ভালোর সংজ্ঞা !?!

লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১৩ আগস্ট, ২০১৫, ০২:৫৩:৩০ রাত



ভালো বলতে আমরা কি বুঝি?

ভালোর সংজ্ঞা কি এটা জিজ্ঞেস করলে ৩ টা ফিলোসফি ডিপার্টমেন্ট খোলা লাগবে। কারণ, একেক জনের কাছে ভালোর সংজ্ঞা একেক রকম। কেউ খুন করেও বলবে যে, সে ভালোর জন্যেই এটা করেছে আর হাজার ভালো জিনিসেও কেউ পান থেকে চুন খসলেই বলবে এতে ভালো কিছুই নেই।

ভালোর সংজ্ঞা নিয়ে আমরা তাই যেন খানিকটা কনফিউজ্‌ড। আর এখানে ধর্মের আলোচনা আনলে যেন ব্যপার টা আরো ঘোলাটে হয়ে যায়। যেমন কেউ নামাজ পরে না, রোযা করে না, হিজাব করে না, দাড়ি রাখে না- কিন্তু তার ব্যবহার অসম্ভব নম্র, ভদ্র, প্রচন্ড রেসপেক্ট তার আদাবে। সে কি ভালো নয়?

আবার কেউ হয়তো নামাজ পরে, হিজাব করে, রোযা করে, দাড়ি রাখে- কিন্তু রাগ উঠলে তার মাথায় বাজ পড়ার মত সে চেঁচিয়ে উঠে! সে কি ভালো মানুষ নয়?

আমরা অনেকটা অবচেতন ভাবেই ভালো মানুষ দের কে যেন ২ টা গ্রুপে ভাগ করে দিয়েছি। গ্রুপ-১, তারা এত নিয়ম-নীতি না মানলেও আচারে-ব্যবহারে বেশ ভালো মানুষ।

আর গ্রুপ-২,ধর্মের সবকিছু মানতে চাওয়া Weird টাইপের ভালো মানুষ।

দুঃখজনকভাবে, এই ২ গ্রুপের ভিন্নতাকে নিয়ে আমরা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে কাজে লাগাই। যেমনঃ যে নামাজ পরে না, সে ভাবে, ‘আমি নামাজ পড়ি না, কিন্তু অমুক যে নামাজ পরে ওর মত খারাপ ব্যবহার তো অন্তত করি না” ... আর যে নামাজ পরছে সে হয়তো ভাবে,

“আমি নামাজ তো পড়ছি, অমুকের মত শুধু নামে-মাত্র মুসলিম হয়ে তো থাকছি না”

এটুক করতে পারলেই কি ভালো, নাকি ঐটুকু করলে ভালো? হায় ভালো! তোমার সংজ্ঞা কি?

আল্লাহ্‌ সুবহানুতা’আলা কুরআনে আমাদেরকে ভালোর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে কি করলেন?

তিনি এই ২ গ্রুপকে মিলেমিশে একাকার করে দিলেন। এটা হতেই পারে না যে কেউ আল্লাহ্‌, তাঁর রসূল(সাঃ) এবং শেষ দিবসে কে বিশ্বাস করবে, সালাতে আল্লাহ্‌র সামনে দাঁড়াতে ভয় করবে, আর রাগ, গীবাহ্‌, গালি-গালাজ দিয়ে তার মুখ কালো করবে।

আবার এটাও হয় না যে, কেউ নৈতিক ভাবে সবার সাথে অনেক ভালো, কিন্তু আল্লাহ্‌র প্রতি চরম অকৃতজ্ঞ।

অনেকে কনফিউজ্‌ড থাকে, আমি কারো ক্ষতি করছি না, ভালোয় ভালোয় নিজে নিজের কাজ করি- তাও আল্লাহ্‌ কেন আমাকে শাস্তি দিবেন!

সবার সাথে ভালো ব্যবহার মেইনটেইন করাতে- আল্লাহ্‌র সৃষ্টিগুলির হক আদায় করা হচ্ছে। কিন্তু যে আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদের সব কিছু দিলেন, সালাত না দিয়ে, যাকাত না দিয়ে, হিজাব না পড়ে, ইসলাম না মেনে আমরা সেই আল্লাহ্‌র হক টাই আদায় করছি না- সেটাই এখানে অন্যায় ভাই।

আল্লাহ্‌ তা’আলা কুরআনে বেশ কয়েকবার বলেছেন, “ আকিমুসসালাহ্‌, ওয়া আ’তুয্‌যাকাহ্‌” মানে “তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং যাকাহ্‌ আদায় করো”। এই আদেশ ২ টা জোড়ায় আসার পিছনেও দারুণ একটা wisdom আছে।

এই ২ টা বিধান আসলে কুরআনে অনেকটা figure of speech এর মত কাজ করে। সাহিত্যে figure of speech হচ্ছে যখন যেটা বলা হয়েছে, তার থেকে অনেক বেশি বুঝানো হয়ে থাকে।

এখানে, “নামাজ কায়েম করা” বলতে আমরা আল্লাহ্‌-র জন্যে যত ইবাদাত-বন্দেগী রিলেটেড কাজ করি তা বুঝানো হয়েছে ( যেমনঃ ৫ ওয়াক্ত সালাহ্‌, রোযা রাখা, হাজ করা, তাস্‌বীহ্‌, কুরআন পড়া, শিখা ও শিখানো, হিজাব পড়া ইত্যাদি )

আর, “যাকাত আদায় করো” বলতে আমরা আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকে সাহায্য করতে যত কাজ করি তা বুঝানো হয়েছে ( যেমনঃ কাউকে বিপদে সাহায্য করা, রান্না করে নিয়ে যাওয়া, ভালো ব্যবহার করা, গিফট দেওয়া, দান করা ইত্যাদি )

দ্বিতীয় টাও আন্তরিক ভাবে আল্লাহ্‌র খুশির নিয়তে করলে সেটাও তাঁর ইবাদাত হিসেবেই গণ্য হবে, ডান কাঁধের ফেরেস্তা আমলে এড করে নিবে।

আমরা যে অদৃশ্য দেয়াল দিয়ে ভালোর সংজ্ঞা ২ ভাবে ভাগ করে দেই, আল্লাহ্‌ সুবহানুতা’আলা সেটা অভিন্নভাবে এক করে দিলেন। Morally good and religiously good- They go hand in hand. একটা ছাড়া আরেক টা সম্ভব না।

আরো চমকপ্রদ ব্যপার হলো, এসব পড়ছিলাম সূরা বাকারাহ্‌-র ১৭৭ নং আয়াত নিয়ে। এই আয়াতেই আল্লাহ্‌র সুবহানুতা’আলা ভালো তথা সৎকর্মের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে প্রথমেই উল্লেখ করেন “আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাসের কথা, ঈমানের কথা। এখানে এটার ২ টা পয়েন্ট,

পয়েন্ট ১) ঈমান, বা বিশ্বাস কি দেখা যায়? না, এটা অন্তরের ভিতরে থাকে, আর অন্তরের ভিতরের খবর আল্লাহ্‌ তা’আলাই রাখেন। তার মানে হচ্ছে, কে Truly ভালো আর কে মন্দ সেটা আমরা দেখতে পারবো না, আমরা জানি না, জানবো না। Ultimate judgment is unto Allah only.

আমি জানি না, আমি ভালো কি না, আমি এটাও জানি না তুমি ভালো কি না, আমি শুধু জানি যে, আমাদেরকে আল্লাহ্‌র খুশির জন্যে একে অন্যকে ভালো হতে সাহায্য করে যেতে হবে।

আর পয়েন্ট ২) হচ্ছে, ভালো হবার জন্যে আল্লাহ্‌ সুবহানুতাআ’লার উপর ঈমান থাকাই যথেষ্ট! যে অন্তর একবার আল্লাহ্‌ তা’আলাএ চিনেছে, সে ভালো না হয়ে থাকতে পারবে না।

আমরা আসলে এখনো আল্লাহ্‌ সুবহানুতা’আলাকে চিনতে পারি নি, জানতে পারি নি। ইনশাআল্লাহ্‌ চিনে যাবো, ‘ভালো’ হয়ে যাবো। যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ্‌! Happy

Study discussion:

“Qur’an For Young Adults Course”

Bayyinah TV




বিষয়: বিবিধ

২৩১৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

335570
১৩ আগস্ট ২০১৫ সকাল ০৯:৪৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : শিক্ষনিয় পোষ্টটির জন্য অনেক ধন্যবাদ। এটা ঠিক যে অনেক ধার্মিক মানুষের মধ্যে দেখা যায় অহংকার। যে অহংকার হলো শয়তান এর চিন্হ।
335615
১৩ আগস্ট ২০১৫ দুপুর ০২:৫৪
আবু জান্নাত লিখেছেন : আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ সুন্দর পোষ্টটির জন্য শুকরিয়া। জাযাকাল্লাহ খাইর

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File