আলেপ্পো, রক্ত আর আমরা!

লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৭:৫২:২০ সন্ধ্যা



সিরিয়ার আলেপ্পো সিটির আপডেট নিতে কালকে থেকে নেট ঘাঁটাঘাঁটি করে যাচ্ছি। আলেপ্পোর লাস্ট হস্পিটালটাও বোমা দিয়ে উড়িয়ে দিল!. রক্তাক্ত মানুষগুলো, ক্ষতবিক্ষত বাচ্চাগুলো এখন চিকিৎসার জন্যে যাবে কোথায়? ভাইয়েরা, স্বামীরা শেইখদেরকে প্রশ্ন পাঠাচ্ছে, আমরা চোখের সামনে আমাদের মা-বোনেদেরকে রেইপ হয়ে মারা যেতে দেখছি, তার আগেই যদি আমরা ওদের ইজ্জত বাঁচাতে মেরে ফেলি, সেটা কি জায়েজ হবে কি না??



টুইটারে আলেপ্পোর মানুষদের আর্তনাদ শুনছে পুরা বিশ্ব! সিভিলিয়ানদের পোস্টগুলি সবখানে শেয়ার করা হচ্ছে, "This is the last call to every free person on earth! Save the city of Aleppo!! Save us!!"



মুসলিমদের এভাবে পশুদের মতন নির্বিকারে মেরে ফেলা নতুন কিছু না। কাল ছিল রোহিঙ্গা, তার আগে ফিলিস্তিন, তো আজকে আলেপ্পো। এসব দেখতে দেখতে আমাদের চোখ সয়ে গেছে। আমরা খবর দেখি, আমাদের খারাপ লাগে, মাঝে মাঝে সেয়ার করি, তারপর স্ক্রল ডাউন করে নিত্য দিনের কাজে ফিরে যাই। আবার অনেক সময় আমরা এসব দেখতে চাই না, কারণ সহ্য করা কঠিন। ২-৩ বছরের ছোট ছোট বাচ্চা গুলির মুখে রক্ত ছাড়া আর কিছু নেই। মা-বাবার লাশের উপর হন্যে হয়ে কাঁনছে। দেখে আমাদের নিজেদেরও অসহায় লাগে, ডিপ্রেস হয়ে যাবার মতন অবস্থা! But this is not the time for Depression, This is the time for realization!

আমাদের নবী (সাHappy যে উম্মাতের কথা বলেছেন, যার দেহের এক অংশ কোন ব্যথা পেলে/অসুস্থ হলে, পুরো দেহই এফেক্টেড হয়ে যায় - সেই উম্মাহ কি আমরা আদৌ হতে পেরেছি?

পুরো বিশ্বে প্রায় ২ বিলিয়নের মতন মুসলিম, আমরা সংখ্যায় কিন্তু কম না। আমরা সবাই আল্লাহ্‌র জন্যে একজন আরেকজনকে ভালোবেসে একত্রিত হলে কেউ আমাদের কিছু করতে পারতো না। কিন্তু আমাদের ঈমান মরে গেছে, অন্তর পাথর হয়ে গেছে! মানচিত্রের বর্ডার আমাদেরকে আমাদের অন্য দেশের মুসলিম ভাই-বোনদেরকে ভালোবাসতে ভুলিয়ে দিয়েছে। আমরা ভুলে যাই যে, আল্লাহ তা'আলা সব দেখছেন, সব! জালিমের অত্যাচার, মজলুমের দুয়া, আমাদের কেয়ারলেস এটিটিউড - কোনকিছুই তার নজরের বাইরে নয়! এগুলো কি শেষ দিবসের সাইন না?! আমাদের অবশ্যই সেদিন আল্লাহ-র সামনে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু আমাদের কারো মাথা ব্যথা করার সময় নেই!

সেদিন-ও হাদিসে পড়ছিলাম, আবু হুরাইরা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, শীঘ্রই মানুষ তোমাদেরকে আক্রমন করার জন্য আহবান করতে থাকবে, যেভাবে মানুষ তাদের সাথে খাবার খাওয়ার জন্য একে-অন্যকে আহবান করে।’ জিজ্ঞেস করা হলো, ‘তখন কি আমরা সংখ্যায় কম হবো?’ তিনি বললেন, ‘না, বরং তোমরা সংখ্যায় হবে অগণিত কিন্তু তোমরা সমুদ্রের ফেনার মতো হবে, যাকে সহজেই সামুদ্রিক স্রোত বয়ে নিয়ে যায় এবং আল্লাহ তোমাদের শত্রুর অন্তর থেকে তোমাদের ভয় দূর করে দিবেন এবং তোমাদের অন্তরে আল-ওয়াহ্হান ঢুকিয়ে দিবেন।’ জিজ্ঞেস করা হলো, ‘হে আল্লাহররাসুল (সা.), আল-ওয়াহ্হান কি?’ তিনি বললেন, ‘দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুকেঅপছন্দ করা।’

(সুনানে আবু দাউদ ও মুসনাদে আহমদ).

আমরা তাহলে কি করতে পারি? এটা সত্য যে, আমাদের হাত-পা অনেকটাই বাঁধা! সাধারণ সিটিজেন হিসেবে আমাদের ক্ষমতা সামান্যই। আর যাদের হাতে ক্ষমতা, তারা তো টাকা আর পাওয়ার ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না। বৃষ্টির মতন বোমার পর বোমা ফেলে যাচ্ছে, গণহারে মানুষ মারছে -তাদের মোটা চামড়ায় কিচ্ছু লাগছে না! তারা পাওয়ারে থাকলেই হল। যেহেতু বিশ্বে কোথাও একটা established Islamic সোসাইটি নেই, Higher authorities থেকে বড় কোন movement না নিলে, একা একা বিচ্ছিন্ন কিছু মানুষ বা গ্রুপের পক্ষে হয়তো বড় কিছু করা সম্ভব না. তাহলে কি আমাদের কিছুই করার নেই?

আমরা এট লিস্ট আমাদের জায়গায় থেকে দুয়া করতে পারি। সাধ্যমতন volunteer organization গুলোতে ডোনেট করতে পারি। আমাদের যাদের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে কষ্ট হয়, অন্তত আজকে এক-দুই ওয়াক্ত পড়ে ফেলি। যারা নিয়মিত নামাজ পড়ি, আমরা এক্সট্রা নফল নামাজ পড়ে আল্লাহ্‌র কাছে তাদের জন্যে দুয়া করি! দুয়া অনেক অনেক পাওয়ারফুল! আল্লাহ তা'আলা বিশ্বাসীদের দুয়া ফেলে দেন না!

আর কিছুই যদি না পারি, অন্তত ব্যস্ত দিন থেকে পাঁচ মিনিট সরিয়ে একটু reflect করি, কেন আমাদের ভাই-বোনের কষ্টে আমাদের কোন ভ্রক্ষেপ হয় না? কেন আমরা আজকে ইসলাম থেকে এতো দূরে চলে এসেছি? কেন আমাদের অন্তর থেকে আল্লাহর জন্যে ভালোবাসা আর ভয় বলতে কিছু বাকি নেই?

যারা শহীদ হয়ে আল্লাহর কাছে ফিরে গেলো, ওদের পরীক্ষা শেষ, জান্নাতে ওদের আত্মা সবুজ পাখি হয়ে উড়ছে ... ইনশাআল্লাহ। আমাদের পরীক্ষা এখনো শেষ না! এই পরীক্ষা গুলির মাঝেই আমরা যেন আল্লাহর কাছে ফিরে যাবার রাস্তা খুঁজে পাই! আমরা যেন নিজেরা নিজেদের জন্যে জান্নাতের দরজা বন্ধ করে না দেই. আল্লাহ সুবহানুতা'আলা আমাদের অক্ষমতার জন্যে আমাদের ক্ষমা করে দিক এবং আমাদের শহীদ ভাই-বোন দের সাথে আমাদের জান্নাতে মিলিত হবার তাওফিক দিক. আমিন

বিষয়: বিবিধ

১২৭৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

380704
১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৮:২৪
তবুওআশাবা্দী লিখেছেন : অনেক দিন পর আসলেন, লিখলেন, আর জয়ও করলেন | ভালো লাগলো | আমি অনেক দিন ধরেই নিউজগুলো আর পড়ি না | না রোহিঙ্গা, না সিরিয়া কোত্থাক্কারও না | আর ভালো লাগে না | সি এন এনের সবচেয়ে কঠিন মনে হতো যে হোস্ট -কেট বল্ডউইন | তাকেও একদিন লাইভ প্রোগ্রামে দেখলাম সিরিয়ার রিপোর্ট করতে যেতে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন | আমি শিওর সিরিয়ান হসপিটালে বোম্বিংয়ের পর উদ্ধার করা বাচ্চাটার ভিডিওটা দেখাতে দেখাতে তাদের বাঁচাবার জন্য আমেরিকার ইনিশিয়েটিভের সমালোচনা করে কেট বল্ডউইন যা বললেন টা তার স্ক্রিপ্টে ছিল না | খারাপ লাগে তখনি যখন দেখি আমরা প্রকাশ্যে তেমন করেও আমাদের ব্যাথাগুলো প্রকাশ করতে পারলাম না ! আমাদের পাশের দেশেই মুসলিমরা মারা যাচ্ছে তাদের একটু জায়গা দিতেও আমাদের অনীহা ! পৃথিবীর সুখে কি যে মজলাম আমরা ! ‘দুনিয়ার প্রতি ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে অপছন্দ করা' শুধু মুসলিমই হলাম | মুমিন হতে আর পারলাম না ! এই কষ্ট যে আর কত দিন বয়ে বেড়াতে হবে কে জানে | অনেক ধন্যবাদ লেখাটার জন্য |
380705
১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ০৯:৩৪
সত্যের বিজয় লিখেছেন : কিছু বলার ভাষা নাই :'( শুধু বলি হে আল্লাহ্ নির্যাতিত বিশ্ব মুসলিমদের তুমি রক্ষা করো
380718
১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ রাত ১০:৫৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আমিন। নিরবাক হয়ে আমরা শুধু আমাদের অক্ষমতার কথা ভাবি।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File