দ্য জার্নি টু ফেইথ-৯
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১০ আগস্ট, ২০১৬, ০৮:৫৬:৩১ রাত
“...আমি এমনিতেই বইয়ের পোকা! তাই যে কোন কিছু নিয়ে পড়তে আমার ভালো লাগতো। ধর্ম হলে ধর্মই সই! আমার চারপাশ ভর্তি যেহেতু খ্রিস্টান, তাই আমি সবার প্রথমে খ্রিস্টান ধর্ম নিয়েই ঘাঁটাঘাটি শুরু করলাম। প্রথমেই যেটা দেখে অবাক হলাম যে, খ্রিস্টান ধর্মের মধ্যে বেশ কয়টা গ্রুপ আছে। এটাকে একটা ধর্ম বললে যেন ভুল হবে। আমেরিকাতেই ৩৫ টা ভিন্ন ভিন্ন গ্রুপের খ্রিস্টান আছেঃ Roman Catholic, Jenovah’s Witnesses, Orthodox – এরকম বিভিন্ন নামে খ্রিস্টানদের অনেকগুলো গ্রুপ! আবার প্রত্যেকটা গ্রুপের ভিন্ন ভিন্ন বাইবেল, Even ওরা আলাদা আলাদা চার্চে ওরা Pray করতে যায়। ইন ফ্যাক্ট, মাঝে মাঝে এই গ্রুপের নিজেদের মধ্যেও কে সাদা আর কে কালো এর ভিত্তিতে আফ্রিকান আমেরিকান দের চার্আচ লাদা আর সাদাদের চার্চ আলাদা!
কিছু পড়াশোনা করে যেটা বুঝলাম, বাইবেলে অনেক ভুল আর Contradictory ইনফো আছে। একই ধর্মের ধর্মগ্রন্থ, তবে এক বাইবেলের সাথে আরেক বাইবেলের কোন মিল নেই। আমি আমার খ্রিস্টান ফ্রেন্ড দের জিজ্ঞেস করলে তারা বলে যে, ওরা বেশিরভাগ-ই নিজে থেকে বাইবেল পড়ে দেখেনাই কখনো। প্রত্যেক রবিবার চার্চে যায় আর চার্চের ফাদাররা একটা লেকচারের মতন যেই Sermon দেয়, সেটাই ওরা ধর্ম গ্রন্থের শিক্ষা বলে মেনে চলে। এর বাইরে কিছু জানে না, জানার প্রয়োজনও মনে করে না। এমনকি, কিছু কিছু চার্চের ফাদাররা নাকি সমাজের সাথে তাল মিলাতে বাইবেলের নিয়ম-কানুন ধুম-ধাম পরিবর্তন করে ফেলে। যেমনঃ সমকামীতা নিয়ে যখন আমেরিকাতে ক্যাঁচাল হচ্ছিল, কিছু কিছু চার্জ নাকি বাইবেলে যে সমকামীতা নিষিদ্ধ সেটা ভুল বলে নিজেরা নিজেদের মতন নিয়ম বানিয়ে ফেললো যে খ্রিস্টধর্ম এটা সাপোর্ট করে। যদিও সব চার্চ এমন না, তাও আমি যারপরনাই অবাক হলাম!! যদি আমি নিজেই নিজের ইচ্ছামতন নিয়ম বানিয়ে চলছি, তাহলে আর ঈশ্বরের সত্য বাণী এত কষ্ট করে খোঁজার মানে কি!
ক্যাথলিকদের যিশু খ্রিস্টকে নিয়ে ত্রিতত্ত্ব(Trinity) পড়তে গিয়ে আরো কনফিউজ্ড হয়ে গেলাম। ত্রিতত্তের মূলনীতি হচ্ছে যিশু তিন টা রূপে থাকতে পারেনঃ ঈশ্বর, ঈশ্বরের পুত্র আর পবিত্র আত্মা! যে নিজে ঈশ্বর সে নিজেই আবার ঈশ্বরের পুত্র হয় কিভাবে হয় সেটা আমার বোধগম্য হল না! খ্রিস্টধর্মের আরেকটা বিশ্বাস হলো আদম(আঃ) থেকে শুরু করে আমরা গোটা মানবজাতি যত পাপ করে এসেছি এবং করে যাচ্ছি, এই সমস্ত পাপের বোঝা নিয়ে যিশু খ্রিস্টকে ক্রুশে চড়ানো হয়েছে। আমি যদি যিশু কে মানি তাহলে আমার সমস্ত পাপের বোঝা সে নিয়ে আমার আত্মাকে মুক্ত করে দিবেন!! এবার আমার পুরাপুরি মাথা নষ্ট! আমি খারাপ কিছু করলে, আমি পাপ করলে সেটার দায়ভার আমার নিজের, আমার পাপের বোঝা আরেকজন কেন বহন করবে!! তাও স্বয়ং ঈশ্বর নিজে! আবার সে কি ঈশ্বর, নাকি ঈশ্বরের পুত্র, কিছু বুঝতে পারছিলাম না!! ওয়াল্লাহি, আমি কোন ধর্মকে ব্যঙ্গ করছি না!! অসম্ভব ভালো কিছু মানুষকে আমি দেখেছি যারা খ্রিস্টান। তাদেরকে দেখে আমি খ্রিস্টান ধর্ম নিয়ে জানতে আগ্রহী হয়েছি। কিন্তু আমার কোন খ্রিস্টান ফ্রেন্ড আমার কোন প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলো না। কোন ওয়েবসাইটে যুক্তি-যুক্ত কোন উত্তর পেলাম না! এমনকি আমার কিছু কিছু ফ্রেন্ড তো এটাও বলতো যে, এসব প্রশ্ন ওদের মনেও এসেছিল, কিন্তু পরিবার কি ভাববে, চার্চের ফাদার কি ভাববে এই ভয়ে কিছু বলে নি। আবার কিছু কিছু ফ্রেন্ড প্রশ্ন করতে গিয়ে চার্চে এমন বকা খেয়েছে যে, সে তখন থেকেই মনে মনে নাস্তিক হয়ে গেছে কিন্তু ফ্যামিলির সামনে খ্রিস্টান সেজে থাকে!! আমার খ্রিস্টান ধর্ম নিয়ে পড়াশোনার সেখানেই ইতি ঘটলো!
এরপর আমি বৌদ্ধ ধর্মকে দেখতে লাগলাম। বৌদ্ধ ধর্মের মূলনীতি গুলি বেশ সুন্দর, মানব সেবার উপর ভিত্তি করে। কিন্তু ব্যপার টা হলো গৌতম বুদ্ধ তো আমার মতই একজন মানুষ। সে জঙ্গলে গিয়ে ধ্যানে বসার পর ফেরত আসলে মানুষ তার শিক্ষা নিয়ে নতুন ধর্ম শুরু করে আর প্যাগোডায় তার মূর্তি বানিয়ে তার পূজা করে। আমি মানুষ হয়ে আরেকটা মানুষের পূজা করলে আমার আর ঈশ্বরকে খুঁজতে থাকার লাভ টা কি হলো! ব্যস বৌদ্ধ ধর্ম নিয়েও আর আগানো হলো না।
আর ইহুদিদের নিয়ে পড়তে গিয়ে তো রীতিমত ভয় পেয়ে গেলাম! কেউ নাকি চাইলেই ইহুদি ধর্মে ধর্মান্তরিত হতে পারবে না! ওদের নিয়ম হচ্ছে যে, হয় ইসরাঈলে জন্ম নিতে হবে, নাহলে ইহুদি ফ্যামিলিতে জন্ম নিতে হবে। ওরা নাকি সৃষ্টিকর্তার স্পেশালভাবে পছন্দ করা গ্রুপ (“Chosen people”). কনসার্ভেটিভ ইহুদিরা কখনই অন্য ধর্মের কাউকে ইহুদি হতে চাইলে তাকে মেনে নিবে না। বাপরে! এটা আমার কাছে অনেকটা অহমিকার মতন লাগলো! সৃষ্টিকর্তার কাছে সৃষ্টি হিসেবে সবাই হবে সমান কারণ তিনি ন্যায়বিচারক! এভাবে তিনি বিশেষ গ্রুপকেই শুধু তার বাণী দিবেন, আর কাউকে দিবেন না, এটা কিভাবে হয়। যাহোক, ইহুদি ধর্মকেও ক্রস আউট করলাম।
রইলো বাকি হিন্দু ধর্ম আর ইসলাম ধর্ম! (আরো ছোট-খাটো অনেক ধর্মই আছে, কিন্তু আমি ঘেঁটে ঘেটে ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে বড় ধর্মগুলি নিয়েই রিসার্চ করছিলাম। অন্যান্য ধর্ম গুলি নিয়ে একটু পড়লেই বুঝা যায় যে হয় সেগুলি এই ধর্ম গুলির-ই কোন একটার শাখা-প্রশাখা, নয়তো গৌতম বুদ্ধের মতন কোন পপুলার মানুষের ফলোয়ার থেকে ধর্ম হয়েছে। আবার কিছু কিছু কালচার বা ট্রাইব নিয়ে আলাদা হয়ে নিজেদের ধর্ম বানিয়েছে।)
আমি লজিকাল মানুষ, হিন্দু ধর্ম কোন দিনও আমার মাথায় খাটে নাই। আমার নিজের হাতে বানানো মূর্তিকে সাজিয়ে, পূজা করে নিজের হাতেই সেটাকে পানিতে ভাসিয়ে দিলাম! এটা তো উল্টা হয়ে গেলো, আমাকে আমার সৃষ্টিকর্তার যেখানে বানানোর কথা, সেখানে আমার ঈশ্বরকে আমি নিজ হাতে বানাই আর ভাঙ্গি! হিন্দু ধর্ম নিয়ে পড়েও বিশেষ কিছু পেলাম না। রামায়ণ, কৃষ্ণ উপকথা পড়তে রূপকথার গল্পের মতন লাগলো!
রইলো বাকি ইসলাম!! ইসলাম ধর্ম কে ইচ্ছা করেই সবার লাস্টে রেখেছিলাম। ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা শুরু করা নিয়ে আমি বেশ নার্ভাস। হাত-পা কাঁপছে এমন অবস্থা! ভয় লাগছে, ইশ যদি সত্য হয়ে যায়, এত কঠিন ধর্ম আমি কিভাবে মানবো!! আয়িশার কথাগুলি মনে পড়ে গেল,
“ ... যখন ব্যপার টা হচ্ছে সত্য কোনটা সেটা জানার, তখন আবেগ দিয়ে না, স্মার্টলি চিন্তা করতে হবে, ব্রেইন খাটাতে হবে, পড়াশোনা করতে হবে, সত্য সামনে আসলে sincerely and honestly সেটা accept করতে পারার মন মানসিকতা রাখতে হবে!”
জীবনে অনেক কষ্ট দেখেছি, স্ট্রাগল করেছি। আর এখানে ভয় পেয়ে এভাবে পিছিয়ে যাবো। Nope!! সেটা তো হতে পারে না! আমি হাত তুলে কোন দিন মন থেকে মোনাজাত করি নি, কিন্তু সেদিন মনে মনে দুয়া করলাম, “হে আল্লাহ্, ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তা! তুমি যে-ই হও, যেখানেই আছো, আমাকে শুনতে পাচ্ছো! আমার অন্তরকে শান্তি দাও, আমার অন্তরকে সত্য জানার, বুঝার আর মানার তাওফিক দাও!” কোত্থেকে চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি পড়লো। কি অদ্ভুত একটা ভালো লাগা! তাড়াতাড়ি চোখের পানি মুছে ফেললাম। ঘরে আমার বিদ্রোহী মেয়ে হিসেবে অনেক সুবাদ। ছোট ভাই কাঁনতে দেখলেই পচানো শুরু করবে। যাহোক, সব ঝেড়ে ফেলে শুরু করলাম আমার ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা।
... ... আর এর পরে ...
... ...একের পর এক চমকের অপেক্ষা... ...!!
(চলবে ইনশাআল্লাহ্ ... ... )
বিষয়: বিবিধ
১৪০৫ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পড়লাম, দোয়া করি, জাযাকিল্লাহ..
আপনার চিন্তা ধারালো আছে। সঠিক দিকে চিন্তা করে মেয়েটা আগাচ্ছে
এক বসাতে পড়ে উঠলেন মনে হয়! অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। জাঝাকাল্লাহ খইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন