ও মাই গড! ৮৩ বছর!!!

লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১৯ জুন, ২০১৭, ০৪:১৩:০০ বিকাল



লাইলাতুল ক্বদরের রাতটা কেমন এটা ভালোভাবে বুঝার জন্যে একটা চমৎকার উদাহরণ আছে। ধরুন, আপনার বস্‌ আপনাকে বললো আগামী দশদিনের মধ্যে একটা স্পেশাল দিন আছে। যেই কি না সেই দিনটিতে অফিসে এসে ঠিকমত কাজ করে যাবে, আমি তাকে ৮৩ বছর ধরে কাজ করার মতন বেতন দিয়ে দিব!

কেউ কি সেই দিন মিস্‌ করতে চাইবে?

আল্লাহ্‌ তা’আলা কুর’আনে বলেছেন, “লাইলাতুল ক্বদরি খইরুম মিন আলফি শাহ্‌র” – অর্থাৎ লাইলাতুল কদরের রাত ১০০০ মাসের চেয়েও উত্তম! এই একরাতে ইবাদাত করলে ৮৩ বছর ধরে ইবাদাত করার সওয়াব পাওয়া যাবে! সিরিয়াসলি একটু ভেবে দেখুন! এভারেজ মানুষ বাঁচেই জীবনে ষাট কি সত্তর বছর। সেখানে আল্লাহ্‌ তা’আলা আপনাকে, আমাকে ৮৩ বছর ধরে তাঁর ইবাদাত করার পুরস্কার দিবার অফার দিচ্ছেন! ইন ফ্যাক্ট, এটা ৮৩ বছরের চেয়েও উত্তম! মানে, আপনি সারাজীবন বেঁচে থেকেও যত ইবাদাত করতে পারতেন, একরাতে কেবল পাঁচ কি দশ ঘন্টা ইবাদাত করেই সেটা পেয়ে যাচ্ছেন! সুবহানআল্লাহ্‌! বাম্পার অফার বুঝি একেই বলে!

লাইলাতুল ক্বদর টা Exactly কবে? –

যদিও আমাদের দেশে ২৭ শে রোজাকে শবে ক্বদর বলে সবাই জানে, আসলে লাইলাতুল ক্বদর রোজার শেষ দশ দিনের যে কোনরাতেই হতে পারে, বেজোড় রাত গুলি হবার সম্ভাবনা বেশি আর কিছু হাদীস অনুযায়ী ২৭ তারিখে হবারও সম্ভাবনা আছে। কিন্তু স্কলাররা এটাই উপদেশ দেন যে, শেষ দশ রাতের প্রতিটা রাতকে লাইলাতুল ক্বদর ভেবে যে ইবাদাত করবে, সে অবশ্যই লাইলাতুল ক্বদর পেয়ে যাবে। আমাদের মহানবী(সাঃ) রোজার শেষ দশ দিন চলে আসলে কোমড় বেঁধে ইবাদাত করতে লেগে যেতেন, তিনি এই লাস্ট দশ দিন ধরেই টানা ই’তিকাফ করতেন, ২৭ রোজা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন না। এটা নিয়ে বিস্তারিত হাদীসের বর্ণনা আর শরীয়াহ্‌র প্রমাণ পেতে এই লেকচার টা শুনে দেখতে পারেন --

Laylatul Qadr

আমদের লাইলাতুল ক্বদর রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারণেই আমরা এই রাতে ইবাদাত করা নিয়ে গাফেল থাকি। কেউ যদি নাই জানে যে এই রাত টা মিস্‌ করার মাধ্যমে সে কত ধন-রত্ম হারিয়ে ফেলছে, তাহলে সে কিভাবে ইবাদাত করবে?

কিছু প্র্যাক্টিকাল টিপ্‌সঃ

- রোজার শেষ দশ রাতের প্রতিদিন এক টাকা হলেও দান করুন। তাহলে আপনার দান লাইলাতুল কদরের মধ্যে পড়লে আপনি ৮৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে দান করার সওয়াব পাবেন।

- রোজার শেষ দশ রাতে প্রতিদিন অন্তত দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়ুন। আপনার নামাজ লাইলাতুল কদরের মধ্যে পড়লে আপনি ৮৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে নামাজ পড়ার সওয়াব পাবেন।

- রোজার শেষ দশ রাতে প্রতিদিন কুরআন পড়ুন। তাহলে আপনার কুরআন পড়া লাইলাতুল কদরের রাতের মধ্যে পড়লে আপনি ৮৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে কুরআন পড়ার সওয়াব পাবেন।

- কুরআন বুঝে পরার চেষ্টা করুন যতটুকু পারেন। আল্লাহ্‌ এই লাইলাতুল ক্বদরেই কুরআনকে পাঠিয়েছেন আপনার আমার জন্যে গাইডেন্স হিসেবে। কুরআন শুধু কিছু না বুঝেই আরবি পড়ে খতম দেয়ার জিনিস না। কুরআন হচ্ছে আল্লাহ্‌র কাছ থেকে আসা গাইডেন্স আর পথনির্দেশক। আপনার লাইফের সমস্ত সমস্যার সমাধান আছে কুরআনে! অর্থ সহ একটু পড়ে বুঝার চেষ্টা করুন আল্লাহ্‌ তা’আলা আপনাকে কি বলছেন কুরআনে।

- আল্লাহ্‌র সাথে কথা বলুন! আল্লাহ্‌র সাথে সম্পর্ক গড়ুন! আল্লাহ্‌ কে আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবে কথা বলুন, সবকিছু শেয়ার করুন, গাইডেন্স চান এবং আল্লাহ্‌র উপর ভরসা রাখুন। দুনিয়ার সবাই আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে, কিন্তু আল্লাহ্‌ তা'আলা যাবেন না!

- একটা দুয়ার লিস্ট বানিয়ে বেশি বেশি দুয়া করুন। দুয়াগুলি শেষ দশ রাতে পড়তে থাকুন। লাইলাতুল ক্বদরের রাতে আল্লাহ্‌ তা’আলা আপনার ভাগ্যে আগামী বছরের সমস্ত খুঁটি-নাটী ঘটনা নির্ধারণ করেন। আপনি এইরাতে আন্তরিক দুয়ার মাধ্যমে আপনার ভাগ্য পাল্টে দিতে পারেন। যেমন ধরুন, কেউ যদি দুয়া করে, “ইয়া আল্লাহ্‌! আগামী বছরের মধ্যে আমার এই চাকরি টা যেন হয়ে যায়” – সে যদি আন্তরিকতা এবং ঈমানের সাথে আল্লাহ্‌র কাছে লাইলাতুল ক্বদরে এটা চায়, তাহলে আল্লাহ্‌ তা’আলা তার আগামী বছরের ভাগ্য নির্ধারণের সময় চাকরি টার কথা লিখে দিবেন! এজন্যেই লাইলাতুল ক্বদরের আরেক নাম ভাগ্য রজনী! সুবহানআল্লাহ্‌! আল্লাহ্‌র কাছে মন খুলে চান এবং আল্লাহ্‌কে নিয়ে ভালো চিন্তা করুন যে, আল্লাহ্‌ অবশ্যই আপনার দুয়া কবুল করে নিবেন এবং আপনাকে অবশ্যই সবচেয়ে ভালো কিছুই দিবেন।

- নিজেদের মত করে ছোট-বড় সবরকমের ভালো কাজ করতে থাকুন! বাসার সবার জন্যে সেহ্‌রী বানিয়ে দিন, বাসন গুলো ধুয়ে দিন, অনেকদিন যার সাথে কথা হয়না তাকে ফোন করে খোঁজ খবর নিন, কারো প্রতি রাগ থেকে থাকলে সেটা ঝেড়ে ফেলুন, ক্ষমা করে দিন, কিছু টাকা জমিয়ে এতিম খানায় দিয়ে আসুন, গরিব বস্তির একটা ফ্যামিলিকে একবেলা ভালো খাইয়ে দিন, আপনার বাসায় কাজ করে মেয়েটার সাথে শুধু শুধু খারাপ ব্যবহার করা বন্ধ করে দিন, ওকে সুন্দর একটা ঈদের জামা কিনে দিন – ইত্যাদি ইত্যাদি যেখানে যেই ভালো কাজ করারই সুযোগ পান, সেটা লুফে নিয়ে করে ফেলুন এই নিয়তে যে, এটা করার মাধ্যমে আপনি আল্লাহ্‌কে খুশি করবেন। আপনার কাজ টা যদি লাইলাতুল ক্বদরের রাতের মধ্যে পরে যায়, ব্যস! ৮৩ বছর ধরে সেই ভালো কাজ করার সওয়াব পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ্‌!

শেষমেশ একটা হাদিস দিয়ে শেষ করি! একবার আমাদের মহানবী(সাঃ) মস্‌জিদের মিম্বারে উঠার সময় তিনবার “আমিন” বললেন। সাহাবী রা জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহ্‌র রসূল(সাঃ)! আপনি আমিন বললেন কেন?”। তিনি উত্তর দিলেন যে, ফেরেস্তা জিব্রাইল(আঃ) মাত্র আমার কাছে আসলো এবং সে বললো, “যে ব্যক্তি বেঁচে থাকা অবস্থায় রমাদান মাস পেলো, অথচ সে তার জীবনের সমস্ত গুণাহ্‌ ক্ষমা করিয়ে নিতে না পারলো, সে ব্যক্তি ধ্বংস হয়ে যাক।“ তারপর জিব্রাইল(আঃ) বললেন আমিন। এবং মহানবী(সাঃ)-ও বললেন আমিন। ভয়ঙ্কর হাদিস, কারণ মহানবী(সাঃ) এবং ফেরেস্তা জিব্রাইল(আঃ) এর বদ-দুয়া অবশ্যই কবুল হবে। একই সাথে এটা আশা জাগানীয়া হাদিস কারণ, রমাদানের এখনো কিছু দিন বাকি আছে, আল্লাহ্‌র ক্ষমা, ভালোবাসা আর জান্নাত অর্জন করে নিবার সময় এখন শেষ হয়ে যায়নি ইনশাআল্লাহ্‌! নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, কিন্তু আমাদের চাইতে হবে! খুঁজতে হবে! আল্লাহ্‌ আমাদের সেই তাওফিক দিন! আমিন।



বিষয়: বিবিধ

১১২৮ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

383380
১৯ জুন ২০১৭ রাত ১০:১৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমিন। অনেক ধন্যবাদ।
১৫ অক্টোবর ২০১৭ রাত ০৮:১৫
316938
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : ApnakeO Onek Dhonnobad time niye porar jonne. BarakAllahu feek
383386
১৯ জুন ২০১৭ রাত ১১:৫৫
মনসুর আহামেদ লিখেছেন : আপু long time, you did not write anything. Thanks for coming back
১৫ অক্টোবর ২০১৭ রাত ০৮:১৬
316939
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : Jee vaia besto tar jonne likha hoi na ager moton. Onek shukriya.
383387
১৯ জুন ২০১৭ রাত ১১:৫৯
আকবার১ লিখেছেন : চমৎকার আপা,
১৫ অক্টোবর ২০১৭ রাত ০৮:১৬
316940
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : Onek dhonnobad apnake

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File