দ্য জার্নি টু ফেইথ - ১
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ৩০ জুলাই, ২০১৬, ১০:৩৪:০০ সকাল
হালিমা তাকিয়ে আছে তো তাকিয়েই আছে নোটগুলির দিকে। লিখা গুলি মনে হচ্ছে অন্য কোন গ্রহের প্রাণির লিখা! কিচ্ছু মাথায় ঢুকছে না! কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দলা পাকানো কাগজ গুলি ধরে রেখে ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলো!! এসব কি হচ্ছে! জীবনে কত ক্লাস-ই তো নিলো, কত পরীক্ষায় তো দিল! কিন্তু এখানে এসে যেন সব তাল-গোল পাকিয়ে গেল।
Summer ভ্যাকেশানে হালিমা এক মাসের ছুটি নিয়ে এসেছে Bayyinah Institude এর কুরআন ইনটেন্সিভ্ কোর্স করতে। জীবনে সেকুলার পড়াশোনার জন্যে কত কিছুই না করলো! কিন্তু আল্লাহ্র কিতাব সম্পর্কে তেমন কিছুই করা হয় নি! হালিমার আল্লাহর জন্যে দ্বীনি পড়াশোনার জন্যে তোলা এটাীই প্রথম বড় একটা স্টেপ। প্রচন্ড উত্তেজনা, আনন্দ আর আশা নিয়ে ফ্লোরিডা থেকে উড়ে চলে আসলো টেক্সাসে কোর্স করতে। ওমাহ্! এখানে এসে দেখে স্টুডেন্ট রা একেকজন মালয়শিয়ার, স্কটল্যান্ড, ইংল্যান্ড—এমন কি চীন থেকেও কয়েক জন চলে এসেছে কুরআন শিখতে সুবহানআল্লাহ্! এই আমেরিকাতেও কি সুন্দর একেকটা বোন লম্বা আবায়ার সাথে নিকাব, হাত মোজা সবই পড়ে আছে। ছেলে-মেয়ে দের একসাথে মিক্সিং এখানে কোন প্রশ্ন তোলার বিষয়-ই না। ছেলেরা ছেলেদের মতন ক্লাসে যায়, মেয়েরা মেয়েদের মতন। চোখ তুলে একটা ভাইকেও আজ পর্যন্ত তাকাতে দেখে নি মাশাআল্লাহ্! ওদের ক্লাস হয় মাসজিদের ভিতরে। সকালে সব স্টুডেন্ট দের একসাথে জামাআতে ফজর সালাহ্ পড়তে হয়। এর পর পর-ই লেকচার শুরু হয়ে যায়! সকালে চার ঘণ্টা এরাবিক গ্রামার ক্লাস, রাতে চার ঘন্টা কুরআন তাফসীর ক্লাস। মাঝখানের সময় টাতে কাজে লাগানোর মতন নানান রকম সেশান চলতে থাকে, কেউ কেউ টিউটরের কাছে চলে যায় এরাবিক গ্রামার বুঝতে, নাহলে কেউ অন্যান্য উস্তাদদের বিভিন্ন বিষয়ের যে হালাকা চলতে থাকে সেগুলির একটা না একটাতে চলে যায়, কেউ কুরআন মুখস্থ নিয়ে বসে, আর কেউ বা একটু ঘুম দিয়ে নেয় রাতে পড়ার জন্যে! হালিমা এত এত ফ্রেন্ড বানিয়েছে মাশাআল্লাহ্! একেকজন যেন একেকজনের চেয়ে ভালো! ইসলাম নিয়ে এত Passion, এত ভালোবাসা একেকজনের! বোন গুলিকে দেখলে আনন্দে কান্না চলে আসে ! সবকিছু ভালোই চলছিল, কিন্তু এর মধ্যে শুরু হয়ে গেল উইকলি এক্সাম! সেই সেরেছে! এখন পর্যন্ত প্রত্যেকটা পরীক্ষাতেই হালিমার ফেইল মার্ক্স এসেছে! যেই মেয়ের রেজাল্ট কার্ডে এ+ ছাড়া কিছু থাকে না, সেই মেয়ের এ কি করুণ দশা!!
সেই থেকে হালিমার হাহাকার! এরাবিক একটা নতুন ভাষা এজন্যে এত কঠিন লাগছে নাকি এত এত টপিক্স এত কম সময়ে পড়তে হচ্ছে সে জন্যে এই কান্ড—কিচ্ছু বুঝতে পারছে না! এরাবিক নাউন, গ্রামার এনালাইসিস সব মাথার উপর দিয়ে উড়ে চলে যাচ্ছে।! এই মেয়ে অনেক শক্ত, চোখ ফেটে রক্ত বের হলেও পানি বের হয় না! সে এখানে দর দর করে কেঁদে যাচ্ছে। আল্লাহ্র জন্যে বড় করে প্রথম ভালো কিছু করতে চাইলো, কিছুই হচ্ছে না।
রুমমেট আয়িশা বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখে হালিমার এই অবস্থা, “কি রে হালি! তুই কি কান্দিস নাকি? ”
: “ তো কি করবো! এরাবিক গ্রামার লেসন গুলো এত কঠিন! মনে হচ্ছে পাহাড় মাথায় ভেঙ্গে পড়ছে!”
আয়িশা একটু মৃদু হেসে বললো, "মনে আছে একসময় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ২৪ ঘন্টার মধ্যে ম্যানেজ করতে হবে ভেবে মাথায় পাহাড় ভেঙ্গে পড়তো!?"
হালিমা এবার হেসে দিল!
ঃ হুম ঠিক-ই রে! আর কেউ হিজাবের নাম কেউ নিলেই আমার ইচ্ছা হত এক থাপ্পড় লাগাই! আর এখন ...
“... আর এখন হিজাব ছাড়া আমাদের চলেই না”... বলতে বলতে ফাতিমা ঢুকলো ঘরে! সাথে রাবেয়া আর জায়নাব! ওরা এই কোর্স হলে ওদের প্রতিবেশি! রাবেয়া চকলেট কেক বানিয়ে এনেছে সবার জন্যে!
“কিরে হালিমা! সেই সকাল থেকে নোট্স নিয়ে পরে আছিস! একটু ব্রেক তো নেহ্”, বললো ফাতিমা।
ঃ ”নারেহ্! এই শুক্রবারের পরীক্ষাতেও ফেইল মারছি! এভাবে আর চলতে দেওয়া যাবে না!”
ঃ তাই বলে টানা দশ ঘন্টা নোট্স নিয়ে বসে বসে কাঁদলে কি পড়া হয়ে যাবে! এখন ব্রেক নেহ্ তো দেখি, যাহ্ বোকা মেয়ে! চোখ মুছেআয়। ফিরে এসে আমাদের সাথে গল্প কর.।
ঃ গল্প করার মুড নেই .
:আচ্ছা গল্প করার মুড না থাকলে গল্প বল!
ঃ হালিমা তোর হিজাব আর থাপ্পড়ের গল্প শুনবো আমরা আজকে ...
ঃ আর নামাজ আর পাহাড়ের গল্প-ও শুনবো ...
ঃ মানে কি?
ঃ মানে, তুই আমেরিকায় বড় হয়েছিস! গ্যাদাকাল থেকে এমন ধার্মিক হয়ে বড় হবার পাবলিক তো তুই না! তোর ইসলামের পথে আসার কাহিনী বল ... কিভাবে দ্বীন বুঝলি, কিভাবে হিজাব ধরলি, কিভাবে আল্লাহর কাছে আসলি - - এইই!! বই রাখ তো ... নো মোর স্টাডিং ...
ঃ নাহ্! আমার এখন মুড নেই ...
ঃ এই রাবেয়া, তুই হালিমার হাত ধর, ফাতিমা তুই ধর পা! এখনি থাবড়িয়ে মহারাণীর মুড আনছি ...
ঃ "উফ্! কিছু হলেই হুমকি ! আচ্ছা আচ্ছা!! হুমকি দিতে হবে না, বলছি তোদের কাহিনী, আগে আমার কেক টা তো দে ...
ঃ "ইয়ে এ এ এ এ ... !!!’ সবাই তার স্বরে চিল্লাতে চিল্লাতে হালিমাকে জড়িয়ে ধরলো!
কেক হাতে নিয়ে, হালিমা বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে শুরু করলো ওর গল্প, ওর জার্নি, দ্য জার্নি টু ফেইথ ...
“তখন আমি ক্লাস টু তে পড়ি ... হঠাত আমাদের গ্রামে ... ...
চার জোড়া চোখ জ্বলজ্বল করে শুনতে থাকলো হালিমার কাহিনী ...
(চলবে ইনশা আল্লাহ্ ...)
( বিঃ দ্রঃ সম্প্রতি সরোবর প্রকাশনীর “ফেরা” বইটা পড়ে খুবি অনুপ্রাণিত হই! দুই বোনের কনসারভেটিভ খ্রিস্টান পরিবার থেকে ইসলামের আলোতে ফিরে আসবার কাহিনী! তাই আমার খুব কাছের এক বোনের ইসলামে আসার কাহিনী নিয়ে নতুন সিরিজ লেখা শুরু করলাম! এই সত্যি ঘটনা অবলম্বনে বেশ কয় পার্ট মিলিয়ে লেখাটা ভালোভাবে চালিয়ে যাবার ইচ্ছা আছে ইনশাআল্লাহ্! আশা রাখি, আল্লাহ সুবহানুতা'আলা এই লিখার মাধ্যমে আমাদের সবাইকেই উপকৃত করবেন, তাঁর বারাকাহ ও রহমত দিবেন! আমীন!
সত্য ঘটনা নিয়ে এই প্রথম আমার কোন সিরিজ শুরু করা!! সবাইকে আন্তরিক আমন্ত্রণ রইলো )
বিষয়: বিবিধ
১৭৯৪ বার পঠিত, ২৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
লিখাটি দু'বার পোষ্ট হয়েছে(মানে ডাবল পেষ্ট), এডিট করে দিন।
ধারাবাহিক লিখতে থাকুন। জাযাকিল্লাহ খাইর
মন্তব্য করতে লগইন করুন