বান্ধবী দিলো ফটো আপলোড! অতঃপর ....
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ২৭ জুলাই, ২০১৪, ০৫:৫৪:৪৯ বিকাল
স্কুলজীবনের এক বান্ধবী আমার! ইদানীং দেখছি ইসলাম নিয়ে তার সুন্দর আগ্রহ, মেসেজে আমাকে এটা-ওটা জিজ্ঞেস করছে-
-“দোস্ত! এটা করা কি ইসলামে যায়েজ?
-এটা করা কি নিষেধ?”
-“আচ্ছা জানিস! আমার রুমমেট টা না নামাজ পরে না! একজন মুসলিম তো নামাজ ছাড়া মুসলিম থাকতে পারেনা! আমি কিভাবে ওকে বুঝাই?”
ইত্যাদি ইত্যাদি আলোচনা! আবার সে ফরমালিটি করে বলেও, “প্লিজ দোস্ত! মাইন্ড করিস না! তোকে অনেক জালাই!”
আরে মেয়ে! তোকে যদি বুক খুলে দেখাতে পারতাম কি পরিমাণ খুশি আর আনন্দ সেখানে, তুই বোকা এই কথা বলতি না!
যাক্গে, কিছুদিন আগে ওর ফেসবুক প্রোফাইল থেকে কিছু পিক আপলোড করা হল দেখলাম। আমার আরো একঝাঁক স্কুলের বান্ধবীরা সবাই মিলে ইফতার পার্টিতে গিয়েছিল কোন রেস্টুরেন্টে। ওই আপলোড করা পিকচার গুলোতে যদিও আমার সেই বান্ধবীটার ছবি তখনো ছিল না। ও পর্দার মধ্যে থাকলেও, ও নিজের হাতে যখন সবার বেপর্দা ছবি আপ্লোড যখন করলো, তখন ও নিজেও যে একটা ভয়ঙ্কর গুনাহ্-র ভাগীদার হয়ে গেল- সেটা মনে হয় তখন সে নিজেও বুঝেনি। আসলে অনেকেই এটা বুঝেন না, আমিও বুঝতাম না একসময়! ভাবেন যে, "আরে! ও তো এমনিতেই হিজাব করে না! ওর নিজের ফেসবুক ভর্তি তো বেপর্দা ছবি, তাহলে আমি আমার প্রোফাইলে ওদের বেপর্দা ছবি আপ্লোড করে শেয়ার দিলে কি ক্ষতি??"
হুম্! শুভাংকরের ফাঁকি টা তো এখানেইই!!
কেউ নিজে যখন নিজেকে বেপর্দা করে পেশ করছে, ফেরেস্তা তার জন্যে সেটার গুনাহ্ লিখছে। আর আমি-আপনি কেউ যখন নিজের হাতে ক্লিক করে তাকে বেপর্দা করে ফেসবুকে ছেড়ে দিচ্ছি, ফেরেস্তা এখন দুইজনের জন্যেই গুনাহ্-র অংশ লিখছে! একজন গুনাহ্র কাজ করছে, আরেকজন তার গুনাহ্কে আরো প্রমোট করছে !
কুরআন-হাদীস বেসিক লেভেলে পড়লেই বুঝা যায়, Helping someone sin, is a SIN itself!
আমরা অনেক সময়েই এটা ফাঁকি দিয়ে যাই- মনে করি যে, ওর গুনাহ্ সেটার হিসাব ও দিবে- আমার কি!! ওর গুনাহ্-র হিসাব তো ও দিবেই। আর আমাদের সমর্থনের হিসাব, আমাদের নীরবতার হিসাব-ও যে আমাদেরকেই দিতে হবে!
যাহোক, আমার বান্ধবীর পিকে ফিরে যাই।মেয়েটার ইসলামের প্রতি আন্তরিকতা দেখেছি, ভাবলাম বুঝিয়ে বলে দেখি ইন শা আল্লাহ্ বুঝবে! ছোট করে পিকের নিচে কমেন্ট দিলাম,
“দোস্ত! তোর ফ্রেন্ড লিস্টে কি ছেলেরা আছে ?”
ভেবেছি এখান থেকেই আলাপ শুরু করি, যদি বলে ছেলে আছে, তারপর আস্তে আস্তে বুঝিয়ে বলবো নে ওকে!
সুবহান আল্লাহ্! পরদিন ওর মেসেজ পেলাম! কমেন্ট দেখে ও সাথে সাথে সব পিক ডিলিট করে দিয়েছে!! সাথে সাথে! সবগুলি! শুকরিয়া জানালো! আরো কিছু কথা বললো! এটার জন্যে প্রস্তুত ছিলাম না! আলহামদুলিল্লাহ্!!!
দোস্তি! তুই কি জানিস তোর মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’আলা আমাকে কত nice একটা শিক্ষা দিলেন?? আল্লাহ্-র পথে ডাকতে কখনো হাল না ছাড়ার শিক্ষা, কক্ষণো হতাশ না হবার শিক্ষা!!
প্রোফাইল ভর্তি বেপর্দা ছবি, সেখানে আবার নন-মাহরাম ছেলেদের টক-ঝাল-মিষ্টি কমেন্ট দেখে আমরা ভেবেই ফেলি, “বোনরে! কবে সত্যিকারের মুসলিমাহ্ হবি!” যারা এখনো পুরোপুরি ইসলামের প্র্যাকটিসিং লাইফের মধ্যে নেই, আমরা-ও ওদের সাথে থাকলে অন্ধকারে চলে যেতে পারি দেখে তাদের মাঝে মাঝে আবার এভয়েড-ও করি! কিন্তু, মুদ্রার উল্টা-পিঠ যদি হয়ে যায় ? আমাদের সাথে থেকে ওরা যদি আলোর পথে আসে?
হ্যাঁ অবশ্যই! একটা হাদীস ওদের ওয়ালে পোস্ট করার সাথে সাথে আমরা আশা করতে পারি না যে, পাঁচ মিনিট পরেই ওরা একেবারে চুল ঢেকে হিজাব পেঁচিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যাবে ! সময় দিতে হবে না ? আমাদের নিজেদের সময় লাগেনি?? একটু একটু করে অন্তরে ছিদ্র তৈরি করতে হবে! বাঁধের উপর একটা ছোট ‘ক্র্যাক’ থেকেই কিন্তু ধীরে ধীরে পুরা বাঁধ ভেঙ্গে যায়!
ইন শা আল্লাহ্ আমরা আন্তরিক থাকলে ওদেরও জীবন থেকে সমস্ত হারামের দেয়াল ভেঙ্গে যাবে, শয়তানের সব চাল ভেঙ্গে যাবে, সবাই কেশবতী থেকে হিজাববতী হয়ে যাবে, মুসলিমাহ্ হিসেবে নিজের দায়িত্ব বুঝবে; আমরা হাতে হাত রেখে আল্লাহ্র জন্যে কাজ করবো, ইসলামের জন্যে কাজ করবো! একজন আরেকজনের সাথে আল্লাহ্র জন্যেই পাশা-পাশি থাকবো, কারণ আখিরাতে জান্নাতেও যে আমরা পাশা-পাশি থাকতে চাই, তাই না?
ইন শা আল্লাহ্ কখনো হতাশ হবো না!
বিষয়: বিবিধ
১৪০১ বার পঠিত, ১৬ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তোমাকেও ঈদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও দুয়া। তাকাব্বাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম।
লিখাটি সময় ও ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্যে শুকরিয়া।
এটা যদি না করতে চায় তাহলে তার ফেসবুকে আসার কোন মানেই হয় না ।
সহমত
জাযাকিল্লাহ
মন্তব্য করতে লগইন করুন