আমার অনলাইন কুরআন ক্লাস এবং আত্ম-উপলব্ধি
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ৩০ নভেম্বর, ২০১৪, ০৭:৪০:৩১ সন্ধ্যা
প্রথম প্রথম যখন কুরআনের তাজউইদ শিখা শুরু করছিলাম, ভয় ভয় লাগতো! কিভাবে শুরু করবো, কিভাবে শেষ করবো। নুন সাকিনের পরে তা আসলে ইখফা করে, আবার এক আলিফ টান ঠিক রেখে আবার নাকের বাঁশি থেকে বাতাস বের করে আবার পরের হরফের সাথে মিলিয়ে কখনো মোটা উচ্চারণ, কখনো চিকন উচ্চারণ—এতকিছু বুঝে কিভাবে সবঠিক রাখবো! আবার সহীহ উচ্চারণ ঠিক না থাকলেই বা কিভাবে চলবে! তখন আল্লাহ্ তা'আলা আমার সাথে হালিমা আপুর দেখা করিয়ে দিলেন। আলহামদুলিল্লাহ্ আল্লাহ্-র পারমিশনে স্কাইপে হালিমা আপুর কাছে ক্লাস করা শুরু করলাম। প্রথম প্রথম কত যে ভুল হত আপুকে পড়া দিবার সময়! আপুকে বলতাম আমরা, “আপু, কিভাবে এত কিছু মনে রাখবো”
আপু-ও সমান তালে বলতেন, “কিভাবে মনে রাখবো মানে! আল্লাহ্র কিতাব সহীহ ভাবে পড়ার নলেজ মাথার মধ্যে এমন ভাবে থাকা চাই যেন আরবি মুসহাফের দিকে তাকানোর সাথে সাথে জিহ্বা, কন্ঠ-নালী জায়গামতন চলে যায়!” মাশাআল্লাহ্, হালিমা আপু অনেক Inspire করতেন। আপুর সাথে পড়া দিতে দিতে, Practice করতে করতে আলহামদুলিল্লাহ্ এখন তাজউইদ আমার কাছে পানি-ভাত লাগে! আসলেই যেন তাকানোর আগেই আমার জিহ্বা জানে যে কোথায় যেতে হবে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্ সুবহানুতা’আলার! তিনি যেন আপাকে এবং তার ফ্যামিলিকে কবুল করে নেন তাঁর মনোনীত বান্দাদের দলে ! আমিন
এই তো গত তিন মাসের Summer Vacation জুড়ে এই হালিমা আপুর কুরআন ক্লাস করা! একটা দিন যেত না আপুর কোন খবর না পেলে! Summer vacation শেষ হল, ইউনিভার্সিটি খুললো, আমিও একশো একটা কাজের সাথে জড়িয়ে গেলাম! বাকিরাও যার যার মতন ব্যস্ততার জগতে ডুবে গেল। সুবহানআল্লাহ্! টুক-টাক কথা হলেও আমাদের কুরআন ক্লাসটাও কেমন যেন আর এগুলো না! আমার যখন টাইম মিলে তো তখন বিডীতে রাত তিন টা, আবার যখন বিডিতে টাইম মিলে তো হালিমা আপুর কাজ, নাইলে আবার স্কটল্যান্ডের আপুর ক্লাস থাকে- মানে হযবরল অবস্থা!! কারো সাথে কারো টাইম মিলে না, আর মিললেও কেমন যেন আগের মতন উত্তেজনা কমে গেছে, একটা গ্যাপ হয়ে গেলে যা হয় আর কি! কি আর করা, ভাবলাম আল্লাহ্ রব্বুল আ’লামীনের নিশ্চয়ই অন্য কোন প্ল্যান আছে। কিন্তু, এত মিস্ করতাম আমাদের ক্লাসটাকে, দিনের ব্যস্ততা শেষে ক্লাস টা যেন আমার আত্মার জন্যে একটা রেস্ট হতো। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে হালিমা আপুনি কতই না সাহাবীদের গল্প করতেন, কুরআন নিয়ে আলাদা হালাকা করতেন! ঈমান যেন নতুন করে তাজা হয়ে যেত শুনে শুনে !!! ওদিকে আমার প্র্যাকটিস-ও হচ্ছিল না, তাজউইদ না সব আবার ভুলে যায়! আমি গুতাতে থাকি সবাইকে “আপুরা চলো না শুরু করি”। আসলে আপুদের-ও সংসার আছে, আপুরা ওদের ওখানের মুসলিম কমিউনিটির মহিলাদের নিয়ে হালাকা করেন, বাচ্চাদের দেখেন, যার যার বাস্তব জীবনের নানান কমিটমেন্ট, যার হক ভার্চুয়াল জগতের থেকে নিঃসন্দেহে অনেক অনেক বেশি!
তো আর কি, আল্লাহ্র উপর ভরসা করে নিজে নিজে চালাতে থাকলাম যতদূর পারি, আটকিয়ে গেলে মনে হত খালি, ইশ্! কেউ যদি শুনে আমার ভুল গুলি ধরিয়ে দিত ... সুবহানআল্লাহ্ আমি কি আর জানতাম নাকি আল্লাহ্ আমার জন্যে কি প্ল্যান করে রেখেছেন। এই তো সেদিন, হঠাত দেখলাম কিছু বোন ফেসবুকে একটা গ্রুপ খুলেছেন (শুধু বোনেদের জন্যে) । গ্রুপ এডমিন একজন হাফিজা আপু মাশাআল্লাহ্, যিনি প্রতি সপ্তাহে স্কাইপে/ফোনে আগ্রহীদের কুরআন পাঠ পড়া নিবেন!!
সুবহানআল্লাহ্ লাফিয়ে গ্রুপে এড হয়ে, সেদিন-ই শুনিয়ে দিলাম আপুকে পড়া! মাশাআল্লাহ্! কতদিন পর, আবার স্কাইপে একটা কুরআন ক্লাস করার সুযোগ!!! কেউ কতদিন পরে আমার পড়া শুনে বললো, “না না আপু, সোয়াদ টা যে আরেকটু মোটা করে পড়তে হবে!” আলহামদুলিল্লাহ্, আল্লাহ্ বার বার আমাকে দেখিয়ে দেন, কিভাবে যে তার উপর নিখাদ ভরসা করে নিয়াহ্ ঠিক রাখলে তিনি এমন এমন জায়গা থেকে আমার জন্যে ব্যবস্থা করে দিবেন যা আমার কল্পনাও করতে পারি না! সুবহানআল্লাহ্!
আর সেই সাথে আরো একটা বড় লেসন পেলাম, এ ক্ষণস্থায়ী জীবনের সব সম্পর্ক-ই আসলে ক্ষণস্থায়ী। প্লে গ্রুপ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কত মানুষের সাথে যে আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে কানেক্টেড করেছেন!!! “She is my best friend and she is my second best friend! “ লুল !!
সেই Best friend এর সবাই আছে ... আবার কেউ-ই নেই! দুনিয়ার জীবনের সম্পর্কগুলিতে আমরা কানেক্টেড হবো, ডিস্কানেক্টেড হবো ... এটা গড়বে, ভাঙ্গবে ... এটাই দুনিয়ার সম্পর্কের সাইকেল, তবে এক মাত্র যে সম্পর্ক চিরস্থায়ী, কখনো ভাঙ্গার না- সেটা হচ্ছে বান্দার সাথে তার রবের সম্পর্ক! তাঁর সাথে কানেকশানের ওয়াই-ফাই লাইন ঠিক থাকলে, বাকি সব সম্পর্ক এমনি ঠিক থাকবে, আর সৃষ্টিকর্তার সাথে কানেকশান ঠিক না থাকলে, তাঁর সৃষ্টির সাথে হাজার হাজার নেটওয়ার্কের জালের মত কানেক্টেড থাকলেও দিন শেষে অন্তরের শূণ্যতা কোন কিছু দিয়েই পূরণ হবে না !!
সবাই আমাদের জন্যে দুয়া করবেন, দুয়া করবেন আল্লাহ্র কিতাবের সমস্ত স্টুডেন্টদের জন্যে এবং খাস করে আমাদের সব উস্তাদাদের জন্যে। আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে কবুল করে নিক এবং জান্নাতুল ফেরদাউসে মিলিয়ে দিক। আমিন
বিষয়: বিবিধ
১৬৯৮ বার পঠিত, ১৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
''আর সেই সাথে আরো একটা বড় লেসন পেলাম, এ ক্ষণস্থায়ী জীবনের সব সম্পর্ক-ই আসলে ক্ষণস্থায়ী। প্লে গ্রুপ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কত মানুষের সাথে যে আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে কানেক্টেড করেছেন!!! “She is my best friend and she is my second best friend! “ লুল !!
সেই Best friend এর সবাই আছে ... আবার কেউ-ই নেই! দুনিয়ার জীবনের সম্পর্কগুলিতে আমরা কানেক্টেড হবো, ডিস্কানেক্টেড হবো ... এটা গড়বে, ভাঙ্গবে ... এটাই দুনিয়ার সম্পর্কের সাইকেল, তবে এক মাত্র যে সম্পর্ক চিরস্থায়ী, কখনো ভাঙ্গার না- সেটা হচ্ছে বান্দার সাথে তার রবের সম্পর্ক! তাঁর সাথে কানেকশানের ওয়াই-ফাই লাইন ঠিক থাকলে, বাকি সব সম্পর্ক এমনি ঠিক থাকবে, আর সৃষ্টিকর্তার সাথে কানেকশান ঠিক না থাকলে, তাঁর সৃষ্টির সাথে হাজার হাজার নেটওয়ার্কের জালের মত কানেক্টেড থাকলেও দিন শেষে অন্তরের শূণ্যতা কোন কিছু দিয়েই পূরণ হবে না !! ''
কি চমৎকার কথা !কদিন ধরেই এটা ভাবছিলাম!এই ব্লগ জগতেইতো এক সময় কতো সময় দিয়েছি এখন দিতে পারিনা..
অনেক দিন পর, তোমার বার্তা দেখে অনেক খুশি হলাম। দুয়া রইলো অনেক তোমার জন্যে ফী-আমানিল্লাহ্। আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের সবাইকে কবুল করে নিক। আমিন
আলহামদুলিল্লাহ্ আপু আল্লাহ্ তা'আলা ভালো রেখেছেন, তোমরা সবাই ভাল তো ?
" জীবনের খুব সুন্দর কিছু মুহূর্তের স্মৃতি তোমাদের সাথে কাটানো হয়েছে!"
ইশ্! আপুনি কাটানো হয়েছে বলছো!!!! আরো কাটানো হবে ইন শা আল্লাহ্! ) )
ফী আমানিল্লাহ্ আপুনি! ইয়েস! তোমার দুয়া তো চাই-ইই-চাই !! ফী আমানিল্লাহ্ , আমার দুয়াও তোমার জন্যে সবসময় থাকবে! তোমার হাতে খড়ি ধরেই তো আল্লাহ্ তা'আলা আমাকে এই হিফ্জের জার্নির পথ দেখালেন!আমার প্রতিটা অক্ষরের নেকী যেন আল্লাহ্ তা'আলা তোমার জন্যেও শেয়ারে রাখেন! আমিন আমিন আমিন
মাশা আল্লাহ্। খুব ভাল্লাগ্লো।
মন্তব্য করতে লগইন করুন