মুক্ত আত্মা !!!
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১৩ মে, ২০১৬, ০২:৪৪:৩১ দুপুর
সায়রা হেড-ডাউন করে কান খাড়া রেখে ক্লাসে লেকচার শুনছে। কাল রাত ২ টা পর্যন্ত হসপিটালে ডিউটি করে এসেছে। চোখে ঘুম লাগতে না লাগতেই সকালে লেকচারের জন্যে দৌড়। মাথা এখনো ঝি ঝি করছে। হেড-ডাউন করেই এখন দু’চোখের শান্তি খুঁজে ফেরা। মাথা নিচু করেই শুনতে পেল যে স্যার এখন বোর্ডে ডায়াগ্রাম আঁকতে যাবেন। নো মোর হেড-ডাউন টাইম! চোখ তুলে এখন তাকাতে হবে, নাহলে আবার ইম্পর্টেন্ট নোট না মিস্ হয়ে যায়। তাড়াহুড়া করে মাথা উঠাতে গিয়ে কোত্থেকে হিজাবের ফাঁক দিয়ে দুষ্টু দুই গোছা চুল বের হয়ে আসলো। আস্তে করে দুই আঙ্গুলের কৌশলে চুল গুলিকে ঠেলে হিজাবের নিচে ঢুকিয়ে দিল সায়রা। হঠাত ফ্ল্যশব্যাক করে কয় বছর আগে ফিরে গেল সায়রা। তখনো প্রাইভেট পড়তে যাবার আগে মাথায় কাপড় দিত সে, খুব স্টাইল করে!! ইচ্ছা করে টেনে টেনে সামনের ছোট চুলগুলি বের করে রাখতো আর ভাবতো দুষ্টু চুলগুলি বার বার কানের পিছন থেকে কেন যে সামনে চলে আসছে!
ইনোসেন্ট টিনেজ মনের আশা- আমাকে সুন্দর দেখাবে! আমাকে কারো ভালো লাগবে। খারাপ তো কিছু না, তাইনা!
সুন্দর দেখাতো সায়রাকে। ভালোবাসাও তার কাছে এসেছিল লাল খামে করে এক তোড়া গোলাপ আর চকলেটের সাথে। সবকিছু তো বেশ ভালোই চলছিল, কিন্তু তারপরো কোথায় যেন কিছু মিসিং ছিল! সবসময় মনে একটা অস্থিরতা কাজ ছিল! হারিয়ে ফেলার ভয়! এই সৌন্দর্য্য হারিয়ে গেলে! এই ভালো লাগা হারিয়ে গেলে! এই পজিশান/পপুলারিটী- হারিয়ে গেলে!?! তখন কি হবে!
সময় গড়িয়েছে। দুনিয়াদারীর অনেক কিছুই দেখেছে সায়রা। যেই লাল খামে করে এসেছিল ভালোবাসা, সেই লাল খামই সে নিজের হাতে ছিড়েছে ১০০ টুকরা করে। চকলেটের মতই সুগার-কোট করা মিথ্যা গুলি সে ধরে ফেলেছে সময় থাকতেই! সেই মিথ্যার আঘাতে সে সত্যকে চিনেছে। নাহ্ সব আঘাত এত খারাপ না! কিছু কিছু আঘাত জরুরি! ঘা পাওয়া মনটাকে তার স্রষ্টার কাছে ফেরত আনার জন্যে!
নতুন করে সায়রা বুঝতে শিখেছে, ভালোবাসতে শিখেছে। তবে এ ভালোবাসা ঐ লাল খামের মত ঠুনকো ভালোবাসা নয়। এ ভালোবাসা উদ্দেশ্যহীন স্বার্থপর কিছু রোমান্স বা শারীরিক/মানসিক স্বস্তির জন্যেও নয়।
এ ভালোবাসার উদ্দেশ্য সবকিছুর উর্ধ্বে। এ হচ্ছে আল্লাহ্র প্রতি ভালোবাসা, তাঁর রসূলের(সাঃ) প্রতি ভালোবাসা, তাঁর পাঠানো ইসলামের প্রতি ভালোবাসা, তাঁর বানানো জান্নাতের প্রতি ভালোবাসা!
এ ভালোবাসা কখনো সায়রাকে দুর্বল করে নি, এক মুহুর্তের জন্যেও না। বরং যখনি রবের ভালোবাসার জন্যে কিছু করতে যায় সে, নিজেকে সবচেয়ে স্ট্রং, কনফিডেন্ট এবং নির্ভীক লাগে। অমুক ওর দিকে না তাকালে বা কমপ্লিমেন্ট না পেলে মোটেও আগের মত সেলফ্ ইস্টিমের বারোটা বেজে যায় না। আয়নায় যতবার নিজেকে দেখে, বলে “আলহামদুলিল্লাহ্! আমি ফ্রী!”
সায়রা পুরোপুরি ফ্রি!!
সায়রা ফ্রী সৃষ্টিকে ইমপ্রেস করার মরীচিকার পিছে ছোটা থেকে, সায়রা ফ্রী দুনিয়ার ধন, দৌলাত আর পপুলারিটির মায়াজাল থেকে, সায়রা ফ্রী মানুষের বাঁকা চোখ বা ত্যাড়া মন্তব্য থেকে, সায়রা ফ্রী “ওমাহ্! লোকে কি বলবে!”- এই ভয়াবহ মানসিকতা থেকে।
আলহামদুলিল্লাহ্! সায়রা এর আগে নিজের আত্মাকে কখনো মুক্ত করতে পারেনি, একটা না একটা শিকল বাঁধাই থাকতো। কখনো সমাজের, কখন সেই “ভালো লাগা মানুষের”, কখনো বন্ধু-বান্ধবের, কখনো বা নিজের-ই কামনা-বাসনার নফ্সের! কিন্তু যে দিন থেকে সে নিজেকে আল্লাহ্-র কাছে সঁপে দিল, সেদিন থেকেই ওর আত্মাকে সে ফ্রী করে দিল! আলহামদুলিল্লাহ্! এখনো শয়তান আসে যদিও, সায়রার কানে ওয়াস্ওয়াসা দেয়। মাঝে মাঝেই পা পিছলে যায়।
তবে পা ফস্কে পড়ে গেলেও আল্লাহ্ যে আছেন, ধরবেন। সায়রা ভয় পায় না, হতাশ হয়না। ওর রবের ভালোবাসা যে ঐ লাল খামের মতন ঠুনকো না। তাঁর নিঁখুত ভালোবাসার প্রমাণ পায় সায়রা প্রতিটা নিঃশ্বাসে, আর ওর নিজের অকৃতজ্ঞতায় মাথা নিচু হয়ে আসে প্রতিটা পদে।
সায়রা ইসলামের লেন্স দিয়ে যখন দুনিয়াটা দেখতে শুরু করলো, তখন ও বুঝে যে ওর আসলে হারানোর কিচ্ছু নেই।
চেষ্টা করে যাবে সে নিরন্তর, রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটবে এক্সামের আগে, আধো ঘুম-আধো জেগে জেগে লেকচার শুনবে। কিন্তু দিন শেষে যেখানে চান্স পাবার সেখানেই পাবে, অবশ্যই ঘাম ঝরিয়ে পরিশ্রম করবে বেস্ট রেজাল্টের জন্যে, কিন্তু সেটা না মিললেও হারানোর কিছুই নেই।
যখন এই দুনিয়াটাই বেশি দিনের না, দুনিয়ার আশা-আকাঙ্খা-ও বেশি দিনের না, দুনিয়ার এচিভমেন্ট গুলোও বেশি দিনের না। হারানোর কিছু নেই। তাওয়াক্কুল, সবর আর ঈমান মিলালে শুধুই পাওয়াই পাওয়া! দুহাত ভরে আল্লাহ্র রহমত আর বরকৎ পাওয়া। নিজের আত্মাকে মুক্ত করার মতন শান্তি পাওয়া!
“নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে,
তাদের মেহমানদারির জন্য রয়েছে জান্নাতুল ফেরদাউস”
{ সূরাঃ- কাহাফঃ→ ১০৭}
বিষয়: বিবিধ
১১৭৭ বার পঠিত, ১৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ধৈর্য্য এবং সময় নিয়ে লিখা টি পড়ার জন্যে অনেক জাঝাকাল্লাহু খইর। আল্লাহ্ রব্বুল আ'লামিন আপনার রমাদান কবুল করে নিক!
ধৈর্য্য এবং সময় নিয়ে লিখা টি পড়ার জন্যে অনেক জাঝাকাল্লাহু খইর। দুয়া রইল, আল্লাহ্ রব্বুল আ'লামিন আপনার রমাদান কবুল করে নিক!
মন্তব্য করতে লগইন করুন