কচ্ছপ, রাজপুত্র এবং বিয়ের গল্প!
লিখেছেন লিখেছেন শারিন সফি অদ্রিতা ২৪ জুলাই, ২০১৪, ০৭:২৬:৫৩ সকাল
-বুঝলি রে আফিয়া! সবার রাজকুমার আসে ঘোড়ায় চড়ে, আমারটা নির্ঘাত আসতেছে কচ্ছপে চড়ে! নাইলে এত দেরি লাগে নাকি কারো আসতে??
.কথাটা বলেই হুসনা হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়লো।
আড়চোখে তাকালো আফিয়া- ‘মেয়ের মাথা কি পুরাই গেল নাকি’! হাসিমুখে সেও বললো,
-আহারে! এত অধৈর্য্য হলে কিভাবে হবে বন্ধু!! ইন শা আল্লাহ্ চলে আসবে সময়মতন ! আল্লাহ্ যখন লিখে রেখেছেন মিলন না হয়ে যাবে কোথায়?
-হুম্! এই একটা জিনিস মনে হলেই তো আশার এই নিভু নিভু প্রদীপ আবার দপ্ করে জ্বলে উঠে!
-ইয়েস! তাওয়াক্কুল + দুয়া + সবর = সব ঠিক হয়ে যাবে!
- ইন শা আল্লাহ্! ইশ্! তোর মতন আমার আব্বু-আম্মু কেন যে বুঝে না! পড়াশোনা শেষ করো, ডিগ্রি নাও, এই করো- সেই করো, তারপর গিয়ে বিয়ে! এতদিনে আমি যে ফিতনার অথই সাগরে হাবু-ডুবু খেয়ে খেয়ে নিজের নফ্সকে আদৌ বাঁচিয়ে চলতে পারবো কি না আছে কোন গ্যারান্টি? বিয়ে টা দিয়ে দিত! অর্ধেক দ্বীন টা পূর্ণ হয়ে যেত! সব ঝামেলা চুকে যেত! তাই না বল আফিয়া?
এবারে আফিয়া বই থেকে মুখ তুললো, মোটা চশমা টা নাড়িয়ে হুসনার দিকে তাকালো,
-হুসনা! বিয়ে বিয়ে করে যে মুখে ফেনা তুলে ফেলছিস, তুই কি আসলেই বিয়ের জন্যে রেডী?
- দেখতেই আছিস আমি দুই পায়ে খাঁড়া- আবার জিজ্ঞেস করে বিয়ের জন্যে রেডী কি না!!
-আরে আমার বান্ধবী! সেই রেডি না!! আমি বলছি, মানসিক প্রস্তুতির কথা! তাছাড়া, ইসলামের আলোকে একটা আদর্শ দাম্পত্য জীবন কিভাবে মেইনটেইন করবি তুই? স্ত্রী হিসেবে তোর দায়িত্ব কি? তোর স্বামীর হক কি? বাচ্চা-কাচ্চার প্রতি দায়িত্ব কেমন হবে? –এগুলা নিয়ে ভেবে দেখেছিস কখনো?
বেচারী হুসনা এবার মাথা চুলকানো শুরু করলো,
- “ ... ইয়ে মানে! এত বেশি তো কিছু ভাবি নাই! আল্লাহ্ আল্লাহ্ করে একটা দ্বীন-দার জীবন-সঙ্গী যদি পাই তাহলে আমরা একসাথে কুরআন পড়বো, আমি তার মুখে পানি ছিটায়ে ফজর সালাতের জন্যে ঘুম ভাঙ্গিয়ে দিব, সে আমাকে আল্লাহ্-র জন্যে ভালোবাসবে, আমিও তাকে আল্লাহ্র জন্যে ভালোবাসবো ... এই তো ... আর... আর... “
- হয়সে ম্যাডাম থামেন! বুঝছি! সবার আগে এখন আমাকেই আপনার মুখে পানি ছিটায়া এই রূপকথা ছুটাইতে হবে!
- আফিয়া!! আমার স্বপ্ন নিয়ে কিছু বলবি না বলে দিলাম !
- নো ম্যাডাম! স্বপ্ন দেখাতে তো কোন দোষ নেই! কিন্তু স্বপ্নের পাশাপাশি কিছু বাস্তবতাকেও জায়গা দিতে হবে তো!! হ্যাঁ আলহামদুলিল্লাহ্ তুই যা যা বলেছিস সব ঠিক আছে! আল্লাহ্-র রহমতে একজন দ্বীনদার জীবন-সঙ্গী পেলে এর সবই পাওয়াও সম্ভব! কিন্তু, তোর মাথায় শুধু এগুলি রাখলেই হবে না ... সাথে সাথে আরো কিছু মনে রাখতে হবে ...
- যেমন ... ... ?
- যেমন ধর, সবার আগে বুঝার চেষ্টা কর, বিয়ে টা কি ?? বিয়ে মানে কি ? বিয়ে মানে যে বললি অর্ধেক দ্বীন পূর্ণ! – এর মর্মটা বুঝিস তো? দেখ না আমি বুঝি, বিয়ে মানেই আমাদের চোখে ভাসে শুধু মুভিতে দেখে আসা, বহু বাধা-বিপত্তির পরে ‘নায়ক-নায়িকার মহা-মিলন’ ... অতঃপর ‘সুখে-শান্তিতে বসবাস’ ... কিন্তু কেউ আমাদের চোখে আঙ্গুল তুলে দেখায় না যে, বিয়ে একটা দায়িত্ব! একটা কমিটমেন্ট! সারাজীবনের ওয়াদা! আল্লাহ্ কে সাক্ষী রেখে দুইটি মানুষের একটি হালাল সম্পর্কের যাত্রা শুরু করা! এটা একটা সিরিয়াস কমিটমেন্ট বন্ধু! এখানে পিঙ্কি-পঙ্কি করার কোন অবকাশ নেই! তোর সারাটাজীবন একটা মানুষের সাথে শেয়ার করার কথা এখানে! হুট করে সিদ্ধান্ত নিলে চলবেনা! হ্যাঁ, অবশ্যই ভালোবাসা থাকবে! সেই সাথে অপ্রত্যাশিত অনেক কিছুও থাকবে। প্রতিকূলতার সাথে মানিয়ে নিতে হবে এবং হিক্মাহ্ অবলম্বন করা তোকে জানতে হবে !
- ভেঙ্গে বল তো দেখি! – ভ্রূ কুঁচকে হুসনার প্রশ্ন !
- ধর কতগুলা বিষয় বলি আমি তোকে... তুই মনে মনে নিজেকে যাচাই কর যে, এই বিষয়গুলোতে তুই কেমন দক্ষ?
# তোর বাচনভঙ্গী, শব্দচয়ন = মোটকথা কমিউনিকেশন স্কিল!
# বাজেট করা এবং টাকাপয়সার হিসেব করা
# রাগকে সংযত করতে পারা
# আর্থিক ,পারিবারিক সমস্যা হলে কীভাবে তা সামলানো, বিশেষ করে অর্থ-কষ্ট হলে!
# বাচ্চা-কাচ্চা লালন-পালন
# সম্পর্কের টানাপোড়েন হলে সমাধান ও কম্প্রোমাইজ করার ব্যাপারে তোর প্রস্তুতি
- ও আল্লাহ্! থাম থাম!! ব্রেইন হ্যাং হয়ে গেল আমার! !!
- ইয়েস ম্যাম! আদর্শ দাম্পত্য জীবনের কথা সামনে রেখে নিজেকে ইসলামের আলোকে ‘এতকিছুর’ জন্যেই যে প্রস্তুত করতে হবে!!
- আমার বিয়ের ভূতকে তুই দেখি ঝেঁটিয়ে বিদায় করেই ছাড়বি !
- আরেহ বোকা! আমি তোকে বিয়ে নিয়ে ভয় দেখাতেও চাইনি, নিরুৎসাহিত করতেও চাইনি! আমি তো তোকে জাস্ট সচেতন করতে চেয়েছি, কারণ আজ হোক, কাল হোক, বাস্তবতা তো তোকে ফেইস করতেই হবে!
আচ্ছা দাঁড়া! আমি তোকে সূরা রুমের ২১ নং আয়াতটি নিয়ে কিছু কথা বলি, ইন শা আল্লাহ্ দেখবি মন ভালো হয়ে গেছে!
- “আচ্ছা বল ...” মুখ গোমড়া করেই মাথা নাড়ে হুসনা !
-হুসনা! তুই কি জানিস যে, বিয়ের অপর নাম হচ্ছে প্রশান্তি, উচ্ছ্বাস আর দয়া ? শব্দ ৩ টা খুব ভালোমতন মনে রাখ... আমি ভেঙ্গে বুঝাচ্ছি তোকে, ...
প্রথমে আয়াতটা বলি, আল্লাহ বলছেনঃ
“আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে”।
[সূরা আর-রুমঃ ২১]
এই একটা আয়াতেই আল্লাহ্ তা’আলা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের একটি চমৎকার সংক্ষিপ্ত কিন্তু সম্পূর্ণভাবে ব্যখ্যা করে দিয়েছেন! খেয়াল কর, আল্লাহ্ বলছেন,
“..যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক…”
এখানে, আরবি শব্দটি হচ্ছে – তাসকুনু। এই ‘তাসকুনু’ শব্দটির মূল হচ্ছে সুকুন । সুকুন মানে, প্রশান্তি।
এই সুকুন স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের প্রথম ধাপ! নববিবাহিত দম্পতিকে দেখবি, ভালবাসার মানুষের সাথে থাকার সময় প্রশান্তির এই অনুভূতি তীব্রভাবে অনুভব করে!
এই অনুভূতি স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি ভালবাসাকে পরবর্তীতে আরো তীব্র ও গাঢ় করে তোলে। আর এই সুকুন এগিয়ে নিয়ে যায় সম্পর্কের দ্বিতীয় ধাপের দিকে।
আল্লাহ্ তা’আলা সম্পর্কের সুকুনের পর দ্বিতীয় পর্যায়টি বর্ণনা করেন এইভাবে:
“… তিনি তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন পারস্পরিক সম্প্রীতি
আরবি শব্দ মাওয়াদ্দাহ মানে, 'গভীর আবেগের উচ্ছ্বাস মিশ্রিত ভালবাসা' ,কারো জন্য বা কোন কিছুর প্রতি তীব্র আকর্ষণ।
অর্থাৎ, স্বামী বা স্ত্রী একে অপরের সান্নিধ্যে অপরজনের সাথে থাকার সময় প্রশান্তি অনুভব করে এবং সেই প্রশান্তি থেকে তার প্রতি আবেগের উচ্ছ্বাস অনুভব করে ...
কিন্তু, খেয়াল কর যে, এভাবে স্বামী স্ত্রীর এই যাত্রা যতই এগিয়ে যেতে থাকে আবেগের উচ্ছ্বাস ক্রমশ কমতে থাকে। আস্তে আস্তে ‘টাওয়াল এখানে কেন? তরকারিতে লবণ কম কেন??’ ইত্যাসি ছোট-খাট বিষয়গুলিও দুজনের কাছেই অসহ্য লাগে এবং তাদের কল্পনার স্বপ্নগুলো ফিকে হতে শুরু করে। এই পথচলায় অনিবার্যভাবেই কিছু বাধা-বিপত্তি আসে। প্রথম দিকে উভয়েই আবেগে অন্ধ থাকলেও ধীরে ধীরে একে অপরের দোষ-ত্রুটিগুলো খুঁজে পেতে শুরু করে ... ব্যস! এই থেকে আমরা চলে যাই আয়াতে বর্ণিত তিন নম্বর ধাপে,
“… এবং তিনি তোমাদের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন দয়া (রাহমা)…”
আরবি শব্দ 'রাহমা' মানে, দয়া/ মমতা/ কোমল স্নেহময় ভালবাসা।
এখন সময়ের সাথে সাথে আবেগের উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়তে শুরু করেছে এটা-সেটা নিয়ে খুনসুটি আর ঝগড়ার কারণে আগের সেই অখন্ড প্রশান্তি টা ফিকে পরে গেছে। তাই আল্লাহ্ বললেন যে তিনি এবারে গিয়ে উভয়ের হৃদয়ে সৃষ্টি করে দিয়েছেন একে অপরের জন্য ‘রাহমা’, দয়া! যাতে করে মান-অভিমানে জড়িয়ে পড়লেও তারা যেন একে অপরকে গভীর মমতায় ক্ষমা করে দিতে পারে। এখন সেই প্রথম বিয়ে আবেগও নেই, উচ্ছ্বাসের জোয়ার-ও নেই! কিন্তু আছে রাহমা-দয়া! আর এই ‘রাহমা’-ই এবার সম্পর্কে এগিয়ে নিয়ে যায়!! কারণ যত কিছুই হোক না কেন বুকের গভীরে ঈমানদার বান্দা কখনোই চাবেন না যে, তার হালাল ভালবাসার মানুষটা হারিয়ে যাক! সুবহানআল্লাহ্!
এখন শুন আয়াতটির শেষে আল্লাহতা’আলা কি বলেছেন,
“… নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে”
সুবহানাল্লাহ !! চিন্তা করতে পারিস?? এই যে, একটা স্বামী-স্ত্রীর হালাল সম্পর্কের ৩ টা ধাপ- প্রশান্তি, উচ্ছ্বাস ও দয়া- এগুলি চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শন-স্বরূপ! যারা বিশ্বাসী, আল্লাহ্-র নিদর্শন নিয়ে তারা চিন্তা করতে থাকলে আদর্শ দাম্পত্য জীবনের চাবিকাঠি তাদের হাতের মুঠোয়! এভাবে, যখন প্রশ্ন উঠে, আচ্ছা বিয়ে হালাল সম্পর্ক, প্রেম হারাম! তাহলে, কেন এত ডিভোর্স? উত্তরঃ আপনি আপনার মহান রবের নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করেননি!!চিনাত করলে বুঝতেন, যেখানে আবেগে ভাটা পড়ে, উচ্ছ্বাস কমে, সেখানে আল্লাহ্ তা'আলা অন্তরে 'দয়া' পয়দা করে দেন, যারা চিন্তাশীল না, তারা তার সঙ্গীর প্রতি দয়া-পরবশ হতে পারে! তাই তখন সম্পর্কে নেমে আসে কালো ছায়া!
- সুবহান আল্লাহ্! দোস্তি! মন টা ভালো করে দিলি!
- যাক আলহামদুলিল্লাহ্! মন আরো ভালো করতে আমার “ইসলাম ও বিয়ে” বিষয়ের উপর কিছু নোট্স নিয়ে যা। ভালোমতন স্টাডী করিস।
- ইন শা আল্লাহ্ বন্ধু করবো! আল্লাহ্ তোকে এত্ত এত্ত পুরস্কার দিক, উত্তম প্রতিদান দিক! আমীন ...
... বিদায় নিয়ে চলে আসলো হুসনা। বাসায় এসে আফিয়ার নোট খাতা টা উল্টালো -
গোটা গোটা অক্ষরে সবার উপরে একটা দুয়া লিখা-
“–রব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াযিনা ওয়া যুররিয়্যাতিনা ক্কুররাতা আ’ইয়ুনিন ওয়া জা’আলনা লিল মুত্তাক্কিনা ইমামা”
অর্থঃ “হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর।”
[সূরা ফুরক্কানঃ ৭৪]
কি সুন্দর দুয়া রে আল্লাহ্! আল্লাহ্-র কাছে এমন জীবন-সঙ্গী চাওয়া, এমন নেক সন্তান চাওয়া যাদের দেখা মাত্র প্রশান্তিতে চোখ দুটা শীতল হয়ে যাবে! সুবহান আল্লাহ্! এত সুন্দর করেও আল্লাহ্-র কাছে চাওয়া যায়!!
সুবহান আল্লাহ্! হুসনা পড়ছে তো পড়েই যাচ্ছে ! আর মনে মনে ভাবছে, “রাজপুত্র!!! তুমি কচ্ছপে চড়ে ধীরে-সুস্থে আসো! আমি দুয়াটা মুখস্থ করে বেশি বেশি মুনাজাতে পড়ে নেই আগে!”
পাতা উল্টাতে উল্টাতে কিছু কুরআনের আয়াত লিখা পেল-
“তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ।“ (সূরা বাকারাহ্)
অর্থাৎ স্ত্রী-স্বামী একে অপরের পরিচ্ছদের মতন হয়ে থাকবে। কাপড় যেমন আমাদের লজ্জা সংরক্ষণ করে, আমাদের শরীরের লুকানো দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখে, তেমনি স্বামী-স্ত্রী একজন আরেকজনের লজ্জা/হায়া সংরক্ষণ করবে, একজন আরেকজনের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবে... পরস্পরের প্রতি সহনীয় হবে! স্ত্রী সাহায্য করবে তার স্বামীর দৃষ্টিকে নত রাখতে, স্বামীও তার স্ত্রীর চাহিদা এমনভাবে পূরণ করে দিবে যেন তার স্ত্রী-ও একমাত্র তার জন্যেই তাবত সৌন্দর্য্য সংরক্ষণ করে রাখতে পারে, তার হিজাবকে মেইন-টেইন করতে পারে! সুবহান আল্লাহ্!
সে মুগ্ধ হয়ে পাতা উল্টাতে লাগলো –
কিছু হাদীস লিখা ছিল-
* মু’আবিয়াহ্ আল কুশাইরী(রা সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, একদা আমি রসূল(সাঃ) এর নিকট এসে বললাম, “আমাদের স্ত্রীদের(হক) সম্পর্কে আপনি কি বলেন? তিনি বললেন,
“তোমরা যা খাবে, তাদেরকেও তাই খাওয়াবে, তোমরা যা পরবে, তাদেরকেও তাই পরাবে। তাদেরকে প্রহার করবে না এবং গাল-মন্দ করবে না।
(আবু দাউদ ২১৪৪)
ক্বায়িস ইবনু সায়িদ(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি কুফার (আল-হীরা) শহরে গিয়ে দেখি যে, সেখানের লোকেরা তাদের নেতাদের সাজদাহ্ করছে। আমি ভাবলাম, তাহলে তো নবী(সাঃ) ই অধিক সাজদাহ্-র হকদার। অতঃপর আমি রসূল(সাঃ) এর খেদমতে এসে বলি যে, আমি আল-হীরা শহরে গিয়ে দেকেহ এসছি যে, সেখানকার লোকেরা তাদের নেতাকে সাজদাহ্ করে। অতএব, হে আল্লাহ্-র রসূল(সাঃ) আপনি তো এর অধিক হকদার যে, আমরা আপনাকে সাজদাহ্ করি। উত্তরে রসূল(সাঃ) বললেন যে, যদি (মৃত্যুর পর) তুমি আমার কবরের পাশ দিয়ে যাও, তবে তুমি কি আমাকে সাজদাহ্ করবে ? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, সাবধান! তোমরা এরূপ করবে না! আমি যদি কোন মানুষকে সাজদাহ্ করার অনুমতি দিতাম, তবে স্ত্রীদেরকে নির্দেশ দিতাম তাদের স্বামীদের সাজদাহ্ করতে। কারণ, আল্লাহ্ স্ত্রীদের উপর স্বামীদের অধিকার দিয়েছে।
সহীহ, তবে কবর সম্পর্কিত বাক্যটি বাদে।
*দারিমী, বায়হাকী, হাকিম। ইমাম হাকিম ও যাহাবী বলেন, সনদ সহীহ।
আবু হুরায়রা(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী(সাঃ) বলেছেন, কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তার সাথে বিছানায় শোয়ার জন্যে আহবান করে আর ঐ স্ত্রী যদি তাতে সাড়া না দেয়, তাহলে সকাল পর্যন্ত ফিরিস্তারা ঐ স্ত্রীর প্রতি অভিসম্পাত করতে থাকে।
সহীহ।
(বুখারী, মুসলিম)
সুপ্রিয় পাঠক, আমাদের হুসনা কিন্তু ইসলামের মাঝে আদর্শ দাম্পত্য জীবনের রূপরেখা পেয়ে গেছে!
আর আপনি ???
দাম্পত্য সম্পর্কে এমনি অসম্ভব সুন্দর সুন্দর লিখা পেতে এখানে ক্লিক করুন। বিশেষ অবগতির জন্যে জানানো যাচ্ছে যে, আমার এই লিখাটিতেও ঐ লিঙ্ক থেকে পড়া কিছু কিছু বিষয় চলে এসেছে !
বিঃদ্রঃ ব্লগার ভিশু ভাইয়ের রমাদানের শিডিউল অনুযায়ী আমার রমাদানের আলোচনার বিষয় ছিল “আদর্শ দাম্পত্য জীবন”। আলোচনা লিখতে গিয়ে ভাবলাম, একটু ভিন্নভাবে আলোচনা পেশ করলে কেমন হয়! সেখান থেকেই এটা গল্প আকারে লিখে ফেললাম!
... দীর্ঘ লিখাটি সময় ও ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্যে শুকরিয়া ...
ফি আমানিল্লাহ্!
বিষয়: বিবিধ
২৫৮১ বার পঠিত, ৫০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
হুসনার চিন্তা চেতনা একেবারে প্রেকটিক্যাল মেয়েদের মত ।
''তোমরা যা খাবে, তাদেরকেও তাই খাওয়াবে, তোমরা যা পরবে, তাদেরকেও তাই পরাবে। তাদেরকে প্রহার করবে না এবং গাল-মন্দ করবে না। ''
০ সে মাসে / ১৫ দিনে একবার কে.এফ.সি./পিজ্জা হাট যেতে চায় । আমার কখনও ইচ্ছে হয় না এরকম লাক্সারিয়াস জায়গায় যেতে ।
০ তার একটা শাড়ির যে দাম তা দিয়ে আমার ২ সেট শার্ট প্যান্ট অনায়াসে হয়ে যায় ।
আমি যদি তাকে আমার পছন্দ হয় না বলে কে.এফ.সিতে না নিয়ে আমার সামর্থ্যের ভিতরে সাধারন হোটেলেই নিয়ে যাই ; তার পছন্দের শাড়ি কিনে না দিয়ে আমার সামর্থ্যের ভেতরে থ্রি-পিস কিনে দেই ------ তাহলে আমি কি তার কাছে উত্তম বলে বিবেচিত হবো ?
পবিত্র ক্বুরআনে আল্লাহ বলেই দিয়েছেন যে একটা বিশেষ পর্যায়ে গিয়ে স্ত্রীকে প্রহার করতে । সেটার কি হবে ?
প্রশ্ন করি আপনারা যারা আল্লাহর বিধানের বাইরে মনুষ্য আইন করেন বা নিষেধ সত্ত্বেও শরিয়তপরিপন্থী কাজ করছেন এবং সেটার মজা ভোগ করেন সেটা নিয়ে ।
খুব তো ক্বুরআন হাদিস নিয়ে বিশাল বিশাল সব নসিহত দিয়ে যান । যেই কিছু বেমক্কা প্রশ্ন করি মনুষ্য আইনের ব্যাপারে যেটা আল্লাহর বিধানের সাংঘর্ষিক তবে আপনাদের জন্য লাভজনক+প্রভাব বিস্তারমূলক - তখনই ভাব এসে যায় । তর্কে জড়াতে অনিচ্ছুক , রিপ্লাই পাবেন না ভাব দেখানো শুরু হয়ে যায় !
আমি যে প্রশ্ন গুলো প্রায়ই করি আপনাদের মেয়েদের এবং আপনার একটা পোস্টেও আগেও করেছি সেগুলো কি একটাও বানানো প্রশ্ন ?
এসব আইন কি বানানো হয় নি ? মেয়েরা কি এর কোনই সুফল ভোগ করছে না ? তারা কোন কালেও প্রতিবাদ করেছে এসব শরিয়ত পরিপন্থী মনুষ্য আইনের ?
আল্লাহর আইনের বিপরীতে যে মনুষ্য আইন বানানো হয়েছে তার সবই হয়েছে মেয়েদের ফেভারে । আল্লাহর এই আইনের পরিপন্থী যে আইন হয়েছে আপনাদের জন্য এবং সেগুলো আপনারা উপভোগ করছেন - তাতে কি এটা মনে হওয়া কি অস্বাভাবিক যে আপনারা নারীরা আল্লাহর আইন তথা বিধানকে সম্পূর্ন বলে মনে করছেন না বলেই মনুষ্য আইন বানিয়েছেন ?
আল্লাহর আইনকে যদি আপনারা সম্পূর্ণ বলে মানেন তাহলে এইসব মনুষ্য আইনের বিপক্ষে কখনও কোন কথা বলেন না কেন ?
এড়িয়ে গেলে যাবেন , উত্তর ( যথাযথ ) না দিতে চাইলে না দিবেন , এমনকি কথাবার্তা পছন্দ না হলে সোজা ব্লক করে দেবেন ।
তবে আপনারা যতই লিখায় ইসলামের নসিহত দেন না কেন , যখনই এইসব প্রশ্ন করি তখনই নিরব হয়ে যায় । ভাব চলে আসে ।
এসব আইন যা শরিয়ত পরিপন্থী তা নিয়ে আমার যে প্রশ্ন তার উত্তর যদি বরাবরই না দিয়ে ভাব মেরে থাকেন - তাহলে এটাই ধরে নেওয়া যায় যে - আপনারা কিতাবের কোন অংশকে মানেন আর কোন অংশ পছন্দ না বলে মনুষ্য আইন বানান ।
জাঝাকাল্লাহু খইর আমাকে এই বিষয় টা নিয়ে আলোচনার সুযোগ দিবার জন্যে!নিজেরও অনেক কিছু শিখা হলো। দুয়া প্রার্থী।
ফী আমানিল্লাহ্!
সুপ্রিয় পাঠকদের প্রতি জিজ্ঞাসার উত্তরঃ অভিজ্ঞতা ভয়ানক – নারীরা ভীষন ছলনাময়ী এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর ফলাফল অত্যন্ত ভয়ঙ্কর! অভিজ্ঞতা আরও বলে সূরা-ইউসুফে বর্ণিত নারীদের চরিত্র আর বাস্তবে এদের চরিত্রে আসলে পার্থক্য নাই!
দীর্ঘ লিখাটি সময় ও ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্যে অসংখ্য শুকরিয়া
=============
অফটপিক:
--------
আপনার হুসনার জন্য আমি গার্ডিয়ান হিসেবে হারিকেনের জন্য প্রস্তাব দিচ্ছি।
বিয়ে দিতে চাই হারিকেনের সাথে।
ছেলের প্রফাইল দেখতে এখানে আসুন প্রস্তাবিত ছেলের বায়োডেটা
আফিয়াও খুব ভালো তবে হুসনা পছন্দ হইছে তাই। ছেলে খুবই সুডইট এরখম আর একটা হয় না।
দীর্ঘ লিখাটি সময় ও ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্যে অসংখ্য শুকরিয়া।
কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ নারিই বর্তমানে বিয়ের জন্য বিবেচনা করেন স্বামির আর্থিক অবস্থা। আর চেষ্টা করেন স্বামিকে তার পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করতে।
যাক, বিয়ে পোস্টফোন করার ভাল তরিকা জানা গেল। এখন থেকে অভিভাবকরা চাপ দিলে বলব দোয়া মুখস্ত হয়নি
জাযাকাল্লাহ আপি। সুন্দর আলোচনা
"আরেহ বোকা! আমি তোকে বিয়ে নিয়ে ভয় দেখাতেও চাইনি, নিরুৎসাহিত করতেও চাইনি! আমি তো তোকে জাস্ট সচেতন করতে চেয়েছি, কারণ আজ হোক, কাল হোক, বাস্তবতা তো তোকে ফেইস করতেই হবে!"
দীর্ঘ লিখাটি সময় ও ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্যে অসংখ্য শুকরিয়া আপুনি। বারোকাল্লহ ফিকী!
অসাধারণ শিক্ষণীয় পোষ্ট। জাজাকাল্লাহু খাইরান।
ছেলেটা হুসনার চিন্তায় চিন্তায় শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে :(
দেখেননা এতই দুর্বহ হয়েছে যে ব্লগে কমেন্টস ও করতে পারেনা :(
প্রস্তাবটা ভেবে দেখবেন প্লিজ :P
আপনার হুসনা আর আমার দোস্তটা ভালো থাকুক এদুআই করি
ওলিমার দাওয়াত রইলো আপু
তিনটা খেজুর খেয়েনিবেন কেমন
[[√আমার অবস্তা: যার বিয়া তার খবর নাই পাড়া পড়শির হুস নাই :P ]]
তোমার হবু বউ খেতে খেতে ঘুমিয়ে গেছে... যেগে উঠবে ২১৫০ সনে ততদিনের জন্য ফিডার রেডি রেখো কিন্তু....
তবে এটাও বাস্তব সত্য যে আমার প্রিয় হারিকাপুর জন্য এরখম একটা সইইড মেয়ে দরকার ।
আপনার জানা কোন দ্বীনি বোন থাকলে জানবেন ইনশাআল্লাহ। আমারা দেশে অথবা বিদেশে আসতে রাজি আছি
নজর ভালো করো কিন্তু নাহলে তোমার বিয়া ক্যানসেল....
মন্তব্য করতে লগইন করুন