । এবং বিশিষ্ট সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) এর তাকবীর ছিলো : আল্লাহু আকবার,আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ, আল্লাহু আকবার, ওয়া আজাল, আল্লাহু আকবার আলা মা’ হাদানা ।

ঈদের দিনে খেলা-ধুলা :-

ঈদের দিনে, মানুষের শরীর ও মনকে ভাল রাখে এবং প্রশিক্ষনমূলক এমন সব বৈধ খেলা-ধুলাকে ইসলাম অনুমোধন দিয়েছে ।

যেমন: বোখারী ও মুসলিমের বর্ণনায় পাওয়া যায় । মা আয়েশা

সিদ্দিকা (রা) বলেন: ঈদের দিন হাবশার লোকেরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট খেলা-ধুলা করতো আর আমি তাঁর গলের নিচ দিয়ে উক্ত খেলা দেখতাম । তখন তিনি তাঁর কাধকে আমার জন্য নিচু করে দিতেন এবং আমি তাদের খেলা দেখে পরিতৃপ্ত হয়ে ঘরে ফিরতাম । এই হাদীস থেকে ঈদের দিনে খেলা-ধুলার মাধ্যমে ঈদ উদযাপনের প্রমাণ পাওয়া যায় ।

মা আয়েশা সিদ্দিকা (রা) থেকে বোখারী শরীফে আরো বর্ণিত আছে যে, ঈদের দিনে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার ঘরে প্রবেশ করলেন তখন আমার নিকট দুইটি বালিকা বো’আছের গান গাইতে ছিল ।আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিছানায় শুয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন । এ সময় আবু বকর (রাHappyআমার ঘরে প্রবেশ করে আমাকে ধমক দিয়ে বললেন: শয়তানের বাঁশি আল্লাহর নবীর ঘরে ? তখন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু বকর (রাHappy এর দিকে ফিরে বললেন: তাদের কে গান গাইতে দাও…. এখান থেকে শালিন গানের মাধ্যমে ঈদের দিনে খুশি প্রকাশের বৈধতা পাওয়া য়ায় ।তবে আজকের দিনে নারী-পুরুষেরা মিলে যেসব গান-বাজনা,খেলা-ধুলা,ঈদ

পূণর্মিলনী অনুষ্ঠান এবং লেমোজিন ভাড়া করে লং ড্রাইভের

আয়োজন করা হয়ে থাকে, তার সাথে ইসলামের আদৌ কোন সম্পর্ক নেই ।বিশেষ করে অমুসলিম দেশে যারা এসব কৃতকর্মের মাধ্যমে ইসলামকে ভুলভাবে উপস্থাপন করতেছে, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দ্বিগুন শাস্তি রয়েছে বলে আলেমগণ মত পোষন করে থাকেন ।কারণ তারা তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব ইসলাম প্রচার না করে উল্ঠো তা ভুলভাবে উপস্থাপন করতেছে। মনে রাখা প্রয়োজন, এই নফল খুশি পালন করতে গিয়ে কারো স্বীকৃত অধিকার শান্তি-শৃংখলাকে নষ্ট করা যাবে না।

তাই আসুন, আমরা ঈদুল ফিতরের আনন্দের মাধ্যমে ইসলামি সংস্কৃতির সৌন্দর্য্য ও মর্যাদা রক্ষায় সচেতন হই ।

বিষয়: বিবিধ

১৪৮৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

248880
২৭ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:৩৩
গ্রামের পথে পথে লিখেছেন : ইসমালের বিনোদন?
২৭ জুলাই ২০১৪ রাত ১০:৩৬
193402
সত্য কন্ঠ লিখেছেন : আউজুবিল্লা হিমিনাসশাই তোয়ানির রোয়াজিম।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File