"আমার সময় নাই!"

লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ১২:২৪:২৩ রাত

"কেউ সেল ফোন নিয়ে মসজিদের ভিতর ঢুকতে পারবেন না"!!

গেলো রমাদানে মসজিদের ই'তিকাফ প্রোগ্রামের রুল ছিল যে, মসজিদে ঢোকার আগে যার যার সেলফোন একটা বিন বাস্কেটে রেখে তারপর মসজিদের ভিতর ঢুকতে হবে. স্বভাবতই, মানুষজনের মধ্যে এটা ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করে. সেলফোন এখন তো আর শুধু ফোন না, It's almost your lifeline. ঘুম থেকে উঠে টাইম দেখা থেকে শুরু করে, হোমওয়ার্ক সেভ করা, কাজের প্রগ্রেস ট্র্যাক করা, বিল pay করা, emergency কিছু হলে ফোন করা - মানে সেলফোন ছাড়া দশটা দিন কল্পনাই করা যায় না!! প্লাস ওই গ্ৰুপের অনেকেই ছিলেন young students. মেডিকেল কলেজ, নাহলে Undergrad করছেন - এমন ছেলেপিলে - নানান যুক্তিসঙ্গত কারণেই তাদের জন্যে ফোন ছাড়া থাকা কষ্টকর। এখন শেইখের রুল - মসজিদে থাকতে হলে মানতে হবে. সো সবাই সেটা মানলো।

ওমাহ, ই'তিকাফের দুই দিন যেতে না যেতেই দেখা গেলো, ভাইয়েরা কেউই আর তাদের ফোন ফেরত চাচ্ছেন না!!! ওয়াও! তারা বলছেন, ফোন বিনের মধ্যেই থাকুক, আমার লাগবে না। সুবহানাল্লাহ! স্বীকার করেন সবাই যে তারা বুঝতে পারছেন, "আমি তো আমার ফোন কন্ট্রোল করতাম না, ফোনটাই আমাকে কন্ট্রোল করতো।" এই শিকল থেকে মুক্তি পাওয়ার স্বাদটা যে কি সেটাই ভুলে গিয়েছিলাম। তাদের মধ্যে অনেকে বলতেন পুরা বছরে আমার যেখানে এক পাতা কুরআন পড়ার টাইম হতো না, এক ওয়াক্ত নফল সালাহ পড়ার কথা চিন্তাই করতে পারতাম না - সেখানে আলহামদুলিল্লাহ এই মসজিদে বসে আমার কুরআন তিলাওয়াত করতে বসলে উঠতেই ইচ্ছা করে না, ফরজ প্লাস একের পর এক নফল ওয়াক্ত সালাহ আদায়ের পরো প্রচুর সময় হাতে থাকে হোমওয়ার্কের পড়া গুলি পড়ে শেষ করার! আলহামদুলিল্লাহ!

হিসাবটা খুব সোজা। একটা কাপ ভর্তি যদি ময়লা পানি থাকে, সেই কাপে দুধ ঢেলে খাওয়া যাবে না. তেমনি আমাদের ব্রেইন এবং সময় যদি আমরা আউল ফাউল জিনিস দিয়ে দখল করে রাখি, তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে ভালো এবং উত্তম ইবাদাত জায়গা পাবে না.

আমাদের শেইখের এক স্টুডেন্ট আছেন। তিনি ফুল টাইম জব করে ফ্যামিলিকে সাপোর্ট দেন, আবার ফুল টাইম কুরআন-হাদিসের-ও স্টুডেন্ট। তিনি efficiently তার সময়কে কাজে লাগানোর জন্যে প্রতিদিন ড্রাইভ করে করে কাজে আসা যাওয়ার পথে কুরআন মুখস্থ করা শুরু করলেন।! সুবহানাল্লাহ, এই ভাই সম্পূর্ণ কুরআন হিফয করে ফেলেছেন শুধু গাড়ি দিয়ে কাজে আসা যাওয়ার পথের সময়টার সদব্যবহার করে করে!!

ইমাম নববী(রা: ) টানা দুই বছর ধরে কোনোদিন চিৎ হয়ে শুয়ে ঘুমান নি! উনার উস্তাদ বলতেন যে, নববী(রা: ) কোনোদিন নিজ থেকে উঠে ঘুমাতে যেতেন না. দ্বীনের পড়াশোনা করতে করতে যখন শরীরে আর কুলাতো না, তখন বইয়ের উপরেই উবু হয়ে তিনি ঝিমাতেন। ঝিমাতে ঝিমাতে হুঁশ ফিরে আসলে সাথে সাথে পড়াশোনায় লেগে পড়তেন। এই ছিল তার ঘুমের রুটিন। তার ৪০ হাদিসের সংকলনের বইটি আজকেও বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে মুসলিমদের জন্যে উপকার করে যাচ্ছেন। আমি মাস্টার্স করার সময় আমাদের ইউনিভার্সিটিতে হালাকা হতো ইমাম নববীর চল্লিশ হাদিসের উপর. দেখা যেত, সারাদিন ক্লাস করে আমি অপেক্ষা করতে থাকতাম. কখন হাদিসের ক্লাসে যাবো, আর মনটা শান্ত হবে! ক্লাসে বসে বসে চিন্তা করতাম, ইমাম নববী (রা: ) মারা গেছেন কয়েকশো বছর পার হয়ে গিয়েছে, কিন্তু আল্লাহ এখনো তার কাজ গুলিকে মানুষের অন্তরে অন্তরে পৌঁছে দিচ্ছেন। একেই বলে সময়ের বরকত পাওয়া! সত্যিকার অর্থে সময়ের সদব্যবহারের ফল!

আল্লাহ সুবহানুতা'আলা আমাদের সময়ে বরকত দিন,আমাদের অন্তর গুলিকে প্রশস্ত করে দিন, আমাদের হাত থেকে slip কেটে যাওয়া সময়গুলোকে ইখলাস সহকারে কাজে লাগানোর তাওফিক দিন. আমিন।

বিষয়: বিবিধ

৬৮৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

386558
১১ মার্চ ২০১৯ রাত ১২:৩১
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ডাক্তার সাহেবা। কেমন আছেন? পড়াশুনা কেমন হচ্ছে? মাসাআল্লাহ অনেক সুন্দর লেখা। হুম দাজ্জাল আমাদের প্রযুক্তি দিয়েই নিজের দাসে পরিণত করবে।
386693
১৮ আগস্ট ২০১৯ সকাল ০৮:৩৮
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : সময় নিয়ে লিখাটি পড়ার জন্যে এবং মন্তব্যের জন্য জাঝাকাল্লাহু খইর

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File