অন্ধকার
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১৬ অক্টোবর, ২০১৮, ০৮:০৩:০৯ রাত
ছোট থাকতে আমি অন্ধকার খুব ভয় পেতাম। প্রাণপ্রিয় ভাইয়া আমাকে তখন অন্ধকার নিয়ে ভয় দেখিয়ে পৈশাচিক লেভেলের আনন্দ লুটতো! আমি তখন ক্লাস ওয়ান না টুতে পড়ি. সন্ধ্যাবেলা বাথরুমে গেছি। আমাদের মোহাম্মদপুরের বাসার বাথরুমের লাইটের সুইচটা ছিল বাথরুমের বাইরে। দুষ্টের শিরমণী লংকার রাজা ভাইয়া এসে সুন্দর করে লাইটের সুইচটা দপ করে নিভিয়ে দিয়ে, বাইরে থেকে বাথরুমের ছিটকিনি লাগিয়ে দিলো!! আল্লাহ গো!!! আমি যে চিৎকারটা দিসিলাম সেদিন আমার এখনো মনে আছে! আমার চিৎকারে বাথরুমের কাঁচের জানালা ভেঙে এক্ষুনি চুরমার হয়ে যাবে এমন অবস্থা। আমি কানতে কানতে, চিৎকার করতে করতে, দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে আধমরা হয়ে গেলাম, তখন আম্মু দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিলো। ভাইজানের কপালে অত:পর কি হয়েছিল, সেটা না হয় নাই বা বললাম! এরপর জীবনের কত চড়াই- উৎরাই পার হলো. বড় হয়ে গেলাম। ধীরে ধীরে অন্ধকারের ভয় কেটে গেলো। হরর মুভির ট্রেইলারকে কাঁচকলা দেখিয়ে চলে আসতাম।
সেদিন ইউনুস(আ এর ঘটনা পড়তে গিয়ে আমার আবার সেই অন্ধকার বাথরুমের কথা মনে পরে গেলো। মানে কল্পনা করা যায়? রাতের নিকষ কালো অন্ধকারের মধ্যে, সমুদ্রের সবচেয়ে গভীরের কালো রাজ্যে, মাছের পেটের ভিতরের কালো গহ্বরের তিনি আটকে পরে ছিলেন! কোনো মানুষের জীবনে এর থেকে বেশি অন্ধকার আর কিছু হতে পারে বলে আমার জানা নেই. মাছের পেট থেকে Digesting এসিড বেয়ে বেয়ে পরে তার চামড়াকে ঝলসে দিচ্ছে। নিজের চোখের সামনে তিনি নিজে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছেন। আচ্ছা, ইউনুস(আঃ ) এর মাথায় তখন কি কাজ করছিলো? উনি কি ভাবছিলেন এই মাছের পেট থেকে জীবনে আর কোনো দিন বের হওয়া কি সম্ভব? তিনি কি হাত পা ছুড়ে সব ফেলে দিয়ে হার মেনে নিলেন? তিনি কি আল্লাহর কাছে কমপ্লেইন করা শুরু করলেন যে, "আল্লাহ আমি আপনার নবী, আপনি আমাকে এরকম খারাপ একটা পরীক্ষায় না ফেললেও পারতেন ?!" এগুলা কোনোটাই কিন্তু ইউনুস (আ এর রেস্পন্স ছিল না. ইউনুস(আ এর রেস্পন্স ছিল, "লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজজলিমীন" - মানে, "ও আমার রব! আপনি আপনার আপনার গরিমা এবং মহিমায় পারফেক্ট, আপনার সাথে কারো শরিক নেই এবং নিশ্চয়ই আমি নিজেই নিজের উপর অত্যাচার করেছি!"
I was like "Just Wow"! This is Deep. It strikes me every time! how sincere this man was! এরকম একটা পরিস্থিতিতেও তিনি নিজের ভুল স্বীকার করে নেন এবং আল্লাহর পারফেকশন ঘোষণা করে মাছের পেটে বসে আল্লাহকে সিজদাহ করেন। তারপর দুইহাত তুলে বলেন, "ইয়া আল্লাহ! আমি এমন একটা জায়গা থেকে আজকে তোমাকে ডাকছি, যেখান থেকে কেউ আগে কখনো তোমাকে ডাকে নি!"
সুবহানআল্লাহ!! আসলে যতই এটা নিয়ে কথা বলি না কেন, এমন একটা পরিস্থিতে পড়লে মানুষের মধ্যে দিয়ে কি যায় এটা কোনোদিন ও কল্পনা করলে জাস্টিস হবে না. আমাদের অনেকের জীবনেই আমরা অনেক অন্ধকার দেখেছি। হয়তো কাছের কোনো প্রিয় মানুষ মারা গিয়েছে, নাহলে দূরে চলে গেছে, মেইবি টাকা পয়সার কষ্ট, নাহলে বিয়ে ভেঙে গেছে, ফ্যামিলি ভেঙে গেছে, কোনো ভীষণ রকমের accident, খারাপ রেজাল্ট, অপ্রত্যাশিত দু:সংবাদ - এরকম আরো কত কত darkness ! এই crisis moment গুলোতে এমন ভাবে Darkness আমাদেরকে জেঁকে ধরে যে আমাদের মনে হতে থাকে, এই মাছের পেট থেকে কি আদৌ বের হওয়া সম্ভব?
যেই আল্লাহ সুবহানুতা'আলা ইউনুস(আ কে মাছের পেট থেকে রক্ষা করে উনাকে ইসলামের মাধ্যমে বিজয় দিয়েছেন, সেই আল্লাহ সুবহানুতা'আলাই কিন্তু আপনার -আমার-ও রব! যে রব ইউনুস(আ কে রক্ষা করতে সক্ষম, সেই রব আমাদের কেও আমাদের darkness থেকে বের করে রক্ষা করতে সক্ষম। এই জিনিসটা ইউনুস(আ sincerely internalize করেছিলেন এবং তার এই realization কে action এ রূপান্ততিত করেছিলেন। এমন অবস্থাতেও তিনি নিজের দোষ স্বীকার করে আল্লাহ কে নিয়ে ভালো চিন্তা করতে পেরেছিলেন এবং মাছের পেট থেকে তিনি আল্লাহর ইবাদাত করতে পেরেছিলেন। ফলাফল ছিল - his success in both worlds! আল্লাহ তার বান্দাদের কখনো নিরাশ করেন না.
এই পুরো ঘটনাটা আল্লাহর power, wisdom এবং magnificience এর বড় রকমের একটা নিদর্শন। আল্লাহ আমাদের অন্তর গুলিকে sincere করে দিক, আমাদেরকে নিজেদের ভুল গুলিকে বুঝে, শুধরে আল্লাহর কাছে ফেরত আসার তাওফিক দিক. আমাদের লাইফের সব Darkness গুলিকে দূর করে দিক. আমাদেরকে আল্লাহর দ্বীনের জন্যে কবুল করে নিক. আমিন।
বিষয়: বিবিধ
৭৫০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তারপর আপনি সেটা উল্লেখ করলেন না আপনার ভাইয়ের কপালে কিরকম সুখ ছিল আই মিন দুঃখ ছিল
তারপর আপনার এই লেখাটি পড়ে মনের কোথায় অন্য রকম একটি ভাল লাগার বাতাস ছুয়া দিয়ে গেলো অসংখ্য ধন্যবাদ আল্লাহ আপনার নেক হায়াত দান করুণ বারাকআল্লাহ ফি হায়াতি
জাযাকিল্লাহ উখতী, অনেক উপকৃত হলাম, অনেক সময় বিপদে পড়ে মনটা অন্ধকারাচ্চন্ন হয়ে যায়, এমন লিখাগুলো পড়তে আশার আলো দেখতে পাই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন