দ্য জার্নি টু ফেইথ-৭
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ০৭ আগস্ট, ২০১৬, ০৫:৩৫:৫৩ বিকাল
" ... মন খারাপ করে কম্পিউটার স্ক্রীনের দিকে তাকিয়ে আছি। মাত্রই ইমেইলে দুঃসংবাদটা পেলাম। আমি আর নিশাত যেই ইউনিভার্সিটিতে Apply করেছিলাম, সেটাতে আমি টিকি নি, কিন্তু নিশাতের ঠিক-ই হয়ে গেছে। তারমানে নিশাত শহর ছেড়ে চলে যাবে! আমার যে কি পরিমাণ মন খারাপ-- বলার বাইরে! আমি বুঝলাম না আমার Job Experience ছিলো, স্কোর-ও মোটামুটি খারাপ না – তাও কেন হলো না!! আবারো ভাবতে লাগলাম ভাগ্যটা কত নিষ্ঠুর আমার সাথে!
সুবহানআল্লাহ্!! আসলে সেই ইউনিভার্সিটিতে চান্স না পাওয়াটাও ছিল আল্লাহ্র প্ল্যানের-ই অংশ! প্রথমত, আমি যদি নিশাতের সাথে ইউনিভার্সিটির জন্যে শহর ছেড়ে চলে যেতাম, তাহলে আমার আয়িশার সাথে বন্ধুত্ব হয়তো ওখানেই থেমে যেত। এতে আমার লাইফে তাও যা একটা ইসলামিক Influence ছিল, সেটাও চলে যেত! আমি যেই ছিলাম সে-ই হয়তো থেকে যেতাম! আর দ্বিতীয়ত, এভাবে আম্মুর কাছে থেকে, ফ্যামিলির কাছ থেকে দূরে গিয়ে হলে গিয়ে থাকলে আমি আরো অনেক বেশি স্বাধীনতা পেয়ে যেতাম যা ইচ্ছা করার। নিজেই দেখেছি যে মুসলিম-আমেরিকান টিনেজরা শহরের ইউনিভার্সিটিতে পড়তে গিয়ে একা একা হলে গিয়ে থাকলে হঠাৎ অনেক স্বাধীনতা পেয়ে যায়। তখন একমাত্র মা-বাবার ভয়ে যে মদ খাওয়া, ক্লাবিং, ছেলে-মেয়ে – এসমস্ত থেকে বিরত ছিল- কোন বাধাই থাকে না! হারাম কাজে নির্লিপ্ত ভাবে জড়িয়ে পড়া অনেক সহজ হয়ে যায়!! অবশ্যই সবাই এমন না। অনেক ভালো ছেলে-মেয়েও আছে মাশাআল্লাহ্! কিন্তু আমি আমাকে চিনি! আমি তখন যে রকম ছিলাম সে অবস্থায় শহরের বাইরে গিয়ে এমন স্বাধীনতা পেয়ে গেলে চোখের পলকেই আমি একেবারে লাগাম ছাড়া ঘোড়া হয়ে যেতাম!! সুবহানআল্লাহ্! আল্লাহ্ কিভাবে আমাকে বাঁচিয়ে দিলেন! অথচ তখন আমার কত মন খারাপ ছিল, কত আক্ষেপ ছিল -- কেন নিশাতের সাথে ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেলাম না!! কেন আল্লাহ্ আমার সাথেই এমন করে!! আর এখন তিন বছর পরে গিয়ে সেই একই চান্স না পাবার কথা মনে করে মনে মনে বলি, সুবহানআল্লাহ্! Thank you Allah! ভাগ্যিস্ সেই ইউনিভার্সিটিতে তখন চান্স পাইনি!! চোখে পানি চলে আসে যে কিভাবে আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলা আমার হিদায়াতের জন্যে পথ তৈরি করছিলেন!
এই ঘটনা আমার লাইফের জন্যে অনেক বড় একটা লেসান। আমরা প্ল্যান করি, আর আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলা প্ল্যান করেন! আর আল্লাহ্র প্ল্যানের চেয়ে উত্তম আর কিচ্ছু হতে পারে না! কিচ্ছু না! এর থেকে বড় সত্য আর নেই! আপাত দৃষ্টিতে আমাদের কাছে কোন কিছু ভালো লাগবে না, কিন্তু সেটাই আসলে আমাদের জন্যে সবচেয়ে ভালো কিছু!! আল্লাহ্ জানেন, কিন্তু আমরা জানি না!**
আমরা মানুষেরা আসলে দুর্বল আর Vulnerable একটা Creation! আমাদের জ্ঞান শুধু খণ্ড খানিক অতীত আর বর্তমান মুহুর্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ! তাই বর্তমানে খারাপ কিছু হলেই আমরা হতাশ হয়ে পড়ি, ভেঙ্গে পরি! কিন্তু, আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলাকে কোন সময়-কাল দিয়ে সীমাবদ্ধ করা যায় না। তিনি জানেন এ মুহুর্তে আমাদের কাছে যেটা কষ্টকর মনে হচ্ছে, সেটা ভবিষ্যতে আমাদের জন্যে কতই না কল্যাণ বয়ে আনবে!! আমাদের কাজ শুধু আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলার উপর ভরসা করে, নিজে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে, বাকিটা আল্লাহ্র উপর ছেড়ে দেওয়া! আল্লাহ্র আমাদের জন্যে লিখা ক্বদরে শর্তহীন ভাবে, নিসঙ্কোচে, সমস্ত দ্বিধা ছেড়ে বিশ্বাস করা যে, হ্যাঁ !! আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলা যা চান আমার জন্যে সেটাই হবে এন্ড সেটাই আমার জন্যে বেস্ট!! আমি হয়তো এখন ঠিক বুঝতে পারছি না, পরিস্থিতির ভালো দিক দেখতে পাচ্ছি না --- কিন্তু পরে গিয়ে ঠিক-ই বুঝবো যে এতেই কল্যাণ ছিল! কিন্তু, এই দুর্বল ঈমান নিয়ে সেটাই তো করতে পারি না! কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ্ যে, এই দুঃখ-কষ্টগুলির মাধ্যমে আল্লাহ্ আমাদের শিখিয়ে দেন কিভাবে শর্তহীন ভাবে শুধু তাঁর উপরেই ভরসা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে!
যাই হোক, তখনো তো আমার আর সেই বোধ হয় নি! তাই ইউনিভার্সিটিতে রিজেক্ট হবার শোকে অনেক দিন পর্যন্ত কাতর ছিলাম। নিশাত শহর ছেড়ে চলে গেল। আমি আমাদের সিটির ইউনিভার্সিটিতেই ভর্তি হয়ে গেলাম। ম্যাজিকালি সেই একই ইউনিভার্সিটিতেও ভর্তি হয়ে গেল আয়িশা! নিশাত চলে যাবার পর আমাদের মধ্যে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়ে গেল। যেহেতু দিনের পর দিন আমাদের কারো দেখা হয় না, কিভাবে কিভাবে যেন আমাদের বন্ধুত্ব আর আগের মত রইলো না। নিশাতের নতুন ইউনিভার্সিটিতে অনেক নতুন নতুন বান্ধবী হয়ে গেল। তাই আমার কথাও হয়তো তেমন মনে পরে না ওর। খুব কষ্ট হতো। প্রথমে বাবার আদর চলে গেল, তারপর বাবা-ই চলে গেল, একটা ভালো ফ্রেন্ড ছিল সে-ও চলে গেল। খালি চলেই যেতে থাকলো সবাই। তখনো বুঝিনি যে, আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলা যখন বান্দার কাছ থেকে কিছু নিয়ে নেন, তার থেকে অনেক অনেক বেশি ভালো কিছুই বান্দাকে দেওয়ার জন্যে রাখেন! শুধু সবর আর তাওয়াক্কুলের ব্যপার! সুবহানআল্লাহ্ আমার জন্যেও সেরকম কিছুই অপেক্ষা করছিল। নতুন ইউনিভার্সিটীতে আমাদের প্রথম সেমিস্টার শুরু হয়ে গেলে আবারো আমি ব্যস্ত হয়ে গেলাম ক্লাস নিয়ে! আয়িশাও ব্যস্ত ওর ক্লাস নিয়ে। এর মধ্যে আমাদের মাঝে-সাঝে টুক-টাক কথা হয়েছিল, তবে দেখা হয়নি। আমি আবারো আমার আমেরিকান লাইফস্টাইলে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। ... ... "
(চলবে ইনশা আল্লাহ্ ... )
ফুটনোটঃ
**পক্ষান্তরে তোমাদের কাছে হয়তো কোন একটা বিষয় পছন্দসই নয়, অথচ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর হয়তোবা কোন একটি বিষয় তোমাদের কাছে পছন্দনীয় অথচ তোমাদের জন্যে অকল্যাণকর। বস্তুতঃ আল্লাহই জানেন, তোমরা জান না।"
[সুরা বাকারা: ২১৬]
বিষয়: বিবিধ
১৪৮০ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
৬+৭ একসাথে পড়লাম...
শুরুর আগেই শেষ,
কাপের চা-টাও শেষ হলোনা!!!
আমেরিকার প্রায় সব বিশ্ব বিদ্যালয়ে MSA
রয়েছে। ভিডিও দেখুন।
সময় এবং ধৈর্য্য নিয়ে সাথে থাকার জন্যে জাঝাকাল্লাহ খইর!
জাযাকাল্লাহ খাইরান।
সময় এবং ধৈর্য্য নিয়ে সাথে লিখাটি পড়ার জন্যে এবং থাকার জন্যে জাঝাকাল্লাহ খইর!
অসাধারন উপলব্ধী। সম্ভবত এরকম একটি হাদীস রয়েছে। মুমিনের কোনো লস নেই। যে আল্লাহর দিকে অগ্রসর হয় আল্লাহ তার উপর রহম করা নিজের উপর কর্তব্য হিসেবে ধরে নেন। এ ব্যাপারে অনেক হাদীস আছে। আমি যে আয়াতটা বলে মন্তব্য করতে চেয়েছিলাম সেটা আপনি শেষে লিখে দিয়েছেন। জাজাকাল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন