দ্য জার্নি টু ফেইথ- ৪
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ০২ আগস্ট, ২০১৬, ০৮:৩৭:১৮ রাত
“ফিটফাট হয়ে সেজে ঈদের অনুষ্ঠানে গেলাম। যদিও জিন্স আর টপস্ ছাড়া কোথাও বের হই না, তবে ঈদের অনুষ্ঠানে গেলে সালওয়ার কামিজ পরতেই হবে, নাহলে আম্মু খবর করে দিত। গাড়ি পার্ক করে হলরুমে ঢুকলাম। গোল গোল টেবিলগুলো বিয়ের ঘরের মতন সাজানো, আর একপাশে সারি সারি খাবার-দাবার। সবাই কি সুন্দর সাজু-গুজু করা, সবাই কত খুশি। আম্মু আন্টিদের সাথে বসে পড়লো, আমি কিছু আন্টিকে সালাম দিয়ে মুখ ভোঁতা করে বসে পড়লাম একটা টেবিলে।
হঠাৎ আমার কাঁধে কারো হাত টের পেয়ে পিছনে ফিরে দেখি নিশাত!!! ও মাই গুডনেস্! নিশাতের সাথে কত দিন দেখা হয় না!! আমরা জড়া-জড়ি পর্ব শেষ করে গল্পে বসলাম! নিশাত আমার বাঙ্গালিদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফ্রেন্ড, Actually নিশাত ই ছিল আমার বেস্ট ফ্রেন্ড! আমরা প্রায় একই সময়ে আমেরিকায় আসি! নিশাত আমার সাথেই বড় হয়েছে দেখে আমার মন-মানসিকতা বুঝতো! ওর মধ্যেও ধর্ম নিয়ে তেমন কোন চিন্তা-চেতনা নেই, তবে ও আমার মতন আবার এতটা উগ্র না। ও বেশ নরম টাইপ মা-বাবার বাধ্য মেয়ে, আর আমি বেশ শক্ত এডভ্যাঞ্চার টাইপ মেয়ে, আমাদের ভালোই মিলে গেল! আমরা কত গল্প করতাম যে, আমরা একসাথে ইউনিভার্সিটি যাবো, একজন আরেকজনের বিয়েতে প্রেসেন্টেশান দিব্ সবসময় একসাথে থাকবো! যাইহোক, নিশাতকে দেখে আমার মন ভালো হয়ে গেল! আমরা জমে থাকা গল্প করতে লাগলাম তো করতেই লাগলাম। পুরা গোল টেবিলে আমরা দুই জন। আমাদের বয়সী আরো অনেকে দূরে টেবিলে বসে ছিল, কিন্তু আমি যেহেতু কাউকে তেমন চিনি না, তাই ওদের সাথে কথা-বার্তাও তেমন হয় না। আর নিশাত থাকলে আমার অন্য কাউকে তেমন লাগেও না।
আমরা গল্প করছি, হঠাৎ একটা কন্ঠ শুনলাম,
“এখানে কি কেউ বসেছে?”
তাকিয়ে একটু চমক খেলাম। আমাদের বয়সী একটা মেয়ে, বাচ্চা বাচ্চা সুইট চেহারা। তার চেহারা দেখে চমক খাবার কিছু নাই। তবে তাকে দেখে অবাক হবার কারণ হল, মেয়েটা হিজাব পড়া! একে তো আমার হিজাবের সাথে টক-ঝাল-মিষ্টি সম্পর্ক। তার উপর এই প্রথম আমাদের বয়সী কাউকে হিজাব পরা দেখলাম। এমনিতে আমেরিকায় মুসলিম কম, তার উপর আমি অনেক নিরিবিলি ছোট একটা সিটীতে থাকি, এখানে হিজাব পড়া কাউকে দেখলে অবাক হওয়াই স্বাভাবিক।
যাই হোক আমি বললাম,
“না না কারো জন্যে সিট নেই, তুমি আমাদের সাথে বসতে পারো”
“ওকে Thank you” , চুপ-চাপ বসে গেল মেয়েটা
“নাম কি তোমার?”
“আমি আয়িশা! Recently আমেরিকায় এসেছি! আর তোমরা? ”
আর এভাবেই পিকচারে এন্ট্রী করলো আমাদের আয়িশা ম্যাডাম! আয়িশার সাথে সেদিন অনেক কথাই হল। ও আমেরিকায় এসেছে বেশি দিন হয়নি। আমাদের সাথেই এ বছর হাই স্কুল Graduate করে ইউনিভার্সিটি ঢুকবে। মেয়েটা অন্যরকম, তবে মিশুক, আমাদের সাথে বেশ মিলে গেল। গল্প করতে লাগলাম ৩ জন যেন অনেক দিন ধরে চিনি! এর মধ্যে মাগরিবের টাইম হয়ে গেলে মেয়েটা বললো, “আমাকে নামাজ পড়তে যেতে হবে, আমি আসছি”, বলে উঠে চলে গেল। আমি আর নিশাত একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
আয়িশাকে আমার পছন্দ হয়ে গেল। কিন্তু ভাই! Let’s be honest! ও আমার টাইপ না! ওর সাথে এমনি নরমাল টাইপ ফ্রেন্ড-শিপ ভালোই হবে, মেয়েটা যেহেতু মিশুক, কিন্তু এর বেশি কোনদিন সম্ভব না – আমি ভেবে নিলাম। তখনো আমার কোন ধারণাই ছিল না, আল্লাহ আয়িশাকে কত বড় ব্লেসিং করে আমার লাইফে পাঠিয়েছেন। এই খালাম্মা-টাইপ মেয়েটার সাথেই আমার সারা জীবনের বন্ধুত্ব হবে, আমরা দুই জন আমার লাইফের সবচেয়ে সুন্দর জার্নিটাতে একসাথে হাঁটবো!! আমার রবের কাছে ফেরার জার্নি! আমি রাস্তার মাঝে পড়ে গেলে ও আমাকে ধরে উঠাবে, ও পড়ে গেলে আমি ওকে ধরে ফেলবো! কস্মিনকালেও আমার মাথায় তখন এ চিন্তা আসেনি! আমি আরো ভাবছি, কি মজা, খালাম্মা টাইপ একটা ফ্রেন্ড হল, আমার আম্মুর সাথে ভালো মিলবে! লুল :D
যাহোক, আয়িশা নামাজ পড়ে ফিরতে ফিরতে ঈদ পার্টি ওভার! আয়িশাকে বিদায় দিয়ে আমরা চলে আসলাম।
এর মধ্যে অনেক দিন চলে গেল। সবাই সবার লাইফে ব্যস্ত Graduation নিয়ে, ইউনিভার্সিটিতে Apply করা নিয়ে। আয়িশার সাথে কোন যোগাযোগ নেই। ফোন নাম্বার টাও সাথে রাখা হয় নি।
বেশ কয় মাস পরে গিয়ে একটা বাঙালি আন্টির বেবি হবে, তাই উনি সবাইকে বড় হল রুম করে দাওয়াত দিলেন। আম্মু আন্টিকে চিনেন, সো আমাদের যেতে হবে! ভাইয়ারা আম্মুকে নিবেন না, সো আমাকেই ড্রাইভ করে নিয়ে যেতে হবে। নো প্রবলেম। আবারো আম্মুকে নিয়ে যাচ্ছি বাঙালি দাওয়াতে, আর মনে মনে ভাবছি, কি জানি আয়িশার সাথে আজকে দেখা হয়ে যায় কি না !! "
(চলবে ইনশাআল্লাহ্ ...)
[ সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত, ছদ্মনাম ব্যবহৃত হল]
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৮ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
কি মজা, খালাম্মা টাইপ একটা ফ্রেন্ড!!
সত্যি্ই সৌভাগ্য আপনার!!
মন্তব্য করতে লগইন করুন