সৌভাগ্যবান এক রাসুলের (সা) কাতিব

লিখেছেন লিখেছেন সত্য কন্ঠ ০৭ এপ্রিল, ২০১৪, ০৩:২৬:৪৯ দুপুর

সৌভাগ্যবান এক রাসুলের (সা) কাতিব



মহান রব যাকে পছন্দ করেন, তাঁকেই তাঁর নিয়ামত ও বরকতে অভিষিক্ত করেন।

পেয়ে যান তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে সৌভাগ্যের এক বিরল নজরানা।

তেমনি এক সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবন আল-আরকাম (রা)।

আবদুল্লাহ (রা) রাসূলুল্লাহর (সা) একান্ত কাছের, একান্ত আপন সাহাবী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন।

মক্কা বিজয়ের বছরে তিনি ইসলাম গ্রহণ এবং রাসূলুল্লাহর (সা) লেখক বা কাতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) দারুণ বিশ্বাসভাজন সাহাবী ছিলেন।

নবী (সা) আবদুল্লাহ ইবন আল-আরকামকে (রা) লেখক বা কাতিব হিসেবে নিয়োগ দেন।

তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজা-বাদশাহদের চিঠিপত্রের জবাব দিতেন।

তিনি রাসূলুল্লাহর (সা) এতই আস্থাভাজন ছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে কোন বাদশাহর নিকট চিঠি লিখতে বললে, তিনি চিঠিটি লিখে সিলমোহর করে ফেলতেন।

তাঁর প্রতি অত্যধিক আস্থার কারণে রাসূল (সা) সেই চিঠিটি পড়ার প্রয়োজন বোধও করতেন না।

হযরত উমর (রা) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহর (সা) নিকট একটি চিঠি আসে।

তিনি ঘোষণা দিলেন, কে এর জবাব লিখবে?

আবদুল্লাহ ইবন আল-আরকাম (রা) বললেন, আমি লিখবো।

জবাবটি লিখে দেয়ার পর রাসূলুল্লাহ (সা) খুবই খুশি হলেন।

সেদিন থেকে উমরের (রা) অন্তরে হযরত আবদুল্লাহ (রা) সম্পর্কে দারুণ সুধারণার সৃষ্টি হয়।

তাই হযরত উমর (রা) খিলাফতের দায়িত্ব লাভের পর তিনি হযরত আবদুল্লাহকে (রা) বায়তুল মালের দায়িত্বে নিয়োগ করেন।

রাসূলুল্লাহর (সা) লেখক বা কাতিব হিসেবে আরো অনেকে দায়িত্ব পালন করেছেন।

যেমন যায়িদ ইবন ছাবিতও (রা) এ দায়িত্ব পালন করতেন।

তিনি ওহিহও লিখতেন অর্থাৎ যখন যে ওহি নাযিল হতো, সেটা লিখতেন।

এ দু’জন ছাড়া রাসূলুল্লাহর (সা) আরো কয়েকজন কাতিব বা লেখক ছিলেন।

হযরত আবদুল্লাহ ও যায়িদের (রা) অনুপস্থিতিতে রাসূলুল্লাহর (সা) কোন কিছু লেখার প্রয়োজন হলে হযরত উমর, হযরত আলী, হযরত খালিদ ইবন সাঈদ, হযরত মুগিরা ও হযরত মুআবিয়া (রা) এঁদের যে কেউ উপস্থিত থাকতেন এবং সেই দায়িত্ব পালন করতেন।

রাসূলুল্লাহর (সা) ওফাতের পর হযরত আবু বকর ও হযরত উমরের (রা) সময়েও তিনি তাঁদের কাতিব বা লেখক হিসেবে কাজ করেন।

হযরত উমর (রা) তাঁকে বায়তুল মালের দায়িত্বে নিয়োগ করেন এবং হযরত উসমান (রা) তাঁকে উক্ত পদে বহাল রাখেন।

পরে তিনি এ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন।

খলিফা হযরত উসমানের (রা) সময় তিনি বায়তুল মালের দায়িত্বে থাকাকালে খলিফা তাঁকে ৩০ হাজার দিরহাম দিতে চান কিন্তু তিনি সেটা নিতে অস্বীকৃতি জানান।

একবার খলিফা হযরত উসমান (রা) তাঁকে তিন লাখ দিরহাম দান করেন কিন্তু তিনি তা গ্রহণ করেননি।

অত্যন্ত আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ছিলেন হযরত আবদুল্লাহ (রা)।

ছিলেন অত্যন্ত দৃঢ়চেতা আল্লাহভীরু এক সাহাবী।

তিনি খলিফাকে হেসে বলেন, আমি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কাজ করেছি।

এর প্রতিদান কেবল আল্লাহর কাছ থেকেই পেতে চাই।

হযরত আবদুল্লাহ (রা) খুবই সৎ ও সাহসী ঈমানদার মানুষ ছিলেন।

যাকে বলে খাঁটি মানুষ।

হযরত উমর (রা) তাঁর সম্পর্কে বলেন,

আমি আবদুল্লাহ ইবন আল-আরকামের (রা) চেয়ে অধিক আল্লাহভীরু মানুষ আর দেখিনি।

তাঁর সূত্রে রাসূলুল্লাহর একটি হাদীসও বর্ণিত হয়েছে।

হযরত আবদুল্লাহ (রা) তাঁর স্বগোত্রীয় লোকদের ইমাম ছিলেন।

একদিন যখন সালাত শুরু হতে যাচ্ছে, ঠিক তখনই তিনি একজন লোকের হাত ধরে সামনে এগিয়ে দিয়ে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহকে (সা) এ কথা বলতে শুনেছি যে“যখন সালাত কায়েম হবে, তখন তোমাদের কারো যদি নির্জন স্থানে যাওয়ার প্রয়োজন হয় তাহলে প্রথমে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেবে।”

হযরত আবদুল্লাহ (রা) খলিফা উসমান (রা)-এর খিলাফাতকালে ইন্তেকাল করেন।

কিন্তু তিনি ইন্তেকাল করলেও এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে তাঁর সেই বিরল সৌভাগ্যের হীরকজ্যোতি, যা যুগ যুগ ধরে, শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে আজও লাখো- কোটি মুমিনের প্রাণে প্রাণে প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।

এখানেই অমর তিনি।

এখানেই শ্রেষ্ঠ তিনি।

শ্রেষ্ঠ সৌভাগ্যবান প্রেরণাদায়ক এক মহান সাহাবী।

(সংগ্রহ)

বিষয়: সাহিত্য

১৩০৫ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

203814
০৭ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৬
ফেরারী মন লিখেছেন : তিনি ইন্তেকাল করলেও এখন পর্যন্ত বেঁচে আছে তাঁর সেই বিরল সৌভাগ্যের হীরকজ্যোতি, যা যুগ যুগ ধরে, শতাব্দীর পর শতাব্দী পেরিয়ে আজও লাখো- কোটি মুমিনের প্রাণে প্রাণে প্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে।

Rose Rose Rose Rose
০৭ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৯
153076
সত্য কন্ঠ লিখেছেন : ধন্যবাদ।
203815
০৭ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:৩৬
অনুরাগ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ ।
০৭ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০৩:৪৯
153077
সত্য কন্ঠ লিখেছেন : আপনাকেও ধন্যবাদ।
203857
০৭ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:২১
হারিয়ে যাবো তোমার মাঝে লিখেছেন : জাজাকাল্লা খাইরান.. অনেক ভালো লাগলো পড়ে
০৭ এপ্রিল ২০১৪ বিকাল ০৪:২৬
153092
সত্য কন্ঠ লিখেছেন : Good Luck Good Luck Good Luck

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File