তোমাকে হারিয়ে বুঝেছি ...
লিখেছেন লিখেছেন আইশা সিদ্দিকি ০৬ এপ্রিল, ২০১৪, ০৬:৩৫:৫৩ সন্ধ্যা
আজ বাবাকে ভিষন মনে পড়ছে। তাই আজ বাবাকে নিয়ে লিখব। আজ বাবার দিন। আমার বাবা হারিস মোহাম্মদ। তিনি ছিলেন সিলেটের সাংবাদিকতা জগৎ এর একটি উজ্জল নক্ষত্র। অনেকে যাকে নির্লোভ সাংবাদিক হিসেবে চেনেন। অতীত মানুষকে টানে। মানুষ যখন তার বাস্তবতার মোহ থেকে খানিকটা অবসর নেবার চেষ্টা করে তখনই তার কল্পনার সময়টুকু অতীতের সোনালী দিনগুলির কাছে ছুটে যায়। ফিরে ফিরে চোখে ভাসে জীবন্ত স্মৃতিগুলো। আজ থেকে দু বছর আগেও তো ভালোই ছিলাম। সেই গত দু বছর আগে বা তারও আগের প্রানবন্ত অতীতগুলো মাঝে মাঝে আমার চলার গতি থামিয়ে দেয়। থেমে যায় আমার কলমের প্রানবন্ত ছুটে চলা। কখন দেয়ালে ঝুলে থাকা জড়পদার্থ ছবি টাকে ঝাপসা চোখে দেখি। মনে হয় এইত তুমি আছ সামনেই দাড়িঁয়ে। সময়ের কাজ হল সামনে ছুটে চলা, কত অপেক্ষা প্রহর কেটেছে মনে হয়েছে তুমি ফিরে আসবে। বলবে হয়ত আমি মরিনি, আমি আছি থাকব আজিবন। মুহূর্তেই চুপসে যায় মনের ভেতরের অজানা ত্রীর্ব হুংকার। যখন ছবির মানুষটি অপলক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকে চোখে চোখ রেখে। তুমি বাবা তাই বলে কি পেরেছ এমন করে না বলে চলে যেতে। আমাদের ক্ষেত্রে তো না বলে কোথাও গেলে কানটা ধরে মলে দিতে। অজানা শঙ্কায় তোমার বুকটা কেপেঁ উঠত। প্রতি সকাল বেলার অভ্যাস ছিল ঘুম থেকে উঠে তোমাকে দেখা। প্রতি সকালে প্রথম কাজটা ছিল তোমার নাকের উপরে বসে থাকা চশমাটা খুলে আস্তে করে বুকের উপর থেকে তোমার কোন প্রিয় বইটাকে সরিয়ে রাখা। তারপর তোমাকে দেখতাম, দেখতাম তোমার মুখে পৃথিবীর সকল ¯েœহময়ী নিস্পাপ বাবাদের প্রতিকৃতি। এখন জা’ন রাস্তার ভীড়ে, লোকালয়ে, কীংবা আমার পথ চলার মাঝে আসে পাশে হাজারো মানুষের মাঝে আমি সেই বাবাকে খুজি যাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি , কিন্তু আমি খুজে পাইনা আমার সেই মিষ্টি মুখের বাবাটাকে। বাবা, তুমি তো ধনী ছিলেনা কিন্তু তোমার মনটা ছিল প্রাসাদ সম। নিজে জীবনে অনেক কষ্ট করেছ। যা নিজের চোখে ও অন্যের মুখে শুনেছি। তুমিই শ্রেষ্ট মানুষ যে নিজে তার জীবনে কিছুই করেনি, নিজের প্রিয় সন্তানদের জন্য তিল পরিমান মাথা গোজার স্থান ও রেখে যেতে পারেননি। কারন, তিনি অন্যের সন্তানের অন্ন কেড়ে নিয়ে কা’র ক্ষতি করে বা অন্যায় করে বড় হতে চাননি। কিন্ত আজ আমার মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে যারা রাতা রাতি আমার বাবার মত হাজারো মানুষের ক্ষতি করে, তাদের সর্বস্য লোট করে আজ বড় বড় টাওয়ার ও তথা কথিত বিভিন্ন সুউচ্চ বিলাস বহুল ভবনের বাসিন্ধা, যাদের আছে কালো টাকার শক্তি, যারা আজ সমাজে অন্যায় ও প্রতিপ্রত্তির দূগন্ধ মিশ্রিত পারফিউম ব্যবহার করে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের কি আখেরাতের ভয় নেই। নাকি দুনিয়ার জীবনই তাদের জন্য বেহেস্ত। তাদের বংশধরের কথা চিন্তা করলে বড় আফসোস লাগে, টাকা গন্ধই তাদের বড় পরিচয়। তারা কি আমার মত তাদের বাবাদের মুখের দিকে তাকিয়ে তৃপ্তির সাথে বলে পৃথিবীর সব চেয়ে সুখী মানুষ, তারা কি তাদের বাবাকে নিয়ে গর্ব করতে পারে? আজ জানতে বড় ইচ্ছে করে।
কিছু কথা আসলে না বললেই নয়। বাবা এমন একজন মানুষ ছিলেন যাকে কেউ কখনও ধন সম্পদ দিয়ে কিনতে পারেনি। নিজেও ইচ্ছে করলে সম্পদ এর পাহাড় করতে পারতেন। বাবা তার জীবনে কার কাছে হাত পাতেননি। তার মৃত্যু পরবর্তী সময়ে কিছু সার্থšে^ষি ব্যক্তি, মহল, প্রতিষ্টান তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার করেছে একটা খাম হাতে হারিস মোহাম্মদ সহ অন্যান্য সাংবাদিক এর স্ত্রী সন্তান দের সাথে ছবি পত্রিকার পাতায় পাতায় ছাপিয়ে তারা তাদের বিজ্ঞাপন প্রচার করেছেন। কেউ আবার ভরা মজলিশ এর মাধ্যমে ঘোষনা দিয়েছেন অনেক, যার পরিধি ব্যাপক। কিন্তু এত এত বিজ্ঞাপন এর ভিড়ে একজন হারিস মোহাম্মদ, মহিউদ্দিন শীরু, ফতেহ ওসমানী, সি এম মারুফ... ও তাদের পরিবার কি পেল। কিন্তু জনসাধারন জানলনা কত টাকায় এক জন মৃত ব্যক্তি কত সহজে তাদের প্রতিষ্টানের বিজ্ঞাপন চিত্র হয়ে গেল। যে মানুষ টা মৃত্যুর সময় কার কাছ থেকে সাহায্য তো দূরে থাক যার কেউ খোজ ও নেয়নি তার মৃত্যু পরবর্তি সময় কিভাবে মানুষ দান এর নামে তাদের অসম্মান করছে। আমি তো জানি ডান হাতে দান করলে বাম হাত যেন টের না পায়। দান তাকেই বলে যেটা হয় সম্মান, ত্যাগ ও মহত্তের। আমার অনুরোধ এই রকম দান নামক বিজ্ঞাপন চিত্রের সাধ্যমে আপনারা মৃত ব্যক্তির সম্মান হানি করবেন না।
মানুষ মরে গেলে তার প্রভাব, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, টাকা পয়সা কিছুই থাকে না। থাকে শুধু সম্মান ও সততা। আমার বাবা হলেন সেই সম্মান ও সততার এক জীবন্ত উদাহরন। আমার বাবার জীবনে দুঃখ, অভাব, অনটন ছিল নিত্য দিনের সঙ্গি। সারাটা জীবনই কেটেছে অনিশ্চয়তায়। বছরের পর বছর রোগে-শোকে কষ্ট করেছেন।জীবনের সিংহ ভাগ সময়ই বয়ে বেড়িয়েছেন কষ্ট নিয়ে। জীবনের সাথে সংগ্রাম করে পাড় করেছেন জীবনের ৫২ টি বছর। সুখী মানুষের কাছে পৃথিবীটা বড় আর জীবনটা খুবই ছোট। কিন্তু একজন দুঃখী মানুষের কাছে জীবনটা অনেক র্দীঘ একটি পথ, যে পথ পাড়ি দিতে করতে হয় অনেক সংগ্রামের সাথে যুদ্ধ।আমার গর্ব হয় আমি এমন বাবার সন্তান। বাবা কত কষ্ট করেছেন আমাদের জন্য। আমাদের লালন-পালন, লেখা পড়ার খরচ ও সহ গোটা সংসার চালাতে অনেক হিমসিম খেতে হত আমার বাবাকে। তারপরও নিজের বিবেক, শ্রম, মনুষ্যত ও সততার মহৎ গুনে তিনি গড়েছেন তার বর্নাট্যময় জীবনের ইতিহাস। সদা হাস্যজ্জল, বিনয়ি ছিলেন আমার বাবা। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন জীব, জগৎ, অন্যায়, অবিচার, এবং নিত্য দিনের মানুষের দূর্ভোগ এর কথা।মানুষ মরে গেলে রেখে যায় তার কর্ম ও সৃষ্টি। যদি কর্ম ভাল হয় মানুষ তার কর্মের মধ্যেই বেচে থাকে যুগ যুগ। জগৎ সংসার এর মায়া জাল এমনই এক জিনিস যা থেকে কখনও কেউ নিজেকে আলাদা করতে পারেনা। আমার বাবা নামের মানুষটি কে নিয়ে আমি প্রায়শ গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে যাই। যার জীবনের মানে হল কষ্ট, দারিদ্রতা ও সংগ্রাম করে বেচে থাকা, কিভাবে একজন মানুষ সব ভুলে একটি কলমের শক্তিতে পাড় করে দিল জীবনের সমস্ত পথ। কত ঝড় এসেছে জীবনে হয়ত, সকল প্রতিকুলতা, দারিদ্রের কষাঘাতের দেয়াল চূর্ন করে আগুনে পুড়ে. প্রচন্ড রোদে, বৃষ্টিতে ভিজে নিজেকে একজন সোনার খাঁটি মানুষে রুপান্তরিত করছেন।বাবার হাসি মাখা মুখটা দেখলে মনে হতনা তার বুকের ভেতর কষ্টগুলো তাকে আস্তে আস্তে গ্রাস করছে। সারাটা জীবন ছুটে বেরিয়েছেন এখানে ওখানে, দেশ থেকে দেশান্তরে।
বাবার খুব আফসোস করতেন একটা স্থায়ী ঠিকানার জন্য। এই জীবনে তো বাবা পাননি একটা কুড়ে ঘরের ও ঠিকানা করতে, তবে দিন জাহানের মালিক হয়ত তাকে পরজনমে একটা সুখের ঠিকানা দেবেন। কত পরম নিশ্চিন্তে আমার সরল সোজা বাবাটা কবরে ঘুমিয়ে আছে। মিথ্যে এই পৃথিবীটা আমার বাবাটাকে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই দিলনা। বড় ¯^ার্থপর এই পৃথিবী সেই সাথে মানুষ গুলোও। আমরা এখানে কিছু মানুষ দেখি যারা জীবনে শুধু দিয়েই গেল, কিন্তু বিনিময়ে কিছুই পেলনা। না পাবার ঝুলি তে আমার বাবার ভালবাসা ছাড়া আর কিছুই জমা হয়নি। খুব মনে পড়ে প্রতিনিয়ত বাবাকে যখন শেষ দেখি সেই ক্ষনটির কথা। বলে বুঝাতে পারব না যে কষ্টের কত বড় ক্ষত আজ আমি বুকে বয়ে বেড়াচ্ছি। যাকে জীবনে প্রতি টা ক্ষন কাছে পেয়েছি, যে পরম মমতা দিয়ে ভালবাসায় আমাকে বড় করেছে, যে আমার সত্তার ¯^ত্বধিকারী, যার রক্ত আমার দেহে বয়ে বেড়াচ্ছে, সে কিভাবে সকল সর্ম্পক ছিন্ন করে সারা জীবনের জন্য আমাদের সবাই কে ছেড়ে চলে যাচ্ছে। এও কি সম্ভব ! বার বার মনে হয়েছিল বাবাকে কি আর কখন ও বাবা বলে ডাকতে পারবনা। বাবা কে কি আর কখন ও কিছু আবদার করতে পারনা। আর কখন আমার বাবা আমার কপালে চুমু দেবেনা। আমার বড় কষ্ট লাগে যখন অন্যদের বাবাদের কে দেখি। কেমন জানি তখন আমার নিজের কথা মনে হয়ে যায়, মনে হয় অদের কাছে সব চেয়ে বড় ঐশ্বর্য আমার দিকে চেয়ে জ্বল জ্বল করছে। নিজেকে নিঃ¯^ মনে হয় খুব। বাবা তোমার সেই চলে যাওয়াই শেষ যাওয়া নয়। আমি আমার চারপাশে তোমাকে প্রতিনিয়ত অনুভব করি।তুমি আমার হৃদয়ে মিশে আছ। ঘরের প্রতিটি কোনে আমি তোমাকে আবিষ্কার করি। তোমার কাপড়ে আজ আমি তোমার দেহের গ্রাণ খুজিঁ। তোমাকে আড়াল করলে কি আমি বাচব। কিন্তু তোমার শুন্যতা আমি অনূভব করি যখন আমার খুব কষ্ট লাগে।রাতে ঘুমাতে গেলে মনে করি তুমি বাইরে কাজে ব্যাস্ত, অনেক রাত হবে আসতে। আর সকাল মনে করি তুমি তো পাশের ঘরেই ঘুমিয়ে আছ । এভাবেই আমাদের দিন, মাস, বছর চলে যায়। যত বার আমি শ্বাস নেই ঠিক তত বারই তোমার কথা মনে আসে। চোখের সামনে ভেসে উঠা স্মৃতি গুলোই আজ আমার শেষ স¤^ল। আজ জীবনের এই র্দীঘ পথ পাড়ি দেবার জন্য বাবার মত বড় বন্ধুর বড় প্রয়োজন। এই র্দুগম পথ পাড়ি দিতে গিয়ে অনেত হোচঁট খেতে হচ্ছে। বাবা তার সব দায়িত্ব্য আমাকে দিয়ে গেছেন। আমি জানি না কতটুকু দায়িত্ব্য পালন করতে পারব। তবে আমার বাবার দোয়া আমার সাথেই আছে। আজ তোমাকে হারিয়ে বুঝেছি জীবন হল কাটাঁযুক্ত কষ্টের দূর্গম সিড়িঁ। যা আমাকে ভেদ করে উপরে উঠতেই হবে। সবার দোয়া চাই জীবনে । ##
বিষয়: Contest_father
১৮৭২ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
আপনার বাবার জান্নাত কামনা করি মহান রবের দরবারে ,,
পাশাপাশি আপনার সফলতা কামনা করি।
ভালো লেগেছে লেখাটি...
পাশাপাশি আপনার সফলতা কামনা করি।
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন "আপনার বাবা সিলেটের অহংকার।" সুতারাং সততার মহৎ গুনি,সদা হাস্যজ্জল, বিনয়ি মানুষটিকে নিয়ে তাঁর জীবন ও কর্ম আর একটু গুছিয়ে আরও লিখুন । আল্লাহ তাহাকে জান্নাত নছিব করুন ।
ধন্যবাদ
বাবাকে নিয়ে লেখা আমার স্মৃতিচারণ। আশা করি পড়বেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন