দ্য জার্নি টু ফেইথ- ৬
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ০৬ আগস্ট, ২০১৬, ০৪:০৭:০৫ রাত
“... . আয়িশা হাসতে হাসতেই বললো, ‘আচ্ছা! তার মানে আমার মন রাখতে তুমি এতদিন আমার সাথে সাথে নামাজ পরছিলে!! বাহ্! তুমি যে আমাকে এত পছন্দ করো এটা তো আগে বুঝি নাই!”, বলে আবার হো হো হো!
এবার আমিও হেসে ফেললাম! পরিস্থিতি হালকা হয়ে এল। আয়িশা নামাজ পরে আসলে ওকে বললাম,
- “আয়িশা কিছু মনে করো না, আমি তো এখানে বড় হয়েছি। তাই আমি অন্যরকম”।
- “ধুর বোকা! কি মনে করবো। মানুষ মুসলিম দেশে জন্ম-গ্রহণ করে, মুসলিমদের সাথে বড় হয়েও কখনো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের ধার ধারে না। সেখানে তোমার এমন হওয়াটা তো স্বাভাবিক। আমার-ই বুঝা উচিত ছিল।”
- আসলে আমার কাছে মনেই হয় না যে ইসলাম একমাত্র সত্য ধর্ম।
- তাই নাকি? তাহলে কোনটাকে তোমার কাছে সত্য ধর্ম মনে হয়? আয়িশা বিস্ময় রাখলো।
- এখানেই তো সমস্যা আয়িশা!! আমি জানি যে গড আছেন, সৃষ্টি-কর্তা আছেন। এমনি এমনি-ই পুরা দুনিয়া সৃষ্টি হয়ে গেছে এটা ননসেন্স, এটার পিছে কোন লজিক নেই। কিন্তু দুনিয়াতে এত এত ধর্ম! সব ধর্মের মানুষ-ই বলে যে তার ধর্মই ঠিক আর বাকি সবাই ভুল! তারাই জান্নাতে যাবে, আর বাকি সবাই জাহান্নামে! এটা কিছু হলো?? এত এত ধর্মের মধ্যে সত্য ধর্ম পাবোই বা কিভাবে এই চিন্তাই আমি এ ব্যপারে বেশি মাথা ঘামাই না।
- এমনি তুমি যত টুকুই জানো বা বুঝো, তোমার কাছে কি কোন ধর্মকেই কখনো সত্য বলে মনে হয়নি?
- আম্মম ... একটু থেমে আমি বললাম, “আসলে আমার কাছে মনে হয় সব ধর্মই সত্য!!”
- আচ্ছা?? সেটা কিভাবে?
- আচ্ছা দেখো, যে যে-ই পরিবারে জন্ম নেয়, সেটা কারো কন্ট্রোলে থাকে না রাইট! আমি মুসলিম ফ্যামিলিতে জন্ম নিয়েছি, আমার ফ্রেন্ড খ্রিস্টান ফ্যামিলিতে জন্ম নিয়েছে – এখন এটাও নিশ্চয়ই সৃষ্টিকর্তা চেয়েছে বলেই হয়েছে। তাহলে যে যে যার যার ধর্মের প্রতি সত্যি থেকে একটা সৃষ্টিকর্তাকে মানলেই হল। তাহলে হলো না সব ধর্মই সত্য ?!?”
আমি হাসি হাসি মুখে আয়িশার দিকে তাকালাম। আয়িশা দ্বিগুণ হাসি হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
- “হালিমা শোনো!”
- জ্বী খালাম্মা বলেন!
- তুমি হচ্ছ লজিকাল মানুষ! তোমাকে লজিক দিয়েই বলি। ধরো তুমি-ই ঠিক! যাও, সব ধর্মই সত্য। তাহলে, হিন্দু ধর্ম বলে যে, সৃষ্টিকর্তা হচ্ছেন আমাদের মানুষদের নিজ হাতে বানানো শত শত মূর্তি। খ্রিস্টানরা বলে যে যিশু(ঈসা আঃ)হচ্ছেন ঈশ্বর, আবার মাঝে মাঝে তিনি হয়ে যান ঈশ্বরের পুত্র (নাউযুবিল্লাহ!), আর কেউ সৃষ্টিকর্তা না। আবার ইসলাম বলে, সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ এক! আবার বৌদ্ধরা বলে, গৌতম বুদ্ধ হলেন সৃষ্টিকর্তা! আরো নানা ধর্মের নানা মত! এখন তুমি-ই বলো, লজিক কি বলে? এই সবগুলো জিনিস কি একইসাথে ঠিক হতে পারে? ঈশ্বর একই সাথে মূর্তি হতে পারে, আবার যিশু-ও হতে পারে? আল্লাহ্ হতে পারেন, আবার বুদ্ধ-ও হতে পারে? এটা কি লজিক্যালি কোন সেন্স বানায়?
এবার আমি ধরা খেয়ে গেলাম। আসলেই কথায় লজিক আছে। একসাথে সবগুলি ঠিক হবে কিভাবে? বললাম, “হুম, আসলে তো এটা লজিকে ঠেকে না”
- তাহলে হয় যে কোন একটা ঠিক, নাহলে সবগুলোই ভুল! রাইট?
- কিন্তু সৃষ্টিকর্তা যেহেতু আছেন, তিনি তাঁর সৃষ্টির জন্যে একটা না একটা গাইডেন্স অবশ্যই পাঠাবেন। তাই না?
- Exactly! একটা সামান্য ক্যালকুলেটার কিনলেও সেটা আসে একগাদা ইন্সট্রাকশানের সাথে। কোম্পানির ছোট-বড় যে কোন পণ্য বানিয়ে প্যাকেটে ইন্সট্রাকশান দিয়ে দেওয়া হয় আর মানুষের মতন সবচেয়ে বুদ্ধিমান সৃষ্টিকে অনর্থক কোন ইন্সট্রাকশান ছাড়াই বানিয়ে ফেলা হলো, এটাও লজিকে খাটে না নিশ্চয়ই? রাইট?
- না খাটে না!
- তাহলে???
- তাহলে একটা না একটা ধর্ম সত্য! হুম!
- হুম গুড!
দেখো হালিমা আমি এখন তোমাকে বলবো না যে, ইসলাম-ই একমাত্র সত্য ধর্ম। তাহলে তুমি ভাববে আমি তো এটা বলবোই!! আমি চাই তুমি নিরপেক্ষ ভাবে নিজে যেটা সত্য সেটাকে উপলব্ধি করো।
- হুম তুমি তো এটাই বলবা! ছোট থেকে তুমি ইসলাম ইসলাম করেই বড় হয়েছো!
- হা হা হা! :D একচুয়ালি না হালিমা! আমি নিজেও বদের হাড্ডি ছিলাম, ধর্মের ধার ধারতাম না। এই নামাজ পরছি তো পরছি না। হিজাব মাথায় দিচ্ছি তো দিচ্ছি না। আমি দেশে থাকতে হয় বন্ধুদের নিয়ে সারাদিন পড়াশোনা করতাম নাহয় সারাদিন বাঁদরামি করতাম । ধর্মের কোন বোধ ছিল না আমার-ও। নানা ভাবে, নানা উসিলায় আমি নিজে আল্লাহ্র কাছে পৌঁছেছি আলহামদুলিল্লাহ্! তাই, আমার কাছে আমার আর আমার আল্লাহ্র সম্পর্কটা এতটা মূল্যবান।
- আর অন্য ধর্মের মানুষ গুলো? ওদের বুঝি কোন মূল্য নেই ?
- দেখো হালিমা, ধর্ম অনেক সেন্সেটিভ একটা ব্যপার! সবার কাছেই সবার ধর্ম সর্বশ্রেষ্ঠ! আমি এখানে কারো ধর্মকে ছোট বা বড় করছি না। কিন্তু, যখন ব্যপার টা হচ্ছে সত্য কোনটা সেটা জানার, তখন আবেগ দিয়ে না, স্মার্টলি চিন্তা করতে হবে, ব্রেইন খাটাতে হবে, পড়াশোনা করতে হবে, সত্য সামনে আসলে sincerely and honestly সেটা accept করতে পারার মন মানসিকতা রাখতে হবে!
আমি চুপ মেরে গেলাম! আয়িশা হাসি হাসি মুখে বললো,
- “কি অনেক চিন্তায় ফেলে দিলাম মনে হচ্ছে?”
- না আয়িশা! Thank you! এভাবে কখনো আসলে ব্যপারগুলো নিয়ে ভাবি নাই।
- হা হা ! ভাবো নাই এইতো আজকে ভেবে ফেললা। আচ্ছা হালিমা লেট হয়ে যাচ্ছে আমি এখন উঠি। আর তোমার যদি কখনো ইসলাম নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকে, আমাকে বলতে পারো।
- আচ্ছা বলবো! ভালো থাকো আয়িশা!!!
আয়িশা চলে গেলো! আমি পিছন থেকে তাকিয়ে থাকলাম! এ তো দেখি সাংঘাতিক মেয়ে!
জীবনের এতগুলো বছর পার করে ওইদিন-ই প্রথম আমার ধর্ম নিয়ে কিছু চিন্তা করতে ইচ্ছা হলো।এরপরের দিন গুলো অনেক দ্রুত চলে যেতে থাকলো । এর মধ্যে ঘরে আসলো ভীষণ খারাপ এক দুঃসংবাদ !!
( চলবে ইনশাআল্লাহ্ ... )
বিষয়: বিবিধ
১৩৫৮ বার পঠিত, ১৯ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
চমৎকার, আপু।
M2JTuU0EtHo
জ্বী আমি ভাবছিলাম বেশ কয় পর্ব জুড়ে "দ্য স্লেভ" ভাইয়ের খবর নেই। ব্যস্ততার মাঝেও পড়ে মন্তব্য করার জন্যে জাঝাকাল্লাহ খইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন