নামাজে মন ফেরানো - ৬
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ০৫:৩০:৫১ সকাল
"তাশাহুদ"
১. ‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস্ সালাওয়াতু, ওয়াত্ তইয়িবাতু" - “সকল অভিবাদন (Greeting) ও সম্মান আল্লাহর জন্য, সকল সালাত আল্লাহর জন্য এবং সকল ভাল কথা ও কর্মও আল্লাহর জন্য।" আমরা একজন আরেকজনকে কথার শুরুতে অভিবাদন জানাই সালাম দেওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু আল্লাহকে আমরা "আসসালামুয়ালাইকুম" বলতে পারি না। কারণ, আল্লাহ নিজেই "সালাম", তিনি সকল শান্তির মালিক। তাকে আমরা বলতে পারিনা, "আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক!" সেজন্য তাশাহুদের প্রথম অংশ উৎসর্গ করা হয়েছে আল্লাহকে রাজকীয়ভাবে অভিবাদন করে। ইমাম শাফিঈ (রহঃ) বলেন, আপনি যখন কোনো রাজার প্রাসাদে প্রবেশ করবেন, অন্যান্য দশজনকে যেভাবে সম্বোধন করেন, সেভাবে কিন্তু রাজাকে ডাকবেন না." আল্লাহ সুবহানাতা'য়ালা হচ্ছেন রাজাদের রাজা! "‘আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ..." হচ্ছে সবচেয়ে উঁচু রাজার জন্যে সম্ভাষণ! সকল অভিবাদন, সম্মান, ভালো কথা ও কাজ কেবল মাত্র আল্লাহরই জন্যে!
২. "আসসালামু আলাইকা আইয়্যুহান নাবীয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু" - ''হে নবী! আপনার প্রতি শান্তি, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকত বর্ষিত হোক।"
এখানে আমরা প্রিয় রসূল(সা এর কাছে আমাদের সালাম ও দুয়া দিচ্ছি। আমাদের দুয়ার কিন্তু আল্লাহর রসূল(সা এর কোনো দরকার নেই। তিনি আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে এক মাকামে পৌঁছে গেছেন। রসূল(সা এর উপর দরূদ পাঠ করলে লাভটা আমাদেরই হয়। কারণ আমরা একবার রসূল(সা কে সালাম দিলে, আল্লাহ আমাদের জন্যে দশবার সালাম পাঠান! সুবহানাল্লাহ!!! স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম আসাটা গাঁয়ে কাঁটা দেবার মতন একটা ব্যাপার! আমার মনে আছে, খাদিজা(রা এর জীবনী পড়ার সময় এক পর্যায়ে পড়লাম, ফেরেস্তা জিবরীল (আঃ) আল্লাহর রসূল(সাকে বললেন: "আমার ইচ্ছা আপনি আমার এবং মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে হযরত খাদিজা (রাঃ)কে সালাম পৌঁছে দেবেন।" আমার পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল, সুবহানাল্লাহ এটা কি পড়লাম? আল্লাহর কাছ থেকে স্বয়ং সালাম পাওয়া? এ কোন লেভেলের আনন্দ আর সম্মান? আমার মতন অধম বান্দার কাছে কি কখনো আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম আসবে? এও কি সম্ভব? আলহামদুলিল্লাহ সম্ভব! নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পাঠ করবে, তার বিনিময়ে আল্লাহ্ তার উপর দশবার দরুদ পাঠ করবেন। [সহীহ সুনান নাসাঈ হাদিস -১২৯৭]
সেলফ-রিফ্লেকশন: তাশাহুদের প্রথম লাইনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহকে সাদরে সম্ভাষণ জানালাম এবং দ্বিতীয় লাইনের মাধ্যমে আল্লাহ যেন আমাদেরকে সেই সম্ভাষণের উত্তর দিলেন আমাদের দরূদ পাঠের মাধ্যমে।
৩. "আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস্ সালিহীন।" - "আমাদের উপরে এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের উপরে শান্তি বর্ষিত হোক।"
এবার আমরা দুয়া করছি নিজেদের জন্যে এবং পরে আল্লাহর বাকি সমস্ত নেক বান্দাদের জন্যে। এখানে আল্লাহ আমাদের শিখাচ্ছেন যেন দুয়া করার সময় আমরা শুধু নিজের জন্যে না চেয়ে সবার জন্যে চাই। "সালিহীন" হচ্ছেন আল্লাহর খুব কাছের বান্দারা। যারা আল্লাহর পাঠানো অর্ডার মেনে চলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাশাহুদের এই অংশটা খুব পাওয়ারফুল। আমি যদি চেষ্টা করে কোনোভাবে আল্লাহর "সলিহীন" বান্দা হতে পারি, তাহলে পৃথিবীর ১.৯ বিলিয়ন মুসলিমরা যে যখনই নামাজে তাশাহুদ পড়বে, সেটা আমার জন্যে দুয়া হিসেবে কাউন্ট হবে! সুবহানাল্লাহ!! গোটা বিশ্বের মুসলিমরা দিনের মধ্যে পাঁচবার করে আমার জন্যে দুয়া করবে! এর মধ্যে না জানি আল্লাহর কত ওয়ালী আছেন, আল্লাহর বন্ধু আছেন! তাদের সবার দুয়া পাওয়া যাবে যদি সালিহীন হতে পারা যায়! এটা আমাদের সবার জন্যে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হবার জন্যে চেষ্টা করার পথে এক বিশাল ইন্সপারেশান! সলিহীন হবার অনুপ্রেরণা!
৪. "আশহাদু আল-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশ্হাদু আননা মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসুলুহু।" - আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই এবং আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা এবং তাঁর রাসূল।”
তাশাহুদের শেষে এসে আমরা আবারো আল্লাহর সামনে নিজেদের দাসত্ব স্বীকার করছি। যদি এমন হয়ে থাকে যে, আল্লাহর ছাড়া অন্য কাউকে খুশি করার জন্যে এতক্ষন নামাজ পড়েছি, জীবন গড়ছি স্রেফ নিজেকে নাহলে অন্য কাউকে খুশি করতে! তাহলে এখানে এসে এটা আবার মনে করিয়ে দিলো যে, নিজের ইচ্ছা-লালসা, সোসাইটি, রেপুটেশন - সবকিছুর থেকে আল্লাহ বড়! আমরা নিজেই সাক্ষ্য দেই যে, আল্লাহ ছাড়া আর কারো সামনে মাথা নত করবোনা।
২য় লাইনে আমরা রসূল(সা এর উঁচু মাকাম সম্পর্কে ধারণা পাই! কিন্তু এই অভাবনীয় চমৎকার মানুষটিও সবার আগে নিজেকে আল্লাহর দাস বলে স্বীকার করেন। এবং আমরাও তারই সাক্ষ্য দেই। যেই মানুষটাকে আল্লাহ সিলেক্ট করেছেন আল্লাহর নবী হতে, যে আল্লাহর সাথে লিটারেলি দেখা করে এসেছেন সাত আসমানের উপর থেকে - তারও আল্লাহর সামনে কোনো ক্ষমতা নেই। সেখানে আমি আর আপনি? সুবহানাল্লাহ!
বিষয়: বিবিধ
৯২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন