দ্য জার্নি টু ফেইথ-৮

লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ০৮ আগস্ট, ২০১৬, ১০:৩৭:৪৬ রাত



" ... ২০১৩ সালের অগাস্ট! আমি আর আয়িশা একসাথে আমাদের ইউনিভার্সিটি শুরু করলাম! একই ইউনিভার্সিটিতে পড়লেও আমাদের তেমন দেখা হতো না কারণ, আমাদের দুই জনের দুই সাবজেক্ট; আয়িশা পড়ছে কেমিস্ট্রি নিয়ে আর আমি লিটারেচার নিয়ে। তাই আমাদের একসাথে কখনোই ক্লাস থাকতো না। হঠাত হয়তো কোনদিন হলওয়েতে হাঁটতে হাঁটতে বা ক্লাসে যাবার সময় দেখা হয়ে যেত। ক্লাসের ফাঁকে আমাদের দেখা হলে আমরা কয়মিনিট হাল-চাল জেনে নিতাম একজন আরেকজনের।

.

ঐদিনের পরে আয়িশা আমাকে আর নামাজ পড়তে ডাকেনি। (ডাকবে কিভাবে! বেচারী যে-ই ঝাড়ি খাইসে লল :D )। আমরা ধর্ম নিয়েও খুব একটা তেমন কথা বলিনি ঐদিনের পরে। কিন্তু তাও আয়িশাকে দেখলেই আমার মধ্যে কেমন যেন ধর্ম-চেতনা জেগে উঠতো। মনে হত লাইফে কিছু একটা মিসিং! আয়িশার ২ টা জিনিস আমার বেশ ভালো লাগতো। এক, ও আমাকে কখনো কিছু “করতে” বলতো না যে, "হালিমা! নামাজ পড়ো! হালিমা হিজাব পড়! হালিমা ইসলাম মানো! এটা করো! সেটা করো!"- এভাবে বলতো না, তবে ও যেটা করতো আমার মধ্যে কিছু করার অনুপ্রেরণা জাগানোর চেষ্টা করতো, যেন সেই অনুপ্রেরণা থেকে বাকিটা আমি নিজেই করে নেই। মানুষদের সাইকোলজি অনেকটা এরকম যে, আমাদেরকে কেউ কড়াভাবে বা সরাসরি কিছু “করতে” বললে, আমরা ডিফেন্সিভ মোডে চলে যাই, মনে হতে থাকে “আমাকে বলতে আসছে কেন!” আমরা তখন অনেক ভালো কাজের উপদেশ শুনলেও আমাদের মেন্টালিটির জন্যে আমাদের সেটা ভালো লাগে না। ভালো জিনিসও তখন শুনতে ভালো লাগে না! এজন্যেই হয়তো আমার আম্মু বিশ বছর ধরে “হালিমা! নামাজ পরিস না কেন? রোযা করিস না কেন!!” বলে বলেও আমার মধ্যে কোন পরিবর্তন আনতে পারে নাই। অবশ্যই আমার আম্মুর নিয়তে এবং চেষ্টায় কোন ত্রুটি ছিল না। তবে কাউকে ইসলামের দাওয়াত দিবার ক্ষেত্রে উইসডম, টাইমিং, কথার বলার ধরণ, সেই মানুষটার ব্যকগ্রাউন্ড, ট্যাকটিক – সবই মাথায় রাখা জরুরি। আর অন্যকে বলার আগে আমাদের নিজেদেরকেও তো আমাদের আগে ঠিক করতে হবে! মাঝে মাঝে হয়তো আমাদের কিছু বলাও লাগে না, আমাদের কাজ, চাল-চলন-ই আপনাআপনি অন্যদের জন্যে দাওয়াহ্‌ হয়ে যায়! যেমনটা আমার আয়িশার ক্ষেত্রে কাজ করতো, দেখা যাচ্ছে আমরা নর্মাল কথা বলছি, কেমন আছি, কি করছি টাইপ -- সেই কথার মধ্যেই ও নামাজ পড়তে উঠে চলে গেলে আমার মনে হচ্ছে, ইশ্‌ কত দিন নামাজ পড়ি না! আমি আমাকে কিছু বলার ছাড়াই দাওয়াহ পাচ্ছি আলহামদুলিল্লাহ্‌!

.

.

আর দুই নম্বর জিনিস টা হলো, আয়িশা আমাকে কখনো জাজ (Judge) করতো না! আমি শিউর আমার পাঁচ ইঞ্চি মিনি স্কার্ট আর তার উপরে হাত কাটা টপ্‌স দেখলে যে কেউ ভাববে, “ছিঃ ছিঃ! মুসলিম ঘরের মেয়ে হয়ে এ কি অবস্থা!” অথচ কেউ আমার ব্যাকগ্রাউন্ড জানেনা, আমার বাবা হারানোর কষ্ট, আমার পরিবারের অশান্তি, আমি যে কি পরিবেশের মধ্যে বড় হয়েছি, আমার স্ট্রাগলগুলি– কিচ্ছু না জেনেই চোখের পলকে জাজ করে ফেলতো হয়তো যে, আমি তো নষ্টই হয়ে গেছি, আমাকে দিয়ে আর কি হবে!! সুবহানআল্লাহ্‌ বাইরে থেকে একনজর দেখে কাউকে জাজ করে ফেলা অনেক সহজ, কিন্তু ঐ মানুষটার জায়গায় নিজেকে রেখে তাকে বুঝতে পারা টা সহজ না। তাই আমার আয়িশাকে ভালো লাগতো যে মেয়েটা আমার উপর কখনো আশা ছাড়েনি। ওর সবসময় মনে হত যে, আমি পারবো। আমিও আল্লাহ্‌র একজন যোগ্য বান্দা হয়ে সোসাইটির জন্যে একটা ভালো রিসোর্স হতে পারবো! কাউকে নিজের বাসায় দাওয়াত দেওয়ার আগে যদি তাকে অপমান করে নেন, সে কি আর আপনার বাসায় আসবে?? তাহলে ইসলামের দাওয়ার দিবার আগে তাকে ছোট করে ফেললে, সে কি আর আপনার দাওয়াত গ্রহণের মানসিকতায় থাকবে? আয়িশা আমাকে কখনো ছোট করতো না! উল্টা বলতো, "আমি হিজাব পরি দেখেই আমি কোন নন-হিজাবী বোনের থেকে ভালো হয়ে গেলাম না! কে জানে, আমার হিজাবের চেয়ে হয়তো ঐ নন হিজাবী বোনের সুন্দর চরিত্র আল্লাহ্‌ কাছে প্রিয়! অন্তরের খবর শুধু আল্লাহ্‌ জানেন! কে ভালো কে খারাপ- বিচার করার আমি কেউ না! আমি অনুপ্রেরণা দিয়ে যাই পজিটিভ ভাবে, সে আল্লাহ্‌র কাছে আসবে নাকি না আসবে- এটা তার আর আল্লাহ্‌র মধ্যকার ব্যপার।" আলহামদুলিল্লাহ্‌ এই জিনিসগুলি আমি নিজে-ও এখন কাউকে ইসলামের দাওয়াত দিবার সময় মাথায় রাখি।

.

.

তো যাই হোক, আয়িশা তো কেবল একটা উসিলা! অন্তর পরিবর্তনের মালিক কেবল আল্লাহ্‌ সুবহানুতা’আলা! আল্লাহ্‌ চাইলে কারো কোন শক্তি নেই যে তাঁর বান্দাকে ঠেকাবে!

.

.

দিন যেতে লাগলো আর হঠাৎ হঠাৎ আমার মনে হত আসলে আমার লাইফে কোন True value নেই, True meaning নেই, আমার নিজের শক্ত কোন আইডেন্টিটি নেই। যখন যে যেমন চাচ্ছে আমি সাজছি, সোসাইটি হাই হিল্‌স পড়তে বলছে, আমি পড়ছি! সবাই মেকআপ করছে, আমিও করছি! সবাই সেলফী আপলোড করে লাইক খুঁজছে! আমিও তাই করছি!! লাফালাফি, আনন্দ-মাস্তি আর কলুর বলদের মতন একটা ডিগ্রির পিছনে ছোটা- ব্যস লাইফের মিনিং বলতে কি এটুকুই?

.

.

আমার সেইদিনের কথাগুলো কথা মনে পড়তো যে, আমি জানি যে সৃষ্টিকর্তা আছেন। সত্য ধর্মও আছে একটা। কোথাও না কোথাও আমার জন্যে True গাইডেন্স আছে। তবে সেটা কোনটা আমি এখনো ঠিকভাবে জানি না। আমার জানা উচিত!! খোঁজা উচিত! আর এভাবেই শুরু হল আমার সত্য ধর্ম খোঁজার পর্ব..

(চলবে ইনশাআল্লাহ্‌ ... )

বিষয়: বিবিধ

১৫১১ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

376041
০৯ আগস্ট ২০১৬ রাত ১২:৫৪
আকবার১ লিখেছেন : Thank you apu
০৯ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৮:৪৮
311827
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : ধন্যবাদ আপনাকে।
376042
০৯ আগস্ট ২০১৬ রাত ০১:১৮
আবু সাইফ লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ.. পড়লাম, দোয়া করি, জাযকিল্লাহ..
০৯ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৮:৪৯
311828
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : ওয়াআলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ. সময় এবং ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্যে এবং দুয়া করার জন্যে জাঝাকাল্লাহ খইর। আল্লাহ্‌ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিক।
376046
০৯ আগস্ট ২০১৬ রাত ০৩:০০
কুয়েত থেকে লিখেছেন : ইসলামের দাওয়ার দিবার আগে তাকে ছোট করে ফেললে, সে কি আর দাওয়াত গ্রহণের মানসিকতায় থাকবে? অনেক অনেক ধন্যবাদ ভালো লাগলো
০৯ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৮:৪৯
311829
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : সাথে থাকার জন্যে জাঝাকাল্লাহ খইর! দুয়া রাখবেন।
১০ আগস্ট ২০১৬ রাত ০২:৫৪
311850
কুয়েত থেকে লিখেছেন : দুয়া রাখবেন। জাঝাকাল্লাহ খইর।Good Luck Good Luck
376064
০৯ আগস্ট ২০১৬ দুপুর ০২:৫৩
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ।
দাওয়াত দেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে যে তথ্য উত্থাপন করেছেন সেই ক্ষেত্রেই আমরা সবচেয়ে বেশি ভুল করি। মানুষের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টির বদলে দুরে ঠেলে দিই।
১২ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৭:০৮
311941
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : আল্লাহ্‌ সুবহানুতা'আলা আমাদের কে হিক্‌মাহ্‌ সহকারে দাওয়াহ্‌ দিবার তাওফিক দিন অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। জাঝাকাল্লাহ খইর।
376075
১০ আগস্ট ২০১৬ রাত ০১:০২
ঘুম ভাঙাতে চাই লিখেছেন : আমার ফাল্গুনী আপুর কথাই মনে হয়। শপিং,নিত্য নতুন বাহারি ড্রেস, থাইল্যান্ড-মালেশিয়া গেলেই নানা ব্রান্ড এর মেকআপ বক্স লিপিস্টিক আর নানান প্রসাধনী কিনে আনা। দামি মোবাইল, মিউজিক-মাস্তি, ফেসবুকিং, আর দেদারসে রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া। আপুর জীবন বলতে এর চেয়ে বেশি কিছুই ছিলনা। ছেলেরা আপুর থেকে বেশি তার বাবার টাকার লোভে ঘুরত। প্রাইভেট ভার্সিটিতে বিবিএ-এমবিএ শেষ করল। সেই মেয়েই হটাত অন্য জগতের কেউ হয়ে গেল। আমাকে সারাদিন খুটিয়ে খুঁটিয়ে ইসলাম এর ব্যাপারে জিঙ্গেস করত। আপুর মাঝে অনেক দূর্বলতা ছিল কিন্তু জানতাম তা থাকবেনা। আপু মাত্র দুবছরের মাথায় সম্পুর্ণ ভিন্ন জগতের কেউ হয়ে গেল। আগে যে হুজুর টাইপ লোক পছন্দ করত না সেই এবার বায়না ধরল বয়স বাড়ছে বাড়ুক, কোন স্মার্ট মুনাফিক এর চেয়ে ধার্মিক বুড়াও ভাল। আমি মাঝে মাঝে অবাক না হয়ে পারতাম না। কিভাবে সম্ভব তাও মাত্র দুবছরে ? আপু নিজের আত্নীয়দের ইসলাম এর দাওয়াহ দিতে শুরু করল। আত্নীয়স্বজনরা ইসলাম মানতে চায়না,পরিবারের লোকরা নামাজ কালাম পড়েনা এই জিনিসগুলি আপুর মন খারাপ করে দিত। দেখেছি জীবনে অনেক কিছুই।
১২ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৭:০৯
311942
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : মাশাআল্লাহ্‌! ঘরে ঘরে ফাল্গুণী আপুদের লাগবে! আল্লাহ্‌ কবুল করে নিক! শেয়ার করার জন্যে অনেক ধন্যবাদ আপনাকে! জাঝাকাল্লহ খইর।
376183
১৩ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:৫৬
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অনেক সুন্দর উপলব্ধী আর আত্মসমালোচনা। আর দাওয়াহর পদ্দতিটা ঠিক কেমন হওয়া জরুরী তাও উপস্থাপিত হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ সুন্দর।
১৫ আগস্ট ২০১৬ সকাল ০৯:২৫
311993
শারিন সফি অদ্রিতা লিখেছেন : অনেক ধন্যবাদ আপনাকে! জাঝাকাল্লাহ খইর!

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File