ধর্ম? সংস্কৃতি ? অন্ধ-বিশ্বাস? নাকি পূর্ণাংগ জীবন-ব্যবস্থা?
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ১০ আগস্ট, ২০১৪, ১০:২০:১৪ রাত
ছোটবেলা থেকেই আমরা বেশিরভাগ মুসলিম যেভাবে মোটামুটি একটা ইসলাম-বিহীন, সেকুলার পরিবেশ ও এডুকেশানের মধ্যে বড় হয়েছি ... যার জন্যে এখন “ইসলাম” টা আমাদের কাছে নিছক একটা হালাল-হারামের লিস্টের মতন লাগে ! যেটা মানতে পারলে তো খুব ভালো, তবে মানতে না পারলেও নো বিগ ডিল!! ইনফ্যক্ট যেহেতু সময়ের সাথে, সমাজের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে অনেক কিছুই মানা কষ্টকর লাগতে থাকে, তাই এভাবে ক্রমাগত ইসলামের বিধি-নিষেধ গুলি ইগনোর করতে করতে, না মানতে না মানতে একটা পর্যায়ে গিয়ে সেগুলি আর আমাদের কাছে কোন ব্যপার-ই মনে হয় না ! বরং উল্টা, আগা-গোড়া মানাটাই বাড়াবাড়ি দেখায় —এই তো মোটামুটি আমাদের এভারেজ মুসলিমদের ইসলাম নিয়ে ধারণা যেটা সত্যিকার ইসলাম থেকে বহু বহু দূরে !!
সাধারণ শিক্ষা-ব্যবস্থার আন্ডারে যেখানে মুসলিমদের জন্যে 'ইসলাম' নিয়ে কিছু জানার প্রথম এবং শেষ উৎস হচ্ছে সেই চিকন-চাকন "ইসলাম শিক্ষা" বই- যেটা পড়ার উদ্দেশ্য টাও থাকে শুধুমাত্র পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়া - সেখানে বড় হতে হতে ইসলাম পুরোপুরি ভুলে যাওয়া, কেয়ার না করা- এমন ফলাফল পাওয়া স্বাভাবিক!
আচ্ছা! একটা কুইজ করি ? - খুব কমন প্রশ্ন!
কুইজের প্রশ্ন - What is Islam ?
কিছু অপশান দেই-
(ক) ধর্ম (Religion )
(খ) সংস্কৃতি (Culture )
(গ) বিশ্বাস (Belief )
(ঘ) একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন-ব্যবস্থা (A Complete Way Of Life)
ভাবুন তো! কোন টা choose করবেন আপনি ??
যদিও একেক দৃষ্টি-ভঙ্গি দিয়ে চিন্তা করলে এক পর্যায়ে গিয়ে চার টাই সঠিক মনে হবে!
কিন্তু, এই চারটার মধ্যে একটা হিরো আছে, যেটা বললে কি না বাকি সবগুলোই সেটার মধ্যেই চলে আসে!মজার কথা হচ্ছে, ওই অপশান টাই সচরাচর বলা হয় না, বা ‘ইসলাম’ নিয়ে চিন্তা করার সময় সেটাই থাকে অনুপস্থিত!!
বলেন তো সেটা কোন টা ?
কি পারলেন ধরতে ?
আচ্ছা আমি বলছি,
The winner is- অপশান (ঘ)-- A COMPLETE WAY OF LIFE !
ইসলাম হচ্ছে একটা পূর্ণাংগ জীবন-ব্যবস্থা! পূর্ণাংগ বলতে পূর্ণাংগ-ই! কোনকিছুই এতে বাদ নেই! কি খাবো, কি পরবো, কি বলবো, কি শুনবো, কি করবো, কি না করবো, কেন ঐটা করবো- কেন ঐ টা না করবো-- লাইফের একটা কমপ্লিট কোড, পূর্ণাংগ জীবন-ব্যবস্থা হচ্ছে এই ইসলাম !
ইসলাম শুধুই আমাদের নামের সাথে লাগানো একটা ধর্ম নয়, সামাজিক রিচুয়াল পালনের মতন একটা কালচার নয়, পারিবারিক ভাবে জেনে আসে শুধু এক প্যাকেজ অন্ধ বিশ্বাস-ও নয়!
আর দশ টা ট্রেডিশোনের মতন ইসলাম না, যেখানে নিয়ম-কানুন মানাটা অনেকটা ফ্যাশানের মতন! হালের ফ্যাশানের সাথে তাল মিলাতে সবাই যা করছে, আমিও তাই করবো, সবাই না করলে আমিও করবো না!
উহু!!
সকালে ঘুমটা ভেঙ্গে থেকে উঠে কোন পা দিয়ে বাথরুমে ঢুকতে হবে সেটা থেকে শুরু করে গোটা একটা রাষ্ট্র কিভাবে চালাতে হবে- এ সবকিছুর A টু Z Instruction দেওয়া আছে এই ইসলামে। এবং নিঃসন্দেহে এই ইন্সট্রাকশান এসেছে সাত আসমানের উপরে এক মহামহিম সত্তা থেকে, যার হাতে সকল কিছুর ক্ষমতা!
আর নিশ্চয়ই তিনি ইসলাম ছাড়া আর কোন ধরণের লাইফ-স্টাইল-ই কারো কাছ থেকে গ্রহণ করবেন না !
"আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।"
[ সূরা মায়িদাহ্- আয়াত ৩ ]
"যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত।"
[সুরা ইমরান: ৮৫]
সুবহান আল্লাহ্! খুব স্পষ্ট ভাবেই বলে দিয়েছেন আল্লাহ্ তা'আলা যে, ইসলাম ছাড়া অন্য কোন লাইফ-স্টাইল যে নিজের জন্যে পছন্দ করবে, হোক সেটা পাশ্চাত্যের ঝকমকানি দেখে তাদের জীবন-ব্যবস্থা, বা সবার সাথে তাল মিলাতে সমাজের ধরিয়ে দেওয়া লাইফ-স্টাইল-- সেটা কস্মিণকালেও গ্রহণ তো করা হবেই না বরং যে করবে সে আখিরাতে হবে ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত!
আল্লাহ্ আমাদের তাদের মধ্যে না রাখুক।আমিন
আচ্ছা! ধরেন আপনার এক গ্লাস দুধের মধ্যে এক ফোঁটা ইউরিন পরে গেল, আপনি কি সেই দুধ আর গ্রহণ করবেন ?? খাবেন সেটা আর ??
প্রশ্নই উঠে না! কিন্তু, মাত্র একটা ফোঁটাই তো! কেন খাবেন না?
তাহলে, আমরা কিভাবে আমাদের লাইফ-স্টাইলে হালাল-হারাম, নিষিদ্ধ- অনুমদিত --- সবকিছু একটার সাথে আরেকটা আলু ভর্তার মতন মিশিয়ে চলে যাচ্ছি আর ভাবছি জীবন শেষে এটা আল্লাহ্ তা'আলার সামনে পেশ করবো আর তিনি সেই লাইফ-স্টাইল গ্রহণ করবেন!!
ইসলামে প্রবেশ করতে পাবে সম্পূর্ণভাবে!! পরিপূর্ণভাবে!!
নিঃশর্তভাবে আত্মসমপর্ণের মাধ্যমে!
"হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।"
[সুরা বাকারা: ২০৮]
আল্লাহ্ তা'আলা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশের আদেশ দিয়েছেন এবং যে শয়তান আমাদের কে সেটা করতে পদে পদে বাধা দিবে সেই শয়তানকে ফলো করতে নিষেধ করে দিয়েছেন! শয়তান আমাদের প্রকাশ্য শত্রু, কেউ যখন বাফেটের মতন ঘুরে ঘুরে ইসলামের যেটা ভালো লাগলো প্লেটে তুলে নিলো, আর যেটা ভালো লাগলো না, রেখে দিল, সে তার মহা শত্রু শয়তানকে অনুসরণ করলো এবং মহা ক্ষতিগ্রস্তদের লিস্টে নিজের নাম লিখালো!
" , , , তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশ বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশ অবিশ্বাস কর? যারা এরূপ করে পার্থিব জীবনে দূগর্তি ছাড়া তাদের আর কোনই পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে। আল্লাহ তোমাদের কাজ-কর্ম সম্পর্কে বে-খবর নন।"
[সুরা বাকারা: ৮৫]
আমাদের এভারেজ মুসলিমদের অনেকটা এখন এমনি অবস্থা! আমাদের সামনে ইসলামের মতন একটা জীবন-ব্যবস্থার মণি-মুক্তা ছড়ানো, অথচ আমরা তা বাদ দিয়ে দুনিয়াদারীর অন্য সমস্ত কিছু নিয়ে ব্যস্ত!
আমরা ইসলাম ছেড়ে দিয়েছি, ইসলাম বেচে দিয়ে লাঞ্ছনা কিনে নিয়েছি, ঠিক যেমন উমার(রাঃ) আবু উবাইদা(রাঃ) কে বলেছিলেন,
“আমরা ছিলাম এক অপমানিত জাতি। আল্লাহ্ ইসলামের মাধ্যমে আমাদের সম্মানিত করেছেন। আমরা যদি ইসলাম ব্যতীত অন্য কিছুর মধ্যে সম্মান খুঁজতে যাই, আল্লাহ্ আমাদের আবার অপমানিত করবেন”
তাই হচ্ছে!
ইসলাম ছেড়ে দিবার শাস্তি আমরা তো দুনিয়াতেই পাচ্ছি এই লাঞ্ছনা!
বোনেরা পর্দা ছুড়ে ফেলে দিয়ে ‘নারী-স্বাধীনতা”র গান গাচ্ছে,
ফলাফলঃ হয় ফিজিকাল ধর্ষণ রেটের বৃদ্ধি, নতুবা, ইমোশোনালি কারো কাছ থেকে wasted হয়ে ফিরে আসা।
মুসলিম দেশের রুলার রা দেশ চালাচ্ছে নিজেদের ইচ্ছা মতন, সেখানে শরীয়াহ্-র কোন প্রয়োগ নেই!
ফলাফলঃ অরাজকতা, লাশ আর রক্তের বন্যা! না জনগণ খুশি রুলারের উপর, না রুলার খুশি জনগণের উপর! রুলাররা পশ্চিমাদের দালাল হিসেবে লাঞ্ছিত , মুসলিম রা দুনিয়াজুড়ে "টেররিস্ট" খেতাব পেয়ে লাঞ্ছিত !
‘বিয়ে’-র মতন একটা ইবাদত কে করে দেওয়া হচ্ছে কঠিন আর কমপ্লিকেটেড, যেখানে সুন্নাতী বিয়ে কত সহজ আর সুন্দর ...
ফলাফলঃ পারিবারিক অশান্তি, ডিভোর্স, পরকীয়া! পদে পদে লাঞ্ছনা!
এমন উদাহরণ দেওয়া শুরু করলে শেষ কোথায় ঠেকবে আমি জানি না! আমরা খালি দেখে যাই, আর বলে যাই " ইশ্! মুসলিম জাতির কি অবস্থা!!" অথচ এই লাঞ্ছনা যে আমরা নিজেরাই নিজেদের জন্যে কিনে নিয়েছি! যে দিন ইসলাম বাদ দিয়ে রকমারী লাইফ-স্টাইল কে আমরা আঁকড়ে ধরেছি, সেদিন সেই মুহুর্তেই তো এ জাতি লাঞ্ছিত হয়েছে এবং এখনো হয়ে চলেছে!
তাই সমাধান এখানেই, লাঞ্ছনার অবসান তখনি হবে, যখন মুসলিমরা তাদের সম্মান কিসে সেটা বুঝবে, তাদের গৌরব একমাত্র ইসলামে - সেটা বুঝবে!
এখন আরেকটা চিত্র আঁকি আপনাদের সামনে !
এত ফিতনার মধ্যেও আল্লাহ্র কিছু মনোনীত বান্দা আছেন যারা জ্বলন্ত কয়লার মতন ইসলামকে আঁকড়ে ধরার জন্যে প্রাণপণ লড়ে যাচ্ছে! তারা ইসলামকে নামেমাত্র ধর্ম হিসেবে নিয়েই ক্ষান্ত দেন নি, একটা কমপ্লিট কোড অফ লাইফ হিসেবে গ্রহণ করেছেন!
কি করবেন, কি না করবেন, কিভাবে করবেন, কিভাবে না করবেন, কোন কথা টা মুখ দিয়ে বের করবেন- কখন করবেন- সবকিছু ... সব সবকিছুর নির্দেশনা তারা নিয়েছেন ইসলাম থেকে! EVERYTHING!
একেক জনকে দেখলেই মনে হয় যেন, walking Islam…
যেমন টা আমাদের আয়িশা(রাঃ) বলেন যে, নবীজি(সাঃ) ছিলেন, একজন চলন্ত কুরআন!
হ্যাঁ! আল্লাহ্ তার পছন্দীয় বান্দাদের দিয়ে তো অবশ্যই ইসলামকে সারা বিশ্বে জয়ী করবেন! একদিন অবশ্যই সমস্ত মজলুমের কান্না থামবে,
গোটা বিশ্ব কালো-পতাকার আন্ডারে আসবে,
খলিফা আসবেন,
দল বেঁধে সবাই মসজিদে যাবেন,
দল বেঁধে সব বোনেরা পর্দার মধ্যে থেকেই ঘর থেকে বের হবেন ...
বরং কেউ পর্দা না করে বের হলেই লজ্জায় পরে যাবে !!
ইন শা আল্লাহ্! এটা হবেই!
আপনি থাকুন বা না থাকুন, আপনাকে ছাড়াই ইসলাম জয়ী হবে, কিন্তু ইসলাম কে ছাড়া আপনি হেরে যাবেন!
একেবারে হেরে যাবেন!
দুনিয়া, আখিরাত উভয় জীবনেই without Islam we would be LOOSERS!
The Biggest LOOSERS that ever existed !
আল্লাহ্ আমাদের কাউকেই সেই লুসারদের মধ্যে না রাখুক...
আল্লাহ্ আমাদেরকে সঠিক ইসলাম বুঝার তাওফিক দেন, ইসলাম কে নিয়ে আমাদের ভাব-ভঙ্গি পরিবর্তন করে দেক, নামে-মাত্র ধর্ম বা বিশ্বাস হিসেবে নয় পূর্ণাঙ্গ লাইফ-স্টাইল হিসেবে ইসলামকে আমাদের মধ্যে জীবন্ত করে দিক.।
ইয়া মুকোল্লিবাল ক্বলুবি, ছাব্বিত ক্বলবি আ'লা দ্বীনিক !!
আমিন …
(
আমার খুব প্রিয় একটা দুয়া এটাঃ
" হে অন্তর সমূহের পরিবর্তনকারী! আমাদের অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অটল রাখুন! "
আমিন )
বিষয়: বিবিধ
১৫২৪ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইসলাম শব্দের বাংলা অর্থ কি? ও আরবী দ্বীণ শব্দের অর্থ কি?
কারণ এই দ্বীণ ইসলামকেই আল্লাহ মনোনিত করেছেন। তাই দ্বীণ ও ইসলাম শব্দ দুটির বাংলা অর্থ, আগে জানা জরুরী মনে করছি।
ইসলাম মানে, পূর্ণ আত্মসমর্পণ
দ্বীন মানে, জীবন-ব্যবস্থা
অনেক শুকরিয়া আপনাকে !
আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন, সমস্ত ভুল-ভ্রান্তির জন্য।
অনেক ভালো থাকবেন!
আপনি বলেছে ইসলাম শব্দের অর্থ আত্মসমর্পণ। কিন্তু এই জবাবটা ভুল। আত্মসমর্পণ এর আরবী শব্দ ইসতিসলাম।
তাহলে এইব বলুন- বাংলা শান্তি শব্দের আরবী শব্দটি কি?
আর আপনি বলেছেন আরবী দ্বীইণ শব্দের বাংলা অর্থ জীবণ ব্যবস্থা, তাহলে আমরা যে ধর্ম শব্দটি ব্যবহার করি, সে ধর্ম শব্দটির আরবী শব্দ কি?
মন্তব্য করতে লগইন করুন