দ্য জার্নি টু ফেইথ- ৫
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ০৩ আগস্ট, ২০১৬, ০৭:২০:৪৯ সন্ধ্যা
“ ... দাওয়াতে পৌঁছে গেলাম আম্মুকে নিয়ে। যথারীতি কিছু আন্টিকে সালাম দিয়ে একটা টেবিলে বসলাম। নিশাতের মেসেজ এসেছে ও আজকে আসতে পারবে না। ধুর! মনটা খারাপ হয়ে গেল। এভাবে কাউকেই যদি না পাই, ২ ঘন্টা চরম বোর হয়ে বসে থাকা লাগবে। বসে থাকতে থাকতে একটু দূরে পিছন থেকে একটা হিজাব পরা মেয়ে দেখলাম। মনে হল এটা মেইবি আয়িশা। “উফ্ যেন আয়িশা হয়! যেন আয়িশা হয়” বলতে বলতে পিছন থেকে কাঁধে হাত রাখলাম মেয়েটার, ফিরে দেখি, হ্যাঁ এটা আয়িশাই! ইয়ে-ইইই!!
“আরে হালিমা ...” বলে আয়িশা জড়িয়ে ধরলো আমাকে... “সেদিনের পরে তো তোমার আর কোন খবর-ই নেই! কি অবস্থা ...”
আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম! যাক ২ ঘন্টা ধরে একা একা তো বসে থাকতে হবেনা!! আমি আয়িশার সাথে বসে গেলাম! আমরা একই সাথে Graduate করছিলাম ভিন্ন ভিন্ন স্কুল থেকে, তবে সব নিয়ম কানুন প্রায় একই! আমরা আমাদের Apply করার টেনশান, স্টাডির কষ্ট এগুলা সব শেয়ার করতে লাগলাম! আমি বললাম যে, আমি নিশাতের সাথে আমাদের শহরের বাইরে বড় একটা ইউনিভার্সিটিতে Apply করছি! আমাদের ২ জনের একসাথে হয়ে গেলে ফাটাফাটি অবস্থা হবে! আয়িশা বললো, ও খুব বেশি দিন হয়নি দেশ থেকে এসেছে, ধীরে ধীরে এডজাস্ট হচ্ছে, এখনি বড় সিটিতে যেতে চায় না, ইনশাআল্লাহ্ পরে দেখবে! সুবহানআল্লাহ্ সেই প্ল্যানগুলির কথা মনে হলে আমাদের এখনো হাসি পায়, এক আমরা করি প্ল্যান! আর এক আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলা করেন প্ল্যান! আল্লাহ্র প্ল্যানের চেয়ে উত্তম প্ল্যান আর নেই আলহামদুলিল্লাহ্!
সে যাহোক, এ কথা সে কথা বলতে বলতে এবারো মাগরিবের নামাজের টাইম হয়ে গেল। আমি বুঝলাম এবার আয়িশা উঠে যাবে নামাজ পড়তে। তবে এইবার একটা ব্যপার ঘটলো। এই মেয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে বসলো,
“হালিমা আমার সাথে নামাজ পড়তে আসবে?”
আমি থতমত খেয়ে গেলাম! এইবার আমার সাথে নিশাত-ও নেই, একা একা কিছু করার-ও নেই, ক্যাবলা-কান্তের মত কিছুক্ষণ চেয়ে পরে বলে ফেললাম, “আম্মম্!! হ্যাঁ শিউর চলো পড়ে আসি!”
ভাগ্যিস সালোয়ার কামিজের হাত লম্বা ছিল। পাতলা ওড়না কয় পরত করে ভাঁজ দিয়ে একটানে মাথায় জড়িয়ে ফেললাম! আয়িশা কোণায় একটা খালি ঘর পেয়ে গেল; আমাদের ফোন দিয়ে কিবলা কোন দিক দেখে একটা পরিষ্কার কাপড় বিছিয়ে আমরা নামাজে দাঁড়িয়ে গেলাম। আমি কত্ত দিন পর যে নামাজে দাঁড়িয়েছি খেয়াল নেই! সূরা গুলোও ঠিকমতন মনে আসছিল না। বিরক্ত লাগছিল, আবার ভালো-ও লাগছিল! এরকম মিশ্র অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে কোনমতে নামাজ শেষ করলাম। আয়িশা দেখি নামাজ পড়া শেষ করে সময় নিয়ে দুয়া করলো, হাতের আঙ্গুলে কি কি জানি পড়লো। আমি নামাজ শেষ করে উঠে ওর দিকে তাকিয়ে মনে মনে হাসলাম, “পুরাই খালাম্মা একটা!"
সেদিন দাওয়াতে আমাদের ভালোই সময় কাটলো! আয়িশা আমাকে ৩ ঘন্টার ভয়াবহ একাকীত্ব আর বোরিং হওয়া থেকে বাঁচিয়ে দিল। এবার আমরা বিদায় নিবার আগে ফোন নাম্বার অদল-বদল করতে ভুললাম না!
এর পরে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ চলতে লাগলো। আমরা মেসেজ করতাম, ফোন করতাম। যে কোন বাঙালি বা মুসলিম দাওয়াত পড়লে আমরা প্ল্যান করে নিতাম ২ জন-ই যাচ্ছি কি না। আর তখন আমাদের Graduation হয়ে গেছে, কোন ক্লাস নেই, জাস্ট Apply করে রাখা ইউনিভার্সিটি থেকে শোনার অপেক্ষা। তাই আমরা মোটামুটি ফ্রী। আয়িশা বলতো ওর দেশের ফ্রেন্ডদের কথা, আত্মীয়-স্বজনের কথা অনেক মনে পরে। যেহেতু নিশাত-ও তখন ব্যস্ত থাকত আর আয়িশার আর কারো সাথে তেমন চেনা-জানা নেই, আমি আয়িশাকে সঙ্গ দিতাম! আমরা একসাথে টাইম কাটাতে লাগলাম, একসাথে শপিং-এ যেতাম, বই কিনতে যেতাম। আমাদের বাসাও অনেক কাছাকাছি ছিল। আয়িশা আমার বাসায় বেড়াতে আসলো, আমিও আয়িশার বাসায় গেলাম। আয়িশাকে আমার খুব ভালো লাগতো, খালি একটাই সমস্যা! একটু পর পর উঠে এই মেয়ের নামাজ পরতে হবে! দিনের মধ্যে পাঁচবার!!! পাঁচ টা বার!! আর পরবি ভালো কথা পর নামাজ! যাবার সময় মিষ্টি করে হেসে আমার দিকে তাকিয়ে বলতে হবে, “হালিমা আসবে আমার সাথে?” ঐ হাসির জন্যেই নাকি নিজের ইমেজ বাঁচাতে কে জানে-- আমি মানা করতে পারতাম না। তবে মন থেকে নামাজ পরছি না দেখে নিজের কাছে ভালো-ও লাগতো না। তাই এবার ঠিক করে ফেললাম, মিষ্টি হাসি অনেক হয়েছে ভাই! নেক্সট আমাকে নামাজ পড়তে ডাকলে আমাকে ভদ্রভাবে শক্ত কিছু কথা বলতে হবে! এন্ড সেই “নেক্সট টাইম” বেশ তাড়াতাড়ি-ই চলে আসলো!
সেদিন আয়িশা এসেছিল আমাদের বাসায় একটা ইউনিভার্সিটির রুটিন নিয়ে কিছু পেপার দেখতে। দুপুর দিকে এসেছিল, বিকাল হতে হতে আসরের নামাজের টাইম হয়ে গেল। আয়িশা বাথরুমে ওযু করতে চলে গেল। তখনো আমাকে কিছু বলেনি; ভয়ে ভয়ে আছি রাগ না উঠে যায়, কি বলতে না কি বলে ফেলি আবার, তারচেয়ে এইবার আমাকে না ডাকুক নামাজ পরতে এই মেয়ে! এর মধ্যে আবার আম্মু আসলো আমার ঘরে দেখতে আমরা কি করছি, আম্মু ঘরে ঢুঁ মারতে এসে আগুনের মধ্যে ঘি ঢেলে দিলো,
“দ্যাখ দ্যাখ আয়িশা কি সুন্দর ওযু করছে! তুই নামাজ পরিস না কেন!?”
এই দিল আমার মাথাটা গরম করে!!! Big Mistake Mom!! আয়িশা ওযু করে বের হয়ে বললো, “হালিমা জায়নামাজ টা নিয়ে চলে আসো ... ”
আর এবার আমি একেবারে টাইম বোমের মতন ফেটে পড়লাম,
“দ্যাখো আয়িশা! তোমার কাছে ধর্ম যত ইম্পর্ট্যাণ্ট আমার কাছে এটা এত ইম্পর্ট্যান্ট না!!! বুঝেছো?”
বলেই জিভ্ কাটলাম! ইশ্! মেয়েটা কি মনে করলো কে জানে! মনে মনে ভাবলাম, আহারে! It was nice to meet you friend! আমাদের ফ্রেন্ডশিপ বুঝি এ পর্যন্তই ছিল!
২-৪ সেকেন্ড ঘরে পিন-পতন নীরবতা! তারপর আমি আয়িশার দিকে তাকালাম। ওমাহ্ তাকিয়ে দেখি আয়িশা হাসছে!! প্রথমে মুখ টিপে টিপে, এরপর বেশ জোরে জোরেই হাসতে লাগলো!!
আহারে মেয়েটা আমার মতন একটা ফ্রেন্ড হারানোর দুঃখে মনে হয় পাগল হয়ে গেছে! আবারো ক্যাবলা-কান্তের মতন তাকিয়ে আমি এই মেয়ের হাসি থামার জন্যে অপেক্ষা করতে লাগলাম!
(চলবে ইনশাআল্লাহ্ ... )
[বিঃদ্রঃ আগামী পর্ব গুলি আসতে একটু লেট হতে পারে। সামনে লেখিকার পরীক্ষা, ফাঁকে ফাঁকে এসে লিখে যাবো ইনশাআল্লাহ্। পাঠকদের বেশি বেশি করে লেখিকার পরীক্ষার জন্যে দুয়া করতে রিকুয়েস্ট করা হল! পরীক্ষা যত ভালো হবে, লেখিকার মন তত ভালো থাকবে, পরের পর্ব তত তাড়াতাড়ি পোস্টানো হবে— এই সত্য সায়েন্টিফিক ভাবে প্রমাণিত। ]
বিষয়: বিবিধ
১৪৯৮ বার পঠিত, ১৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
পরীক্ষা যত ভালো হবে, লেখিকার মন তত ভালো থাকবে, পরের পর্ব তত তাড়াতাড়ি পোস্টানো হবে— এই সত্য সায়েন্টিফিক ভাবে প্রমাণিত
পরীক্ষাটা যদি আজই হয়ে যেতো!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন