দ্য জার্নি টু ফেইথ-১০

লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১২ আগস্ট, ২০১৬, ০৬:৫৭:৩৪ সকাল



“ ... আমি ইসলাম ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করলাম। ইসলামের মূলেই হচ্ছে এটা বিশ্বাস করা যে, সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন আল্লাহ্‌ সুবহানুতা’আলা, তিনি এক, অদ্বিতীয় এবং অতুলনীয়। তাঁর সাথে কারো তুলনা নেই। সে তাঁর সৃষ্টির মতন হতে পারে না। তাঁর সৃষ্টির মতন তাঁর কোন ঘুম, খাবার বা পার্টনারের প্রয়োজন পড়ে না। সে ছেলেও না, মেয়েও না। ইভেন, আরবিতে “আল্লাহ্‌” শব্দটাও ইউনিকলি শুধু সৃষ্টিকর্তার জন্যেই ব্যবহৃত হয়েছে! তাঁকে কেউ সৃষ্টি করেননি, কিন্তু তিনি সবকিছুর স্রষ্টা! তাঁর কোন শুরু বা শেষ নেই; কিন্তু তিনি শুধু বলেন, “হও” আর তিনি যা চান তাই হয়ে যায়! আমাদেরকে তিনি-ই বানিয়েছেন, দুনিয়াতে তাঁর প্রতিনিধি করে পাঠিয়েছেন এবং তাঁর কাছেই আমাদেরকে ফিরে যেতে হবে। তাঁকে দেখা যাবে না, ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না; কিন্তু আকাশ, বাতাস, পাহাড়-পর্বত, প্রকৃতির কোণে কোণে বিশ্বাসীদের জন্যে আল্লাহ্‌ রব্বুল আ’লামীনের নিদর্শন রয়েছে। বিশ্বাসীরা সর্বদা আল্লাহ্‌র কাছেই থাকেন। এক মুহুর্তের জন্যে তাঁদের কখনো একাকী লাগে না। আমার রব আছে আমার সাথে, সুখে, দুঃখে, বিপদে-আপদে কিছু হলেই বিশ্বাসীরা তাঁর কাছে ফিরে যায়। তাঁর রবের কাছে ফিরে যায়। সৃষ্টিকর্তার এর থেকে Accurate বর্ণনা আমি আর কোথাও পাই নি!

আল্লাহ্‌ যুগে যুগে তাঁর গাইডেন্স, তাঁর মেসেজ পাঠানোর জন্যে মেসেনজার পাঠিয়েছেন। এই নবী-রাসূলেরাই হলেন সত্যিকারের হিরো! তারা আল্লাহ্‌র দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্যে কি না করেছেন! সুবহানআল্লাহ্‌! অন্যান্য ধর্ম গুলি নিয়ে আমার পড়া-শোনা আর নবী-রসূল(সাঃ) এর কাহিনী গুলির মধ্যে আমি বেশ মিল পেতে থাকলাম। এই যে যিশু খ্রিস্ট, ঈসা(আঃ), ইনিও আমাদের-ই নবী! তিনিও ইসলাম প্রচার করে গেছেন, আল্লাহ্‌কে এক রব হিসেবে মানতে বলে গেছেন। কিন্তু তার ফলোয়াররা পথ-ভ্রস্ট হয়ে তাকেই পূজা শুরু করেন। মুসা (আঃ), যাকে “মোসেস” বলে ইহুদিরা! আরে তিনিও আমাদের নবী! বনী ইসরাইলদের জন্যে কি না করেছেন তিনি! কিন্তু ইহুদিরা নিজেদের অহংকারে পথভ্রস্ট হয়ে গেছেন। আরো জানলাম আমাদের শেষ নবী রসূল(সাঃ) সম্পর্কে! আমার রসূল, আমার হিরো- মুহম্মদ (সালাল্লাহু ওয়া আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।

.

.

আমি ভাবতাম আমার লাইফে কত দুঃখ-কষ্ট-স্ট্রাগল!! আর আমাদের মুহম্মদ(সাঃ) এর ঘরে দিনের পর দিন কোন চুলা জ্বলতো না, তিনি পেটে পাথর বেঁধে রাখতেন ক্ষুধার জালায়! যখন অনেক কষ্টে সারাদিনর খাওয়ার জন্যে একটা খেঁজুর মিলতো, তিনি সবাইকে ডেকে সেই একটা খেঁজুরই ভাগাভাগি করে খেতেন। আর আমার? চাওয়ার আগেই টেবিলে রকমারি খাবার রেডী!!

রসূল(সাঃ) এর ঘর এত ছোট ছিল যে, যখন আয়িশা(রাঃ) ঘুমাতেন আর রসূল (সাঃ) নামাজ পড়তেন, আয়িশা(রাঃ) এর শরীরের অংশ নবী(সাঃ) এর সিজদার জায়গায় চলে আসতো। সিজদা করার সময় আয়িশা(রাঃ) কে আলতো করে সরে নিতে ইঙ্গিত করে তারপর সিজদা করতে হতো!

.

আমি ভাবতাম, আল্লাহ্‌ কেন আমার কাছ থেকে আমার আব্বুকে নিয়ে গেলেন! আর আমাদের নবী(সাঃ) জন্মের আগেই বাবাকে হারান, ৬ বছর বয়সে মাকে হারান! ইসলাম প্রচার করা শুরু করার পর একে একে উনার সমস্ত শুভাকাংখী, আত্মীয়দের হারান! সাথে ছিল শুধু এক চাচা আর তাঁর স্ত্রী খাদিজা(রাঃ) আর গুটি কয়েক বিশ্বাসী মুসলিম! মুহাম্মদ(সাঃ) এর এর “ইয়াওমাল হুজ্‌ন” (Year of sorrow) এর কাহিনী পরে চোখের পানি ধরে রাখা যায় না! তিনি প্রথমে তার চাচাকে হারালেন। এরপর তার স্ত্রী মারা গেলেন। তিনি ভাঙ্গা হৃদয় নিয়ে তায়েফে গেলেন ইসলাম প্রচার করতে, আর সেখানের মানুষগুলি তাকে পাথর মেরে মেরে রক্তাক্ত করে ফেললো! সুবহানআল্লাহ্‌, একটা চাকু দিয়ে টান দিয়ে রক্ত বের করে ফেলা সোজা, কিন্তু পাথর দিয়ে মেরে মেরে রক্ত বের করে ফেলতে কি পরিমাণ ব্যথা আর কষ্ট সহ্য করতে হয়েছিল রসূলকে! জিবরীল(আঃ) এসে নবী(সাঃ) কে বললেন, "আল্লাহ্‌র রসূল! খালি একবার আপনি বলেন, যারা আপনার এ অবস্থা করেছি দুই পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে তাদের এখনি ধ্বসিয়ে দেই!” কিন্তু না! আমাদের নবী দু’হাত তুলে সেই মানুষগুলির জন্যে দুয়া করলেন, তাদের ক্ষমা করে দিলেন!! এই সেই মানুষটা- যাকে কাফেররা বলেছিল, “তোমাকে আমরা ধন-দৌলত, ক্ষমতা, রমণী- সব দিবো! তোমার এই ইসলাম প্রচার বন্ধ করো! তোমার জন্যে আমাদের পলিটিক্‌সের বারোটা বেজে যাচ্ছে!” কোন কিছু দিয়েই কেউ তাঁকে সত্য প্রচার করতে থামাতে পারে নি! এ সত্য এমন-ই সত্য! এই সত্যে এত পাওয়ার!যুগে যুগে যত নবী-রসূল এসেছেন, তারা যে এই সত্যই প্রচার করে গিয়েছেন, এর জন্যে লড়েছেন, রক্তাক্ত হয়েছেন, জান দিয়েছেন; এবং এই ইসলামই যে একমাত্র সত্য ধর্ম সেটা বুঝতে আমার আর বাকি রইলো না।

তখনকার আরবরা কুরআন শুনে ভাবতো হয় এটা জাদু নাহয় অসম্ভব কিছু! কারণ এমন ভাষাশৈলী, রুপঙ্কার, সাহিত্য দিয়ে ভরা সুন্দর আয়াত কেউ কোন দিন শুনে নি! আমরা আরবী বুঝি না বলে আমরা কুরআনের মর্ম বুঝিনা! কুরআনে চ্যালেঞ্জ করা আছে যে যদি কেউ পারো তবে কুরআনের মতন আরেকটা একটা আয়াত এনে দেখাও! ১৪০০ বছর ধরে আজো সেই Challenge ওপেন আছে এবং কেউ আজ পর্যন্ত কুরআনের মতন একটা আয়াত বানিয়ে আনতে পারে নি! সুবহানআল্লাহ্‌ "The Amazing Quran" সহ কুরআন নিয়ে আরো কিছু বই পড়ে, কুরআনের Scientific Miracle গুলি পড়ে আমি হতভম্ভ হয়ে গেলাম!

আমার আল্লাহ্‌র সাথে অনেক অভিমান ছিল! আমার সাথে লাইফে যা যা খারাপ কিছু হয়েছে তা কেন তিনি এভাবে হতে দিলেন!! অথচ আমার নবী(সাঃ) এর কাহিনী পড়ে মনে হল আমার লাইফে যেন কোনদিন কোন দুঃখই ছিল না! এই মানুষটা আল্লাহর মেসেনজার, আল্লাহ্‌র নবী, আল্লাহ্‌র কত কাছের বান্দা! অথচ তাকে পদে পদে আল্লাহ্‌ পরীক্ষা করেছেন! সেখানে আমি কি!! আর এমন দুঃখ কষ্টের মধ্য থেকেও তিনি রাতে কিয়ামে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্‌র এত ইবাদাত করতেন যে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তার পা ফেটে রক্ত বের হয়ে যেত! আয়িশা(রাWinking নিরুপায় হয়ে জিজ্ঞেস করতেন, “হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনার রব আপনার উপর রহম করেছেন, আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন! তাও আপনি কেন এত ইবাদাত করছেন!?!” উত্তরে তিনি হেসে বলতেন, “আমি কি আমার রবের একজন শোকরগুজারী বান্দা হবো না?”

সুবহানআল্লাহ্‌! এই মানুষটা ইসলামের জন্যে সারাটাজীবন স্ট্রাগল করেছেন। এটা নিশ্চিত করতে বার বার রক্তাক্ত হয়েছেন যেন তাঁর উম্মাহ্‌ ইসলামের গাইডেন্সটা ঠিকমতন পায়, তাঁর উম্মাহ্‌ যেন ভালো থাকে। মারা যাবার ঠিক শেষ মুহুর্তেও তাঁর মুখে শোনা গিয়েছিল “উম্মাতি! উম্মাতি! আমার উম্মাহ্‌! আমার উম্মাহ্‌!” হায় আমি তাঁর উম্মাহ্‌ হয়ে আজকে কিভাবে ইসলামের নাম ডুবাচ্ছি সেটা ভেবে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেলো!

(চলবে ইনশাআল্লাহ্‌ ... ...)

বিষয়: বিবিধ

১২৬০ বার পঠিত, ১২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

376156
১২ আগস্ট ২০১৬ সকাল ১১:৪১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
১৫ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:২১
311987
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : সাথে থেকে উৎসাহ দিয়ে যাবার জন্যে এবং ধৈর্য্য ও সময় নিয়ে লিখাগুলি পড়ার জাঝাকাল্লাহ খইর!
376161
১২ আগস্ট ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:১৫
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ পিলাচ
১৫ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:২২
311988
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : ধৈর্য্য ও সময় নিয়ে লিখাগুলি পড়ার জাঝাকাল্লাহ খইর!
376174
১৩ আগস্ট ২০১৬ রাত ০২:৫৮
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ইসলামের মূলেই হচ্ছে বিশ্বাস করা সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন আল্লাহ্‌ সুবহানুতা আলা তিনি এক অদ্বিতীয় অতুলনীয়। তাঁর সাথে কারো তুলনা নেই অনেক অনেক ভালো লাগলো ধন্যবাদ অনেক অনেক ধন্যবাদ
১৫ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:২২
311989
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : সাথে থেকে উৎসাহ দিয়ে যাবার জন্যে এবং ধৈর্য্য ও সময় নিয়ে লিখাগুলি পড়ার জাঝাকাল্লাহ খইর!
376185
১৩ আগস্ট ২০১৬ সকাল ১০:৪২
দ্য স্লেভ লিখেছেন : জাজাকাল্লাহ খায়রান অনেক চমৎকার উপলব্ধী। আল্লাহ আপনার প্রতিটি পদক্ষেপকে নেকী দ্বারা পরিপূর্ণ করুন এবং সেটাকে দৃঢ় করুন !
১৫ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:২২
311990
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : সুন্দর দুয়াতে আমিন! আল্লাহ সুবহানুতা'আলা আপনাকে কবুল করে নিক।

সাথে থেকে উৎসাহ দিয়ে যাবার জন্যে এবং ধৈর্য্য ও সময় নিয়ে লিখাগুলি পড়ার জাঝাকাল্লাহ খইর!
376197
১৩ আগস্ট ২০১৬ সকাল ১১:২৭
আবু নাইম লিখেছেন : য় আমি তাঁর উম্মাহ্‌ হয়ে আজকে কিভাবে ইসলামের নাম ডুবাচ্ছি সেটা ভেবে আমার হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গেলো!
খু্বই ভাল লাগল।
সাথেই আছি.অনেক ধন্যবাদ.
১৫ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:২২
311991
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : সাথে থেকে উৎসাহ দিয়ে যাবার জন্যে এবং ধৈর্য্য ও সময় নিয়ে লিখাগুলি পড়ার জাঝাকাল্লাহ খইর! অনেক ধন্যবাদ।
১৫ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:৪৬
311994
কুয়েত থেকে লিখেছেন : مرحبا بكم بارك الله فيك وجزاك الله خيرا Good Luck Good Luck وشكرا لك يا اختي
376463
১৯ আগস্ট ২০১৬ রাত ১২:০৯
আমীর আজম লিখেছেন : গভীর উপলব্ধি। নিজের জীবনকে দিয়ে ইসলামকে বোঝা। রাসূল (সাHappy কে বোঝা, খুব কম লোকেই পারে। ধন্যবাদ আপনাকে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File