হিজাব ৮: "আপু হিজাব পড়লে আমাকে দেখতে একদম সুন্দর লাগে না, তাই আমি হিজাব করি না

লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১৭ এপ্রিল, ২০১৮, ০৯:২৪:১৭ রাত

খুব দু:খী দু:খী চোঁখে তাকিয়ে আপুটা আমাকে বলছিলো কথাগুলা যে কেন সে হিজাব করে না। শুনে খারাপ লাগে। আরো খারাপ লাগে এটা ভেবে যে, আজকের Young মুসলিম মেয়েরা তাদের বাইরের সৌন্দর্য নিয়ে প্রচুর হীনমন্যতায় ভুগে! নিজের অভিজ্ঞতা থেকে যা দেখেছি আরকি। হিজাব শুরু করার আগে আমি নিজেও আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কি একটা যুদ্ধ করতাম প্রতিদিন সকালে! কি মাখবো, কি পরবো, কিভাবে পরবো - যেন আমাকে দেখতে ভালো লাগে? সুন্দর লাগলে আমাদের সবার ভালো লাগে - এটা দোষের কিছু না. কিন্তু এটা লিমিটের বাইরে চলে গেলে প্রব্লেম! হ্যাঁ, হয়তো কিছু সময়ের জন্যে এটেনশান পাওয়া যায়, শো'খানেক লাইক জমা হয়, ভালো লাগে! কিন্তু আমরা মেয়েরা এভাবে মনের অজান্তে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলি। আমরা হারাই আমাদের self -control, কনফিডেন্স and নম্রতা। আমরা হারিয়ে ফেলি আমাদের ঈমান! কিভাবে যেন সোসাইটি আমাদেরকে যেভাবে দেখতে চায়, আমরা সেভাবেই ড্রেস-আপ করা শুরু করি. একটা রিক্সাওয়ালা থেকে শুরু করে রাস্তার আজেবাজে ছেলেরা বাজে ভাবে আমাদের টাইট জিন্স আর টাইট টপস এর দিকে তাকিয়ে থাকে - আমরা বুঝেও সেটা না বুঝার ভান করি. যেভাবে সাজলে, জামা পড়লে - সবাই আমাদেরকে একসেপ্ট করবে, আমরা সেভাবেই নিজেদের শালীনতা বিলিয়ে দেই এই একটু এটেনশন আর একটু আনন্দের জন্যে। এতে একটা মেয়ের নিজের উপর থেকে সব কনফিডেন্স চলে যায়. যেই না কেউ বললো, তোমাকে তো এই আউটফিটে দেখতে ভালো লাগছে না, মেয়েটার সারাটা দিন মাটি! অসম্ভব সুন্দর মেয়েদেরও দেখেছি নিজেদের নিয়ে এক ফোঁটা কনফিডেন্স নেই - হোক সেটা পড়াশোনা নিয়ে, relationships নিয়ে, বা নিজেদের সৌন্দর্য নিয়ে। আলহামদুলিল্লাহ ইসলাম আমাকে এই বিষাক্ত চিন্তা গুলি থেকে ফ্রি করেছে। ইসলাম আমাকে সেই কনফিডেন্সটা দিয়েছে যেটা সোসাইটি আমাকে কোন দিনও দিতে পারে নাই.

আমি যেদিন প্রথম আল্লাহর জন্যে হিজাব পড়া শুরু করি, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে অনেক শান্তি লাগে। ইসলাম আমাকে এই মেন্টাল শক্তিটা দিয়েছে যে আমি মানুষকে খুশি করা বন্ধ করে আল্লাহ সুবহানুতায়ালা কে খুশি করার কথা বেশি চিন্তা করতে পারছি। ইসলাম যখন একটা মুসলিম মেয়েকে হিজাব করতে বলে, তখন মেয়েটা তার বাইরের শরীরের আর মুখের সুপারফিশিয়াল সৌন্দর্য থেকে এটেনশানটা সরিয়ে তার অন্তরের সৌন্দর্যের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে শুরু করে. "আমার মুখের ফাউন্ডেশানটা ঠিক মতন ব্লেন্ড হলো কিনা, আইলাইনারটা বেশি মোটা হয়ে গেলো কি না, চুলটা স্ট্রেট করবো কি না" - এসব নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে সে চিন্তা করা শুরু করে, আমার মুখ দিয়ে অন্য কারো পরনিন্দা বের হয়ে গেলো কিনা, আমি আমার আচরণ আর কথায় অকারণে কারো মনে কষ্ট দিচ্ছি কি না, আমি আমার চোখ দিয়ে অশোভন কিছু দেখছি কি না, আমি শুধু শুধু কাউকে হিংসা করছি কি না - এই মেন্টালিটি টা যারা sincerely আল্লাহর জন্যে হিজাব করা শুরু করে, তাদের মধ্যে অটোমেটিকালি আস্তে আস্তে চলে আসে দেখেছি আলহামদুলিল্লাহ!!

আমি এমন অনেক মেয়েকে জানি যারা দেখতে অসম্ভব সুন্দর, কিন্তু তাদের চরিত্রের জন্যে কেউ তাদেরকে পছন্দ করে না.কেউ তাদের ধার কাছেও যেতে চায়না. আবার এমন অনেক কে দেখেছি যারা দেখতে হয়তো মোটামুটি এভারেজ, কিন্তু তাদের চরিত্র-ব্যবহার এতো সুন্দর যে সবাই তাদের পছন্দ করে, সবাই তাদের সাথে থাকতে যায়!

একটা হিজাবি মেয়ের জন্যে প্রতিনিয়ত এটা একটা রিমাইন্ডার যে, আমি আমার বাইরের সৌন্দর্য নিয়ে এতো মাথা ব্যথা না করে, আমার ভিতরটাকে সুন্দর করতে মন দেই! আমার ঈমানটাকে একটু ঘঁষামাঝা করে নিজের ঈমানের মেকআপটা চেঞ্জ করি, যেন কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহর সামনে আমার আমলনামার লিস্টটা দেখানো হবে,তখন যেন বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের মধ্যে আমাকে আল্লাহর সামনে দেখতে সবচেয়ে সুন্দর লাগে ইনশাআল্লাহ!!! আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দিক. আমিন

বিষয়: বিবিধ

১০১৩ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

385132
১৮ এপ্রিল ২০১৮ রাত ০৩:২৪
দ্য স্লেভ লিখেছেন : একটা হিজাবি মেয়ের জন্যে প্রতিনিয়ত এটা একটা রিমাইন্ডার যে, আমি আমার বাইরের সৌন্দর্য নিয়ে এতো মাথা ব্যথা না করে, আমার ভিতরটাকে সুন্দর করতে মন দেই! আমার ঈমানটাকে একটু ঘঁষামাঝা করে নিজের ঈমানের মেকআপটা চেঞ্জ করি, যেন কিয়ামতের দিন যখন আল্লাহর সামনে আমার আমলনামার লিস্টটা দেখানো হবে,তখন যেন বিলিয়ন বিলিয়ন মানুষের মধ্যে আমাকে আল্লাহর সামনে দেখতে সবচেয়ে সুন্দর লাগে...


অসাধারন বলেছেন। পুরো ৩ কেজী খাসির গোস্তের ঝোল ঝোল গোস্তের শুভেচ্ছা Happy


আপনি ইচ্ছা করলে আমাকে এ্যাড করতে পারেন
https://www.facebook.com/mohammadaslam.khan.7146
385133
১৮ এপ্রিল ২০১৮ রাত ০৩:৫০
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ!
আমি এমন অনেক মেয়েকে জানি যারা দেখতে অসম্ভব সুন্দর, কিন্তু তাদের চরিত্রের জন্যে কেউ তাদেরকে পছন্দ করে না.কেউ তাদের ধার কাছেও যেতে চায়না. আবার এমন অনেক কে দেখেছি যারা দেখতে হয়তো মোটামুটি এভারেজ, কিন্তু তাদের চরিত্র-ব্যবহার এতো সুন্দর যে সবাই তাদের পছন্দ করে, সবাই তাদের সাথে থাকতে যায়!
385139
১৮ এপ্রিল ২০১৮ রাত ০৮:৫৭
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম। আমাকে ব্লগে ফীরতে বলে নিজেই দেখি চম্পট দিয়েছেন। আমি বির্বতন নিয়ে একটা সিরিজ লিখতে বসেছি প্রথম পর্বটা আমার নিজের কাছেই মনমত হয়নি। পরের পর্বগুলো কিভাবে সাজাবো বুঝতে পারছিনা একটু লেখাটা পড়ে কিছু পরামর্শ পাওয়ার আশা করি। আমি আগে ভাবতাম মেডিকেলের মেয়েরা হয়ত একটু আলাদা পড়ার চাপে নিজেকে নিয়ে ভাবার সময় কই? কিন্তু মেডিকেল এর অবস্হাও এক। ডাক্তারি পড়ার পরেও যদি একটা মেয়েকে নিজের ববাহ্যিক সৌন্দর্য নিয়ে টেনশন করতে হয়, সেটা খুব হতাশাজনক। যাইহোক আপনার ধারাবাহিক টা খুব সুন্দর হচ্ছে। পরের পর্বের আশায় রইলাম।
385144
২১ এপ্রিল ২০১৮ সকাল ০৮:৪৯
আকবার১ লিখেছেন :

Nice writing

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File