মিডিয়ার পোষ্টমর্টেম

লিখেছেন লিখেছেন সত্য কন্ঠ ৩০ এপ্রিল, ২০১৪, ০৪:১৪:১৭ রাত

Click this link

মিডিয়ার পোষ্টমর্টেম



সংবাদপত্রকে একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। সংবাদপত্রের নেপথ্য কারিগর সাংবাদিকরা। তারা অনেক পরিশ্রম করে প্রতিদিন আমাদের সামনে অজানা খবরগুলো নিয়ে আসেন। দেশের উন্নতি, অগ্রগতি এবং আমাদের এগিয়ে যাওয়ার পেছনে প্রন্টমিডিয়া ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়ার ভূমিকা অনস্বীকার্য। আমাদের সমাজে কিছু ভালো গণমাধ্যম ও সৎ পেশাদার সাংবাদিক না থাকলে আমারা এত দূর আসতে পারতাম না। সংবাদপত্র আমাদের জাতীয় দর্পণ। যে গণমাধ্যম আমাদের এগিয়েও দিতে পারে আবার ধ্বংসের অতল গহবরেও নিমজ্জিত ও করতে পাওে সংবাদপত্র। তাই দেখা যায় ‘নিউইর্য়ক জার্নালের প্রকাশক র‌্যাডলফ হাস্ট বিকৃত সংবাদ পরিবেশন করে আমেরিকা ও স্পেনের মধ্যে যুদ্ধ বাধিয়ে দিয়েছিলেন।

এক শ্রেণীর প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিকস মিডিয়া অতিমাত্রায় রাজনীতিকরণ তোষামোদ,চাটুকারিতা, মিথ্যাচার ও সিন্ডিকেট নিউজে জড়িয়ে পড়েছে। এটি ঐ সাংবাদিক ও মিডিয়ার জন্য যতটুকু না ক্ষতিকর,তার থেকে ভয়াবহ ক্ষতিকর আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য, যারা অসত্য ও বিকৃত খবর ধারণ করে বেড়ে উঠছে। যেখানে গনমাধ্যম আমাদের নাগরিকদের নতুন নতুন পথ দেখাবে। আবিষ্কার করবে জাতীয় ঐক্যও মূল্যবোধের পথ। তারাই যদি আমাদের অসত্য বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে খবর পরিবেশন করে বিপথগামী করে, আমাদের হিংসা-বিদ্বেষ বিভক্তি কে উস্কিয়ে দেয়! তাহলে তো আমাদের দাঁড়ানোর শেষ জায়গাটুকুও অবশিষ্ট থাকে কি?

প্রখ্যাত সাংবাদিক জুলিয়াস হ্যারিস ও স্ট্যানলি জনসন বলেছেন, ”সংবাদ হচ্ছে সব চলতি ঘটনার সংমিশ্রণ, যে বিষয়টিতে সাধারণ মানুষের কৌতূহল আছে এবং পাঠককে আগ্রহী করে তোলে তাই সংবাদ”। কিন্তু আজ কতিপয় সংবাদপত্র পাঠককে কৌতূহলী ও আগ্রহী করতে অতিরঞ্জিত ও অসত্য এবং আজগুবি খবরের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। পত্রিকার সার্কুলেশন আর হট নিউজ যেন মূল উদ্দেশ্য।আমাদের অনেক মিডিয়ার মালিকই শিল্পপতি ও দুনীতির অভিযোগে অভিযুক্ত। মিডিয়ার মালিকদেও রয়েছে রাজনৈতিক আনুগত্য। এই সমস্ত ব্যাক্তিরাই সাংবাদিকদের পেশাদারিত্বের উপর আঘাত হেনে কর্মচারীর মত নির্দেশ দিয়ে সংবাদ তৈরীতে বাধ্য করে। কিন্তু সাংবাদিকতা পেশা যদি ব্যবসায়ী চিন্তার ঊর্ধ্বে না উঠতে পারে তাহলে জাতি হিসেবে আমাদের কপালে অধঃপতন ছাড়া কিছু আশা করা যায় কি?। আজকাল কতিপয় গনমাধ্যম রাজনীতিবিদদের থেকে কয়েক কদম এগিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে । এখনতো আমাদের দেশের ছোট একটি শিশুও জানে কোন পত্রিকা ও চ্যানেল কোন মতাদর্শে বিশ্বাসী। আমাদের শাহবাগীরা! সেই কাজটি করে দিয়েছে। আমাদেও জাতি বিভক্তির এই সর্বনাশা কাজের খেসারত দিতে হবে অনেকদিন ধরে।

প্রচারমাধ্যমের ‘সত্যানুসন্ধানী’ ভাবমূর্তির অবসান ঘটিয়েছে এডওয়ার্ড এস. হারম্যান ও নোম চমস্কি রচিত ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট: পলিটিক্যাল ইকনমি অভ দি মাস মিডিয়া গ্রন্থটিতে সংবাদ মাধ্যমে যে ছাঁকন-প্রণালীর মধ্য দিয়ে পরিশোধিত হয়ে পাঠক-দর্শক-শ্রোতা সংবাদ প্রাপ্ত হন, তার প্রকৃতি উন্মোচন করেছেন লেখকদ্বয়। এই গ্রন্থে তারা সংবাদ প্রবাহের তাত্ত্বিক রূপরেখা হাজির করেছেন। মূলধারার প্রভাবশালী গণমাধ্যম কর্তৃক প্রচারিত সংবাদ কিভাবে জনমতকে শাসকগোষ্ঠীর রাজনৈতিক স্বার্থের গন্ডিতেই বেঁধে রাখার তৎপরতায় নিয়োজিত তা উদঘাটন করেছেন এভাবে: প্রচারণা ব্যবস্থার -মূল্যবান ও মূল্যহীন বলিদের বেলায় ট্রিটমেন্টের গুণগত মানের ক্ষেত্রেও সাংবাদ পত্রের সুস্পষ্ট ৩ টি পার্থক্য- প্রথম রির্পোটে মিডিয়া একজনের জীবনকে কিভাবে মূল্যবান, মানবিক ও আবেগময়ী করে তুলে আর দ্বিতীয় রির্পোটে মিডিয়া ৭২জনের জীবনকে কিভাবে মূল্যহীন, বলি ও তুচ্ছজ্ঞান করে তুলেছে। ঠিক তৃতীয় রিপোটে কিভাবে সত্যকে আড়ালের প্রচেষ্ঠা চালানো হয়েছে। এবার দেখুন সেই চিত্র-

(এক) হিজোর্জি পপিলাজকো একজন সক্রিয় যাজক ছিলেন এবং পোল্যান্ডে সলিডারিটি মুভমেন্টের কড়া সমর্থক ছিলেন। হত্যা করার জন্য পোল্যান্ডের গুপ্ত পুলিশ ১৯৮৪ সালের ১৯শে অক্টোবর তাকে অপহরণ করে। তাকে বেঁধে প্রহার করা হয়, মুখের মধ্যে গোঁজ ভরে দেওয়া হয় এবং অবশেষে তাকে একটা জলাধারে ফেলে দেওয়া হয়। কয়েকদিন পর তার মৃতদেহ পাওয়া যায়। চারিদিকে হৈচৈ পড়ে যায়, যেসব পুলিশ সরাসরি এই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত ছিল তাদের চিহ্নিত করে বিচারকার্য সম্পন্ন হয় এবং দোষীদেকে কঠোর কারাবাসের শাস্তি দেওয়া হয়।

আমরা দেখেছি, পপিলাজকোর বেলায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে পরিমাণ গুরুত্ব দেওয়া হয় তা ছিল এককথায় ব্যাপক। সুপরিকল্পিতভাবে এই কাভারেজ দেওয়া হয়েছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে, এবং মূল্যহীন বলিদের কাভারেজের তুলনায় পপিলাজকোর কাভারেজ ছিল ব্যাপক বৈসাদৃশ্যপূর্ণ। মোটকথা, এই সহিংসতার ঘটনা এবং পপিলাজকোর ওপর এর প্রভাব এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যাতে পাঠকের মনে সর্বোচ্চমাত্রায় বিক্ষোভ জেগে ওঠে। কিন্তু কথা হলো, মূল্যহীন বলিদের বেলাও সহিংসতা ছিল নির্মম। সেগুলো উপস্থাপন করা হয়েছিল খুবই অন্যরকমভাবে।

পপিলাজকো হত্যাকান্ডের ওপর প্রকাশিত আর্টিকেলের একটা বড় অংশের মধ্যে বিক্ষোভকারী,শোকপ্রকাশকারী, ক্রন্দনরত জনগণ, কর্ম-বিরতি, পপিলাজকোর সম্মানে আয়োজিত সমাবেশ এবং বিশেষত, বেসরকারি ব্যক্তিদের স্বক্ষোভ উক্তির প্রতি নিয়মিত সহানুভূতিশীল কাভারেজ দেওয়া হয়। জনগণের ‘শোকাচ্ছ্বাস অব্যাহত,’ ‘গণবিক্ষোভ চুড়ান্ত রুপ নিয়েছে,’ পোপ গভীর শোকাচ্ছন্ন, এমনকি ‘জেরুজালেস্কি এই সহিংসতার প্রতি তীব্র ঘৃণা প্রকাশ করেছেন’- প্রতিনিয়ত এমন লেখা হতে থাকে। নিউ ইয়র্ক টাইমস পপিলাজকোর ওপর তিনটি সম্পাদকীয় নিবন্ধ ছাপে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে দায়ী করার ওপর জোর দেওয়া হয় এবং প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করা হয় যে, ‘পুলিশের এই অপকর্মের জন্য মূলত পুলিশি রাষ্ট্রব্যবস্থাই দায়ী’।

(২) টেবিলে আমরা দেখেছি, পেনি লার্নাক্্র যে -৭২ জন মানুষের মারা যাওয়ার খবর নাম উল্লেখ করে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর ৮টি আর্টিকেল ও নিউজউইক-এর একটা আর্টিকেলে এবং টাইম-এর কোনো আর্টিকেলে তাদেরকে বিষয়বস্তু করা হয়নি। সিবিএস-নিউজ-এ কোনো রিপোর্টেও তাদের নামোল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ, ৬৩টি হত্যাকান্ডের খবর বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছে এসব গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়ায়। নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর ৮টি আর্টিকেলের একটাতেও এমন কোনো খুঁটিনাটি বর্ণনা নেই যাতে পাঠকের মনে সহানুভূতিশীল উদ্বেগ জেগে উঠতে পারে। তারা এই হত্যাকান্ডগুলোকে বর্ণনা করে সুদূর অঞ্ঝলের বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে।এই সংবাদ না বিস্তারিত না আবেগময়ী, না মানবিকবোধ কে জাগ্রত করে। না বিচারের ব্যাপাওে ক্ষিপ্রতা জোগায়।

(৩) বাংলাদেশের কতিপয় মিডিয়ায় ২ শতাধিক মানুষের মৃত্যু কোন আবেগ,আবেদন তৈরী করতে পারেনি। অথচ বাংলাদেশের প্রায় সব পত্রিকা শহবাগ নিয়ে টানা দুই সপ্তাহ ব্যানার হেডিং করেছে। এরমধ্যে একটি পত্রিকা মোমবাতি প্রজ্জ্বলনকে পোস্টার করে প্রথম পাতায় ছেপেছে। ঐ প্রথম আলো পত্রিকাটিতে ২৮ ফেব্রুয়ারিতে দেশের বিভিন্ন যায়গায় যে হত্যাকান্ড ঘটেছে তার ফলোআপ দিনের সংবাদটি একবারে নিচে দিয়েছে । অথচ এদিন প্রথম আলো প্রথম পাতার মাঝামাঝিতে তিন কলামে শিরোণাম করেছে, ‘২০ হাজার গাছ নিধন করেছে জামায়াত-শিবির’। ‘প্রকৃতির প্রতি সহিংসতার এক নিকৃষ্ট নজির’। দুই কলামে এ সংবাদের শিরোনাম, ‘বিশ্বনাথে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত শিবিরের সংঘর্ষ, নিহত ১’। দুটো সংবাদে লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে বড় ধরনের একটি ম্যাসাকারে মানুষের ক্ষয়ক্ষতির খবর না দিয়ে পত্রিকাটি গাছ কেটে ফেলার সংবাদ দিয়েছে। পত্রিকাটি দেড়শ মানুষ হত্যা নিয়ে ফলোআপ করেনি। এছাড়া হাজার হাজার গুলিবিদ্ধ মানুষ নিয়েও কোন স্টোরি করেনি। সহিংসতার সময় রাস্তায় উপড়ানো, গাছ উপড়ানো আর সংখ্যালঘুদের উপাসনালয়ের হামলা নিয়ে টানা সংবাদ করে গেছে। এদের কাছে মানুষের জীবনের চেয়ে গাছের মূল্য বেশী, যদি তা আমার আদর্শিক শত্রƒর হয়। এরাই আমাদের কে বদলে যাওয়ার কথা বলে নসিহত দেয় অনবরত। কিন্তু এরা নিজেকে বদলাতে পারেনি!! ঐ পত্রিকাটি ২৬ মার্চ শিবিরের বিজয় দিবসের র‌্যালির নিউজ করেছে এভাবে ”প্রত্যক্ষদশীদেও মতে ২৬ তারিখ নয়টার দিকে শিবির ৩০/৪০ জনের একটি র‌্যালি বের করলে..... ইত্যাদি। অথচ সকল মিডিয়া প্রচার করেছে ২/৩ হাজার লোকের র‌্যালি। মজার ব্যাপার হচ্ছে শিবির ঐ পত্রিকার নিউজটি আর তাদের র‌্যালির হাজার হাজার লোকের র‌্যালির ছবি একসাথ কওে পেজবুক সহ সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়ে, নিচে লিখেছে এটাই হলো প্রথম আলোর ৩০/৪০ জনের র‌্যালি। দেশে যতগুলো খুনের ঘটানা ঘটেছে। এসব খুনের পরপরই প্রায় প্রত্যেকটি সংবাদমাধ্যম জামায়াত-শিবিরকে তাৎক্ষণিক দায়ী করেছে। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পরই এ বিষয়টি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এতে জামায়াতিদের যত না ক্ষতি হয়েছে তার চেয়ে পত্রিকাগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতায় ধস নামছে। আবার যারা নিরপেক্ষর সত্য খবর যারা দিতে চাইছেন তারা হয়ে যাচ্ছেন কট্টর ধর্মবাদি বা মৌলবাদি গোষ্ঠী।

বিশিষ্ট সাংবাদিক জনাব শওকত মাহমুদ:- এ কেমন মিডিয়া? শিরোনমে লিখেছেন-” ‘নয়া দিগন্ত’ পত্রিকার অফিস ও প্রেসে আগুন দেয়া হলো। কোনো সাড়া-শব্দ নেই। আজ এসব কুলীন মিডিয়া সাংবাদিকদের মধ্যে অভিজাত ও নিম্নবর্গ এই শ্রেণী সৃষ্টি করতে চায়। অভিজাত সাংবাদিকদের এক ফোঁটা রক্ত সাধারণ সাংবাদিকের মৃত্যুর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। শাহবাগীরা কী জিঘাংসাই না ছড়িয়ে দিয়েছে!

প্রতিদিন কোনো না কোনো আলেম গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছেন। তাদের দোষ কোথায়? ইসলামকে রক্ষার জন্য তারা রাস্তায় নামছেন, যে দেশের সংবিধানে ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম। পুরো বাংলাদেশ এখন আলেমদের রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে। তাদেরকে শেখ হাসিনার পুলিশ বিনা উসকানিতে গুলি করছে। বাংলাদেশে তো এমন দেখিনি। শাহবাগীদের ইসলামবিদ্বেষকে প্রটেকশন দিতে গিয়ে জামায়াতে ইসলামী, সমমনা ইসলামী দল এমনকি আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ওলামা লীগকে সরকার এক অবস্থানে নিয়ে গেছে। জামায়াত হরতাল না ডাকলেও জামায়াত-শিবিরের তান্ডব বলে প্রচার করা হচ্ছে, হরতাল হলেও তারা নিজ দায়িত্বে বলছে জনগণ হরতাল প্রত্যাখ্যান করেছে। এক শ্রেণীর মিডিয়ার এমন হিংসাত্মক ও মিথ্যাশ্রয়ী অবস্থান বাংলাদেশের মানুষ কখনও দেখেনি।” আমাদের কতিপয় গণমাধ্যম যেন গোয়েবলসীয় সূত্রে বাতিকে দারুণ আক্্রান্ত।

স্যার এরিখ হাজনস বলেছেন, সাংবাদিকতা হচ্ছে সঠিক, করিতজ্ঞাত ও ত্বরিতগতিতে তথ্যদির এদিক ওদিক এমনভাবে প্রেরণ যাতে করে সত্য পরিবেশিত হয় এবং তাৎক্ষণিকভাবে না হলেও সব তথ্যের যথার্থই ধীরে ধীরে সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে।

আমেরিকান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি (অইঈ)-এর এক প্রতিনিধি জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব ড. বুট্রোস ঘালিকে সোমালিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। জবাবে ড. ঘালি বলেন, সোমালিয়ায় মার্কিন সৈন্য প্রেরণ এ কারণেই সম্ভব হয়েছিল যে, এ উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য একাধারে দীর্ঘ ১০ মাস মিডিয়া ও গণমাধ্যমকে উৎসর্গ করে দিয়েছিলাম। ড. ঘালি বলেন, আমরা মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে কেবল এ সংবাদ ও চিত্রই পেশ করতে লাগলাম যে, সোমালিয়ার জনগণ ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও রোগ-শোকে মৃত্যুবরণ করছে। সেখানকার জনগণ সকল মৌলিক প্রয়োজন থেকে বঞ্চিত। এভাবে অব্যাহত প্রোপাগান্ডাার মাধ্যমে আগ্রাসনের পরিবেশ তৈরি হয়ে গেলে বিশ্ববাসীর বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেল যে, সেখানে বিদেশী হস্তক্ষেপ ছাড়া জনগণকে রক্ষার আর কোন পথ নেই। আজ বাংলাদেশে কিছু ভাড়া করা মিডিয়া জংগীবাদ, আলকায়দা ইত্যাদি জিগির তুলে অন্যকারো আসার স্বপ্ন দেখছেন কি?। এটি আসলে নিজের নাককেটে অন্যের যাত্রা ছাড়া আর কিছু নয়।

আমাদেও শাহবাগী তথাকথিত নতুন প্রজন্মে সেই মন্ত্রকেই ধারণ করেছে। ‘ঁজবাই কর’, ‘ফাঁসি চাই’, ‘হামলা কর’,বাতিল কর” ‘উৎখাত কর’ শ্লোগান ছিল মুলত অসাম্প্রদায়িকতা, অর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কালো কাপড়ে মোড়ানো পৃথিবীর সবৃচেয়ে নিকৃষ্ট ও মানবতা বিরোধী,জাতিবিনাসী উচ্চারণ। এই নীতিবাচক শ্লোগান প্রায় একমাস ধরে মিডিয়ার অব্যাহত চালিয়ে সংবাদমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। মিডিয়া শাহবাগী আয়োজকদের ওই সব অপকর্ম প্রকাশ না করে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। বোকা ও বোবা বানিয়ে রেখেছে কোটি মানুষকে। পরিস্থিতি এতই নাজুক হয়ে পড়লো যে শাহবাগ নামক প্রজন্মেও বিরুদ্ধে কথা বললেই রাজাকার, অসভ্য,বর্বও, আর সেকেলে। ‘ঁজবাই কর’, ‘ফাঁসি চাই’, ‘হামলা কর’, ‘উৎখাত কর’ শ্লোগান অল্পকয়েক দিনের মধ্যে আমাদেও কে উপহার দিল দুশতাধিক লাশ। এই লাশের দায় কার? উম্মাদনা সৃষ্টিকারী সেই মিডিয়া গুলো কি এর দায় এড়াতে পারবে? ফাসিঁর আসামী বানিয়ে দিল একজন আন্তজার্তিক খ্যাতিসম্পন্ন কুরআনের খাদেমকে। বিভত্ত হয়ে পড়লো গোটা জাতি। কি নির্মম আর নিষ্ঠুর কাজের সহযোগীতা আমরা করলাম!! ভারতীয় উপমহাদেশে রাজনৈতিক বিক্ষোভে এক দিনে পুলিশের গুলিতে এত মানুষ হত্যার নজির নেই। কতিপয় মিডিয়া এটিকে চিহ্নিত করল সহিংসতা হিসেবে। ভয়ংকর ও বেমানান দিক হলো মিডিয়া খুন হওয়া মানুষদের পরিচয় নিয়ে খেলেছে অব্যাহত লুকোচুরি। উল্টো যেন লাশটিকে আসামী বানিয়ে দিচ্ছে এ বলে, এরা জাতীয় পতাকা, শহীদ মিনার, সংখ্যালঘু আর সাধারণ জনতার উপর হামলা কারী। মিডিয়া বিক্ষোভ কে বানালো তান্ডব। ধর্মীয় বইপুস্তক কুরআন হাদিস হলো ‘জিহাদি’ বই। দলীয় মিটিং হলো নাশকতার পরিকল্পন্রা। বেশির ভাগ সংবাদমাধ্যম এই তত্ব গুলার সাথে সুর মিলিয়ে আসছে অব্যাহত ভাবে। ইতোমধ্যে আওয়ামীলীগ কেয়ারটেকার সরকার বাতিল এবং তথাকথিত যুদ্বপরাধীদের বিচারের নামে সংকট সৃষ্টির যে খেলায় মেতে উঠেছে। আর এ অশুভ খেলা খেলতে খেলতে যদি আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির সম্মুখীন হয়। তাহলে হয়ত পরে আফসোস করেও এ জাতির কোন লাভ হবে না। জাতি বিনাশী এমন খেলার আসলে শেষ কোথায়??

লেখক : ড.রেজাউল করিম

Rose Rose Rose

বিষয়: বিবিধ

১২৭০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

215184
৩০ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৪:২৭
সন্ধাতারা লিখেছেন : I do appreciate your constructive thought and valuable writing. Please keep writing.
০১ মে ২০১৪ সকাল ০৫:০১
163966
সত্য কন্ঠ লিখেছেন : ধন্যবাদ।
215328
৩০ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ১২:৪৯
নিউজ ওয়াচ লিখেছেন : ধন্যবাদ
০১ মে ২০১৪ সকাল ০৫:০১
163967
সত্য কন্ঠ লিখেছেন : আপনাকেও।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File