হিজাব সিরিজের শেষপর্ব
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ০৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮, ০৭:২১:০৩ সকাল
গত সেমিস্টারের কথা! আমি একমনে লাইব্রেরির কম্পিউটার ল্যাবে বসে কাজ করছি। হঠাৎ কে যেন আমার কাঁধে আলতো করে হাত রাখলো। পিছনে ফিরে দেখি একটা হিজাব পড়া এরাবিক আপু! আগে কখনো আপুকে দেখেছি বলে মনে পড়লো না। নতুন কোনো স্টুডেন্ট Maybe. আমি হেসে তাকে সালাম দিলাম। আপু সালামের উত্তর দিয়ে, আস্তে করে চেয়ারটা খুলে আমার পাশে ধপ করে বসে পড়লেন। হড়বড় করে আপুটা বলতে শুরু করলেন, "সিস্টার আমি জর্ডান থেকে এখানে নতুন এসেছি। এটাই আমার ইউনিভার্সিটিতে ফার্স্ট সেমিস্টার। আমি এখন একটা বিপদে পড়েছি । আমার একটা ডকুমেন্ট প্রিন্ট করে আধা ঘন্টার মধ্যে অফিসে জমা না দিলে আমার স্কলারশিপ বাতিল হয়ে যেতে পারে। এখন প্রিন্ট করতে যে স্টুডেন্ট আইডি লাগবে, আমি আমার আইডি টাও কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না । আমি একটুক্ষণের জন্যে তোমার আইডি টা use করতে পারি প্লিজ ?
"জ্বি অবশ্যই আপু, কোন ব্যাপার না. আমার আইডিটা নিয়ে যান" - আপুকে খুব আশ্বস্ত করে ব্যাগে হাত দিয়ে দেখি - ও মাই গড!! আমি নিজেও আইডি বাসায় ফেলে চলে আসছি! সুবহানাল্লাহ ! আপু একেবারে কেঁদে দিবেন এমন অবস্থা, "সিস্টার! আমার আর মাত্র ২০ মিনিট আছে, আমি এখন কি করবো?!"
আমি বসা থেকে উঠে গেলাম, "সিস্টার চিন্তা করবেন না, দেখি কি করা যায়!"
ল্যাবের ওই row টাতেই দেখলাম একজন ভদ্রমহিলা চুপচাপ বসে কাজ করছেন। "Excuse me Ma'am!" আমি তাকে ডাক দিলাম। সে কাজ থেকে মুখ তুলে আমাদের দিকে তাকালো এন্ড একটা courtesy হাসি দিলো । “ওকে গুড ! হাসি মানে গুড সাইন” - মনে মনে নিজেকে বললাম। আমি quickly পুরা সিচুয়েশন তাকে explain করে বললাম যে, "Ma'am, আপনার কি মনে হয় আপনি কোনোভাবে আমাদেরকে হেল্প করতে পারবেন?"
সে সুন্দর করে তার ব্যাগ থেকে স্টুডেন্ট আইডি টা বের করে আমাদের কে দিয়ে দিলো। আমাদের খুশি দেখে কে! সেই আইডি নিয়ে আমরা দৌড় দিলাম প্রিন্টিং স্টেশনে। সেখান থেকে ডকুমেন্ট নিয়ে আপুটাকে financial aide অফিসে যেতে হবে। যাবার আগে এক সেকেণ্ড এর জন্যে পিছন ফিরে আপু আমাকে বললো, "থ্যাংক ইউ ডিয়ার ". আমি তাড়াতাড়ি করে বললাম, "Welcome আপু! তুমি এখন দৌড় দাও, আর মাত্র দশ মিনিট!"
আপু দৌড় দিলো! আমি পিছন থেকে সে অদৃশ্য হয়ে যাওয়া পর্যন্ত তাকিয়ে থাকলাম। যাক আলহামদুলিল্লাহ্! ল্যাবে ফিরে ভদ্রমহিলা কে তারা আইডি ফেরত দিয়ে আমি আমার জায়গায় বসে পড়লাম। যাক আল্লাহ্র রহমতে বাকি সব ঠিকঠাক ভাবে হয়েছে ভেবে আমি নিজের কাজে ফিরে গেলাম।
রাতে কাজ শেষ করে বাসায় ফিরার পথে আবার কিভাবে ওই আপুটার সাথেই দেখা হয়ে গেলো!! :D
“সিস্টার! সিস্টার!” দেখি সে আমার দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে হাত নাড়ছে।
আমি কাছে গিয়েই বললাম,
"সিস্টার, তোমার সব কাজ হয়ছে ঠিক ঠাক মতন? ডকুমেন্ট জমা দিতে পেরেছো?"
আপু বললেন, "আলহামদুলিল্লাহ আপু সব ঠিক ঠাক! জমা দিয়ে আসছি। ভাগ্যিস আমি তোমাকে খুঁজে পেয়েছিলাম!" আমরা দুইজনই হেসে দিলাম।
আমার curious mind তখন জিজ্ঞেস করলো, "আচ্ছা বলতো লাইব্রেরি ভর্তি এতো মানুষ থাকতে তোমার কি মনে হলো যে তুমি সোজা আমার কাছে চলে আসলে?"
আপু বললো, “তোমার হিজাব আপু! আর কি? তোমাকে দেখেই আমার মনে হলো, তুমি হচ্ছ আমার মুসলিম সিস্টার। কেউ যদি বিপদে আমার জন্যে এগিয়ে আসে - সেটা তুমিই হবে! ব্যস সোজা তোমার কাছে চলে গেলাম!”
Wow! That was the moment for reflection!
আমার কুরআন টিচার একটা কথা আমাদের প্রায়ই বলতেন। তিনি বলতেন যে, হিজাব টা অনেকটা ইসলাম ধর্মের পতাকার মতন। খেলার মাঠে যেমন সাপোর্টাররা তাদের টিমের পতাকাটা উঁচু করে ধরতে অনেক গর্ববোধ করে, ঠিক তেমনি আল্লাহ তা’আলা ইসলাম ধর্মের পতাকা টা ধরার সম্মান মুসলিম মেয়েদেরকে দিয়েছেন। দুনিয়ার যেখানেই যাও, বাংলাদেশের পতাকা ধরলে সে জানবে তুমি বাঙালি, তেমনি দুনিয়ার যে প্রান্তেই যাও, যেই তোমাকে হিজাব দেখবে, সে জানবে তুমি মুসলিম! হিজাব জাস্ট পড়াটার মধ্যেই এত সম্মান, এন্ড এর পর আরো হাজার হাজার দুনিয়াবি বেনেফিটস্ প্লাস আখিরাতের পুরস্কার তো আছেই ইনশাআল্লাহ্!
আমি নিজেই চিন্তা করি - কোথায় জর্ডানের এক বোন, আর কোথায় আমি - চিনি না, জানি না, একজন আরেকজনকে আগে কখনো দেখি নাই। কিন্তু “লা ইলাহা ইল্লল্লাহ্” দিয়ে অলরেডি আমাদের বন্ড করে দেওয়া এন্ড ল্যাব ভর্তি মানুষের মধ্যেও হিজাব দিয়ে আমাদের একজন আরেকজনকে চিহ্নিত করে ফেলা - Now that is amazing!
“The believers are like one body in their compassion, When one of the limbs suffers, the whole body suffers”
- Prophet Mohammad (sallalahu wa alayhi wa sallam)
এই ঘটনার পর আমার এই আপুর সাথে সেইরকমের একটা ভাব হয়। আমরা একসাথে যেখানেই যেতাম, সে খুব আগ্রহ করে সবাইকে বলতো, “জানো জানো আমার সাথে শারিনের কিভাবে দেখা হয়ছে? আল্লাহ্ বিশ্বাস করবা না সেই কাহিনী!! বুঝছো আমি প্রিন্ট করার জন্যে হন্যে হয়ে এখান থেকে ওখানে … … “
Annnnd ... the rest is all history!
May Allah subhanuta’ala preserve the love of brotherhood and sisterhood in this ummah and grant us His rahmah in all our relationships. Ameen <3
বিষয়: বিবিধ
৭৬৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন