শরীর, আত্মা, খাওয়া এবং রমাদান ...
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১৩ জুন, ২০১৬, ০৮:৪৫:০৪ রাত
; “শরীরকে ক্ষুধার্ত রেখে আত্মাকে খাওয়াই”, বলেই হো হো করে হেসে উঠলো আইশা!
মেয়েটা পাগল হয়ে যাচ্ছে নাকি দিন দিন! ওর ননমুসলিম ফ্রেন্ড স্টেফেনি জিজ্ঞেস করেছিল রোজা সম্পর্কে,
“সারাদিন না খেয়ে থাকার মানে টা কি?”
উত্তরে উপরের জবাব টা দিয়েই আয়িশার হাসি পেল। হাসির কারণ দুইটাঃ এক. হাসি পেয়েছে স্টেফেনির চেহারা দেখে, দুই. হাসি পেয়েছে ওর নিজের বানানো লাইনটা বেশ পছন্দ হয়েছে!
:“Starve your body to feed the soul! Wow!”
: ইয়েস! আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা থেকে শুধু পয়েন্টলেস্ ভাবে না খেয়ে থাকি না। এটা আমাদের জন্যে একটা স্পিরিচুয়াল একসারসাইজের মতন। এর মাধ্যমে আমরা আমাদের মনোযোগ আমাদের শরীর থেকে উঠিয়ে আমাদের নিজেদের ভিতরের Soul এর দেখা-শোনায় মনোযোগ দেই।
: Soul ? মানে ?
: Soul মানে হচ্ছে আমাদের আত্মা। রুহ্। আমাদের নিজেদের ভিতরের চেহারা, যেটা দেখা যায় না। ছোঁওয়া যায় না। আমাদের কুরআনে রুহের মেনশান করা হয়েছে । আমরা যখন মরে যাবো, আমাদের বডি তো মাটির নিচে পচে গলে যাবে, কিন্তু আমাদের Soul আল্লাহ্র কাছে ফিরে যাবে। তাই Soul হচ্ছে Permanent আর বডি টা হল Temporary. অথচ আমরা সারা বছর এই বডির যত্নেই পড়ে থাকি। বডিকে খাওয়াই, পরিষ্কার রাখি, প্রলেপ মেখে সুন্দর করি, সাদা করার চেষ্টা করি, ইয়াং রাখার চেষ্টা করি — অথচ Soul এর প্রতি আমাদের যত অবহেলা। আমাদের Soul আমাদের পাপের কারণে কালো কুচকুচে হয়ে যায়, অথচ আমাদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। এজন্যেই আল্লাহ্ দয়া করে আমাদের রমাদানের মতন মাস দিয়েছেন, যেন আমরা আমরা আল্লাহ্ ইবাদাত করে, ক্ষমা চেয়ে আমাদের Soul কে, ঈমানকে ঘঁষে মেজে আবার পলিশ করে নিতে পারি।
: হুম্! তা কি খাওয়াও তোমার Soul কে তুমি
: শরীরকে খাওয়ানোর জন্যে শত রকমের আইটেম লাগে। আলহামদুলিল্লাহ্ রুহ্কে, ঈমানকে ক্বলবকে সজীব রাখতে শুধু প্রয়োজন আল্লাহ্র যিক্র। অন্তর যত বেশি অন্তরের মালিককে স্মরণ করবে, তত সেই অন্তর হেলথি থাকবে, সুন্দর থাকবে।
; তা তুমি না খেয়ে থাকলে এখানে কি হচ্ছে?
; ঐ যে সারাবছর তো বডি কে খাওয়ায়েই আস্ছি! তাই এবার বডির উপর এটেনশান বাদ দিয়ে ঈমানকে তাজা করার পালা। আর কুরআনে আছে যে, সিয়ামের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাক্ওয়া অর্জন করা। তাক্ওয়া হচ্ছে আল্লাহ্র প্রতি আরো সচেতন হয়ে নিজেদের খারাপ সবকিছু থেকে প্রোটেক্ট করা। রোজায় আমরা আমাদের রুহ্কে, ঈমানকে ট্রেইনিং দেই আমাদের বডির ক্ষুধাকে বিরত রাখতে। কেউ নিজেকে যেমন-ই ধার্মিক বলুক না কেন, রোজা রাখা অবস্থায় খাবার সামনে থাকলেও সে কিন্তু সেটা খায় না। তার ভিতরের আওয়াজ ক্ষুধাকে দমিয়ে রাখে, আল্লাহ্র খুশির জন্যে সে রোজা রাখে। এভাবেই রমাদান আমাদের শিখায় কিভাবে আল্লাহ্র খুশির জন্যে নিজেদের ভিতরের খারাপ কাজ করার ক্ষুধাগুলোকেও দমিয়ে রাখা যায়। আমাদের আরো ডিসিপ্লিন হতে শিখায়, গরিব মানুষের ক্ষুধার কষ্ট বুঝতে শিখায়, বিনয়ী হতে শিখায়, দানশীল হতে শিখায়। এজন্যেই তো রমাদানের সাথে সাথে আমাদের ডোনেট করার জন্যে আছে যাকাত আর ফিত্রার ব্যবস্থা।
; ওয়াও! দারুণ তো।
; হুম্! আসলেই দারুণ তোমারো ট্রাই করা দরকার!
; না বাবা নাহ্! আমি আমার চিকেন ফ্রাই ছাড়া থাকতে পারবো না! তুমি কিভাবে পারো আমি জানি না!
; আমি নিজেও জানি না আমি কিভাবে পারি! রমাদানের বাইরে ক্লাসের ফাঁকে এক বেলা খাবার মিস্ হয়ে গেলে খিদায় পেট জলতে থাকে, অথচ রোজায় তেমন কোন কষ্টই টের পাইনা আলহামদুলিল্লাহ। এটাও আল্লাহ্র-ই বিশেষ ব্লেসিং এই মাসে। ছোট-খাটো মিরাকেল বলতে পারো।
আচ্ছা আমি উঠি, ঐ যে রুম ফাইভের পেশেন্ট রেডি!”
উঠে চলে গেল আইশা।
স্টেফেনি দূর থেকে তাকিয়ে দেখলো। আইশাকে দেখলে ওর মাঝে মাঝে হিংসা হয়। তবে ভালো হিংসা! অনেকবার বলেছেও আইশাকে, “মেয়ে তোমাকে দেখলে আমার গা জলে! ফেইথ নিয়ে এত হ্যাপি কিভাবে থাকে কেউ!!”
স্টেফেনির নিজের কিছু স্ট্রাগল আছে, ডাক শুনছে, ও উঠতে চাচ্ছে, কিন্তু সাহস করে উঠতে পারছে না।
আয়িশা হেসে বলেছে, “হা হা! দেখো আমাদের সবার লাইফের রাস্তা টা ভিন্ন। আমি জানি না তুমি তোমার লাইফে কিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছো বা গিয়েছ। তোমার ফ্যামিলি, ফ্রেন্ডস্, সোসাইটি কিভাবে তোমার ফেইথকে শেপ করেছে আমি জানিনা। না জেনে আমার জাজ বা প্রিচ করার কিছু নেই। তাই আমি যে রাস্তা ধরে গডের কাছে পৌঁছিয়েছি, আল্লাহকে চিনেছি, তোমার জন্যে হয়তো আরেকটা রাস্তা আছে, সেটা ধরে তুমিও পৌঁছে যাবে তোমার Happy soul এর কাছে একদিন। কখনো আশা ছেড় না।”
স্টেফেনিরো মনে হল ও খুব শীঘ্রি পৌঁছে যাবে!
আল্লাহ্ এই রমাদানে আমাদের সবাইকে আমাদের Happy Soul এর কাছে পৌঁছানোর তাওফিক দিন! আমিন।
বিষয়: বিবিধ
১৪২২ বার পঠিত, ২৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
প্রাঞ্জল উদাহরণের মাধ্যমে একটি হৃদয়গ্রাহী গুরুত্বপূর্ণ লিখা উপহার দেয়ার জন্য জাজাকাল্লাহু খাইর।
ধৈর্য্য এবং সময় নিয়ে লিখা টি পড়ার জন্যে জাঝাকাল্লাহু খইর আপু মণি
আসলেই ঠিক। আমার মত খাদকেরও রোজা কষ্টের লাগেনা।
আর আপনি দারুনভাবে লেখেন। জাজাকাল্লাহ খায়রান। সুন্দর সাবজেক্ট। আপনি নিয়মিত লেখেন এই অনুরোধ। মানুষ উপকৃত হবে
ধৈর্য্য এবং সময় নিয়ে লিখা টি পড়ার জন্যে জাঝাকাল্লাহু খইর।
দুয়া করবেন আপু! আল্লাহ, আমাদের সবার দাওয়াহ্ কেই কবুল করে নিক!
ধৈর্য্য এবং সময় নিয়ে লিখা টি পড়ার জন্যে জাঝাকাল্লাহু খইর আপু মনী।
পড়তে পড়তে আনন্দে মনটা ভরে উঠলো, ছোট আপিটা কত সুন্দর করে বুঝেছে, দাওয়াহ দিচ্ছে এবং লিখছেও মাশা আল্লাহ
তিলাওয়াতে সুরা আবাসা পড়তে গেলেই তোমার কথা মনে উঠে এত্তো এত্তো করে
আর পোস্ট দিয়ে গুম হয়ে যেও না প্লিজ , দেরিতে হলেও এন্সার দিও!
দোআ করবে আমাদের জন্য।
তোমার কথাও অনেক বেশি মনে পড়ে বোন! দুয়াতে আমরা যেন একজন আরেক জন কে না ভুলে যাই! আল্লাহ্ সুবহানুতা'আলা তোমাকে তাঁর বাগানে দাখুল করুক! আমিন
মন্তব্য করতে লগইন করুন