নামাজে মন ফেরানো - শেষ পর্ব
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ০৭:৪৯:২৫ সকাল
নামাজে মনোযোগ ধরে রাখার কিছু প্র্যাকটিক্যাল টিপস
● জায়নামাজে দাঁড়ানোর আগে চিন্তা করা, "এটাই যদি আমার জীবনের শেষ নামাজ হয়, তাহলে আমি নামাজটা কিভাবে পড়তাম?"
● সম্ভব হলে নামাজের সময় হবার ১০ মিনিট আগে থেকেই নিজ নিজ কাজ থেকে উঠে নামাজের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করা। কারণ, দেখা যায়, তুমুল চিন্তার ঝড় নিয়ে একটা কাজ করছি। কোনোমতে সেই কাজ থেকে উঠে ফট করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলে সারাক্ষন নামাজে ওই কাজের কথাই মাথায় ঘুরতে থাকে। তাই আল্লাহর সাথে কানেক্টেড হতে অন্য সব কিছুর সাথে সাময়িক ডিসকানেক্টেড হওয়া প্রয়োজন।
● নামাজের জন্যে রেডি হবার জন্যে সুন্দর একটা কাপড় পড়া। আমরা বাসার ময়লা কাপড় পরেই নামাজে দাঁড়িয়ে যাই। নামাজে মনোযোগ না থাকার এটাও একটা কারণ। ইম্পরট্যান্ট কোনো মিটিং এ আমরা ফিটফাট হয়ে যাই। এটা হচ্ছে আমাদের আল্লাহর সাথে মিটিং - দিনের সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট মিটিং। আমার টিচার বলতেন, তিনি আলাদা একটা সুন্দর আবায়া ঠিক করে রাখতেন শুধু নামাজ পড়ার জন্যে। এতে মেন্টালি তিনি প্রস্তুত হতেন যে, ইম্পর্ট্যান্ট কারো সামনে দাঁড়াতে যাচ্ছি। এতে নামাজে মনোযোগ বেড়ে যেত।
● ১০ মিনিট আগে থেকে ওযু করে নতুন/সুন্দর নামাজের কাপড় পরে জায়নামাজে বসে একটু যিক্র করা, নামাজের মুডে আসা, দুনিয়াবি চিন্তা থেকে ব্রেইনকে ডিস্কানেক্টেড হবার সুযোগ দেওয়া।
● যেই সূরাগুলি নামাজে পড়া হবে সেটা ঠিক করে নেওয়া। ফোনের কুরআন App দেখে চট করে সেগুলির অর্থ পড়ে নেওয়া।
● নামাজে আমরা সাধারণত যেসব সূরাহ, তাসবীহ, দুয়া ইত্যাদি পড়ে থাকি, সেগুলোর অর্থ জানা এবং বুঝা। নামাজে পড়া প্রতিটা জিনিসের অর্থসহ ব্যাখ্যা রিভিউ করতে পারবেন এই লিংকে - https://www.facebook.com/notes/sharin-shafi/নামাজে-মন-ফেরানো-complete/10215640161946399/
● নামাজের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় হাত-পা নাড়ানো যত লিমিটেড রাখা যাবে, তত বেশি নামাজে মনোযোগ বাড়বে। স্পেশালি আপুদের জন্যে হিজাবটা সুন্দর করে টাইট করে বেঁধে তারপর নামাজে দাঁড়ানো খুব হেল্পফুল! যেন নামাজের মধ্যে বার বার হিজাব ঠিক করতে না হয়। এমন কাপড়ের হিজাব না পড়া যেটা পিচ্ছিল সিল্ক জাতীয় এবং এর ফলে বার বার মাথা থেকে পরে যেতে চাইবে এবং নামাজের মনোযোগের ব্যাঘাত ঘটাবে। সুতী বা ওই জাতীয় কাপড়ের খিমার পড়া বেস্ট যেন আরামও হয় এবং মাথার সাথেও লেগে থাকে!
● নামাজের মধ্যে চোখের দৃষ্টি সিজদার জায়গার দিকে স্থির রাখতে পারলে মনোযোগ বজায় রাখতে অনেক হেল্প হয়। আড়চোখে করে এদিকে সেদিকে তাকানো থেকে বিরত থাকা নামাজের কোয়ালিটিকে বাড়িয়ে দিবে।
● নামাজের শেষ করেও ৫/১০ মিনিট সময় নিয়ে একটু জিকির করা. নামাজ শেষে পড়ার জন্যে অসম্ভব সুন্দর সুন্দর কিছু দুআ আমরা শিখেছি এর আগের চ্যাপ্টার থেকে আলহামদুলিল্লাহ!
● নামাজ শেষে নিজেকে জিজ্ঞেস করা, যেই নামাজটা মাত্র পড়লাম এটা কি আল্লাহর দরবারে পেশ করার মতন? এই নামাজ কি কবরে আমার জন্যে আলো হয়ে আসবে? নাকি যারা নামাজের হক আদায় করতে পারেনি তাদের নামাজের মতন আমার নামাজকেও পোঁটলায় ভোরে আমার মুখে ছুঁড়ে ফেলা হবে? আমি পরের বার আমার নামাজকে আরো সুন্দর করতে কী করতে পারি?
● সর্ব প্রথম বান্দার সালাতের হিসাব নেয়া হবে। তাতে হয় সে মুক্তি পাবে অথবা ধ্বংস হবে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সালাতের হিসাব হবে। যদি সালাত ঠিক হয় তবে তার সকল আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি সালাত বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে। [তিরমিযি:২৭৮]
● “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করা হল, আল্লাহর নিকট কোন আমল সবচেয়ে বেশি প্রিয় ? তিনি বলেন-সময় মত সালাত আদায় করা, আবার জিজ্ঞাসা করা হল তার পর কোনটি? উত্তরে তিনি বলেন-মাতা পিতার সাথে সদাচরন করা। আবার জিজ্ঞাসা করা হল তার পর কোনটি? উত্তরে বললেন আল্লাহর পথে জিহাদ করা।” [বোখারি:৪৯৬]
● “মুসলিম বান্দা যখন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করে তখন তার গুনাহ এমনভাবে ঝরে পড়তে থাকে যেমন এই বৃক্ষের পাতা ঝরে পড়ে।” [আহমদ : ২০৫৭৬]
● “তুমি বেশি করে আল্লাহর জন্য সেজদা-সালাত আদায় করতে থাক, কারণ তোমার প্রতিটি সেজদার কারণে আল্লাহ তোমার মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমার গুনাহ মাপ করবেন।” [মুসলিম:৭৩৫]
● “এবং তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। অবশ্যই তা কঠিন কিন্তু বিনীতগণের জন্যে নয়। যারা ধারণা করে যে নিশ্চয় তারা তাদের প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে এবং তারা তারই দিকে প্রতিগমন করবে।” [সুরা বাকারাহ : ৪৫,৪৬]
● “মুমিনগণ সফলকাম, যারা তাদের সালাতে নম্রতা ও ভীতির সাথে দণ্ডায়মান হয়।” [সূরা মোমিন: ১-২]। অতঃপর বলেন: “আর যারা তাদের সালাতে যত্নবান, তারাই জান্নাতের ওয়ারিশ-যারা ফিরদাউসের ওয়ারিশ হবে এবং তথায় তারা চিরকাল থাকবে।” [সুরা আল-মোমিন: ৯,১০,১১]
ইয়া রাব্বুল আলামিন! আমাদেরকে এমন ভাবে সালাত আদায়ের তাওফিক দিন যেটা আমাদের দ্বীন, দুনিয়া এবং আখিরাতের জন্যে কল্যাণের উৎস হয় এবং আপনার সন্তুষ্টি ও জান্নাত অর্জনের উসিলাহ হয়! আমিন!
(প্রতিটা কথা আগে আমার নিজের জন্যে রিমাইন্ডার!
"নামাজে মন ফেরানো সিরিজ" এর সমাপ্ত আলহামদুলিল্লাহ ... )
বিষয়: বিবিধ
১১৪৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন